![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
বাংলাদেশে ‘র’: আগ্রাসী গুপ্তচরবৃত্তির স্বরূপ সন্ধান।
লেখকঃ আবু রুশদ Abu Rushd A R M Shahidul Islam
বিশ্লেষণধর্মী পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
অনুজপ্রতীম আবু রুশদ এর লেখা বইটি কিনেছিলাম ২০১৮ সালে। আমার মনে আছে, বইয়ের সাথে লেখক কিছু লেখ্য সামগ্রীও উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। বাড়িতে এবং অফিসেতো বইয়ের মাঝে ডুবে থাকিই, ভ্রমণকালীন সময়েও আমার সাথে একগাদা বই থাকে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে ষ্টীমার ছাড়ার আগমুহূর্তে আমাকে যখন সাদা পোশাকে অজ্ঞাতনামা অস্রধারীরা বলপূর্বক নামিয়ে নিয়ে আসে, অর্থাৎ গুম করে তখন আমার ব্যাগে এই বইটাও ছিল! একেতো আমি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করি তার উপর বমাল "বাংলাদেশে ‘র’: আগ্রাসী গুপ্তচরবৃত্তির স্বরূপ সন্ধান" সহ ধরা খেয়ে 'আলাদা ভাবে নির্যাতনের একটা এপিসোড' করে নির্যাতনের মাত্রাটা বহুগুণ বেশি হয়েছিল! যাই হোক- ঘরে নতুন কোনো বই নাই, তাই দ্বিতীয় বার পড়ে ফেললাম- বাংলাদেশে ‘র’: আগ্রাসী গুপ্তচরবৃত্তির স্বরূপ সন্ধান"। দেখা যাক, কি আছে এই বইয়েঃ
প্রথমে বইয়ের প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব বর্ননা করছিঃ-
(১) সবাই জানি, আবু রুশদ সাবেক সেনাকর্মকর্তা সাংবাদিক এবং বাংলাদেশে ডিফেন্স জার্নালিজমের পথিকৃৎ। সামরিক শৃঙ্খলার অভিজ্ঞতা ও গণমাধ্যমের বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে এক ভিন্ন মাত্রায় তুলে ধরেন। এই বই মূলত ভারতের বহির্বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থা Research and Analysis Wing (R&AW বা ‘র’)–এর কার্যক্রম, কৌশল ও প্রভাব নিয়ে রচিত। বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিকভাবে ভারতের নিকটতম ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায়, এদেশে ‘র’-এর ভূমিকাই বইটির কেন্দ্রবিন্দু।
বাংলাদেশে ‘র’ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, তবে তা সাধারণত রাজনৈতিক অভিযোগ বা কূটনৈতিক মন্তব্যে সীমিত। আবু রুশদের বইয়ের বিশেষত্ব হলো- এটি অনুমাননির্ভর নয়, বরং প্রামাণ্য দলিল, সাক্ষাৎকার ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সমন্বিত বিশ্লেষণ।
(২) মূল বিষয়বস্তুঃ
বইটির আলোচনার মূলধারা কয়েকটি ভাগে বিভক্তঃ
(ক) বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটঃ
লেখক দেখিয়েছেন, দক্ষিণ এশিয়ার শক্তির ভারসাম্যে বাংলাদেশ একটি “কৌশলগত বাফার জোন”। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, সন্ত্রাস দমন, বিচ্ছিন্নতাবাদ, এমনকি চীন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে বাংলাদেশের ভৌগোলিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই প্রেক্ষাপটেই ‘র’-এর কার্যক্রম, অত্যন্ত গভীর এবং তীব্রতর।
(খ) ‘র’-এর কৌশল ও কার্যক্রমঃ
বইটিতে ‘র’-এর কার্যক্রমকে দুইভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে-
(১) সরাসরি গোয়েন্দা কার্যক্রম: গুপ্তচর, তথ্য সংগ্রহ, অপারেটিভ নেটওয়ার্ক।
(২) পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার: রাজনৈতিক দল, এনজিও, মিডিয়া, এমনকি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার।
(গ) বিরল সাক্ষাৎকার ও দলিলঃ
এই বইয়ের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ হলো- বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা DGFI ও NSI এর সাবেক প্রধানদের নেওয়া সাক্ষাৎকার। এগুলো সাধারণ পাঠকের নাগালে আগে আসেনি। এই সাক্ষাৎকারগুলো বইটিকে শুধু গবেষণামূলকই নয়, বরং ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
(ঘ) রাজনৈতিক প্রভাবঃ
লেখক বিশ্লেষণ করেছেন, কীভাবে ‘র’ বাংলাদেশে রাজনৈতিক মেরুকরণকে প্রভাবিত করতে পারে। রাষ্ট্রক্ষমতায় কারা থাকবে, কোন দলের উত্থান-পতন ঘটবে, আন্তর্জাতিক জোটে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে- এসব ক্ষেত্রে ‘র’-এর ভূমিকা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণ হাজির করেছেন।
(৩). আমার মনোবিশ্লেঢণে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গিঃ
আবু রুশদ আবেগপ্রবণ নন, বরং একজন গবেষক সেনাকর্মকর্তার মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ বিশ্লেষণ দিয়েছেন। তিনি একদিকে ভারতের দৃষ্টিকোণ তুলে ধরেছেন, যেখানে নিরাপত্তার কারণে ‘র’-এর সক্রিয়তা অপরিহার্য; অন্যদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হওয়ার ঝুঁকি ব্যাখ্যা করেছেন।
(৪). বইয়ের শক্তিঃ
প্রামাণ্যতাঃ সাক্ষাৎকার, দলিল ও ছবির ব্যবহার বইটিকে কেবল মতামতের স্তরে আটকে রাখেনি।
সাহিত্যধর্মী বিশ্লেষণঃ সামরিক ও রাজনৈতিক টার্ম সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ফলে সাধারণ পাঠকও ধরতে পারবেন।
সমসাময়িকতাঃ বর্তমান ভূরাজনীতির সঙ্গে বইটির আলোচনা সরাসরি সম্পর্কিত, বিশেষত চীন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক বাস্তবতা।
অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত দৃষ্টিভঙ্গিঃ শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের কৌশলগত বাধ্যবাধকতাও লেখক তুলে ধরেছেন, যা বিশ্লেষণকে ভারসাম্যপূর্ণ করেছে।
(৫). বইয়ের সীমাবদ্ধতাঃ
সূত্র নির্ভরতাঃ যদিও অনেক দলিল আছে, কিছু অধ্যায়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ অনুমাননির্ভর মনে হয়েছে।
ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিক্রিয়া কমঃ ভারতের নীতিনির্ধারক বা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বক্তব্য সরাসরি অন্তর্ভুক্ত হয়নি, ফলে আলোচনায় একতরফা ভাব আছে।
বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটঃ দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক গোয়েন্দা প্রতিদ্বন্দ্বিতা (CIA, ISI, MSS) তুলনায় কম আলোচিত।
(৬). সামগ্রিক মূল্যায়নঃ
“বাংলাদেশে ‘র’: আগ্রাসী গুপ্তচরবৃত্তির স্বরূপ সন্ধান” একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক-গবেষণামূলক গ্রন্থই নয়, বরং আমাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আর সার্বভৌমত্বের আয়না। বইটি শুধু পাঠকের কৌতূহল মেটায় না, বরং জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে চিন্তার খোরাক জোগায়। জাতীয়তাবাদী স্পেসিফিকলী বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনীতিতে আগ্রহী পাঠক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষার্থী, এমনকি সাংবাদিক ও নীতিনির্ধারকদের জন্যও বইটি অবশ্যপাঠ্য।
বাংলাদেশের ভেতরে কীভাবে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ কাজ করে, কীভাবে রাজনীতি থেকে মিডিয়া পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে- তা প্রমাণ ও দলিলসহ তুলে ধরা হয়েছে।
সারসংক্ষেপ বলবো- এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা বাংলাদেশের ভেতরে ‘র’-এর গুপ্তচরবৃত্তি কেবল উন্মোচনই করে না, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ সম্পর্কেও গভীর ভাবনার দরজা খুলে দেয়।
A R M Shahidul Islam-ABU RUSHD
(৩৬ জুলাই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আমি গিয়েছিলাম আবু রুশদ ভাইয়ের বনানীর বাসায়। তখন তিনি তার লেখা বেশকিছু বই উপহার দিয়েছিলেন)
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০১
জুল ভার্ন বলেছেন: আপনি নিশ্চয়ই জানেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা গুম কে মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মানবতা বিরোধী অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারের আওতায় এসেছে। বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এর উপর কাজ করছে। জাতিসংঘের সহযোগিতায় বাংলাদেশেও 'গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন' গঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই ভুক্তভোগী এবং তাদের পক্ষে সেখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গুমের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং উনিশ শতাধিক অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে- যাদের নথিপত্র ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশেও গুম সংক্রান্ত কয়েকটি সংগঠন গড়ে উঠেছে মূলত দলীয় সংগঠন হিসাবে। আমরা ভুক্তভোগীদের কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসাবে বিবেচনা না করে স্রেফ ভুক্তভোগী হিসাবে পরিচিত করে তাদের অধিকার রক্ষায় গড়ে তুলেছি- United for Voices of Enforced Disappearances (UVED). এই সংগঠন এর আহবায়ক ভুক্তভোগী সাবেক সেনাকর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, সদস্য সচিব আমি। আমরা জাতিসংঘের জাতিসংঘ মানবাধিকার ওয়ার্কিং গ্রুপের সাথে যৌথ ভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা গুলোর সাথে কাজ করছি....
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৩
শেরজা তপন বলেছেন: সেদিন একটা পোস্টে দেখলাম আপনি কোন এক সেমিনারে বক্তৃতা দিচ্ছেন। আজ ফের আপনাকে দেখে ভাল লাগল।
আবু রুশদ-এর কষ্ট সার্থক হউক। বইটির রিভিউ ও সমালোচনা নির্মেদ ও চমৎকার হয়েছে।