নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
Diary Of A Valentine....
৭ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩;
আজ দেখা করতে যাওয়ার পথে ওঁর জন্য দশটা লাল গোলাপ কিনলাম শাহাবাগের ফুলের দোকান মাধুকরী থেকে। দাম শুনেতো আমার রেটিনায় সর্ষেফুল। অন্যান্য দিন যে গোলাপগুলো ৪/৫ টাকা করে নেয় আজ সেগুলোই তিরিশ টাকা! এই নিয়ে দশবছর হলো আমাদের সম্পর্কের। মেমসাহেবের আবদার, বছরের সাথে সাথে গোলাপের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। তারমানে পরের বছর এগারোটা। আর আজ থেকে চল্লিশ বছর বাদে পঞ্চাশটা। বাপরে! এটা আবদার না ডিএমপি'র নোটিস মাঝেমধ্যেই গুলিয়ে যায় আমার!
৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩;
আজ এই নিয়ে প্রায় তিনহাজার সাতশো উনত্রিশ বার প্রোপোজ করতে হলো ওঁকে! এই প্রোপোজ ডে-ফে তো একটা অজুহাত মাত্র। প্রথম প্রথম মহিলা ভালমতো প্রত্যুত্তর দিতেন। তারপর থেকে একটা নতুন কায়দা প্রয়োগ করলেন। প্রায় ঘাড় ধরে প্রোপোজ করিয়ে নেওয়ার পর, আকাশের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকতেন। আমি যখন বলতাম- "কী? চুপ করে গেলে যে!"
সাথে সাথে উনি মুচকি হেসে বলতেন- "ভেবে দেখবো।" আর আজ তো কিছুই বললেন না। শুধু কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর একটা মৃদু হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম বোধহয়। বুঝলাম ওটাই ওঁর উত্তর।
৯ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩;
চকোলেট নিয়ে হ্যাংলামোর একটা লিমিট থাকে। একবার বাসে যেতে যেতে পাশের সিটে বসে থাকা একটা বাচ্চা ছেলের ক্যাডবেরি ডেয়ারিমিল্কে, টুক করে ভাগ বসিয়ে দিয়েছিলেন ভদ্রমহিলা। তারপর সেকি কাণ্ড! লোকের খিদে পায়, কবিতা পায়, ওঁর নাকি হঠাৎ হঠাৎ চকোলেট পায়। তবে মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে কখওনই নিজের টাকায় কিনে খান না। আজ যখন একটা ক্যাডবেরি নিয়ে ওঁর সাথে দেখা করতে ঢুকছি, দেখি দূরে ফুটপাতে একটা ছেলে তাঁর প্রেমিকাকে একটা ইয়াব্বড় সাইজের চকোলেট দিচ্ছে। মনে মনে ভাবলাম- "আমি তারমানে একা নই!"
১০ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩;
আজ শরীরটা খারাপ থাকায় দেখা করতে যেতে পারিনি। এমনটা মহিলাকে জানিয়েছি। গোলাপ আর চকোলেট তাও মেনে যাওয়া যায়। তবে এই বয়সে একটা বুড়ো লোক, বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের মধ্যে দাঁড়িয়ে গোলাপি আর হলুদ ভাল্লুকছানার মধ্যে কোনটা সবচেয়ে নরম সেটা বাছাবাছি করছে; এটা কি খুব ভাল দেখায়! তাই এই টেডি ব্যাপারটা গত তিনবছর ধরে অনলাইনে কিনে ওঁর ঠিকানায় ক্যুরিয়ার করে দিই। প্রথমবার একটু রাগারাগি করেছিলেন বটে, তবে পরের দু'বছর মেমসাহেব আমার অসুবিধের কথাটা বুঝতে পেরেছিলেন।
১১ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩;
"তুমি দিনে পাঁচটার বেশি সিগারেট খাবে না। প্রমিস?"
"আমি বাদ দিয়ে আর অন্য কোন মেয়ের ছবিতে লাভ রি অ্যাক্ট দেবে না। প্রমিস?"
"আই লাইক ইওর সল্ট অ্যান্ড পেপার লুক। সো ইউ আর নট গোয়িং টু ডাই ইওর হেয়ার। প্রমিস?"
এই ছিলো মহিলার গত তিনবছরের প্রমিস করানোর নমুনা। এই যৎসামান্য 'প্রমিসিং এজেন্ডা' নিয়ে যে মানুষটা দিনের পর দিন আমাকে সহ্য করে চলেছেন তাকে না ভালবেসে থাকা যায়! তাই আজ মেমসাহেকে কোনওরকম সুযোগ না দিয়ে আমিই আগেভাগে বলে উঠলাম- "প্রমিস। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।" দেখি উনি এতটাই হতবাক হয়ে গেছেন যে ঠোঁট থেকে কথাই সরছে না ওঁর।
১২ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩;
আজ একটা সিকিউরিটি গার্ড আমাদের দেখে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেছিলো। মহিলার বরাবরের অভিযোগ আমার উচ্চতা নিয়ে। আমি যখন ওঁর পাশে হাঁটি নাকি আমাকে ওঁর বড়োখালু, বড়োখালু মনে হয়। আমাকে জড়িয়ে ধরলে নাকি ওঁর মনে হয় উনি পাহাড়ে ওঠা প্র্যাক্টিস করছেন। আজ ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরতে হলো এক বিশেষ কায়দায়। অবশ্য আর কোনও উপায়ও ছিলো না। ঠিক সেই সময় ওই সিকিউরিটি গার্ড কোত্থেকে এসে হাজির! উফফ্! আর সময় পেলো না এদিকে আসার!
১৩ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩;
এই ব্যাপারটা না ভীষণ ব্যক্তিগত। তবে আজ অবধি ভদ্রমহিলাকে যতবার চুমু খেয়েছি ততবারই মনে হয়েছে বুকের ভিতরে কেউ দামামা বাজিয়েছে। আজও তার অন্যথা হয়নি। শুধু আজ সিকিউরিটিটা আমাকে দেখে আরও একবার অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো। লোকটা বোধহয় আজ অবধি কাউকে এইভাবে চুমু খেতে দেখেনি। কী করবো! মহিলা যে মাটির নীচে কফিনের মধ্যে দিব্যি শুয়ে আছেন। চুমু খেতে হলে আমাকে তো ঠোঁটটা মাটিতে ঠেকাতেই হবে। গতকাল জড়িয়ে ধরার পর উঠে দেখি সারা জামায় ধুলো লেগে গেছে। সিকিউরিটি গার্ড নির্ঘাত আমায় পাগল ঠাউরেছে।
১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩;
লোকের মুখে শুনেছি "যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন।" তবে আমি মনে করি যার কেউ নেই তার অপেক্ষা আছে। আর এই অপেক্ষাই পারে সারাজীবনের মতো আলাদা হয়ে যাওয়া দুটো মানুষকে এক আকাশের তলায় সামনাসামনি দাঁড় করাতে। গত আট মাস ধরে তুমি আমার পাশে নেই। তবে আমার থেকে বেশ খানিকটা দূরে মাটির নীচে যে তুমিটা চুপ করে শুয়ে আছ, আমি জানি তুমি অপেক্ষা করছিলো এই সাতটা দিনের। এই সাতটা দিন কারও চোখে আদেখলাপনা। কারও চোখে লোক দেখানো। কারও কারও চোখে কলোনিয়াল হ্যাংওভার। আমিও এক এক বছর মনে মনে বিরক্ত হয়ে যেতাম এই সাতটা দিন আসলেই। তবে আজ তুমি যখন নেই বুঝতে পারলাম এই সাতটা দিনের মাহাত্ম্য। এই যে বছরের নির্দিষ্ট দুইটা দিনেই দুই ঈদ পালন করে, এই যে বছরের নির্দিষ্ট পাঁচটা দিনেই ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হয়, এই যে বছরের নির্দিষ্ট একটা দিনেই ক্রিসমাসের জন্য আলো ঝলমলে হয়ে ওঠে গোটা শহর- সেগুলো তো বছরের যে কোনও দিনই হতে পারে!
গত ছ'দিন যা যা লিখেছি সেগুলো পড়ে হাসি পেলেও সেটা সংবরণ করার চেষ্টা করো। আজ এই পাতাটা এখানে বসে লিখছি কারণ তোমার ইচ্ছে ছিলো আমায় প্রেমপত্র লিখতে দেখার। এই লেখাটা শেষ হওয়ার পর ডায়েরির সাতটা পাতা আমি রেখে যাবো এখানে। সাথে নিয়ে যাবো এমন একটা ডায়েরি যাতে চাইলেও কেউ এই সাতদিনে কোনও দাগ কাটতে পারবে না। আবার এভাবেই পরেরবছর এই দিনে একটা ডায়েরি হাতে নিয়ে বসবো তোমার সামনে। যাওয়ার সময় রেখে যাবো আরও সাতটা পাতা। ততদিন অপেক্ষা করো। কেমন? বাই দ্য ওয়ে সিকিউরিটি গার্ড এর সাথে আজ ঢোকার মুখে দেখা হলো। কাল ওইভাবে কবরে ঠোঁট ঠেকিয়ে রাখার কারণটা জানার পর টানা পাঁচমিনিট জড়িয়ে ধরলে। তুমি ছাড়া এই প্রথম আমায় কেউ এতক্ষণ জড়িয়ে থাকলো।
* Diary Of A Valentine
১৯৯৩ সনে 'যায়যায়দিন' পত্রিকার প্রথম ভ্যালেন্টাইন্স ডে সংখ্যায় আমার লেখা গল্প। একই গল্প ২০০৮ সনে সামহোয়্যারইন ব্লগে এবং ২০১০ সনে ফেসবুকে শেয়ার করেছিলাম। বন্ধুদের নেতিবাচক পাঠক্রিয়া বুঝে এবার গল্পের সাইজ ছোট করেছি।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫৩
জুল ভার্ন বলেছেন: যায়যায়দিন, মৌচাকে ঢিল, বিচিন্তায় আমি প্রায় নিয়মিত লিখতাম। পত্রিকায় ফেসবুকের লাভ রিয়্যাক্ট ফেসবুকের নিজস্ব প্যাটেন্ট রাইট নয়। লাভ রিয়েক্টের ব্যাপারটা হাজার বছরের পুরোনো। আর হার্ট ফুঁটো করে তীর বিদ্ধ ছবির কথা ভুলে গেলেন!
২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৩৪
শাওন আহমাদ বলেছেন: পড়তে পড়তে বড় একটা ধাক্কা খেলাম! লেখাদেরও জীবন আছে ,না হলে কিভাবে চোখের পাতা ভেজায়!
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫৩
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৩৭
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: আমি ২০০৮ এ এই লেখা টা পড়েছিলাম।
ভালো লাগা।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০২
রূপকথার গল্পগাথা বলেছেন: এই একই লেখা কিছু কিছু শব্দ পরিবর্তন করে কলকাতার অভীক রায় "অন্য ভ্যালেন্টাইন" নাম দিয়ে লিখেছেন।।এবং অভীক বাবুর লেখাটি খুব জনপ্রিয়,ইউটিউব এ খুব জনপ্রিয় উনার লেখা কবিতা।।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে একই লেখা দুজন লিখেন কিভাবে??একটু আলোকপাত করবেন এই বিষয়ে?
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৫
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি তাঁর লেখা দেখিনি।
৫| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:১২
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
"আমি বাদ দিয়ে আর অন্য কোন মেয়ের ছবিতে লাভ রি অ্যাক্ট দেবে না। প্রমিস?"
আমি ভেবেছিলাম ফেসবুকের ছবিতে লাভ রিয়েক্ট !
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৬
জুল ভার্ন বলেছেন: আমাদের সব কিছুই ফেসবুক ময়।
৬| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৮
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: ওয়াও! এত চমৎকার লিখতেন আপনি! আবার শুরু হোক।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪১
জুল ভার্ন বলেছেন: এই লেখাটা অনেক বড়ো- পাঠকদের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটার ভয়ে সার অংশটুকু আমি লিখেছি।
৭| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৪
অনামিকাসুলতানা বলেছেন: জুল ভার্ন ভাইয়া এমন রোমান্টিক কিছু লিখতে পারে, ভাবতেই পারা যায় না ।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৯
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৮| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০২
জুল ভার্ন বলেছেন: @রূপকথার গল্পগাথা; আমি ইউটিউব খুঁজে ৬ জন অভিক রায়/ Avik Roy পেয়েছি ওনাদের অনেক কবিতা পেলাম- কিন্তু এই লেখাটা পেলাম না। তারপরও আমি খুঁজে পেতে চেষ্টা করছি।
৯| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:১৪
জুল ভার্ন বলেছেন: @রূপকথার গল্পগাথা; অভিক রায় এবং Avik Roy এর আইডি খুঁজে পেয়েছি। ২০২১ সনে ওনার দুই আইডি থেকেই একই লেখা প্রকাশ করেছেন। Avik Roy এর পোস্টে সূত্র উল্লেখ নাই। কিন্তু বাংলা অভিক রায় এর লেখার সূত্র উল্লেখ করেছেন- (সংগৃহিত)
১০| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:২৬
স্মৃতিভুক বলেছেন: ১০ই ফেব্রুয়ারী ১৯৯৩;
তবে এই বয়সে একটা বুড়ো লোক; বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের মধ্যে দাঁড়িয়ে গোলাপি আর হলুদ ভাল্লুকছানার মধ্যে কোনটা সবচেয়ে নরম সেটা বাছাবাছি করছে; এটা কি খুব ভালো দেখায়! তাই এই টেডি ব্যাপারটা গত তিনবছর ধরে অনলাইনে কিনে ওর ঠিকানায় ক্যুরিয়ার করে দেই।
ইয়ে, মানে বলছিলাম কি…..সেই ১৯৯৩ সনেই আপনি অনলাইনে জিনিস কিনতেন?! আর গত তিন বছর ধরে কিনতেন, তারমানে অনলাইনে আপনার জিনিস কেনাকাটা শুরু সেই ১৯৯০ সন থেকেই| এই দুনিয়া আপনাকে ভুলে গেছে ই-কমার্স জগতের পথিকৃৎ (হলেন'ই বা নেহায়েত ক্রেতা) হিসেবে, মাগার বুঝলাম আপনার চাহিদার কথা ভেবেই কিংবা আইডিয়া ধার করেই নেটমার্কেট, অ্যামাজন এবং ক্রেগলিস্ট এর যাত্রা শুরু।
আপনি গুরু নমস্য!
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৩৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
দারুন লাগলো।
১৯৯৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি। কদিন পরেই উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হবো। ভ্যালেন্টাইন ডে বুঝতাম না। নিয়মিত যায় যায় দিন রাখা হতো। আপনাকে হয়তো পড়েছি। আপনাকে তখন চিনতাম না প্রিয় জুল ভার্ন !
১৯৯৩ সালে লাভ রিয়েক্টের ব্যাপারটা কিভাবে এলো ?