নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
সেনেকার জীবন দর্শন.......
জীবনের বিভিন্ন সময় আমরা প্রায়ই এ ধরনের কথা বলে বা শুনে থাকি, 'জীবন খুব ছোট' বা 'সময় খুব দ্রুতই চলে যায়', কিংবা 'পরে জীবন উপভোগ করব, এখন কাজ করার সময়'।
সমাজের সকল স্তরের মানুষের কথা চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, এই কথাগুলো কোনো একটি শ্রেণির মানুষের মুখের কথা নয়। ধনী থেকে গরিব, শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত সবাই যেন জীবনের এই বৃত্তের কাছে এসে নিজেকে নিরুপায় মনে করে। সময় বদলেছে, বদলাচ্ছে; জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে আসছে নতুন নতুন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন। সমাজ বদলেছে, ইতিহাস বদলেছে, বদলেছে আমাদের জীবনধারা। কিন্তু বদলায়নি জীবনের ধ্রুব বাস্তবতা। আর তাইতো জীবনের ক্ষুদ্রতা, সময়ের গতি নিয়ে মানুষের এত অভিযোগ।
দু' হাজার বছর আগে গ্রিক দার্শনিক সেনেকা 'অন দ্য শর্টনেস অভ লাইফ' বই লিখেছিলেন। মজার বিষয় হলো তিনি তার বইয়ে সে সময়ের মানুষের জীবন উপলব্ধি নিয়ে যে কথাগুলো বলেছেন, মানুষের যে মনের কথাগুলো বলেছেন, তার সাথে দু' হাজার বছর পর এসেও আমাদের বর্তমান সময়ের চিন্তাধারার কোনো পার্থক্য দেখা যায় না।
রোমান দার্শনিক সেনেকা বলেন- "মানুষ অভিযোগ করে 'জীবন খুব ছোট'; কথাটি ভিত্তিহীন। এমন নয় আমরা বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুদ্র সময় পাই বরং জীবনের অধিকাংশ সময় আমরা নষ্ট করি।"
সেনেকার মতে বলা যায়, আমরা এমন সব কাজ করি যার কোনো মূল্য নেই। অধিকাংশ মানুষই নিজেদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনি। এমন মানুষের সাথে মিশি, যারা জীবনে কোনো নতুন মাত্রা দিতে পারে না। কে কী করেছে, তা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। গুজবে কান দিই।
আধুনিক যুগে এসে আমরা একই কাজ করি কিন্তু ভিন্নভাবে। মোবাইল ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিই। সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যের জীবন কেমন যাচ্ছে, তা স্ক্রল করতে করতে পার করে দিই সময়। সেনেকার মতে, আমরা এমন সব কাজ করে সারা জীবন পার করি যা নিজেরাই পছন্দ করি না।
ছাত্র অবস্থায় ভাবি চাকরি জীবন সুখের হবে এখন কষ্ট করি, চাকরি জীবনে এলে ভাবি প্রমোশন পেলে বাড়ি গাড়ি হলে সুখী হব এখন কষ্ট করি। এভাবে ভবিষ্যতের পেছনে ছুটতে ছুটতে একসময় এসে জীবনের শেষ প্রান্তে চলে যাই। এরপর উপলব্ধি সারা জীবন ব্যস্ত ছিলাম, জীবন খুব ছোট।
আসলে জীবন ছোট নয় বরং নিজেদের অদরকারি কথাবার্তা, অপছন্দের কাজ, আসক্তির পেছনে সময় ব্যয়, অন্যের স্বপ্নের পেছনে সময় ব্যয় করার পরিমাণ মিলে জীবনের বড় এক অংশ চলে যায়। বাঁচা আর অস্তিত্ব টিকে থাকা এক নয়। একটি ১০০ ওয়াটের বাল্ব যে পরিমাণ আলো দেয় আর বাল্বটিকে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে দিলে যে আলো পাওয়া যাবে তা সমান নয়। কিন্তু বাল্বটি দুই অবস্থাতেই সমান শক্তি খরচ করবে। মানুষের জীবন ক্ষুদ্র নয়। বরং জীবনভর করে চালিয়ে যাওয়া অপ্রয়োজনীয় আড্ডা, আসক্তির পেছনে সময় ব্যয় করা কিংবা নিজের অপছন্দের কাজটি করেই জীবন পার করে দিলে যে পরিমাণ সময় যোগ হয় সেই সময় ফিরে পাবার নয়।
সেনেকার মতে, আমরা টাকার খরচ করার সময় কৃপণ কিন্তু সময় নষ্ট করার সময় উদার। বন্ধুকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে অনীহা প্রকাশ করলেও কখনো সময় দিতে কার্পণ্য করি না। কিন্তু নিজ জীবনের এই সময় নষ্ট করলে যে তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না এই মৌলিক উপলব্ধিতে সমস্যা। এই কারণে সেনেকা বলেছেন, "জীবনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানলে জীবন যথেষ্ট লম্বা।"
স্বপ্ন বনাম জীবনঃ
মানব জীবনের বড় একটা দিক হল স্বপ্ন। সেনেকার মতে, মানুষ সময়কে বস্তুর মত করে দেখতে পারে না। যার ফলে সময়কে পরিমাপ করা বা এর গতির সম্বন্ধে অনুমান করার ক্ষেত্রে অনেকেই অপটু। অনেক উচ্চ-পদস্থ, বিজ্ঞ লোকও জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে থাকে।
আমাদের চারপাশে তাকালে এমন উদাহরণ অহরহ দেখা যাবে। সারা জীবন পরিশ্রম করেছেন বড় কিছু পাবার আশায়। কিন্তু শেষ বয়সে এসে নিজের উপার্জিত সম্পদ ভোগ করার আগেই মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়ে পড়েন। চীনে কিছুদিন আগে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে মধ্যবিত্ত ও গরিবদের থেকে ধনী ব্যক্তিদের জীবনে হতাশা আর অশান্তি বেশি। গ্রিসের রাজা অগাস্টিন দেশটির সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন। অথচ নিজে সবসময় একটু অবসর পাবার জন্য আফসোস করতেন। ফরাসি নেপোলিয়ন ইউরোপ জয়ের স্বপ্নে মগ্ন থেকে তার জীবনের শেষ অংশ কেটেছিল কষ্টে।
এই প্রসঙ্গে সেনেকার মত হলো, মানুষের তার জীবন নিয়ে বাস্তবসম্মত চিন্তা করা উচিত যা সে অর্জন করতে পারবে। নিজের সামর্থ্য আর ক্ষুদ্রতার বিষয় মাথায় রেখে কাজ করা উচিত। জীবন নিয়ে উচ্চাকাংখা দোষের কিছু না, কিন্তু যে স্বপ্ন বা যে কাজ আপনাকে স্বস্তি দেয় না, শান্তি দেয় না সেই স্বপ্নের পেছনে ছোটা অবশ্যই পরিত্যাগ করা উচিত। তার মতে, আমরা বড় স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে মৃত্যুর কথা ভুলে যাই, এমন সব অলিক লক্ষ্যের পেছনে ছুটি যা একজীবনে অর্জন করা কখনই সম্ভব নয়।
বর্তমান মুহূর্তে বাঁচাঃ
সেনেকার মতে, আমাদের জীবনে রয়েছে তিনটি ধাপ। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। অতিতে যা হয়েছে তা পরিষ্কার। ভবিষ্যতে কী হবে তা অনিশ্চিত। মানুষ শুধু বেঁচে থাকে বর্তমান সময়ে।
অতীত নিয়ে আপনি যতই ভাববেন আপানার মধ্যে ক্ষণিকের আনন্দ বা কষ্ট কাজ করবে। কিন্তু অতীতে আপনি চাইলেও ফিরে যেতে পারবেন না বা কোনো কিছুর পরিবর্তন করতে পারবেন না। ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি যতই চিন্তা-ভাবনা পরিকল্পনা করেন না কেন, কী হতে চলেছে সামনে তা অনিশ্চিত।
মানুষ শুধু বর্তমান সময়ে বেঁচে থাকতে পারে। আপনার জীবনের যত সুখ, দুঃখের অনুভূতি শুধু বর্তমানেই পাওয়া যায়। যদি আপনি ভেবে থাকেন যে আগামীকাল 'এই' কাজ বা 'ঐ' কাজটা করবো, বস্তুত কাজ করার সময় আপনার বর্তমান সমতাতেই বেঁচে থাকবেন।
আপনি হয়তো অতীতের কোনো ঘটনা মনে করে সুখ বা দুঃখ পাচ্ছেন। বস্তুত এই সময়ও আপনি বর্তমানেই থাকছেন।
এই বইটিতে সেনেকার মূল বার্তা হলো, বর্তমান সময়টাই হলো আমাদের প্রকৃত জীবন। অতীত বা ভবিষ্যৎ হল একটি ধারণা মাত্র। এই বর্তমানে বাঁচতে বাঁচতেই এক সময় জীবনের কাঁটা শেষ হয়ে যায়। তাই নিজের জীবনকে এমনভাবে গুছানো উচিত যাতে করে আপনার প্রতিটা 'বর্তমান' মুহূর্ত আপনার মত করে কাটে। আপনার স্বপ্ন বা কাজ হওয়া উচিত এমন কিছু যা করে আপনি জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত নিজের মত করে আনন্দ উপভোগ বের করে আনতে পারেন। সেসব কাজ করা উচিত যা আপনার কাছে আপনার জীবনকে মূল্য বহুল করে তুলবে। আপনার স্বপ্ন আর চাওয়া একান্তই নিজের। তাই নিজের মত করে বাঁচতে গিয়ে দশে কী করে দশে কী বলে সেসব দিকে না তাকানো বুদ্ধিমানের কাজ।
২৮ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৪৫
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১১:১৯
শেরজা তপন বলেছেন: সেনেকার মুল বার্তা আমার জীবন ধারার সাথে খানিকটা মিলে গেছে
তবুও অতীত আর ভবিষ্যত এসে মাঝে মধ্যে ভীষন কান্ড ঘটায়- নিস্তার নেই ওদের থেকে!!!
২৮ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৫৩
জুল ভার্ন বলেছেন: সেনাকা আমার অন্যতম প্রিয় পাঠ্য। আমার কাছে সেনেকার দর্শন মূলত পড়তেই ভাল লাগে, জীবন যাপনের জন্য নয়। দর্শন কেবল অভিজাত-জ্ঞানীর উচ্চমার্গীয় অলঙ্কার নয়, বরং একে ধারণ করতে হবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে। কেননা তা আত্মশুদ্ধির হাতিয়ার- এমনটিই মনে করেন স্টোয়িক দার্শনিকেরা। জেনোর পর এই দর্শনকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রদান করতে ভূমিকা রাখেন মূলত তিন দার্শনিক– এপিক্টেটাস, সেনেকা ও অরেলিয়াস। অথচ জীবনা যাপনে এরা কেউ তাদের দর্শনের মধ্যে ছিলেন না।
৩| ২৮ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১:১০
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
সেনেকার জীবনী নিয়ে লিখুন।
২৮ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৫৪
জুল ভার্ন বলেছেন: বেশ করেক বছর আগেই এই ব্লগেই লিখেছিলাম।
৪| ২৮ শে জুলাই, ২০২২ ভোর ৬:১১
কামাল৮০ বলেছেন: বর্তমানকে উপভোগ করাই জীবন।আমরা বর্তমানেই বাচি।এই জন্য প্রয়োজন সুস্থ থাকা।বার্ধক্য থেকে কারো রক্ষা নাই।বার্ধক্যে কিছুটা কষ্ট সবাইকেই করতে হবে যদি না হঠাৎ মারা না যায়।
২৮ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৫৮
জুল ভার্ন বলেছেন: অস্কার ওয়াইল্ড বলেছিলেন, 'বেঁচে থাকাটা পৃথিবীর দুর্লভ জিনিসগুলোর একটি। বেশিরভাগ মানুষ কেবল তাদের অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত। তাদের কাছে সেটাই গুরুত্বপূর্ন।' প্রতিটি মানুষের মাঝে এক ধরনের শিশুসত্ত্বা বিরাজমান। যা বয়সের এবং ব্যস্ততার কারণে ঢাকা পড়ে যায়। বয়স মানুষকে আরো বেশি গম্ভীর করে তোলে। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক কিছুই করা হয়ে ওঠে না। এই ধরনের প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকা সত্ত্বেও কোনো কাজ না করতে পারার ফলাফল মানুষের জীবনের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এটা ধীরে ধীরে মানুষকে অসুস্থ করে তোলে। তাই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করার জন্য আপনার ভেতরের শিশুসত্ত্বাটিকে জাগ্রত করা প্রয়োজন। ছোট এই জীবনটাকে উপভোগ করা খুব কঠিন কোনো কাজ নয়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১১:০২
মনিরা সুলতানা বলেছেন: এই প্রসঙ্গে সেনেকার মত হলো, মানুষের তার জীবন নিয়ে বাস্তবসম্মত চিন্তা করা উচিত যা সে অর্জন করতে পারবে। নিজের সামর্থ্য আর ক্ষুদ্রতার বিষয় মাথায় রেখে কাজ করা উচিত। জীবন নিয়ে উচ্চাকাংখা দোষের কিছু না, কিন্তু যে স্বপ্ন বা যে কাজ আপনাকে স্বস্তি দেয় না, শান্তি দেয় না সেই স্বপ্নের পেছনে ছোটা অবশ্যই পরিত্যাগ করা উচিত। তার মতে, আমরা বড় স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে মৃত্যুর কথা ভুলে যাই, এমন সব অলিক লক্ষ্যের পেছনে ছুটি যা একজীবনে অর্জন করা কখনই সম্ভব নয়।