নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
জোয়ান বায়েজ......
আমাদের কৈশোরে তারুণ্যে এবং যৌবনে ওয়েস্টার্ন মিউজিকের আদর্শ ছিলেন- এল্ভিস প্রেস্লি (জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৩৫, মৃত্যু ১৬ আগস্ট ১৯৭৭), পিট সীগার (জন্ম ৩ মে, ১৯১৯, মৃত্যু ২৭ জানুয়ারি, ২০১৪), জর্জ হ্যারিসন (জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, মৃত্যু ২৯ নভেম্বর ২০০১), জন লেলন, জন্ম ৯ অক্টোবর ১৯৪০, মৃত্যু ৮ ডিসেম্বর ১৯৮০) বব ডিলান (জন্ম ২৪ মে, ১৯৪১)। উল্লেখিত লিজেন্ডারি শিল্পীরা শুধু গানের জন্যই বিখ্যাত নন, তারা প্রত্যেকেই বহুধা মানবিক গুণে গুণান্বিত বলেই বিশ্ব বিখ্যাত হয়েছেন। এই বিখ্যাতদের মধ্যে জন লেলন এবং জোয়ান বায়েজ ছাড়া অন্যদের নিয়ে এই ব্লগে বিভিন্ন সময় লিখেছি.... আজ লিখছি জোয়ান বায়েজ কে নিয়ে......
জোয়ান বায়েজ একজন মার্কিন ফোক গায়িকা ও সমাজকর্মী। তিনি ১৯৪১ সালে নিউইয়র্কের স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আলবার্ট বায়েজ মেক্সিকান। বায়েজের দাদা ছিলেন ক্যাথলিক চার্চের ধর্মগুরু রেভারেন্ড অালবার্টো বায়েজ। তিনি ক্যাথোলিক ধর্ম ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন যখন আলবার্টের বয়স দুই বছর।
জোয়ান বায়েজের মা "জোয়ান সিনিয়র" বা "বিগ জোয়ান" নামে পরিচিত, তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন চান্দসের ডিউকের বংশধর। জোয়ান সিনিয়র এবং আলবার্ট এর বিয়ের পর তারা ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে যান। বায়েজের দুই বোন, বড় জন পলিন এবং ছোটো জন মিমি। মিমি ২০০১ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতে ক্যান্সারে মারা যান।
জোয়ানের বাবা ইউনেস্কোর জব সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর ছাড়াও জোয়ানের পরিবারকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যে বাস করতে হয়।
উপহার পাওয়া একটি গীটারে জোয়ান বায়েজ ৪টি কর্ড বাজাতে শেখেন যা দিয়ে তিনি রিদম এবং ব্লুজ বাজাতে পারতেন। ৮ বছর বয়সে তিনি ফোক গায়ক পিট সীগারের কনসার্ট দেখে মুগ্ধ হন এবং ফোক গানের অনুরাগী হন। জোয়ান বায়েজের পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে নিউপোর্ট ফোক ফেস্টিভালে। তার রেকর্ডিং ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৬০ সালে। তার প্রথম তিনটি অ্যালবামে নাম "জোয়ান বায়েজ", "জোয়ান বায়েজ ভলিউম ২", "জোয়ান বায়েজ ইন কনসার্ট", সবগুলো 'গোল্ড রেকর্ড' মর্যাদাপ্রাপ্ত হয় ও বিভিন্ন চার্টে দুই বছর টপ র্যাকিং ধরে রাখে।
জোয়ান বায়েজ ইংরেজির পাশাপাশি স্প্যানিশেও দক্ষ। এই দুই ভাষার পাশাপাশি আরো অন্ততঃ ছয়টি ভাষায় গান রেকর্ডিং করেছেন। ৫৩ বছরের পেশাদার সংগীত জীবনে তিনি ৩০টির বেশি অ্যালবাম প্রকাশ করেন। শুধু গান নয়, সকল অন্যায় অসংগতির বিরুদ্ধ কন্ঠস্বর জোয়ান বায়েজ। যখন যেখানে কোনও অন্যায়, অবিচার বা অনর্থ ঘটেছে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সে যুদ্ধ হোক, রাজনৈতিক আন্দোলন হোক, এমনকি সমকামীদের অধিকারের পক্ষে রুখে দাঁড়ানো হোক বা পশুপ্রাণীদের রক্ষা হোক।
সামাজিক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডঃ মানবাধিকার এবং সমাজ সেবায় জোয়ান ক্যারিয়ারের শুরুতেই জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠায় তিনি অবদান রাখেন এবং তখন থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে সহায়তা করছেন। তিনি বলেন- "সমাজ সেবাই তার জীবনের ব্রত, গানের থেকে এটা বড়।"
যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধঃ
ভিয়েতনামের যুদ্ধের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি ১৯৬৭ সালে ২ বার গ্রেপ্তার হন। মার্কিন সরকারকে ট্যাক্স দিতে অস্বীকার করে রেভেনিউ সার্ভিসের কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি বলেন, "আমি যুদ্ধে বিশ্বাসী নই, আমি যুদ্ধের অস্ত্রে বিশ্বাসী নই, আমি আমার বছরের আয়করের ৬০% অস্ত্রের জন্য খরচ হতে দেবো না, তাই আমি ট্যাক্স প্রদান করবো না"।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ
১৯৭১ সালে মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ নামক বিখ্যাত কনসার্টে "স্টোরি অফ বাংলাদেশ" গানটি পরিবেশন করেন। গানটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, পাকিস্তানের গণহত্যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ত্রহীন ছাত্রদের হত্যার কথা উঠে আসে। ১৯৭২ সালে "সং অফ বাংলাদেশ" নামে গানটি প্রকাশ করেন। পুরো গানটিতে ২২ বার বাংলাদেশ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে।
অন্তরের সবটুকু দরদ ঢেলে বাংলাদেশের জন্য গান গেয়েছেন জোয়ান। 'সং অব বাংলাদেশ' শিরোনামের গানটি রচনার প্রেক্ষাপট ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত। সেই রাতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর রক্তপিপাসু হিংস্র পাকিস্তান বাহিনীর নৃশংসতায় ক্ষুব্ধ হন, আহত হন জোয়ান। ব্যথিত হৃদয়ে হাতে তুলে নেন গিটার। রচনা করেন অনবদ্য সৃষ্টি ‘দ্য সং অব বাংলাদেশ’। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত ওই কনসার্টের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বিটলস তারকা জর্জ হ্যারিসন। তবে অসুস্থতার জন্য জোয়ান কনসার্টে অংশ নিতে পারেননি। তার কম্পোজ করা গানটি তিনি ১৯৭১ সালের শেষের দিকে একাধিক মঞ্চে গেয়েছেন।
"Bangladesh Bangladesh
Bangladesh Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh....".
ইরাক যুদ্ধঃ
১৯৯১ সালে জোয়ান বায়েজ গাল্ফ যুদ্ধের বিরুদ্ধে কনসার্ট করেন। ২০০৩ সালে ৬২ বছর বয়সে তিনি সানফ্রান্সিস্কোতে পঞ্চার হাজার দর্শকের সামনে ২টি কনসার্ট করেন ইরাক যুদ্ধের অবসান চেয়ে। ২০০৫ সালের আগস্টে তিনি টেক্সাসে সিন্ডি শিহানের শুরু করা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন।
জোয়ান বায়েজ বব ডিলানের সাথে একসময় গান গেয়েছেন, বলা যায় একে অপরের পরিপূরক ছিলেন, প্রেমে পড়েছেন, কিন্তু প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর কেউ কারোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি বরং সব সময় পারস্পরিক সম্মান বোধ বজায় রেখেছেন।
জোয়ান বায়েজ আমার অন্যতম প্রিয় শিল্পী। বারবার এই মহান মহিলাকে শ্রদ্ধায় প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে। জোয়ান বায়েজ এখন ৮২ বছরের তরুণী! বয়সের সৌন্দর্য বা সৌন্দর্যের বয়স কাকে বলে তাঁকে দেখলে বোঝা যায়। আসলে এমন কিছু মানুষ থাকেন যাঁদের না ভালোবেসে পরিত্রাণ নেই। শুধু তাঁদের কাজের জন্য নয়, আস্ত অমন একটা সত্তা ও ঐশ্বরিক অস্তিত্বের জন্য।
এহেন বায়েজের আত্মজীবনী 'অ্যান্ড আ ভয়েস টু সিঙ্গ উইথ' পড়ার সুযোগ এবং সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। একজন মহান শিল্পী আর একজন মহান ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথকে সম্মান জানিয়ে বইটা শুরু করেছেন:
"God respect me when I work. He loves me when I sing...."!
তথ্যসূত্রঃ
(1) "Joan Baez – Biography".
(2) "Words and Music by Joan Baez, Song of Bangladesh, lyrics joanbaez.com."
১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:২৬
জুল ভার্ন বলেছেন: হ্যা প্রথম প্যারা এবং দ্বিতীয় প্যারা দুটোই সঠিক। ১ আগস্টের অনুষ্ঠানে জোয়ান বায়েজ উপস্থিত ছিলেন না, যে কনসার্টের উদ্যোগতা ছিলেন জর্জ হ্যারিসন, পণ্ডিত রবি শংকর সহ অনেকেই। সেই অনুষ্ঠানে ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড আয় হয়েছিল। অন্যদিকে জোয়ান বায়েজ এর একক অনুষ্ঠান হয়েছিল ২৮ জুলাই ১৯৭১, আয় হয়েছিল ২৫ হাজার পাউন্ডের কাচহাকাছি।
২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:১৬
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জোয়ান বায়েজ । আপনাকে ধন্যবাদ এমন একজন মানুষকে নিয়ে চমৎকার লেখার জন্য ।
১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:২৭
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় কবি।
৩| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৪৪
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- অজানা অধ্যায় আমার জন্য।
১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২২
জুল ভার্ন বলেছেন: যাক আপনার মতো একজন নিসর্গ প্রেমিককে নতুন একটা অধ্যায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারলাম।
৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: আমি মূলত প্রাচীনপন্থী মানুষ। এবং ইংরেজি গান বাজনা শোনা হয় না। আমার ভাল লাগে দেশের গান গুলো। আর রবীন্দ্র ও নজরুল সংগীত গুলো।
১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২৭
জুল ভার্ন বলেছেন: আমিও প্রাচীণপন্থী তবে হিস্টোরিক এবং কারেন্ট এফেয়ার সম্পর্কে সব সময় আগ্রহী ....সংগীত বিষয়ে আমার ভালো লাগে দেশাত্মবোধক গান, ফোক গান এবং নজরুল সংগীত।
৫| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:১৯
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
সৃষ্টিশীল শিল্পী মানুষ যুদ্ধ পছন্দ করবে না,গানের মাধ্যমে প্রতিবাদের ভাষা খুজে নেয়।
১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৩১
জুল ভার্ন বলেছেন: যে যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করতে পারেন- সেটা হতে পারে যুদ্ধ করে(উদাহরণঃ আমাদের মুক্তি যুদ্ধ), হতে পারে কবিতা, গানে.....
৬| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৮
আলাপচারী প্রহর বলেছেন: আপনার লেখা ভালো লাগলো।
জোয়ান বায়েজের বডিল্যাঙ্গুয়েজ দেখে বুঝেছিলাম তারঁ সাথে ডিলানের প্রেমের সর্ম্পক ছিল। দুজনের পারস্পরিক আচরণ মুগ্দ করেছিল।
১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৭| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:১৫
নেওয়াজ আলি বলেছেন: এইসব সৃজনশীল মানুষ যুগ যুগ অমর থাকবে। আমাদের দেশের শিল্পীদের নিয়েও এমন অজানা তথ্য জানতে চাই।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৫৩
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি চেষ্টা করি- দেশের বরেণ্য গুণীজনদের নিয়ে লিখতে। কয়েক সপ্তাহ আগেই লিখেছিলাম কণ্ঠশিল্পী শাহানাজ রহমতুল্লাহকে নিয়ে। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:২৬
শেরজা তপন বলেছেন: বিশ্বে নিপিড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এই মহান শিল্পী সন্মন্ধে অনেক কিছু জানলাম। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু তিনি।
লেকার একটা অংশ নিয়ে একটু দ্বীধায় আছি। একবার লিখলেন;
১৯৭১ সালে মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ নামক বিখ্যাত কনসার্টে "স্টোরি অফ বাংলাদেশ" গানটি পরিবেশন করেন।
ফের অন্য প্যারায়;
১৯৭১ সালের ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত ওই কনসার্টের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বিটলস তারকা জর্জ হ্যারিসন। তবে অসুস্থতার জন্য জোয়ান কনসার্টে অংশ নিতে পারেননি।