নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি মামলার ভুক্তভোগীর কাহিনী....

১৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৫৬

একটি মামলার ভুক্তভোগীর কাহিনী....

২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর আমি আর Zahid Hassan মিরপুর থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলায় আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে...(আমাদের বিরুদ্ধে ৩ টি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলা এবং ১ টি সাইবার এ্যাক্ট মামলা)।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এফ এম জুলফিকার হায়াত।

(উল্লেখ্য, এই মামলায় ইতিপূর্বে ২০ বার আদালতে বাদী পক্ষের জবানবন্দি, মামলায় জব্দ আলামত উপস্থাপন এবং সাক্ষীদের শওয়াল জবাব হয়েছে। জব্দকৃত আলামত দুটো সেলফোন, একটা ল্যাপটপ এবং পিসি CID Biometric test report আদালতে জমা দিয়েছে। সেই রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে- উল্লেখিত গ্যাজেটস থেকে সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী যেসব পোস্ট দেওয়া হয়েছিল তখন আমি র‍্যাবের হাতে গুম এবং জেলখানায়। তখন উল্লেখ্য গ্যাজেটস র‍্যাব-১০ এর হাতে ছিলো। বিচারিক আদালত থেকে মামলার ডকুমেন্টস তুলে আইনানুগ ভাবে হাইকোর্টে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে রিট আবেদন করি। হাইকোর্টে আমার মামলার আইনজীবী ছিলেন দেশ সেরা আইনজীবী এ জে মহম্মদ আলী(সাবেক এটর্নি জেনারেল)। তিনি বারবার প্রমাণ তুলে ধরেছেন- "যখন আস্র ফোন থেকে কথিত সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী পোস্ট প্রচারিত হয়েছে তখন আসামি জালবন্দী ছিলেন"- তবুও হাইকোর্টের তিনটা বেঞ্চ আমার আবেদন খারিজ করে দেয়।

আমার বাড়ির ফ্রন্ট ডোড় নেইবার ততকালীন এডিশনাল এটর্নি জেনারেল, ১৫ বছর আপীল বিভাগের অভিজ্ঞ আইনজীবী। আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা, হিন্দু ধর্মাবলম্বী, আমাদের মধ্যে কোনো ধর্মীয় ভেদাভেদ নাই। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানজনক সম্পর্ক। তিনি গোপনে এবং নেপথ্যে আমাকে আইনী সহায়তা দিয়ে আসছিলেন। হাইকোর্টের তিনটা বেঞ্চ আমার মামলা খারিজ করে দেওয়ায় তিনি আমাকে নিয়ে এটর্নি জেনারেল সাহেবের চেম্বারে গেলেন এবং মামলার অসারতা তুলে ধরে অনুরোধ করলেন- মামলা থেকে অব্যাহতি না দেওয়া হলেও স্থায়ী জামিনের (বিচারিক প্রকৃয়া শেষ না হওয়ার পর্যন্ত) ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। এটর্নি জেনারেল অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললেন- "ভাই, আমিও বিশ্বাস করি- এগুলো হয়রানি মূলক মামলা। তবুও আমার কিম্বা প্রধান বিচারপতিও বর্তমান অবস্থায় আপনার পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না.... যতদিন সম্ভব মামলার রায় ডিলে করার চেষ্টা করেন..."।

আমাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের (র‍্যাব-১০) একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিলো- কয়েক মাস বা বছরে সাক্ষীদের পরিবর্তন....(আইনানুসারে রাষ্ট্রপক্ষের সেই সুযোগ ছিলো)। কারণ, বিভিন্ন বাহিনী থেকে র‍্যাবে প্রেশনে তিন বছরের জন্য আসেন। আমাদের মামলার বয়স তখন প্রায় ছয় বছর। পুরনোরা কেউ বদলী হয়ে গিয়েছে, কেউ অবসর নিয়েছে। তিন সাক্ষী আমাদের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত সাক্ষী দিচ্ছেন.... আমাদের মামলার বিজ্ঞ আইনজীবী টিম তাদের পেশাগত অভিজ্ঞতায় জানতে বা বুঝতে পেরেছেন সাক্ষীরা মূলত 'সাক্ষীগোপাল'। আমাদের পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার সাক্ষীদের জেরা করছেন..... প্রথমে সাক্ষীদের নাম পরিচয়, সার্ভিস লাইফ, আমাকে আর জাহিদকে গ্রেফতারের পটভূমি ইত্যাদি ইত্যাদি। অভিজ্ঞ আইনজীবী বুঝে গিয়েছেন- তিনজন সাক্ষীর একজনও মামলার সাথে জড়িত এবং প্রকৃত সাক্ষী নন। তবুও এরা র‍্যাবের পোশাক এবং র‍্যাংক দেখিয়েই আমাদেরকে ফাঁসিয়ে দিতে পারবে....,স্বৈরশাসকের দোসর আদালত /বিচারকগণও তা মেনে নেন...

★ প্রথম সাক্ষী আসামি হুমায়ুন কবির (আমাকে)কে শনাক্ত করতে পারেনি। জেরার জবাবে বলেন- "অনেক দিন আগের কথা তাই মনে করতে পারছিনা।"

★ দ্বিতীয় সাক্ষী বলতে পারেনি- আমাকে আর জাহিদকে কবে কোথায় কিভাবে গ্রেফতার করেছিলো- "এই মুহূর্তে মনে করতে পারছিনা- চার্জশিট দেখে বলতে হবে!" আইনজীবীর কঠিন প্রশ্নবানে একপর্যায়ে স্বীকার করে- গ্রেফতারের সময় সে ছিলো না।

★ তৃতীয় সাক্ষী ইউনিফর্ম ছাড়া জিনস প্যান্ট, টি-শার্ট আর মাথায় ক্যাপ পড়ে এসেছে (হয়তো নিজের চেহারা আড়াল করতে)। বিচারক সাহেব প্রথম দুই সাক্ষীর উল্টাপাল্টা বক্তব্যে চরম বিরক্ত ছিলেন। তার উপর তৃতীয় সাক্ষীকে সিভিল ড্রেসে দেখে প্রথমেই তিনি সাক্ষীকে ভর্ৎসনা /তিরস্কার করলেন। বিচারক এবং উকিল সাহেবের প্রশ্নবানে খেই হারিয়ে ফেলে এই সাক্ষী অকপট স্বীকার করে- "আমি ২০২২ সালে র‍্যাব-১০ এ যোগদান করেছি....তাই ২০১৮ সালে আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা! আমি আমার উপস্থ অফিসারের নির্দেশে সাক্ষী দিতে এসেছি।"

পুরো আদালত জুড়ে হাসির ফোয়ারা....
আমি আর জাহিদ খুশীতে 'হাইফাইভ' করলে- বিচারক আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন- "মুরব্বি, ফুর্তি করার কিছু নাই। রাষ্ট্রপক্ষের এই সাক্ষীর উপর ভিত্তি করেই আমাকে রায় দিতে হবে। তবে এমন মামলার রায় যেন আমাকে না দিতে হয়- তাই মামলার পরবর্তী তারিখ ২০২৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ধার্য্য করলাম। ৭ জানুয়ারী ইলেকশন.... আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেন....."!

আলহামদুলিল্লাহ।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ আমি আর জাহিদ প্রথম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাই।

আমাদের গুম করে নির্যাতন নিপীড়ন করেছে। পরবর্তীতে গ্রেফতার দেখিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট আজগুবী মামলায় জেল খেটেছি, বছরের পর বছর হয়রানীর শিকার হয়েছি, দীর্ঘ বছরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা-বাণিজ্য সব হারিয়েছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলা ছাড়াও অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাঁধাদান, রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রের আরও ১৪ টি গায়েবী মামলা চালাতে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। প্রতি সপ্তাহে কম পক্ষে দুইদিন কোর্টে হাজিরা দিতে যেতে হয়। কখন কখনও হাসপাতাল থেকে সোজা কোর্টে গিয়েছি, আবার হাসপাতালে ফিরে এসেছি। একদিনে তিন মামলায় সিএমএম কোর্ট, সাইবার ট্রাইবুনাল কোর্ট এবং মহানগর দায়রা জজ কোর্টে হাজিরা দিতে হয়েছে। আমার শারীরিক অবস্থা এতোটাই খারাপ যে নিজ বাড়ি থেকে কোর্টে দৌড়াদৌড়ি সহ্য করতে পারছিলাম না। এক পর্যায়ে কোর্ট সংলগ্ন একটা ফ্ল্যাটের একটা রুম সাবলেট ভাড়া নিয়ে চারজন থেকেছি। এভাবেই ১৮ টা মামলার যন্ত্রণা সহ্য করেছি!

আমি এবং আমরা পালিয়ে যাইনি। We dream for - Made in Bangladesh. হাসিনা গংদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার সময় I cannot hold my tears. আমার স্ত্রী সন্তানেরা কেঁদেছে- দেশজুড়ে লাখ লাখ মজলুম কেঁদেছে। আমরা সবাই নীরবে বলেছি- We are fighters, we fight for the country till our last breath.

এতো কিছুর পরেও আমরা আমাদের দেশেই আছি। অথচ লেডি হিটলার শেখ হাসিনা তার চোদ্দগুষ্টি নিয়ে পালিয়ে দেশ ছেড়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ১৮ বছরের অত্যাচারীরা সব রথী মহারথী আজ পলাতক।

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকিল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.