নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নারী বা পুরুষ বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। আমরা সবাই মানুষ।

জুনায়েত জান্নাত

মানুষ বলে কিছু একটা আছে এই পৃথিবীতে আমার মনে হয়।

জুনায়েত জান্নাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারীবাজি ১৯৭১

১২ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:২১



(শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ভগীরথী সাহা)

মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে নারীর একটি অবিচ্ছেদ্য ও গভীর সম্পর্ক আছে, যোগসূত্র আছে। আছে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার ইতিহাস। এই ইতিহাসটা সকলে স্বীকার করেন। কিন্তু বাস্তবে এর ভিন্ন দৃশ্য চোখে পড়ে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও নারীর বিপন্নতা, বলা চলে একটি অভিন্নতার ইতিহাস। এটাকে চাপা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচিত হওয়া অসম্ভব। আমরা আজ পর্যন্ত সঠিকভাবে জানিনা নারী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কারা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কারা, কারা সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা, কারা যুদ্ধক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে সহযোগী-বীরাঙ্গনা-শহীদ জননী-শহীদ জয়া কারা!

অশ্রুসিক্ত ইতিহাস-ঘটনা, করুণঘন অন্ধকারের মধ্য থেকে একটি আবছায়া অন্ধকারের আলোর নাম 'ভগীরথী' (শহীদ মুক্তিযোদ্ধা)। তার মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক জীবনবৃত্তান্ত জানতে গেলে ১৩ সেপ্টেম্বরের কথা স্মরণ করতে হবে আগে।

১৩ সেপ্টেম্বর। আর সবদিনের মতোই ভগীরথী পাক ক্যাম্পে আসে। তার স্বভাবমতো পাকবাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজ নিতে শুরু করে। হঠাৎ করেই দুজন পাকসেনা ও ৬ জন রাজাকার তাকে ঘিরে ধরলো। টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলো ক্যাম্পে। ক্যাপ্টেন এজাজ, শান্তি কমিটির নেতা রাজাকার প্রধান মানিক খন্দকারসহ আরো কয়েকজনের সাথে বৈঠক শেষ করে তারা সিদ্ধান্ত নিলো ভগীরথীকে হত্যা করার। এবং এই নিষ্ঠুর দায়িত্ব দেয়া হয় সুবেদার সেলিমকে। আদেশ দেয়া হয় তাকে সবার সামনে ভগীরথীতে হত্যা করার!

প্রথমে পিরোজপুর শহরের জনবহুল চৌমাথায় ভগীরথীকে উলঙ্গ করে দড়ি লাগিয়ে একটি মোটরসাইকেলের সাথে বেঁধে শহরের রাস্তায় টেনে বেড়ালো সুবেদার সেলিম। ঘন্টাখানিক মোটরসাইকেল চালিয়ে ভগীরথীর রক্তে রঙিয়ে দিলো সে গোটা রাজপথ!
[ '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীরা কে কোথায় গ্রন্থে উল্লেখ আছে ভগীরথীকে দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর নির্দেশেই মোটরসাইকেলের পেছনে বেঁধে পাঁচ মাইল পথ টেনে আনা হয়। ]

চৌমাথায় ফিরে এসে দেখা গেলো ভগীরথী মরেনি, তার হৃদস্পন্দন সচল; তখন তারা তার দুইপা দুই জিপের সাথে বেঁধে জিপ দুটোকে বিপরীত দিকে চালিয়ে দিলো! দুইভাগ হয়ে গেলো মহান মুক্তিযোদ্ধা ভগীরথীর দেহ। সেই দু’টুকরো দেহ আবারো দুই জিপে বেঁধে শহর পরিক্রমণ শেষে খন্ড-বিখন্ড দেহ চৌমাথায় ফেলে রেখে ক্যাম্পে ফিরে যায় পাকিস্থানী সেনারা উল্লাস করতে করতে।

ভগীরথী কে ছিলেন? কেনো এমন নির্মম পরিহাস তার? কি ছিলো তার মহত্ব? আরেকটু সামনে তাকালে তার মহৎ উদ্দেশ্য ও সফলতা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই।

পিরোজপুর বাগমারা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ভগীরথী। গোয়ান্দাগিরির কাজ করতেন তিনি। ভিক্ষুক সেজে চলে যেতেন সরাসরি পাকসেনাদের ক্যাম্পে। ১৯৭১ সালের মে মাস। ঐ দিন বিকেলে বরিশাল জেলার পিরোজপুর মহকুমার বাগমারা কদমলী গ্রামে পাকসেনারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ সময় পাকসেনারা বিধবা পল্লীবালা ভগীরথীকে ক্যাম্পে নিয়ে এসে পাশবিক নির্যাতন করে। অকুতোভয় ভগীরথী সেই মুহূর্তে মনোবল সঞ্চার করে, মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে কৌশলে পাকবিহিনীর মন জয় করে নেয়। সেলিম একসময় ভগীরথীকে প্রস্তাব দেয়- সে যদি গ্রামে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর এনে দিতে পারে তবে তাকে বকশিশ দেয়া হবে। ভগীরথীর ছলছলে চোখে ঠোঁটের কোনে হাসি নিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

এরপর শুরু হলো ভগীরথীর জীবনের নতুন অধ্যায়। তিনি পাক-ক্যাম্পে নিয়মিত খবর জানাতে থাকলেন মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে; তবে পুরোটাই হতো বিভ্রান্তিকর। তিনি মূল চাইতেন পাকবাহিনী যেনো বিভ্রান্ত হয়। একবার তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলোচনা করে তাদের প্রস্তুত রেখে চলে যান পাক-ক্যাম্পে। তথ্য দেন পাকসেনাদের। বাগমারায় যাবার জন্য উৎসাহিত করেন। তার তথ্য অনুযায়ী পাকবাহিনী ঐ এলাকায় যেতেই মুক্তিবাহিনী তাদের উপর হামলা চালায়। সম্মুখযুদ্ধে ৪৫ জন পাকসেনার মধ্যে মাত্র ৪/৫ জন ক্যাম্পে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। ভগীরথীর কৌশল ও বিভ্রান্তিকর তথ্যে পাকিস্থানী বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। ধুরন্ধর পাকিস্থানী বাহিনীর বুঝতে বাকি থাকে না এটা একান্তই ভগীরথীর ফন্দি।
তারপর অনাকাঙ্খিত সেই ১৩ সেপ্টেম্বর।

এভাবেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ভগীরথীকে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে বাংলার মাটিতে ফেলে রেখে যায়। আজ তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। ভগীরথীকে নির্মমভাবে জিপে নাকি শুধু মোটরসাইকেলে বেঁধে হত্যা করা হয়েছে এ ব্যপারে ভিন্ন মতভেদ দেখা যায় বিভিন্ন বইয়ে। তবে সে সময়ের স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে দুইভাবেই অত্যাচার করা হয়েছে ভগীরথীর ওপরে। যেভাবেই হোক শহীদ ভগীরথী সাহা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্যাগের জলন্ত এক উদাহারণ।

দেশ স্বাধীনের পর ভগীরথীর মর্মান্তিক আত্মত্যাগের কাহিনী প্রকাশিত হয়েছিলো সে সময়ের দৈনিক পত্রিকায়!

তথ্যসূত্রঃ- ৭১ এর নারী (সুপা সাদিয়া)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.