নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
ঘুড়ি উড়ানো.....
ছেলেবেলা ফিরে ফিরে আসে নানান ভাবে .........
"এখন বয়স হয়েছে, অতএব..." - এমনটা নয়, অন্ততঃ আমার জন্যে৷ ছেলেবেলা আমি ফিরে পেয়েছি সারা জীবন ধরেই, বারে বারে, ছোট ছোট ঘটনার মধ্যে দিয়ে- এমন কি নানান গন্ধেও৷ পোড়া পেট্রোলের গন্ধ, মার্বেল খেলা, লাটিম ঘোরানো, বৃষ্টি কর্মদাক্ত মাঠে ফুটবল খেলা, ভরা ভাদরে পানিতে টইটুম্বুর লেকে এমনকি বুড়িগঙ্গায় সাতার কাটা... এ সব দিয়ে ভরানো ছিল আমার ছেলেবেলা৷
আজকাল যেমন আবার পাচ্ছি- রোজ বিকেলে ছাদে গিয়ে নাতনীর ঘুড়ি ওড়ানোর ভেতর দিয়ে ... ৷
আমাদের অনেক আত্মীয়স্বজন পুরনো ঢাকায়। পুরনো ঢাকা মানেই নানানরকম উতসব! সাইকেল নিয়ে লালবাগ কেল্লা সংলগ্ন ফুফুদের ডজ ইন্ডাস্ট্রি চলে যেতাম। সেই বাড়ি থেকে কাজীনদের সাথে ঘুড়ি নিয়ে চলে যেতাম লালবাগ কেল্লার মাঠে- পৌষ মাসে গোটা পুরনো ঢাকার সব বাড়িতেই ছোটবড়ো সবার হাতে ঘুড়ির নাটাই! সেই জীবনে কী সব উন্মাদনা ছিল!
অ্যারারুট গুলে, তাতে গুঁড়ো করা কাঁচ মিশিয়ে আমার থেকে বয়সে বড় দুই ফাফাতো ভাই মিলে সুতোয় 'মাঞ্জা' দেওয়া, তারপর অন্যের ঘুড়ি কেটে দেওয়ার সুখ আর নিজেদের ঘুড়ি ভো কাট্টা (কোনো ঘুড়ি কাটা পরলেই চারিদিক থেকে উল্লাশ/চীতকার ভেসে আসতো- "ভক্কাডা" বলে) হওয়ার গভীর শোক! আবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজোর সময় কুল গাছের কাঠ পুড়িয়ে ছাই তৈরী করে তাতে হরেক মশলা মিশিয়ে বাজি বানানো(তখনকারদিনে পুরনো ঢাকার প্রায় সব তরুণেরাই বাজি বানাতে পারতো, আমার ফুফাতো ভাইরাও বড়োদের চোখ এড়িয়ে সেই বিদ্যা অর্জন করে ব্যাপক মার খেয়েছিলো)... সে ছিল এক স্বপ্নের জীবন!
ঘুড়ি ওড়ানো আর প্যাঁচ খেলা যে একটা আর্ট তা শিখেছিলাম মিঠুদার কাছেই।
ঘুড়ি ওড়ানোর চেয়েও আমাদের বেশী নেশা ছিল সুতা কাটা ঘুড়ি ধরা। সুতা কাটা ঘুড়ি ধরায় এক ধরনের থ্রিল, রোমাঞ্চ- কোন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের তুলনায় কম নয়। মেঘের ঢেউয়ে ভেলার মত ভেসে যাওয়া ঘুড়ি ধরার জন্য আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত ছিলাম।
আজ সে কৈশোর আর নেই। রাতের তারার মতন দিনের আকাশে ঘুড়ি ফুটে থাকা নেই। এখন শৈশবের পরেই যৌবন। ঘুড়ি নেই, লাটাই নেই, মাঞ্জা নেই। আছে Facebook , WhatsApp , Twitter । ১৫/২০ তলার হাইরাইজ ছাদ আছে কিন্তু সেই ছাদে লাটাই ধরা কৈশোর নেই। জানিনা আবার কোনও প্রজন্মের কিশোররা হাতে লাটাই তুলে নেবে কি না? তবে একথা বেশ জানি কৈশোরকে বাদ দিয়ে এসেছে যে যৌবন, সেই যৌবন আক্ষেপ করার সুখানুভুতি থেকে বঞ্চিত। মাঞ্জা সুতোর ধারে কেটে যাওয়া আঙুলে ব্যথার থেকে সুখ অনেক বেশী ছিল। অনেক সুতো সমেত একটা ময়ুরপঙ্খী ঘুড়ি ধরতে পারার উত্তেজনা ভিডিও গেমস খেলার থেকে অনেক বেশি ছিল।
আজ আর সেদিন নেই, তবে এখনও মনের আকাশে ভেসে ওঠে লাল, নীল, হলদে, সবুজ ঘুড়ির মেলা।
ঘুড়ি বয়সে খুব প্রাচীন৷ ঘুড়ির ইতিহাস ঘেটে যানা যায়- এর উদ্ভব খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে- চীন দেশে- Mozi আর Lu Ban-নামের আবিষ্কারকের হাত ধরে৷ চীনদেশ থেকে ঘুড়ি ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়ে কম্বোডিয়া, ভারত, জাপান, কোরিয়া হ'য়ে পশ্চিমের দেশগুলিতেও৷ বেশ কয়েক বছর আগেও কম্বোডিয়ার Siem Reap শহরে দেখেছি রংবাহারী, রকমারি ঘুড়ির কেনাবেচা৷পাকিস্তানের লাহোরে, ভারতের দিল্লিতে ঘুড়ি উতসবে ঘুড়ির সূতায় কাটা পরে অসংখ্য মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা দেখেছি, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও শুনেছি।
শুনেছি, Wright Brothers যে এরোপ্লেন তৈরী করেন, তার প্রেরণাও ঐ ঘুড়ি৷
ইদানীং ঘুড়ি যে আমাকে আবার ভাবাচ্ছে, তার পেছনে নাতনীর ঐ ঘুড়ি নিয়ে মাতামাতি ... যার অংশীদার আমিও, অনেকদিন পরে৷
১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:২৪
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি ঘুড়ি ওড়ানো দেখতেই বেশী পছন্দ করতাম- তবে ভালো ওড়াতে পারতাম না। কেটে যাওয়া ঘুড়ি দৌড়ে ধরতে পারতাম। যেহেতু ভালো ঘুড়ি ওড়াতে পারতাম না, তাই আমার প্রতিযোগিতা ছিলো- দিন শেষে কয়টা কাটা ঘুড়ি সংগ্রহ করতে পারলাম!
২| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:২৬
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
আপনি যখন বুঝবেন, ঘুড়ি আপনার কথা শুনছে,তখন ঘুড়িকে আরও আপন মনে হবে।
১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৩০
জুল ভার্ন বলেছেন: এই কথা বোধকরি সকল খেলার জন্যই প্রজোয্য। ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, টেনিশের ক্ষেত্রেও তেমন। আউটডোড় খেলাধূলার জগতে হকি এবং বাস্কেটবল আমার কথা শোনতো!
৩| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:০৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ছোটবেলায় আমার সুন্দর সুন্দর ঘুড়ি ছিল। কিন্তু আমি ওড়াতে পারতাম না। আমার ঘুড়ি অন্যরা ওড়াতো। আমার দেখতেও ভালো লাগতো। আহা , শৈশবের কিছুটা বিকেল......
আপনি ছেলেবেলা নিয়ে লিখছেন। ভালো লাগছে পোস্ট গুলো।
১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:২৬
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি ঘুড়ি ওড়াতে তেমন পটু ছিলাম না, কিন্তু রং বে রঙের ঘুড়ি সংগ্রহ করার নেশা ছিলো। একই ভাবে আমি বার্মেল খেলতাম না, তবে মার্বেল সংগ্রহ করতাম।
আমার লেখালেখি মূলত বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক হলেও আত্মজৈবিক তথা বায়োগ্রাফিক লেখা পড়তে এবং লিখতে পছন্দ করি।
৪| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৫
মনিরা সুলতানা বলেছেন: সে এক সত্যি ই অন্য রকম আনন্দময় অভিজ্ঞতা।
পুরানো ঢাকার ঘুড়ি উৎসব তো স্মৃতিময়।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৪৮
জুল ভার্ন বলেছেন: কোনো বিশেষ উতসবের দরকার নাই, বছর জুড়েই পুরোনো ঢাকার কোথাও না কোথাও ঘুড়ি উড়তে দেখা যাবেই।
৫| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমার পুরো বাল্যকালটাই গেছে ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে। খুব করুণ স্মৃতি আছে এই ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে। ব্লগে এ নিয়ে গল্পও আছে আমার ঘুড়ি উড়ানোর উপর।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৫১
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি তেমন একটা ঘুড়ি উড়াতে পারতাম না, তবে কাটা ঘুড়ি দৌড়ে ধরতে পারতাম- আমার সময়সাময়ীক অনেকের চাইতেই বেশী। একবার 'মাজ্জা দেওয়া' ঘুড়ির সুতায় আমার হাত কেটে রক্তারক্তি অবস্থা হয়েছিলো!
৬| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫০
রাজীব নুর বলেছেন: আমার মা ছিলো ভীতু। আমাকে ঘুড়ি উড়াতে দিতো না। বলতো ছাদ থেকে পড়ে যাবি।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৯
জুল ভার্ন বলেছেন: যেহেতু আমার মা ছিলেন না, তাই বুবুই আমাকে যক্ষের ধরনের মতো সব কিছু থেকে আগলে রাখতেন...
৭| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: কাচের গুড়া এবং আরও অনেক কিছু দিয়ে বড়দের ঘুড়ির সুতায় মাঞ্জা দিতে দেখেছি। আমি কিছুদিন ঘুড়ি উড়িয়েছি। তবে আমার বড় ভাই ঘুড়ি ওড়ানোতে খুব দক্ষ ছিল। অন্যের কেটে যাওয়া ঘুড়ির পিছনে দৌড়ে ঘুড়ি ধরা খুব ভালো লাগতো। আকাশে ঘুড়ি একদিকে কাত হয়ে গেলে আমরা বলতাম কান্নি খাওয়া। এই কান্নি খাওয়া থামানোর জন্য ঘুড়িতে হাল্কা ঘাস বেঁধে ভারসাম্য ঠিক করার চেষ্টা করতাম।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৪
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি ভালো ঘুড়ি ওড়াতে পারতাম না। তবে কাটা ঘুড়ি দৌড়ে ধরতে আমার জুড়ি ছিলো না। যখন কারোর ঘুড়ি কাটা পরতো তখন আমরা সমস্বরে চিতকার করে বলতাম- "ভক্কাডা"!
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:১৭
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- ওরে ওরে ওরে, ঘুড়ি উড়ানোর আনন্দ এক দিকে আর বাকি সব খেলার আনন্দ অন্যদিকে ভাইজান।
- ঘুড়ি কেটে দেয়ায় আমি আর আমার এক বন্ধু বিপ্লাব ছিলাম ওস্তাদ। দিনে আমার ৩টা কাটা গেলে আমি অন্ততো ১৫-২০টা কেটে দিতাম। আমার বিরুদ্ধে একজোট হয়েও আমাকে থামাতে পারে নাই।