নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্ব সাহিত্যে অন্ধত্বের জয়জয়কার.......

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৪১

বিশ্ব সাহিত্যে অন্ধত্বের জয়জয়কার.......

পৃথিবীতে চক্ষুষ্মানের ইতিহাস যত শতাব্দীর অন্ধত্বের ইতিহাসও তত শতাব্দীর। ভাবতে অবাক লাগে মহাভারতের যুদ্ধের মতো অমন কালজয়ী অধ্যায় একজন অন্ধকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ হলেও সঞ্জয় তো অন্ধ ছিলেন না তবু ব্যাসদেব লিখেছেন, 'এই সঞ্জয় যুদ্ধবৃত্তান্ত অবিকল বর্ণন করিবেন।...এবং অন্যে যাহা মনে মনে কল্পনা করিবেন,তাহাও অবগত হইবেন।' কল্পনাকে অনুসরণ করা তো অন্ধের যাত্রাপথের মতোই। তাই কি মহাভারতে এত অলঙ্কারের ঘনঘটা। আরও লিখেছেন, 'কোনো স্ত্রী এককালে চারি-পাঁচ কন্যা প্রসব করিতেছে,তাহারা জন্মগ্রহণ করিবারমাত্র নৃত্য,গীত ও হাস্য করিতে প্রবৃত্ত হইতেছে।'

* রাজার বিরুদ্ধে প্রচারপত্র লিখে একরকম স্বেচ্ছা-অন্ধত্ব বরণ করেছিলেন যে-কবি সেই মিলটন সম্পর্কে এলিয়টের উপলব্ধিও অনেকটা এমন।এলিয়টের মতে শুধু ধ্বনিগত ও স্পর্শনির্ভর দিক থেকে 'প্যারাডাইস লস্ট' সফল।

* চারণ কবিরা যে-কবির অক্ষয় কবিতা আড়াই হাজার বছর ধরে এশিয়া মাইনর অঞ্চলের দুয়ারে দুয়ারে গান গেয়ে ফিরেছেন সেই কবি হোমার ছিলেন অন্ধ। গ্রিক শব্দ 'হেমেরোস'-এর অর্থই হল অন্ধ মানুষ। হোমারের কবিতায় রঙের উল্লেখ প্রায় নেই। আর থাকলেও তা ভুল ভাবে আছে। যেমন, এথানার যে নীল চোখের বর্ণনা হোমার করেছেন তা আসলে উজ্জ্বল চোখ।

* রিলকে তাঁর কবিতায় একজন অন্ধ মহিলার কথা বলেন- বড়ো অভিমান তার। 'এই আস্ত আকাশটা মাথায় নিয়ে আমি আর বাঁচতে চাই না।' রোমানিয়ার প্রখ্যাত চিন্তক চিওরনের এই কবিতাটির প্রেক্ষিতে মন্তব্যটি কিন্তু চমৎকার। 'মহিলা কি একটু স্বস্তি বোধ করবে যদি আমরা চক্ষুষ্মানেরা বলি, পায়ের নীচে মাটি নিয়ে আমরাও আর বাঁচতে চাই না।' অন্তরীক্ষের সঙ্গে মৃত্তিকার যে দূরত্ব একজন চক্ষুষ্মানের সঙ্গে একজন চক্ষুহীনের কি একই দূরত্ব?

* সক্রেটিস মনে করতেন, 'যে-মানুষেরা চোখ দিয়ে দেখেন তারা সব অন্ধ, কেননা সত্যকে দেখা যায় না।'

* রুশো তাঁর 'এসেজ অন দ্য অরিজিন অব ল্যাঙ্গুয়েজ' গ্রন্থে লিখেছিলেন, 'সংগীতকারের একটা বড়ো জয় অশ্রুত বস্তুকে তারা আঁকতে পারে, চিত্রকরেরা তো কোনওদিনই অদৃশ্য বস্তুকে আঁকতে পারে না।'

* ল্যুভর্ মিউজিয়ামের বাতিল ছবির ঘরে জাক দেরিদার এর একবার যাওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল। উদ্দেশ্য অন্ধত্বের প্রশ্নে জড়িত ছবিগুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনী করে ফেলা।

'পার্তি প্রি' নামাঙ্কিত ৪৮ টি ছবির সেই প্রদর্শনী চললো ২৬ অক্টোবর ১৯৯০ থেকে ১৯ জানুয়ারি ১৯৯১।পরবর্তী কালে ৭১ টি ছবি নিয়ে দেরিদার এই বিষয়ে বই প্রকাশিত হল। 'মেমরিজ অব দ্য ব্লাইণ্ড'। ফরাসিতে 'মেমোয়ার' শব্দটির দুটো অর্থ- স্মৃতিকথা ও আত্মকথা।এ যেন দেরিদার নিজের কথা।

ঠিক সেই সময়টা তিনি ফেসিয়াল প্যারালাইসিসে ভুগছিলেন, চোখ বন্ধ করতে পারছিলেন না। ভাবছিলেন খুব শীঘ্রই মারা যাবেন। কল্পনা, ইতিহাস ও বাইবেল আশ্রিত ড্রয়িংগুলো মূলত পুরনো ছবি আঁকিয়েদের। বইটি শুরু হচ্ছে দিদেরোর একটি চিঠি দিয়ে। ১০ জুন ১৭৬৯-এ লেখা সেই চিঠি:

'আমি না দেখে লিখছি।...এই প্রথম অন্ধকারে কিছু লিখছি।...জানি না চিঠি হয়ে উঠবে কিনা। যেখানে দেখবে কিছু নেই, শূন্যতা, পড়ে নিও আমি তোমাকে ভালবাসি।'

* ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ তারিখে বিখ্যাত স্প্যানিশ পত্রিকা 'আবেসে' লেখক হোর্খে লুইস বোর্খেস 'নিভে যাওয়া রঙগুলো' শিরোনামে একটি সাক্ষাৎকার ছেপেছিল।সেখানে বোর্খেস বলছেন:

'কালো রঙ আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। সবসময় একটা আলোময় ধোঁয়াশা। সুস্পষ্ট নড়াচড়া আর কখনও আবছা আকার। একটা সময় হলুদ রং আমার দীর্ঘদিনের সঙ্গী ছিল, এখন তা হারিয়ে গেছে। তারপর হারালাম নীল এবং সবুজ। এখন সবসময়ই ধোঁয়াশা।নীলচে ও ধূসর। অনেকসময়ই অন্ধকারে থাকতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারি না। এটা ভয়ঙ্কর।'

লেখকের অন্ধত্বের বেদনা আমাদের মধ্যেও কখন যেন চারিয়ে যায়। বোর্খেসের 'ব্লাইন্ডনেস' নিবন্ধটির কথা মনে পড়ে। বৃদ্ধ মাকে নিয়ে অন্ধ বোর্খেস বইয়ের দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বোর্খেস ও অন্ধত্ব বিষয়ে লেখা ফুরোবার নয়।

* রনে শার 'গ্রন্থাগারে আগুন' কবিতায় তো লিখেছেনই 'লা ল্যুমিয়ের আ অ্যাঁ আজ। লা নুই নঁ আ পা। (আলোর একটা বয়স আছে। অন্ধকারের তা নেই।)

* অস্কার ওয়াইল্ডের 'দ্য কান্ট্রি অব দ্য ব্লাইন্ড' গল্পটি অনবদ্য। পনেরো প্রজন্ম ধরে অন্ধ মানুষদের বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডে একজন চক্ষুষ্মান ব্যক্তি এসে পড়েছে। সে ভাবল অন্ধদের দেশে সেই হবে এবার রাজা। কিন্তু ঘটনা পরম্পরায় সে একসময় বুঝতে পারল অন্ধত্ব একটি আপেক্ষিক পরিস্থিতি মাত্র। দৃষ্টি কোনও উন্নতর অবস্থান নয়।

যেমন সারামাগোর 'ব্লাইন্ডনেস' উপন্যাস। এক নামহীন শহরে সমস্ত মানুষ একদিন ধীরেধীরে অন্ধ হয়ে যাবে।সেই শহরে মানুষের কোনও নাম নেই। ডাক্তার, ডাক্তারের স্ত্রী এমন সব নামে পরিচিত। একসময় সেই শহরের আইন, শাসনব্যবস্থা ও প্রশাসন ভেঙে পড়তে লাগল। সে এক চরম বিশৃঙ্খলা। তারপর একদিন সবার চোখের আলো ফিরে এলো। কিন্তু তখন কেউ আর নিজের অবস্তানটিকে খুঁজে পাচ্ছিল না। আমাদের বেঁচে থাকাটা যে কতটা আপেক্ষিক ও অনিশ্চিত তা যেন সারামাগো আমাদের হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

* জেমস জয়েস সারাজীবন চোখের অসুখে ভুগেছেন।'ফিনেগানস ওয়েক' যখন লেখা হচ্ছে তখন তিনি অন্ধ। পুরো কাজটা করেছেন অন্ধত্বের ভেতর।এক দানবীয় কর্মকাণ্ড। জেমস জয়েস বলেছেন:

'আমার জীবনে যা কিছু ঘটেছে, সব চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হল অন্ধ হয়ে যাওয়া।'

* জীবনানন্দ তাঁর ডায়েরিতে বারবার অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জীবনানন্দ খুবই চিন্তিত ও হতাশাগ্রস্ত ছিলেন নিজের কল্পিত ক্রমবর্ধমান দৃষ্টিহীনতা নিয়ে।

অন্ধত্ব বারবার এভাবে দর্শন, শিল্প, সাহিত্য, পুরাণ ও রাজনীতির বিষয় হয়ে উঠতে চায়। আমরা বুঝি চোখের আলোয় চোখের বাহিরে দেখাটাই অন্ধত্ব।

** William James এর "On a Certain Blindness in Human Beings" এর ভাবানুবাদ।


(টেস্ট পোস্টঃ মোবাইল ফোন থেকে বুঝতে পারছিনা আইডি স্ট্যাটাস.........)

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৫৩

সোবুজ বলেছেন: আল্লাহপাক যাকে অন্ধ করেন তাকে চক্ষু দিতে পারে এমন শক্তি কারো নাই।সবই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫৯

জুল ভার্ন বলেছেন: আপনি আমার পোস্টের ম্যারিট বুঝতে পারেননি।

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩০

জ্যাকেল বলেছেন: আমি কবি/সাহিত্যিকদের সাথে তেমন নেই তাই ওদিকে যাব না। তবে--
সক্রেটিস এর কথার মর্ম সকলে কি বুঝবে? মনে হয় না।

আমি যেটা জ্ঞান করি সেইটা হইতেছে বাস্তব চোখে সব দেখা যায় না বরঞ্চ চোখে দেখা যায় সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। জগতের ৯৬ শতাংশই অদৃশ্য সেখানে স্রস্টাকে অস্বীকার করে তার ভিত্তিতে জীবন যাপন করা বেকুবি নয়তো কি?

(দুঃখিত, প্রসংগের বাইরে চলে যাবার জন্য)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০০

জুল ভার্ন বলেছেন: অন্তঃ দৃষ্টিই প্রকৃত দৃষ্টি।

৩| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: অ্যামেরিকান লেখিকা হেলেন কেলারও অন্ধ ছিলেন এবং বধির ছিলেন। চিন্তার জগতে এরা অন্ধ না বরং সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশী চিন্তাশীল। ফলে অন্ধত্ব তাদের লেখালেখির জন্য কোন বাধা হয়নি।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০৪

জুল ভার্ন বলেছেন: আসলে হেলেন কেলারই হতে পারেন প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু আমি সূত্রের লেখাটার ভাবানুবাদ করেছি সেখানে হেলেন কেলারের কোনো রেফারেন্স নাই- যা অত্যন্ত দুঃখজনক! ধন্যবাদ হেলেন কেলারকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।

৪| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫২

কাছের-মানুষ বলেছেন: অন্ধ মানুষের অন্য কোন ইন্দ্রিয় অনেক সক্রিয় হয়। পোষ্টটা পড়লাম ভাল লাগল।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১৬

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: অন্ধ! অন্ধত্ব। এঁর চেয়ে মৃত্যু ভালো।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১৯

জুল ভার্ন বলেছেন: আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দুইজন অন্ধ ছাত্র সহপাঠী (অন্য সাবজেক্ট), যারা অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ওদের সাথে খুব মিশতাম। ওদের জীবন নিয়ে কোনো হতাশা দেখিনি।

৬| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ভীষণ ভালোলাগলো !

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৮

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:১৭

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: দৃষ্টির সীমা থাকে। অন্ধত্বের থাকে না।ফলে অন্ধ মানুষ অসীমের যাত্রী হতে পারে যখন তখন।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৪১

জুল ভার্ন বলেছেন: খুব সুন্দর বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.