নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
ময়ূর সিংহাসন: পৃথিবীর সবচেয়ে দামী সিংহাসনের গল্প.......
মোঘল সম্রাট শাহজাহান সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যকে এক অনন্য অবস্থানে নিয়ে গেলেও ইতিহাস তাকে বিখ্যাত সব স্থাপত্য ও কীর্তির জন্য মনে রাখবে। স্ত্রীর মৃত্যুশোকে তার সমাধির উপর ঐতিহাসিক স্থাপনা তাজমহল নির্মাণ করে যেমন নিজেকে ইতিহাসের পাতায় অমর করে রেখেছেন, তেমনি আগ্রার দুর্গ কিংবা দিল্লীর সুবিশাল জামে মসজিদের মাধ্যমেও নিজেকে অন্যান্য মুঘল সম্রাটদের তুলনায় আলাদাভাবে পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় মুঘল স্থাপত্যবিদ্যা সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধি লাভ করে। তবে তার অন্যতম মহাকীর্তি 'ময়ূর সিংহাসন' নিয়ে তূলনামূলক কম আলোচনা হয়। সম্ভবত ভারতবর্ষে ময়ূর সিংহাসন না থাকার কারণেই এমন হয়ে থাকে। তাজমহল কিংবা সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে নির্মিত অন্যান্য স্থাপত্য ও কীর্তির তুলনায় এর গুরুত্ব কিংবা মূল্য কোনো অংশেই কম নয়!
অনেকেরই প্রশ্ন, সম্রাট শাহজাহান কেন সিংহাসনে ময়ূর ব্যবহার করলেন? মুঘল আমলে শিল্প-সাহিত্যে ময়ূরের এক অনন্য স্থান ছিল, যা অন্য কোনো প্রাণীর ছিল না। মুঘল আমলে অঙ্কিত চিত্রকর্মগুলোতে ময়ূরের অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হতো সুনিপুণভাবে। তখনকার সাহিত্যেও ময়ূরকে এক আধ্যাত্মিক রূপ দান করা হয়। যেমন, শামস-ই-তাবাসি নামক একজন কবি তার কাব্যগ্রন্থে দাবি করেন যে বেহেশতের সবচেয়ে উঁচু স্তরে ময়ূর থাকবে। যেহেতু এই পাখিকে ধর্মীয়ভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হতো, তাই মুঘল শাসনামলে সাধারণের বিশ্বাস ছিল যে, কোনোভাবে এই পাখির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা পরকালে ভালো কিছু করবেন। এজন্যই ধারণা করা হয়ে থাকে সম্রাট শাহজাহান ধর্মীয় কারণেই তার বিখ্যাত সিংহাসনের পেছনে দুটো ময়ূরের অবয়ব তৈরি করিয়েছিলেন। আর এই পাখির নামেই পরবর্তীতে সিংহাসন 'ময়ুর সিংহাসন' পরিচিতি লাভ করে।
সিংহাসনে কী পরিমাণ স্বর্ণ ও হীরে-জহরত ব্যবহার করা হয়েছিলঃ আনুমানিক ১,১৫০ কেজি স্বর্ণ ও প্রায় ২৩০ কেজি বিভিন্ন মহামূল্যবান পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল এই রাজকীয় সিংহাসন তৈরিতে। তিমুর রুবি ও বিখ্যাত কোহিনূর হীরার মতো দুর্লভ জিনিস ব্যবহার করা হয় এতে। ধারণা করা হয়, বিভিন্ন যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে যেসব দামী ও দুর্লভ অলংকার মুঘল রাজকোষে জমা হয়েছিল, সেগুলো দিয়েই এই সিংহাসনের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। তাজ মহল নির্মাণের ক্ষেত্রে যেমন দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী আনা হয়েছিল, এদিক থেকে ময়ূর সিংহাসন ছিল ব্যতিক্রম। ১১৬টি পান্না, ১০৮টি রুবি ও আরও অসংখ্য মূল্যবান পাথর ব্যবহার করা হয়, যেগুলো ছিল অত্যন্ত দুর্লভ। সিংহাসনের পেছনে যে দুটো ময়ূর ছিল সেগুলোর লেজ ছিল ছড়ানো, যেটি সিংহাসনের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। বিখ্যাত কোহিনূর হীরা ব্যবহার করা হয়েছিল এই সিংহাসনের সৌন্দর্যবর্ধন করতে।
কথিত আছে, সম্রাট শাহ জাহান নবী হযরত সোলায়মান (আ.)-কে অনুসরণের চেষ্টা করতেন। সোলায়মান (আঃ) এর সুবিশাল সাম্রাজ্যের পাশাপাশি একটি রাজকীয় সিংহাসন ছিল, যেটি মুঘল সম্রাট শাহ জাহানকে বেশ প্রভাবিত করে। এজন্য তিনি নিজেও বিশাল সাম্রাজ্যের পাশাপাশি একটি রাজকীয় সিংহাসনে বসে সাম্রাজ্য পরিচালনার স্বপ্ন দেখতেন। ১৬২৮ সালে যেদিন সম্রাট শাহজাহান সাম্রাজ্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, সেদিনই প্রথম সেই রাজকীয় সিংহাসন প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়। বাছাই করা স্বর্ণকার ও জহুরিদের মাধ্যমে প্রায় সাত বছর ধরে এই সিংহাসন তৈরি হয়েছিল। এই সিংহাসন মুঘল সাম্রাজ্যের পরিচয়বাহী একটি কীর্তি হয়ে উঠবে, মুঘলদের ঐশ্বর্য সম্পর্কে বাইরের দুনিয়াকে ধারণা দেবে- সম্রাট শাহজাহানের এই ধরনের চিন্তাও ছিল।
বিদেশি মানুষের ভাষ্যে প্রখ্যাত ময়ূর সিংহাসন সম্পর্কে জানা যাক। জিন-ব্যাপ্টিস্ট টাভের্নিয়ার নামের একজন ফরাসি অলংকারিককে আমন্ত্রণ জানান সম্রাট শাহ জাহানের পুত্র সম্রাট আওরঙ্গজেব। ১৬৬৫ সালে তিনি ভারতবর্ষে আসেন এবং রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে ময়ূর সিংহাসন প্রত্যক্ষ করে হতবাক হয়ে যান। তার ভাষ্যে,
সিংহাসনটি ছিল বিছানাকৃতির। এতে চারটি পায়া ছিল, যেগুলো ছিল খাঁটি সোনার তৈরি। সিংহাসনের উপরের ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করা বহুমূল্য কাপড়টি ধরে রাখতে বারটি ছোট খুঁটি ছিল। সেগুলোতে বিভিন্ন দুর্লভ পাথর ও হীরা ব্যবহার করা হয়েছিল।
মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের নির্মিত সম্রাটদের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত দিওয়ান-ই-খাসে সাধারণত এই সিংহাসন রাখা হতো। কখনো কখনও দিওয়ান-ই-আমেও একে নিয়ে আসা হতো। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উৎসবের জন্য যখন সম্রাটকে দিল্লি থেকে আগ্রায় আসতে হতো তখন তার সাথে এই সিংহাসনও বহন করে নিয়ে আসা হতো।
নাদির শাহ যখন পারস্যের সিংহাসনে বসেন, তখন তার সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আফগানিস্তানের 'হোতাকি বাহিনী' দমন করা। ইস্পাহান দখল করার পর নাদির শাহ তাদেরকে নির্মূল করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তাদেরকে হটানোর জন্য আরও বেশি সৈন্যসহ আক্রমণ করেন এবং একসময় তারা কান্দাহার পেরিয়ে মোগল সাম্রাজ্যে প্রবেশ করে। তিনি মোগল সম্রাট মুহাম্মদ শাহকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে হোতাকিদের হস্তান্তর করতে বলেন, কিন্তু মোগল সম্রাট তা থেকে বিরত থাকেন। এতে নাদির শাহ ক্রোধান্বিত হন এবং বিশাল সেনাবাহিনীসহ মোগল সাম্রাজ্যে আক্রমণ করেন। সম্রাট শাহজাহান কিংবা সম্রাট আকবরের সময় মোগল সেনাবাহিনী যেরকম শক্তিশালী ছিল, মুহাম্মদ শাহের সময় তা একেবারে জৌলুস হারিয়ে ফেলে। সুসংঘটিত নাদির শাহের বাহিনীর সামনে মোগল সেনাবাহিনী টিকতে পারেনি। ১৭৩৯ সালের মার্চে তিনি দিল্লি দখল করেন।
পারস্যের অধিপতি নাদির শাহ বোকা ছিলেন না। মোগল সাম্রাজ্যের মতো বিশাল সমৃদ্ধ এলাকা তার দখলে চলে আসলেও তিনি মূল এলাকা ছেড়ে দিয়ে এখানকার সিংহাসন দখল করতে চাননি, কারণ তাতে করে তার মূল সাম্রাজ্য অরক্ষিত হয়ে যেত এবং অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে হটিয়ে অন্য কারও সিংহাসন দখলের সম্ভাবনা ছিল। তাই তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের অধিপতি মুহাম্মদ শাহের সাথে সন্ধি করেন এবং তাদেরকে সাম্রাজ্য ফিরিয়ে দেন। এই সন্ধি অনুসারে মোগলদের যেসব মুল্যবান সম্পদ ছিল তার বড় অংশ হস্তান্তর করতে বাধ্য হয় তারা। এর মধ্যে ময়ূর সিংহাসনও ছিল। এভাবেই অত্যন্ত দামী ও ঐতিহ্যবাহী ময়ূর সিংহাসন তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।
নাদির শাহ্ পারস্যে ফিরে গেলে কয়েক বছর পর দেহরক্ষীর হাতে নিহত হন এবং রাজপ্রাসাদে অরাজকতা শুরু হয়। এরপর রাজপ্রাসাদে লুটের ঘটনা ঘটে। লুটেরা ব্যক্তিরা অরাজকতার মাঝে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে ময়ূর সিংহাসন ভেঙে ফেলে এবং ভাঙা টুকরোগুলো পরবর্তীতে চড়া দামে বিক্রি করে। আবার অনেকের ধারণা, নাদির শাহ্ যখন ভারতবর্ষ থেকে ময়ূর সিংহাসন নিয়ে যান, তখনই তিনি সেটা ভেঙে টুকরো টুকরো করে হাতির পিঠে ইরানের উদ্দেশ্য রওনা দেন এবং লুটেরা ব্যক্তিরা ইরানের রাজপ্রাসাদ থেকে এই টুকরোগুলোই লুট করে। তবে মোগল সাম্রাজ্যের অনুকরণে পরবর্তীতে ইরানেও ময়ূর সিংহাসন তৈরি করা হয়, যেটি এখন তেহরান যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। ব্রিটেনের একটি যাদুঘরে ময়ূর সিংহাসনের একটি পায়া সংরক্ষিত আছে।
ময়ূর সিংহাসন ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের জৌলুসের এক কালজয়ী কীর্তি। সময়ের সাথে সাথে মোগল সাম্রাজ্যের মধ্যে পরিবর্তন আসে, একসময়ের পরাক্রমশালী সাম্রাজ্য শক্তি হারিয়ে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে থাকে। মোগলদের গর্বের ময়ূর সিংহাসনও হাতছাড়া হয়ে যায় বিদেশি শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে। ময়ূর সিংহাসন যতই লুটেরাদের হাতে ক্ষত-বিক্ষত হোক, যতই বিদেশি শক্তির হাতে অর্পিত হোক না কেন, এই অনিন্দ্যসুন্দর কীর্তির জন্য ইতিহাস সবসময় সম্রাট শাহ জাহানকেই স্মরণ করবে।
Reference:
(১) Thrones of India: From Shah Jahan’s Peacock Throne to Tipu Sultan’s Tiger Thron - Sahapedia
(২) The Peacock Throne: 5 amazing facts about the most expensive piece of furniture ever made - The Mughals of India
৩০ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:০৩
জুল ভার্ন বলেছেন: পোস্ট সংক্রান্ত মন্তব্য আশা করি।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: তারেক জিয়া কি ডিসেম্বরে আসবে?