![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
নেত্র নিউজে প্রকাশিত শহীদ তাইমের ভাইয়ের সাক্ষাৎকার পড়ে আবারও বিমর্ষ, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। যাকে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের তথাকথিত “ক্রসফায়ারে” প্রাণ দিতে হলো, গোটা জাতিকে নাড়া দিয়েছে। এই ব্যথা কেবল একটি নিরপরাধ প্রাণহানির জন্য নয়, বরং বিচার ব্যবস্থার ভেতরে গেঁথে থাকা সেই সুপরিকল্পিত ফাঁকফোকরের জন্য, যা ন্যায়বিচারকে মঞ্চায়িত করে কিন্তু বাস্তবে আড়াল করে দেয়।
২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অথচ ১৫ নভেম্বরের মধ্যেই প্রত্যেক আসামি তখনো নিজ নিজ পদে বহাল থেকে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। যারা গ্রেপ্তার করার দায়িত্বে, সেই পুলিশ-ই দাঁড়িয়ে রইল নিশ্চুপ- আসামিরা পালিয়ে গেল।
এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অন্তত দশটিরও বেশি মামলায় একই ধারা পুনরাবৃত্তি হয়েছে। চকবাজারে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া কর্মকর্তা আখতার জানুয়ারি পর্যন্ত চাকরিতে বহাল ছিল, পরোয়ানার সঙ্গে সঙ্গেই গা ঢাকা দিল। বগুড়া পুলিশ লাইনে শতাধিক মানুষ গুমের অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তা বরিশালে কর্মরত অবস্থায় ফেব্রুয়ারিতে পালিয়ে যায়। শহীদ নাফিজ হত্যায় জড়িত কর্মকর্তা সরদা পুলিশ একাডেমি থেকে হাওয়ায় মিলিয়ে যান। এমনকি বানিয়াচং থানার এক ওসি গ্রেপ্তার হলেও, তার ঊর্ধ্বতন সহকারী কমিশনারসহ সেদিন রাতেই পালিয়ে যায়।
তেমনই এক "ভ্রাতৃত্ববোধ"- যাতে করে সামরিক বাহিনী আর পুলিশের ভেতরে দায়িত্বরত অভিযুক্তরা পার পেয়ে যায়। তবে ভ্রাতৃত্বের আড়ালেও আছে বৈষম্য।
★ তারা তাদের অধীনস্থ এবং জুনিয়রদের ফেলে রেখে যাচ্ছে শাস্তি ভোগ করার জন্য।
★ তারা যে টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে, যা তাদের এই লেজ গুটিয়ে পালানোকে সহজ করছে, সেই টাকা তারা জুনিয়র ও মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করছে না- যাদের তারা ফেলে রেখে যাচ্ছে দায় শোনার জন্য।
সমস্যার মূলে রয়েছে কাঠামোগত বৈষম্য। ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করতে পারে, কিন্তু গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পুলিশের হাতে। এর ফল- পুলিশ বাহিনীর কনস্টেবল বা সাব-ইন্সপেক্টরদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি হয়, অথচ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। প্রায়ই দেখা যায়, তারাই পালানোর তথ্য ও সুবিধা যোগায় অন্যদের।
এই চিত্র সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রেও সত্য। যেসব অফিসার গুমের অভিযোগ/ মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন, তারা সবাই নিরাপদে সেনানিবাসে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু পরোয়ানা জারি হতেই, তারাও অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
এমন প্রক্রিয়া আমাদের সামনে এক কঠিন সত্য তুলে ধরেঃ ন্যায়বিচার এখানে সমানভাবে সবার জন্য নয়। আইন দুর্বলকে আঁকড়ে ধরে, কিন্তু ক্ষমতাবানদের সামনে নত হয়ে যায়। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো দেখে কিছু আসামির বিচার চলছে, কিন্তু যারা আসল সিদ্ধান্ত নেয়, যারা নির্দেশ দেয়, তারা কখনোই কাঠগড়ায় দাঁড়ায় না। ন্যায়বিচারের নামে চলে প্রহসন, যেখানে সত্যিকারের দায়ীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
শহীদ পরিবারগুলোর জন্য প্রতিটি আসামির পালানো মানে শুধু একজন অপরাধীর পলায়ন নয়- এটা রাষ্ট্রের কাছ থেকে এক নির্মম বার্তাঃ “ন্যায়বিচার সবার জন্য নয়।” তাই আইন একসাথে প্রতিশ্রুতি ও যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়ায়- একদিকে স্বীকৃতির ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে বঞ্চনার ক্ষতকেই আরও গভীর করে।
যতদিন না জবাবদিহিতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রসারিত হয়, যতদিন না কেবল নির্দেশ পালনকারীরা নয়, বরং নির্দেশদাতারাও কাঠগড়ায় দাঁড়ায়- ততদিন এসব বিচার প্রক্রিয়া আংশিক ন্যায়বিচারের আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকবে। যেখানে বৈধতার আড়ালে প্রকৃত সত্য চাপা পড়ে যায়, আর দায় এড়ানোর রাজনীতি কেবল আরও শক্তিশালী হয়।
বাস্তবতা হচ্ছে- বিচার প্রক্রিয়ার নামে চলছে এক প্রহসন-
★ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেয়, কিন্তু পুলিশ থাকে নিশ্চুপ!
★ কনস্টেবলকে ধরা হয়, অথচ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা পালিয়ে যায়!
★ পরিবারগুলো কেবল প্রতিশ্রুতি পায়, কিন্তু ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।
এটা শুধু আসামিদের পলায়ন নয়, এটা রাষ্ট্রের নির্মম বার্তা- “ন্যায়বিচার সবার জন্য নয়, এটা রেশন করা।”
ন্যায়বিচার চাই, প্রহসন নয়।
যতদিন না দায়ীরা- যারা শুধু আদেশ পালন করে নয়, যারা আদেশ দেয়- তাদের কাঠগড়ায় আনা হয়, ততদিন এ বিচার আংশিক, অসম্পূর্ণ এবং প্রতারণামূলকই থেকে যাবে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:১৩
বিজন রয় বলেছেন: দেশের সবই তো প্রহসন, ন্যায় বিচার কে করবে?