নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
ছিঁচকাঁদুনে....
সেই ছোট্ট বেলাতেই শুনেছি- আমি ছিঁচকাঁদুনে.... কথায় কথায় কাঁদি। আচ্ছা কেউ কখনো শখ করে কাঁদে? কান্নাতো ভেতর থেকে নিজেই ভসভসিয়ে বেরিয়ে আসে...আটকাতে পারিনা। আপনাদের অনেকেই পারেন আটকে রাখতে; কিন্তু যারা আমার দলে তাদের কেঁদেই সুখ।
খুব ছোট থাকতেই ভাই, বোন, কাজীন এমনকি পাশের বাড়ির কাউকে কিম্বা কাজের বুয়ার বাচ্চাকেও সামান্য বকা/ মার খেতে দেখলেই আমার কান্না পেতো। যারা বকা/মার খেয়েছে তারা হয়তো ফুঁপিয়ে কাঁদছে, আমি কিন্তু কাঁদতাম পাড়া মাতিয়ে। এমনকি গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়ালকেও আমার সামনে পিটুনি দেওয়া যাবেনা, তাহলে....। একবার মামার বাড়িতে এক ছিঁচকেচোর ধরে বাড়ির গেটের সামনের খুঁটিতে বেঁধে রাখা চোরকে দেখে হাত-পা ছাড়িয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়ে কান্না- 'ওকে ছেড়ে দাও.........'! আমার মরন কান্না থামাতে মামা বাড়ির সবাই তড়িঘড়ি করে চোরের বাঁধন খুলে দিয়ে একটা লুংগী, সুয়েটার আর পাঁচ টাকা দিয়ে চোরকে সসম্মানে বিদায় দিতে বাধ্য হয়েছিলো......
এ তো সামান্য মার কিম্বা বেঁধে রাখা দেখলে, কেউ মারা গেলে কি হত ভেবে নিন! মনে থাকার মতো জীবনে প্রথম মৃত্যু দেখেছি এক প্রতিবেশীর। মুর্দা খাটিয়ায় নিয়ে রওয়ানা দেওয়া মাত্র.......আমাকে ধরে বেঁধে বাড়ি পাঠাতে হয়েছিল। পাড়ার কেউ মারা গেলে আত্মীয় স্বজনের কান্না দেখে ওদের চেয়ে বেশী কাঁদতাম আমি। এমনকি রাস্তায় পড়া পশু পাখির দেহ পড়ে থাকলেও ...
সেই ছেলে বেলায় ছোট চাচার প্রশ্রয়ে আমাদের বাড়ীতে একজন বাউল এসে গান গাইতেন। বাউল শিল্পী যখন দরদী গলায় 'ও তোতা পাখিরে শিকল ছেড়ে উড়িয়ে দেবো- আমার মাকে যদি এনে দাও' গাইতেন তখন প্রথমে আমার চোখ চিকচিক করে উঠতো। তারপর হু হু করে কান্না বেরিয়ে আসতো আমার কারন...... আমি যে ছিঁচকাঁদুনে।
পরিবারের সবার সাথে জীবনে প্রথম সিনেমা দেখতে যাই ৭ বছর বয়েসে। আমি বুবুর হাত ধরে আছি শক্ত করে। শুরুতে পর্দায় ছবি নড়ছে, কথা বলছে দেখে খুব মজা...তারপর বুবুর কোলে মাথা রেখে ঘুম। হঠাৎ গালে গরম পানির ফোঁটা। চোখ মেলে আধো অন্ধকারেও বুঝতে পারি বুবু কাঁদছে। ব্যাস, হলভর্তি দর্শকের মধ্যে বুবু নিজের কান্না সামলাবেন না আমার? ছবির নাম সম্ভবত 'রূপবান'। অনেক গান আছে যা শুনলে, অনেক চলচ্চিত্র আছে যা দেখলে, অনেক নাটক, কবিতা-গল্প-উপন্যাস পড়লে এখনও কান্না চেপে রাখতে পারিনা। ছোটবেলায় কাঁদতাম প্রকাশ্যে, এখন কাঁদি আড়ালে- লুকিয়ে। এইতো, যেদিন আমার প্রিয় পোষা টিয়া পাখিটা মারা গেল, আমার হাতে থাকা অবস্থায়। পারিনি, চোখের পানি আটকাতে... সপ্তাহ খানেক শুধু কেদেছিলাম।
আমাদের ছেলে বেলা কেটেছে বৃহত্তর যৌথ পরিবারে। মেঝো চাচার বদলির চাকরি......চাচাতো ভাই- মোহন আমার চাইতে ৩ বছরের বড় হলেও আমরা দুজন মানিকজোড়। পড়তে বসা, গোসল, খাওয়া, খেলা, গল্প সবই একসাথে। হঠাত মেঝো চাচা ময়মনসিং বদলী হয়ে ওখানকার স্কুলে মোহনকে ভর্তি করে চাচী আর মোহনকে নিয়ে যাওয়ার সময় মোহন একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে যন্ত্রের মতন তার সব জিনিস পত্র গুছিয়ে নিতে নিতে করুন চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছিল...যেন কিছু বলতে চায়, কিন্তু পারছেনা। ঘর থেকে বেড়িয়ে স্টেশনে যাবার মুহুর্তে মরিয়া হয়ে সেই কথাটা বড়ো চাচীকে বলে ফেললো- "বড়ো চাচী, বাবাকে বলোনা আমি এখানেই থাকবো, মন দিয়ে লেখা পড়া করবো দুষ্টুমি করবোনা......"। আমার সহ্য হয়নি, আমি আর ওখানে থাকতে পারিনি........আড়াল চাই.........নীরবে কাঁদার জন্য একটা আড়াল। কারন আমি কাঁদতে না পারলে আমার কষ্ট কমবেনা।
প্রায় ৬৪ বছরে জীবনের অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়েছি, অনেক প্রিয় জনকে হারিয়েছি চিরতরে। পরিবারে রক্তের সম্পর্কীয় আমার চাইতে বড়ো সদস্য আছেন মাত্র একজন। এক এক সময় এমন আঘাতও এসেছে যখন মনে হয়েছে- বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন! তবু আজও বহাল তবিয়তে বেঁচে আছি.........ভবিষ্যতের দিকে নিশ্চিন্ততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছি। কারন, আমি পাষাণ নই, আমি কাঁদতে পারি, আমি ছিঁচকাঁদুনে; চোখের পানি দিয়ে সব দুঃখকে ধুয়ে ফিকে করে দিতে পারি। আমি কাঁদবো.....
....সাত বছরের নাতনীর পুতুলের হাত ভেংগে যাওয়ায় নাতনীর কান্না দেখে নাতনীর সাথে আমিও কাঁদবো,
যে কারোর দুঃখে কাঁদবো, মৃত্যুতে কাঁদবো, রেগে গিয়ে কাঁদবো, আনন্দে কাঁদবো, ভালোবেসে কাঁদবো..... কাঁদবো লুকিয়ে লুকিয়ে..... বড় হয়েছি না, তাই কান্নাকে সবার সামনে আনা যাবেনা। তারপরও কেউ কাঁদতে দেখে ফেললে বলবো- "না মানে ইয়ে, চোখে মনে হয় কিছু পড়েছে"।
আমি ছিঁচকাঁদুনে থাকবো চিরকাল, আজীবন।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:০৫
জুল ভার্ন বলেছেন: আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি- সৎ সহজ সরল মানুষগুলোই ছিঁচকাঁদুনে হয়। শরতচন্দ্র চট্টপধ্যায় এবং হুমায়ুন আহমেদের অনেক লেখায়ও এই বিষয়ের সত্যতা তুলে ধরেছেন।
২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:০৮
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: বেশি বেশি কাঁদলে নাকি মন ও হার্ট ভাল থাবে
ভাল থাকবেন দাদা
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:০৯
জুল ভার্ন বলেছেন: স্বাস্থ্য বিষয়ক জার্নাল ল্যানসেটে পড়েছিলাম- হাসি এবং কান্না দুটোই শরিরের জন্য উপযোগী।
৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:২১
জটিল ভাই বলেছেন:
আচ্ছা, আপনার বিয়ের দিন কি দুজনের মাঝে কান্না প্রতিযোগিতা হয়েছিলো? না মানে আপনিতো কান্না দেখলেই........
সত্যি আপনার মনটা বড্ড কোমল
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩২
জুল ভার্ন বলেছেন: অনেস্টলী বলছি- কেঁদেছিলাম....কারণ, আমি এতিম.....জন্মের সময় মাকে হারিয়েছি। একমাত্র বুবু যার আদরে স্নেহে জীবনের ১৯ বছর কাটিয়েছি- তিনিও নেই, বাবা অনেক দূরে। কোনো প্রিয় স্বজন, আমার জন্য কেউ বিয়ের আয়োজন করেননি.....
৪| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩৭
জটিল ভাই বলেছেন:
দুঃখিত প্রিয় ভাই। আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাচ্ছি। না জেনে মজা করতে গিয়ে কষ্ট দিয়ে ফেললাম
তবে নিজে এতোটা দুঃখী হিসেবে রিপ্রেজেন্ট না করলেও পারেন। আলহাম্দুলিল্লাহ্ এই জীবন নিয়ে আজ ৬৪ বছর অতিক্রম করছেন মাশাল্লাহ্।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৪২
জুল ভার্ন বলেছেন: প্রিয় ভাই, আমি কিন্তু মোটেই দুঃখ পাইনি বরং সহজ সরল ভাবেই আপনার প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। আর সব কিছু মিলিয়ে আমি অসুখী নই। আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন যখন যেভাবে রেখেছেন- শুকরিয়া জ্ঞাপন করে মেনে নিয়েছি। আর একটা কথা, আমার কিছুটা "দুঃখ বিলাশ" আছে, যা সকল ছিঁচকাঁদুনে চত্রিত্রের মানুষেরই থাকে!
৫| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০৩
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
এই সমাজে ছেলে কান্নাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়না। ছেলে মানুষ কেন কাদবে ! আর বাবা ছেলেরা কি রোবট নাকি ?
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০৭
জুল ভার্ন বলেছেন: কান্নায় কি আবার জেন্ডার বিবেচনা হয়!
৬| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৩৮
বিষাদ সময় বলেছেন: ভাল লাগল আপনার পোস্টটি পড়ে। তবে দ্বন্দে পড়ে গেলাম কে বেশি কাঁদতে পারে আপনি না আমি।
আমার সম্পদ ছিল দুটি একটি মা অপরটি কান্না। মা চলে গেছেন, কন্নাটা রয়ে গেছে।
আশ্চর্যজনক বিষয় হঢ্ছে মা চিরদিনের জন্য চলে যাওয়ার পর দশ দিন চোখে কোন কন্না ছিলনা। তারপর থেকে আজ ৮মাস ধরে কাঁদি, কখনো জোরে, কখনো নীরবে চোখের জলে। ধন্যবাদ।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৪৮
জুল ভার্ন বলেছেন: রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।
আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন আপনাকে শোক শক্তিতে পরিনত করার তৌফিক দান করুন।
৭| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৫৯
কামাল৮০ বলেছেন: অসহায় কারো দুঃখ দেখলে এখনো চোখে জল চলে আসে।শব্দ করে কাঁদিনা বহু বছর।অত্যাচারির দঃখ দেখে কান্না আসেনা।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫০
জুল ভার্ন বলেছেন: কোমল হৃদয় না হলে কান্না আসেনা।
৮| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:১২
ল বলেছেন: আবেগি মানুষের মন বিশাল হয়।।।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫১
জুল ভার্ন বলেছেন: একমত।
৯| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৫
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার লেখাটা মোবাইলে দু'বার পড়েছি।
ছোট বেলায় আপনি দাদ বাড়িতে ছিলেন?
এমন কাঁদুনে পুরুষ আমি একটাও দেখিনি!! কোন নাটক সিনেমার আবেগী দৃশ্যে এখনও আমাকে কাঁদায়। চেষতা করেও জল সংবরণ করতে পারি না।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৯
জুল ভার্ন বলেছেন: আমরা আমাদের বৃহত্তর যৌথ পরিবারে(বাবা এবং তিন চাচার পরিবার) থেকেছি আমার ৮ বছর বয়স পর্যন্ত। তারপর আমার ছয় বছরের বড়ো বুবুকে নিয়ে সৎ মায়ের সঙ্গে...... নিজেদের একক বাড়িতে থেকেছি.....কখনো আমার মামা-মামীর বাড়িতে.....ক্লাস ফোর থেকেই আমি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছি....আমার দাদা দাদী ইন্তেকাল করেন আমার আব্বার ইয়াং বয়সে।
১০| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:০১
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ছেলেরাও কাঁদে। অনেক সময় কাঁদার দরকারও আছে। এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তবে হরমোনগত পার্থক্যের কারণে মেয়েদের কান্নার প্রবণতা ছেলেদের চেয়ে বেশী।
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:২৫
জুল ভার্ন বলেছেন: কান্নায় অনেক আবেগ যেমন প্রশমিত হয় তেমনি মিডিয়ার সামনে কান্নার অভিনয় করেও করেও কেউ কেউ আবেগটাকে হাস্যকর করে ফেলেছে। মেয়েদের কান্না অনেকটাই অসুখের মতো। সিনেমায় শাবানার কান্না দর্শকদের হাসির খোরাক জোগায়। সব থেকে অস্ফুট কান্নায় বেশী কষ্ট।
১১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:৩৮
সোহানী বলেছেন: নাতনী ভালো আছে তো?
ও বাই দা ওয়ে, আমি ছিঁচকাদুনে নই । এ খেতাব আমার বড় বোনের।
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৩২
জুল ভার্ন বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ নাতনী ভালো আছে। ওর একটা দাঁত পরেছে,আরও একটা নড়ে.....দাঁত কালেকশান করার জন্য খুব সুন্দর একটা বক্স নিয়েছে......যেটাকে যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখে!
বড়ো বোনেরা একটু বেশীই সেনসেটিভ হয়, আর ছোটো বোন সোহানী ডাকুবাকু
১২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৩২
আরোগ্য বলেছেন: পুরান ঢাকার ভাষায় ফেত কান্দুনি/ কান্দুইনা। ইহা আমার ছোট বেলার উপাধি। বর্তমানে উপাধি বলবৎ না থাকলেও অভ্যাসটা বোধ হয় আছে।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:১৬
জুল ভার্ন বলেছেন: পুরনো ঢাকার লোকেরা বলে "ফ্যাতকান্দুনি" এবং "মৌয়াইত্যা কুওইল"/ "মৌয়াইত্যা কান্দন"
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৫৯
জুন বলেছেন: ছোট বেলা থেকে আমারও ছিচ কাদুনে উপাধি ছিল। একটুও ডাকুবুকো ছিলাম না আমার ছোট বোনের মত৷ এখনো না :'(