নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
একজন সন্তান হারা পিতার নিদারুণ কষ্ট.....
মাছরাঙা টিভিতে প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত 'রাঙা সকাল' নামে একটা অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন বিভাগের বিশিষ্টজনদের নিয়ে আলাপ চারিতা, স্মৃতি রোমন্থন, অভিজ্ঞতা আমন্ত্রিত অতিথি শেয়ার করেন। রাঙা সকাল অনুষ্ঠানটা প্রায়ই আমি দেখি। কদিন আগে কবি নজরুল ইসলাম এর মৃত্যু দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী তাঁর জীবনী, সংগীত, কবিতা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে ৭ দিনে ৭ জন ভিন্ন ভিন্ন বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। একদিন আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন প্রখ্যাত নজরুল গবেষক আসাদুল হক। তিনি নজরুল জীবনের একটা ঘটনা শেয়ার করেছিলেন, ঘটনাটা আমাদের অনেকেরই জানা তবুও এখানে শেয়ার করছিঃ-
১৯২৮ সনে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর চার বছরের শিশু সন্তান বুলবুল যে রাতে মারা গিয়েছিল, সে রাতে কবির পকেটে একটা কানাকড়িও ছিল না।
অথচ কাফন, দাফন, গাড়িতে করে মরদেহ নেওয়া ও গোরস্থানে জমি কেনার জন্য দরকার ১৫০ টাকা। সে সময়ের ১৫০ টাকা মানে অনেক টাকা! কবি এত টাকা কোথায় পাবেন! বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং লাইব্রেরীতে লোক পাঠানো হল....টাকার জন্য। না, টাকার তেমন ব্যবস্থা হয়নি। শুধুমাত্র ডি. এম লাইব্রেরি দিয়েছিল ৩৫ টাকা। আরো অনেক টাকা বাকি। কবিকে টাকা জোগাড় করতেই হবে।
কবি বন্ধু শৈলজা নন্দের উদ্ধৃতি দিয়ে আসাদুল হক জানালেন( যা পরবর্তীতে সুফী জুলফিকার হায়দারের লেখা নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায় বইয়ে উল্লেখ আছে) - শিশু সন্তানের মরদেহ ঘরে রেখে কবি গেলেন এক প্রকাশকের কাছে। প্রকাশক ইনিয়েবিনিয়ে শর্ত দিল- কবিতা লিখে দিতে হবে, তারপর টাকা.....
কবি মনের নীরব কান্না, যাতনা লিখে দিলেন কবিতায়.....
"ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি।
করুণ চোখে চেয়ে আছে সাঝের ঝরা ফুলগুলি।
ফুল ফুটিয়ে ভোর বেলা কে গান গেয়ে
নীরব হ’ল কোন বিষাদের বান খেয়ে
বনের কোলে বিলাপ করে সন্ধ্যারাণী চুল খুলি।
কাল হতে আর ফুটবে না হায়, লতার বুকে মঞ্জরী
উঠছে পাতায় পাতায় কাহার করুণ নিশাস মর্মরী।গানের পাখি গেছে উড়ছে শূণ্য নীড়
কণ্ঠে আমার নাই সে আগের কথার ভিড়
আলেয়ার এ আলোতে আর আসবে না কেউ কুল ভুলি।"
এই গান লেখার পর প্রকাশক কবিকে ১০০ টাকা দিলেন। নিতান্তই প্রয়োজনে কবি আরও কিছু টাকা বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু প্রকাশক টাকা দিতে ইতস্তত করছিলেন......কবি আবার একটা কাগজে লিখলেনঃ-
"শূন্য এ-বুকে পাখি মোর আয়
ফিরে আয় ফিরে আয়!
তোরে না হেরিয়া সকালের ফুল
অকালে ঝরিয়া যায়
তুই নাই বলে ওরে উন্মাদ
পাণ্ডুর হল আকাশের চাঁদ,
কেঁদে নদীজল করুণ বিষাদ
ডাকে, ‘আয় ফিরে আয়!
গগনে মেলিয়া শত শত কর
খোঁজে তোরে তরু, ওরে সুন্দর!
তোর তরে বনে উঠিয়াছে ঝড়
লুটায় লতা ধুলায়।
তুই ফিরে এলে, ওরে চঞ্চল
আবার ফুটিবে বনে ফুলদল,
ধূসর আকাশ হইবে সুনীল
তোর চোখের চাওয়ায়।'
গানটা লিখে কাগজটা প্রকাশকের হাতে দিয়ে বেড়িয়ে গেলেন বিদ্রোহী কবি, প্রেমের কবি, বিরহ বিষাদের কবি নজরুল ইসলাম ..... কোনো টাকা নেননি। তাই বলে কবি পূত্র বুলবুলের দাফণ প্রকৃয়ায় বাধাগ্রস্থ্য হয়নি।
ভগ্ন হৃদয়ে কবি গৃহে ফিরে দেখেন তার বন্ধু কমরেড মোজাফফর আহমেদ এবং কবি শৈলজা নন্দ কাফন - দাফনের সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করে ফেলেছেন।
(দুটো গানের সম্পুর্ণ লিরিকস নিয়েছি গুগল থেকে)
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯
জুল ভার্ন বলেছেন: পাথরে ফুল ফোটানো কবি!
২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮
জটিল ভাই বলেছেন:
হৃদয়বিদারক
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: বিষয়টি জেনে খারাপ লাগছে।
এত কঠিন সময়ের মাঝেও কবি যে এত সুন্দর করে কবিতা লিখতে পেরেছেন বিষয়টি আশ্চর্যজনক!