নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে........
ফ্ল্যাট বাড়ি মানেই নিজ নিজ ফ্ল্যাটের মধ্যেই নিজ নিজ পৃথিবী। তারপরেও অনেক সময় কিছু শব্দ, কিছু সূর ক্ষণিকের জন্য হলেও নস্টালজিক করে তোলে। আমি ফজরের নামাজ আদায় করে ছাদে হাটতে যাই। পাঁচ তলা থেকে দশ তলায় হেঁটে উঠি, লিফট ব্যবহার করিনা। সাত তলায় এক ফ্ল্যাটে পঞ্চম শ্রেনী পড়ুয়া এক কিশোরী গান শেখে। প্রতি দিন খুব সকালে উঠে রেওয়াজ করে- আমি কিছুক্ষণ ডাঁড়িয়ে ওর গান শুনি। আজ লতা মংগেশকরের একটা গান তুলছে- "আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে........."- শুধু হারমোনিয়ামের সুরে গান গাওয়া শুনতে ভিন্ন রকম ভালো লাগা। এমন ভোর বেলা তা আরও শ্রুতিমধুর!
ছেলে বেলায় আমাদের বাড়িতেও গানের চর্চা ছিলো। শিশু কালে বৃহত্তর যৌথ পরিবারের ৫/৬ জন শিশু কোরাস গাইতো.....
"প্রজাপতি, প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা...টুকটুকে লাল নীল ঝিলিমিলি আঁকাবাঁকা"৷
কিম্বা-
"ওরে গৃহবাসী খোল্, দ্বার খোল্, লাগল যে দোল। স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল।
দ্বার খোল্, দ্বার খোল্॥
রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে,
রাঙা নেশা মেঘে মেশা প্রভাত-আকাশে,
নবীন পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল।
দ্বার খোল্, দ্বার খোল্॥"- কী অপূর্ব সুন্দর শিশুতোষ গান!
তখনকার দিনে সকাল/সন্ধ্যায় যে কোনও পাড়ায় হাঁটাহাঁটি করলে কোনো না কোনো বাড়িতে কিশোরী/ তরুণীদের গলা সাধার আওয়াজ শোনা যেত প্রচুর। এখন তা কদাচিত কালের নিয়মে। যেমন কমে এসেছে পাড়ায় আনাচে কানাচে গানের স্কুল। মেয়েরা কি আর বাড়িতে বেশি গান শেখে না? শিখলেও সেভাবে রেওয়াজ করে না? হয়তো তাই। হয়তো প্রতিবেশীদের বিরক্তির কারণ হতে পারে ভেবে অন্য ঢংয়ে রেওয়াজ করে! আমার গান শেখা হয়নি, তবে সংগীতের উপর বেশ কিছু বই পড়ে সংগীতের খুটিনাটি সম্পর্কে একটা ধারণা অর্জন করতে পেরেছি....
আগে ‘সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি’ সরগম নানা রকম ভাবে গেয়ে, গলা তৈরি করে শিক্ষানবিশ শিল্পী গাইতো- ‘আকাশপ্রদীপ জ্বলে’।
কিন্তু কেন, কী কারণে ওই নিখুঁত বিরহের গান ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে’ কমবয়সী ছাত্রীদের প্রথম শেখানো হচ্ছে, মাথায় ঢুকত না! এ বয়সে এ গান কাউকে শেখানো উচিত? সাতসকালে সন্ধ্যার আবহে গান শেখানোরই বা কী দরকার?
লতা মঙ্গেশকরের সেই গান শুনতে শুনতে মনে হয়, আবেগের চেয়ে এখানে স্টাইলটাই হয়তো গানের শিক্ষকদের টানে বেশি। সুরকার সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সহজিয়া গানের স্টাইল তরুণীদের শেখানো অনেক সহজ। নইলে গীতিকার পবিত্র মিত্র একেবারে চূড়ান্ত প্রেম-বিরহের স্টাইলে গেয়েছিলেন এ গান। এটাই ছিল বাংলায় লতার প্রথম গান (পুজোয় নয় অবশ্য)। সতীনাথের এই সহজিয়া সুর কিন্তু গাওয়া একদিক দিয়ে কঠিন।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তাঁর স্মৃতি কথায় লিখেছিলেন- তিনি লতা মঙ্গেশকর ফোন করে তাঁর কাছে শুনতে চেয়েছিলেন, ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে- গানটি- তিনি সন্ধ্যা মুখোপয়াধ্যায়কে ফোনে গানটি গেয়ে শুনিয়েছিলেন- এটাই একজন মহান শিল্পীর প্রতি আর একজন মহান শিল্পীর শ্রদ্ধাবোধ’। সতীনাথ মুখোপধ্যায়ও অনেক অনুষ্ঠানে এ গান গাইতেন, এমন আবেদন ছিল জনতার কাছে।
‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে,
আমার নয়ন দু’টি শুধুই তোমারে চাহে
ব্যথার বাদলে যায় ছেয়ে।’
তিনি লিখেছেন- "গাওয়ার শুরুটাই হয়েছিল প্রিল্যুডে বাঁশির ব্যবহারে। প্রথম লাইনের পরে বাঁশির তিনটি হালকা স্বর বাংলা গানে অন্যতম মাইলস্টোন হয়ে রয়েছে। ছোটবেলায় অনেকের মনের মধ্যে ওই বাঁশির ইন্টারল্যুড গেঁথে গিয়েছিল। এ গান গাইলে অনেকে গাইতে গাইতে গানের লাইনের সঙ্গে গেয়ে উঠতেন, ‘পুপ পুপু পু’।
ও ভাবে ওই আওয়াজ ফিরে আসত মাঝে মাঝেই।
‘বয়ে চলে আঁধি আর রাত্রি
আমি চলি দিশাহীন যাত্রী
দূর অজানার পারে
আকুল আশার খেয়া বেয়ে’।
তারপর আবার সেই বাঁশির সরল সুর। বাংলা গানে অজস্র প্রিল্যুড এবং ইন্টারল্যুড এ ভাবে বাঙালির মননে ছাপ ফেলে গিয়েছে। সে গান মনে করলে এ সব সুর মনে পড়বেই। গানের মতোই প্রিয় থেকে গিয়েছে গানের মাঝের ও শুরুর সুর।"
‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে’ যেমন মাঝখানে বদলে গিয়েছে সুর এবং ইন্টারল্যুডের ধারা। তখন বাঁশি অন্য সুরে গিয়েছে। গানের ভাবনাও চলে গিয়েছে অন্য পথে।
‘কত কাল আর কত কাল
এই পথ চলা ওগো চলবে
কত রাত এই হিয়া
আকাশ প্রদীপ হয়ে জ্বলবে’
একেবারে সবে গান শিখতে শুরু করা কিশোরী কিভাবে বুঝতে পারবে এই লাইনগুলোর আসল মর্ম? কী ভাবে তুলে আনবে নিজস্ব সুরে? তবু গানের শিক্ষকদের কল্যাণে, বারবার হস্তক্ষেপে তুলে নিয়েছে সে গান। যত কঠিন সে কথাই হোক, যথেষ্ট আবেগ দিয়েই গেয়েছে-
‘কোনও রাতে মনে কি গো পড়বে
ব্যথা হয়ে আঁখি জল ঝরবে
বাতাস আকুল হবে
তোমার নিঃশ্বাসটুকু পেয়ে।’
লতা মঙ্গেশকর এমনই এক দূরের তারা। যে কিশোরী প্রথম গান শিখতে শুরু করেছে, তার ‘নয়ন দুটি শুধু তাঁকে চাইবে।’ তাঁর কথা ভাবলে, ‘ব্যথার বাদলে ছেয়ে’ যেতে পারে নয়ন। যদি লতার কাছে পৌঁছনো যায়। প্রেমিকের উদ্দেশে গান তখন হয়ে উঠতে পারে লতার প্রতি নিবেদনের গান।
০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৯
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
"চমৎকার লিখে" কি লাভ! ৭৫ বার পঠিত পোস্টে আড়াই ঘন্টায় আপনিই একমাত্র মন্তব্যকারী ব্লগার!
২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: গতকাল রাতে কন্যাকে ঘুম পাড়াচ্ছি।
কন্যা বলল, বাবা গান গাও। অর্থ্যাত তাকে গান গেয়ে ঘুম পাড়াতে হবে। আমি গান গাইতে গেয়ে দেখি কোনো গান মনে পড়ছে না। গানের সুর একদম ভুলে গেছি। অথচ একসময় আমার কত গান মুখস্ত ছিলো।
০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০৯
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি অসংখ্য গানের দুই এক লাইন মনে করে কবিতার মতো বলতে পারি-কিন্তু গাইতে পারিনা। আমাদের নাতনী আমাকে গল্প বলতে বলে- আমি প্রতিদিনই একই গল্প বলি। যে গল্পের রাজা রিকসা চালায়, আর রানী কাজের বুয়া, কিম্বা ভিক্ষুক! আমার নাতনী আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে- কোনো রাজা-রানী ভিক্ষা করেনা, কাজের বুয়াও না।
৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৫৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: গান নিয়ে চমৎকার একটি কাব্যিক আলোচনা। ভালো লেগেছে। + +
সঙ্গীত নিয়ে আপনার বেশ ভালো জ্ঞান আছে, তা এই লেখা পড়ে বোঝা যায়।
মন্তব্য, পাঠসংখ্যা কিংবা প্লাস এর দিকে তাকাবেন না। সব ভালো জিনিসের কদর সবাই বোঝে না। অতএব ঐ সংখ্যাগুলো যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, এ নিয়ে ভাববেন না। সুন্দর শিরোনামে লেখা এ পোস্টটা এ ব্লগ যতদিন থাকবে, ততদিনই সঙ্গীতানুরাগী, সাহিত্য অনুরাগী পাঠক কে মুগ্ধ করে যাবে।
০৭ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৪১
জুল ভার্ন বলেছেন: আপনি অনেক বড়ো মনের মানুষ বলেই এমন উদার চিত্তে প্রসংশা করতে পারেন। আমি লক্ষ্য করেছি, যাদের লেখায় আমি অনেক প্রসংশা করি তেমন অনেক ব্লগার ভালো লেখা এড়িয়ে যায় জাস্ট সংকীর্ণ মানসিকতার জন্য....ব্লগের পাঠক সংস্কৃতিও এখন ভুলভাল লেখা তরকারি-ফ্যাশন মার্কা লেখকদের মতো হয়ে গিয়েছে....
অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় স্বজন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৭
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- চমৎকার লিখেছেন।