নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। কালেভদ্রে লিখি :)

মোঃ জুনায়েদ খান

ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..

মোঃ জুনায়েদ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প : দাগ

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩



টেবিলে দু’ পৃষ্ঠার একটা কাগজ পড়ে আছে। লুতফা তাকিয়ে আছে কাগজটার দিকে। আড়চোখে।

সম্বন্ধটা এনেছেন মন্টু মামা।

মা বাবার কাগজটা কয়েকবার করে পড়া হয়ে গেছে। দু’জনের চোখে মুখে হাসি। বাবার মুখটা একটু বেশীই উজ্জ্বল! বোঝাই যাচ্ছে ছেলেকে খুব পছন্দ হয়েছে তার!

বিয়েটা এখন পুরোপুরি লুতফার মতামতের উপর নির্ভর করছে। লুতফা এবার হা বলে দিলেই মন্টু মামা ঝাঁপিয়ে পড়বেন। ছেলে পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। খারাপ কীসে?

এর আগেও একটা ছেলেকে বাবা মার ভীষণ পছন্দ হয়েছিলো। ছেলের ছবি আর কোয়ালিফিকেশন দেখে লুতফাও মৌন সম্মতি জানিয়েছিলো। কিন্তু ঐ দু’পৃষ্ঠার কাগজটাই সব ভন্ডুল করে দিয়েছিলো! ছেলের নাম যে রুমন ইসলাম! হোকনা সে অন্যকোন রুমন ইসলাম। তবুও লুতফার ঘোর আপত্তি! সরাসরি না বলে দিয়েছিলো সে।

লুতফার একটা রিলেশন ছিলো। না, রুমনের সাথে নয় ছিলো ইথেনের সাথে। বছর দুয়েক আগে ভেঙে গেছে। মিউচুয়াল ব্রেক আপ যাকে বলে। পথ যখন বেঁকেই গেছে তখন আর সোজা করার চেষ্টা করেনি কেউই। নিজ নিজ পথে আলাদা হয়ে গেছে দু’জন। এখনো অবশ্য হাই-হ্যালো চলে।

কিন্তু রুমন! এখন কোথায় আছে কে জানে? সেদিনের পর থেকে আর কোন খোঁজ রাখেনি লুতফা।

লুতফা পড়তো ইংরেজিতে আর রুমন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। উদ্ভট উদ্ভট সব কবিতা লিখত রুমন। কবিতার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতো না লুতফা। তবুও আগ্রহভরে সব কবিতা পড়তো সে। ‘কলাগাছের শিরশ্ছেদ’ নামক কবিতাটা প্রথমবার পড়ে খুব হেসেছিলো লুতফা। কিন্তু দ্বিতীয়বার পড়ে ঠিকই চোখ ছাপিয়ে জল এসেছিলো ওর।

জীবনটাকে অন্যভাবে দেখতো রুমন। সবাই যখন ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিতো, রুমন তখন আমজাদের ক্যান্টিনে র চায়ের সাথে সিগারেট ফুকতো। বন্ধুরা বলতো ‘কিরে তোর টেনশন হয়না?’। রুমন একগাল হেসে বলতো - ‘হবে না কেন? খুব হয়! তবে তোদের মতো না!’

রুমনকে নিয়ে খুব চিন্তা হতো লুতফার। মাঝ রাস্তায় যেভাবে উদাস হয়ে চলাফেরা করে, না জানি কবে গাড়ি চাপা পরে মরে যায় ছেলেটা। যদিও রিক্সা বা ভ্যান চাপা পরার রেকর্ডও রুমনের রেকর্ডবুকে ছিলোনা।

মেটে রঙয়ের একটা শার্ট ছিলো রুমনের। সপ্তাহে সাতদিন না হলেও ঘুরেফিরে কমপক্ষে পাঁচদিন তো পড়তোই ওটা। বান্ধবীরা বলতো, ‘মেথর কোথাকার! তোর আর শার্ট নেই?’ রুমন ঠোঁট দুটো হালকা প্রসারিত করে বলতো- ‘নারে! বড়ই অভাবে আছি। দে না কিনে একটা!’ কিন্তু বাস্তবে রুমনের শার্টের কোন অভাব ছিলো না। লকারে থরে থরে সাজানো থাকতো সব। রুমন ভুলেও লকার খুলে উল্টিয়ে দেখতো না কোনদিন। রুমনের সেই মেটে শার্টের রহস্য আজ পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি লুতফা।

লুতফার জীবনে রুমন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন বহ্নি আপু। সেই ফার্স্ট ইয়ারে গণরুম ছেড়ে যখন বহ্নি আপুর রুমে উঠেছিলো লুতফা। সেদিনই একটা কবিতা আবৃতি করতে হয়েছিলো লুতফাকে। আবৃতি ঠিক নয়, এক নিঃশ্বাসে তিপ্পান্ন লাইনের একটা কবিতা পড়তে হয়েছিলো ওকে। যতক্ষণ না এক নিঃশ্বাসে শেষ করতে পারেনি লুতফা ততক্ষণ পর্যন্ত দরজা ডিঙ্গোতে দেন নি বহ্নি আপু। এক নিঃশ্বাসে শেষ করতে অনেক কষ্ট হয়েছিলো লুতফার। বিদঘুটে কবিতাটির জনক কবি রুমন ইসলামকে সেদিন মনে মনে কয়েকশত বার কচুকাটা করেছিল লুতফা।

সেই বিদঘুটে কবি রুমন ইসলামই একদিন খুব প্রীয় মানুষ হয়ে উঠলো লুতফার। বহ্নি আপুর ভাঙা ক্যাসেটের অবদান তো ছিলোই, সাথে যোগ হয়েছিলো ফেসবুক। রুমনের প্রতিটি পোস্টের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতো লুতফা। প্রথমদিকে পাগলের প্রলাপ মনে করে উপেক্ষা করলেও ক’দিন পরেই রুমনে মজে গিয়েছিলো সে। প্রচলিত একটা জিনিস যে অন্যভাবেও ভাবা যায় সেটা রুমনের থেকেই প্রথম শিখেছিলো লুতফা। সবাইকে তো আর এক স্তরে এনে বিচার করা যায় না। একেক জনের অবস্থান একেক স্তরে!

কৌতূহল দমাতে না পেরে একদিন রুমনের পিছু নিয়েছিলো লুতফা। দক্ষ গোয়েন্দার মত অর্ধেকটা দিন ফলো করেছে। উসকো খুশকো চুল, খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর ময়লা মেটে রঙয়ের শার্টটা গায়ে চড়িয়ে একা একা ঘুরেছে রুমন। উদ্ভ্রান্তের মতো হাঁটাহাঁটি করে, কখনো বা চা-সিগারেটে মজে ক্লাস আওয়ার গুলো পার করে দিয়েছে সে। মোবাইলটা নিয়েও কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করেছে। তারপর ঠিক সোয়া বারোটায় হোটেলে গিয়ে আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে লাঞ্চ সেরে হলের দিকে হাঁটা দিয়েছে রুমন। রুমনকে ফলো করে এর চেয়ে বেশী কিছু উদ্ধার করতে পারেনি লুতফা।

একদিন বহ্নি আপুকে প্রায় বলেই ফেলেছিলো সে। ‘আপু, তোমার বন্ধুটা তো পাগল! একটা পাগলকে নিয়ে এতো লাফালাফির কি আছে!’ আপু... বলেই সেদিন থেমে গিয়েছিলো লুতফা। রুমনকে নিয়ে সেও কি লাফালাফি কম করছে!

সেই পাগল রুমন এখন কোথায় আছে কে জানে? সেদিনের পর থেকে আর কোন খোঁজ রাখেনি লুতফা।

রাত তখন দুইটা বাজে। ঘুমিয়ে পড়েছিলো লুতফা। র‍্যাগ ডে শেষ করে বহ্নি আপু কখন ফিরেছে টের পাইনি সে। হঠাৎ গোঙ্গানীর শব্দে ঘুম ভেঙে কিছু না বুঝেই চিৎকার করে কেঁদে ওঠে লুতফা। লুতফার চীৎকারে পাশের রুম থেকে আলপনা আর নাবিলা আপু ছুটে আসে। ফ্যানের সাথে ওড়না প্যাঁচিয়ে ফাঁস নিয়েছে বহ্নি আপু! ওড়না কেটে নামাতে নামাতেই ওপাড়ে চলে যায় লুতফার বহ্নি আপু। মুহুর্তের মধ্যে লুতফার ১২০ স্কয়ার ফুটের ঘরখানা উৎসুক মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বহ্নি আপুর টেবিলে রাখা ভাঁজ করা কাগজটা নিয়ে চুপিসারে বেরিয়ে পরে লুতফা। বাথরুমে গিয়ে কাঁপাকাঁপা হাতে ভাঁজ খুলে কাগজটাকে চোখের সামনে মেলে ধরে সে।

‘তোর জগত নিয়ে ভালো থাকিস রুমন। আমি আমার জগতে চললাম...’

আরকিছু লেখা ছিলো না কাগজটায়। কাগজটাকে কুচিকুচি করে ছিড়ে কমোডের ফ্লাশে ভাসিয়ে দেয় লুতফা। সেদিনই রুমন ইসলামও কাগজের কুচি হয়ে লুতফার জীবন থেকে ফ্লাশের জলের সাথে ভেসে যায়!

টেবিলে দু’ পৃষ্ঠার একটা কাগজ পড়ে আছে। লুতফা তাকিয়ে আছে কাগজটার দিকে। আড়চোখে।

সম্বন্ধটা এনেছে মন্টু মামা।

অনেক কষ্টে ছেলের নাম উদ্ধার করেছে লুতফা। র ম ন থাকলেও ওটা রুমন ইসলাম না! রিমন ইসলাম! রুমন ছাড়া অন্য যেকোন নামে আপত্তি নেই লুতফার!

শিনা টানটান করে সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকায় লুতফা।

‘বাবা, আমার আপত্তি নেই। তোমরা এগুতে পারো...’

[ছবি- ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৩

ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লেগেছে।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ! ভালো থাকবেন।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫

প্রামানিক বলেছেন: জুনায়েদ অনেক দিন পর তোমার গল্প পেলাম। কেমন আছ?

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০০

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ্‌! ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন প্রামানিক ভাই?

৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: "শিনা টানটান করে সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকায় লুতফা।" এই লাইনটা অপ্রয়োজনীয় মনে হলো । সর্বোপরি গল্পটা ভালো লেগেছে ।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৩

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ। :)

৪| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮

মাসুম সোহাগ বলেছেন: ভালো লাগলো :-B

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন

৫| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮

মাসুম সোহাগ বলেছেন: ভালো লাগলো :-B

৬| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:



বার বার রুমন বলে সম্বোধনটা দৃষ্টিকটু লাগছে।

শুভকামনা রইলো।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। :)

৭| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কান্ডারি অথর্ব ভাইয়ের সাথে একমত|
গল্পটা সুন্দর| ভাল লেগেছে

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৫

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ রাখাল ভাই। পরবর্তী এডিশনে বিষয়টা মাথায় রাখবো। ভালো থাকবেন।

৮| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: পোস্টে A+। অনেক সুন্দর ।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২১

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৯| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৭

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: ভাল লেগেছে গল্প। চালিয়ে যান।

১০| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৫

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। ☺

১১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪১

চাঁদেরকণা বলেছেন: চমৎকার লিখেন তো আপনি!

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৫

মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: চমৎকার আর কই? যা মনে আসে লিখে ফেলি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.