নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অভ্র​

জংশন​

জংশন​

ধারে কাছের কেউ নই আমি... হয়তো আপনজনের অযত্নে অবহেলায় হারিয়ে যাওয়া বহুদূরের কোন এক অচেনা জংশন​।

জংশন​ › বিস্তারিত পোস্টঃ

থাক না... কিছু কথা না বলা...

২০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৪৬





আগেই বলেছিলাম যে আপাতত জংশনে এসেই ট্রেন ধরার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত আছি... ট্রেনে উঠতে পারলেই প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানাবো... মনে হচ্ছে, অনেক দৌড়ে অবশেষে ট্রেনটা ধরতে পেরেছি...



খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। এই তো খুব হলে আজ থেকে দেড় বছর আগে বা, তার কম সময়। সেদিন বসুন্ধরা সিটির আটতলায় বসে আছি। বলতে গেলে একাই আছি। আমি প্রায়ই এখানে একাই আসি আর এসেই বন্ধুদের পাই। অথবা, আমি আসার পর তার আসে। একসাথে বসে কিছুক্ষণ গল্প করি, সময় কাটাই, তারপর ফিরি বাসায়। সেদিনও তার ব্যাতিক্রম ছিল না। তবে প্রথমবারের মত সামনা সামনি একটা বিষয় দেখার একটা সুযোগ হয়েছিল সেদিন। ঘটনাটি ছিল ঠিক এই রকম-



বসুন্ধরা সিটিতে একা একা বসে এদিক সেদিক চোখ বুলাচ্ছি। আর তখনই এক অদ্ভুত ধাঁচে ঘোমটা দেয়া এক লক্ষী মেয়ের মুখদর্শন করলাম সেখানে। যদিও পুরো সময়টাই নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা মেয়েটি ও তার আশপাশের অবস্থা দেখে একটু পরে আর বুঝতে বাকি থাকলো না যে এখানে সবার অলক্ষে একটা পাত্রী দেখা পর্ব চলছে। মেয়েটাকে দেখে মুখে একটা বিস্কিট নিয়ে সারাক্ষণ কুট কুট করতে থাকা টাইপের কিছুটা লাজুক মনে হলেও তার মধ্যে একেবারেই যে প্রাণচাঞ্চল্য বলে কিছুই ছিল না, তা কিন্তু একবারও মনে হয়নি। এই ব্যাপারে কবিগুরু ঠিকই বলেছিলেন যে, "বারোয়ারী তাবুর কানাতের নিচে ব্যাবসাদার নাচওয়ালীর দর্শন মেলে, কিন্তু শুভ দৃষ্টিকালে বধুর মুখ দেখবার বেলায় বেনারসী ওড়নার ঘোমটা চাই।" মেয়ে যেমনই হোক না কেন, পাত্রী দেখা পর্বে অবশ্যই তাকে বিশাল আকারের একটা ঘোমটা দিয়ে পাত্রপক্ষের মনোরঞ্জনে নিজেকে নিবৃত করতে হবে। প্রাগৈতিহাসিক আমল থেকে অদ্যবদি উপমহাদেশে এই পর্বটি-ই চলে আসছে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে। এই মেয়েটিও সে ধারাবাহিকতা থেকে সরে আসতে পারেনি, আর আমিও যেদিন আমার জন্য পাত্রী দেখতে যাব, সেদিনও হয়তো আমিও এই মনোরঞ্জনের ধারবাহিকতা চাইবো। যার ব্যাতিক্রম মানেই অসভ্যতা।



দেখাদেখি পর্বে কিছুক্ষণ পর পাত্রের এক আত্মীয়া শুরু করেন পরিচয় পর্ব। আর পরিচয় হতে না হতেই তিনি শুরু করেন নিজের শাড়ির আঁচল, ঠোঁটের লিপস্টিক, হাতের বালা, গলার লকেট সহ সাথে আনা বিভিন্ন তৈজসপত্রের দৈনন্দিন ব্যবহার, দরদাম আর গুণাবলীর বর্ণনা। এগুলো শুনে যে পাত্রীর মোটেও ভাল লাগছিল না সেটা বেশ ভালই বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু উপায় নেই। আজ সে বাঁধা, তাকে যে শুনতেই হবে। উক্ত ভদ্রমহিলার এত কথা শুনে পাত্রী যে মহা বিরক্ত তা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। ফিস ফিস করে মেয়ে তা মাকে সম্ভবত প্রশ্ন করেছিল, "মা, এই মহিলা এত বেশি কথা বলে কেন?" কিন্তু মায়ের রুক্ষমূর্তি দেখে কন্যা আবার চুপ। এক সময় হঠাৎ তাকে প্রশ্ন করা হল যে সে রান্না জানে কিনা? এই প্রশ্নে মেয়েকে আর পায় কে? মেয়ে বেশ দাম্ভিকতার সাথেই বলে উঠলো, "না, আমি কিছুই পারি না।" আর সাথে সাথেই প্রশ্নকর্তার মুখশ্রীতে আষাঢ়ের মেঘ ঢেকে গেল।



এতক্ষণ ধরে মজা দেখতে দেখতে ক্লান্ত আমি। হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে আমার। বিশেষ করে বেচারা পাত্রের খাদ্যাভ্যাস দেখে। প্লেট চেটেপুটে খাওয়া বাছাধন ভালই শিখেছে। পাত্রী দেখতে এসে যে একটু রয়ে সয়ে খেতে হয়, বেচারা বুঝি তা জানেই না।



পাত্রীদেখা পর্ব শেষ। অতঃপর মাননীয়া কন্যা হাফ ছাড়িয়া বাঁচিলেন। কপালের ঘাম মুছিলেন। এসির বাতাসের স্বাদ অনেকক্ষণ পর তিনি অনুভব শুরু করিলেন। ভাবিতে ছিলেন, "যাক, আপদ বিদায় হল।" কিন্তু প্রকাশ করিবার তেমন একখানা ভাব পরিলক্ষিত হইতেছিল না। কারণ, দুপুরবেলায় স্বীয় মমতাময়ী জননীর মমতা বিবর্জিত সেই রুক্ষমূর্তি ধারণ তাহাকে আবারও স্মরণ করিয়া দেয়, যখন তিনি বলিয়া ছিলেন, "উহু, আমি যাইবো না।" তথাপি, না যাইয়া উপায় হয় নাই তাহার, নিজেকে পাত্রপক্ষের সম্মুখে আসিতেই হইলো তাহাকে। ইহার পরও পাত্রপক্ষের প্রস্থানে পাত্র লইয়া তাহার তাহার বিরূপ মন্তব্য আর অতিহাস্যজ্জ্বল মুখখানা আর সহ্য হইলো না। এইবার আমি পাশের টেবিল হইতে কহিযা বসিলাম, "দেইখেন, পাত্র আবার আমার কোন বন্ধু নয় তো?" শুনিয়া কন্যা তীব্রভাবে মুখ বাঁকাইয়া বলিয়া উঠিলো, "পাত্রের বন্ধু!!! দূরে থাকেন।"



নাহ... থাক... সাধুভাষার বেড়িবাঁধে মেয়েটাকে গল্পের এখানেই আর চুবানি না দেই... কারণ, গল্পের এখনও অনেকটা বাকি... এই মেয়েটাকে নিয়ে আমার ডায়েরির পাতায় লেখা এখনও অনেকটাই বাকি...



ভেবেছিলাম চলতি পথের দেখা, সেই বুঝি শেষ। কিন্তু না, তা নয়। সেটা ছিল সবে শুরু। কাকতালীয় ভাবে কোন এক রাতে তার সাথে আবারও দেখা হয়ে গিয়েছিল ইবনে সিনা-তে। সেদিন হঠাৎ আবার দেখি মেয়েটাকে। কয়েকদিন হল তার মা এখানে চিকিৎসাধীন। দেখলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। একটু পর আবারও ফোন আসে। একবার... দুইবার... তিনবারে গিয়ে ফোনটা ধরে সে। একটু পর গুটিগুটি পায়ে লিফট বেয়ে নিচে নেমে যায়। আমিও উৎসাহী দর্শকের মত টিকেট নিয়ে গ্যালারিতে বসে পরি। দেখি একটা ছেলে এসে তার হাতে পরোটা আর ডিম ভাজির একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। ফিরে যাওয়ার সময় ছেলেটার চোখের পানি দেখে মনে হচ্ছিলো যে কিছু একটা হয়তো হারাতে যাচ্ছে সে। ছেলেটা যাওয়ার পর মেয়েটা উপরে উঠে আসে আবার। আরও কিছুক্ষণ পর আবারও কল আসে। এবার বুঝি এতক্ষণে মেয়েটার মুখে খানিকটা হাসি লক্ষ্য করা যায়। একবার বলে, "আমি সত্যি-ই সরি।" এরপর আর কিছু বলার সুযোগ পায় না মেয়েটা। কারণ, ফোনটা অপর প্রান্ত থেকে কেটে যায়। তবুও কান থেকে ফোনটা রাখে না মেয়েটা... হয়তো আরও কিছু কথা বলার বা, শোনার বাকি ছিল...



এতক্ষণ ধরে এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা নাটকের দৃশ্য দেখলাম। হৃদয় ছোঁয়া একটা দৃশ্য। অনেক কিছু মিলে যাচ্ছিলো আমার জীবনের সাথে। আর তখনই মেয়েটার দৃষ্টি আমার দিকে আনতে বললাম, "Please forgive me, I can't stop loving you. ব্র্যায়ান অ্যাডামসের এই গানটা শুনেছিলেন আগে কখনও? আজ অনেকদিন পর কারও চোখে পানি দেখে খুব প্রিয় একজন মানুষের অবহেলার কথা খুব বেশি মনে পরে গেল। নিজেকে আর এর সাথে তুলনা করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু চাই না আর কেউ কখনও এভাবে কষ্ট পাক।" শুনে মেয়েটাও একই কথাই বললো, "ভাল থাকার চেষ্টা করেন। আমিও চাই না আর কেউ এভাবে কষ্ট পাক।" সেও আর কারও চোখে পানি দেখতে চায় না, তবুও সে নিরুপায়। তাই এই ফিরিয়ে দেয়া।



সেদিনের পর থেকে মেয়েটার সাথে একটা সখ্যতা জন্মে গেল আমার। মোটামুটি নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়ে যায় সেদিন থেকেই। "প্রকাশি" নাম ছিল মেয়েটার, যেটা আবিষ্কার করতে আমার অনেকদিন সময় লেগেছিল। তবুও থেকে থাকেনি কিছুই। কখনও হারিয়ে যাওয়া, কখনও আবারও খুঁজে নেয়া। এভাবেই চলতে থাকে সবকিছু।



কিছুদিনের জন্য গায়েব হয়ে গিয়েছিলাম। আর কোন কালেও পুরোনো বন্ধুদের মাঝে ফিরবো না বলে কঠিন একটা পণ করেছিলাম। কিন্তু তা আর হল না। কোথা থেকে যেন আমার নাম্বার যোগাড় করে প্রকাশি আমাকে একটা এস.এম.এস. করে। আর লিখে পাঠায়, "হঠাৎ করে কোথায় গায়েব হলেন?" লুকিয়ে থাকতে চেয়েও পারি নি। প্রকাশি ঠিকই খুঁজে বের করেছেন আমাকে। শুধু তার কথা রাখতেই বন্ধুদের মাঝে আবারও নতুন করে পুরোনো বন্ধুদের মাঝে ফিরে আসা।



ফিরে এসে আবার একদিন তাকে পথের মধ্যেই খুঁজে পেলাম। বুঝলাম যে সে এখানে কাউকে খুঁজতে এসেছে। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই হতচকিয়ে যায় সে। বললাম, "কি রে? তুই এখানে কেন? ঐ পরোটাওয়ালার খোঁজে নাকি?"

> "পরোটাওয়ালাই হোক, আর পাউরুটিওয়ালাই হোক, তাতে তোর কি?"

> "না, কিছু না। তা যাই হোক, ঐ গাধার বাচ্চাকে খুঁজে পাওয়া গেছে তাহলে। তা ধরে গালের মধ্যে কষে দুইটা চড় লাগাস নি? ঐ যে পরোটা দিয়ে গায়েব হয়ে গেল, আর এতদিন পর খোঁজ মিললো তার।"

> "আচ্ছা, অভ্র... চড় দেয়াটা কি তোর খুব পছন্দের নাকি?"

> "না তো... কেন?"

> "নাহ... মানে, দেখি তো... ছাদে গিয়ে চড় খাস, ফার্মেসিতে গিয়ে চড় দিস... আবার এখন চড় দিতে বলছিস... ঘটনা কি?"

> "তুই আসলেই একটা..."

> "আমি কি? বল... বল..."

> "উকুনের খামার..."



এরপর একদিন প্রকাশির সাথে কথা হচ্ছিলো ফোনে। গান শুনছিলো মন দিয়ে। হঠাৎ কথায় কথায় প্রশ্ন করে বসলো, "তুই গান গাইতে জানিস?"

> "হুমম, বালিশের নিচে মুখ চাপা দিয়ে গান গাই... Aerosmith-এর গান..."

> "কেন? বালিশের নিচে মুখ চাপা দিয়ে কেন?"

> "কারণ, আমার গান শুনলে স্টিভেন টেইলর আমাকে মেরেই ফেলবে। Aerosmith-এর গান নষ্ট করার দায়ে..."

> "আজ একটা শোনা না আমাকে? বেশি না, দুই লাইন।"



অনেক টাল-বাহানা শুরু হয়ে গেল আমার। কারণ, জীবনে কোনদিন কেউ আমাকে এই কথা জিজ্ঞাসাও করেনি। আজ মার খাবার সমূহ সম্ভাবনা। তখন হঠাৎ প্রকাশি বললো, "এই মা ডাকছে রে, আমাকে যেতে হবে।" কেন যেন ঐ মূহুর্তেই লিরিকটা মাথায় আসলো। সাথে সাথেই তাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে শোনালাম জেমসের "আর কিছুক্ষণ কি রবে বন্ধু? আর কিছু কথা কি হবে?" শোনানো শেষে আর কোন কথা নেই প্রকাশির মুখে। স্তম্ভ হয়ে বসে আছে। এরপর "মা ডাকছে, আমি যাই" বলে ফোনটা কেটে দেয়। ছাদে দাঁড়িয়ে নিরুদ্দেশ হাঁটাহাটি চলছে আমার। একটু পরেই মোবাইলে একটা এস.এম.এস. আসে, "মা ডাকছিলো তখন। তাই কিছু বলিনি। মনে হচ্ছে, তোর গান এখন থেকে নিয়মিত শুনতে হবে। শোনাবি তো?"



প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু নিয়ে আমাদের মধ্যে লেগে থাকে। অযথাই রাগ করা যাকে বলে। কিন্তু একটু পর আবার সব ঠিকঠাক। কখনও কেউ কাউকে সত্যি সত্যি কষ্ট দেবার জন্য কিছু বলি না আমরা। তাই রাগ বেশিক্ষণ টিকে না। কারণ, কথা বলার মানুষই তো খুব কম। হারানোর সাহসটাই বা কে করতে যাবে?



কিন্তু কখনও যে রাগ হয়নি, তা না। একবার খুব সকালে সে ফোন দিয়ে জানালো যে সে হাত কেটে ফেলেছে। এবং সেটা সম্পূর্ণই তার দোষে। অঘটনপটিয়সী এই নারী যে কাজটা ইচ্ছাকৃতভাবে করেছেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মাথা আর ঠিক থাকলো না। জীবনে কোনদিন তার উপর এতটা রাগ দেখাই নি আমি। অনেক কিছু বলে পরে ফোনটা কেটে দিলাম। তার আর কোন কথাই শোনার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ? সারাটা দিন মনে পরছিলো প্রকাশির কথা। সন্ধ্যার পরপরই তার বাসার সামনে গিয়ে হাজির হলাম। এরপর ফোন দিয়ে বললাম, "কৃষ্ণচূড়ার নিচে ভূত নেমেছে। বায়োস্কোপ হবে এখন। দেখবি না?"

> "কোন কৃষ্ণচূড়া? কিসের বায়োস্কোপ?"

> "তোর বাসার নিচে আমি।"

> "তুই বাসা চিনলি কি করে?"

> "কেন? তুই-ই তো বললি যে এই এলাকায় এক কৃষ্ণচূড়ার পাশেই তোদের বাসা। তাই খুঁজে বের করলাম।"

> "সত্যি?"

> "সকালে অনেক কিছু বলে ফেলেছি। এখন তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তাই চলে এলাম।"



বারান্দায় আসে প্রকাশি। অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। তার ধারণাও ছিল না যে আমি সত্যি সত্যি আজ তাকে দেখার জন্য বাসা খুঁজে বের করবো। আমি নিজেও জানতাম না পারবো কিনা? তারপরও খুঁজে পেয়েছি।



সেদিন হঠাৎ প্রকাশি ফোন করে বললো, "আজ প্রথমবারের মত একা একা ইফতার করতে হবে। আজ বাসায় কেউ নেই, আর বিকালের দিকে আবার ক্লাস। ভার্সিটিতেই ইফতার করতে হবে।" তখন আর তেমন কিছু বললাম না তাকে, সারপ্রাইজ রাখবো বলে। বিকালের আগেই সব কাজ শেষ করে চলে গেলাম তার ভার্সিটির সামনে। গিয়েই ফোন দিলাম, "মাননীয়া, কোথায় আপনি? নূরানি চেহারাখানা একবার কি দেখাবেন আজ? সম্ভব?"

> "কেন? তুই এসেছিস নাকি?"

> "না, আমি না... আমার ডেমো পাঠিয়েছি, এসে দেখে যা।"



একটু পর প্রকাশি আসে। তখনই তাকে সারপ্রাইজটা দিয়ে জানাই, "তুই বলেছিলি না যে আজ তোকে জীবনে প্রথমবারের মত একা ইফতার করতে হবে? নাহ, এটা আজ অন্তত করতে হবে না। আজ তুই আমার সাথে খাবি।"

> "অভ্র, আমার ক্লাস আছে। চলে গেলে ক্লাস করবে কে?"

> "আঁতেলগুলা কি এমন ক্লাস করায় তা আমার জানা আছে... ঐ ক্লাস না করলেও চলবে।"

> "দিলি না তো ক্লাস করতে... নে, এবার রিক্সা ডাক।"



(রিক্সায় চড়ার পর...)



> "অভ্র, একটা কথা বলি তোকে... কিছু মনে করবি না তো?"

> "আরে, আমার মন বলেই কিছু নেই... তারপর তো না মনে করা... তুই বল..."

> "তুই আজ এত অভদ্রের মত রিক্সায় বসেছিস কেন? ঠিক করে বস।"

> "অভদ্রের মত মানে? তোর উকুনের খামারে পা তুলে বসে আছি নাকি?"

> "নাহ, সোজা হয়ে বস... আর আশে-পাশে বেশি তাকাবি না..."

> "আচ্ছা..."

> "আচ্ছা কি?"

> "কিছু না।"

> "আচ্ছা, একটা কথা বল তো... তোর বউকে কি আমার ভাবী বলে ডাকতে হবে?"

> "নাহ... মা ডাকিস..."

> "মানে?"

> "রুবী-কে মা ডাকিস... পারবি না?"

> "তোকে যে আমার মাঝে মাঝে কি করতে ইচ্ছা করে..."

> "কি করতে ইচ্ছা করে?

> "জানি না..."



ঐ দিনের পর আবারও একদিন প্রকাশি আর আমার অন্যান্য বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত ছিলাম। আড্ডা প্রায় শেষের পথে। তখন প্রকাশি আড্ডার ইতি টানতে বলে বসলো, "আমি গেলাম। ভাল থাকিস সবাই... শুধু একজন বাদে..." সেখান থেকে বের হয়ে আসার পর প্রকাশিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, "কি রে? কার ভাল থাকা নিয়ে তোর এত মাথা ব্যাথা? কথাটা কাকে বললি?"

> "বলা যাবে না... বললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।"

> "তোর সর্বনাশই হোক। তাও কোন এক চৈত্র মাসে।"

> "হুমম, প্রহর শেষে আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস। তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ।"



সেদিন না ছিল চৈত্র, না ছিল সর্বনাশ... তাই সেদিন বুঝি নি, কিন্তু আজ বুঝি... কথাটা আসলে তুই সবার অলক্ষ্যে আমায় বলেছিলি...



কথাটা ঘুরিয়ে না বলে সোজা বললে কি হয় না? নাকি সেই আমাকেই বলতে হবে-

"কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া,

তোমার চরণে দিবো হৃদয় খুলিয়া।

চরণে ধরিয়া তব কহিবো প্রকাশি,

গোপনে তোমারে সখা কত ভালবাসি।"



হোক না একটু ব্যাতিক্রম। কি হয় নিয়ম ভেঙে তুই আগে বললে পরে?

এবার না হয়, তুই-ই আগে বল...



এই বর্ষার শেষ প্রহরে, বর্ষের বর্ষা হয়ে, একবার আমায় বল না...

"তুমি চৈত্র পেলে কোথায়? এখন তো বর্ষা..."



~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~



গল্পটা এখানেই শেষ। কারণ, এর বেশি দৃশ্য গল্পের চরিত্রদ্বয়ের ধারণ ক্ষমতার বাইরে। আমরা প্রতিটা মানুষই কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে জন্মাই। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবেশ পরিস্থিতি আমাদের বাকিটা সীমিত করে রাখে। গল্পের অভ্র আর প্রকাশির বেলাতেও তাই। প্রকাশির সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা একটা রক্ষণশীল পরিবার। এমন একটা মেয়ে যে চাইলেই অনেক কিছু বলতে বা করতে পারে না। অন্যদিকে অভ্র-এর সীমাবদ্ধতা তার পরিবার এবং এমনই এক জংশনে হারিয়ে যাওয়া অন্য কেউ। অভ্র চাইলেও এখন অনেক কিছু বলতে পারে না প্রকাশি-কে... ভয়ে আর অপারগতায়...



তাই মাঝে মাঝে একা একা চিৎকার করে অভ্র বলে---



আমি এখন আর মানুষের পর্যায়ে নেই... আমার অনুভূতির সবটাই হারিয়ে গেছে... মরে গেছে... কেউ একজন আমাকে মানুষই মনে করে না... সেই একজন মানুষকে আমার অনুভূতিটুকু বোঝাতে কিছুই বাদ রাখিনি আমি। কিন্তু সে অনুভূতির কোন মূল্যই দিলো না। নিজের সবটা উজাড় করে দিয়েও কিছুই ফেরত পাইনি অবশেষে। তার চরণে হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা লুটিয়ে যে সীমাহীন অপরাধ করেছি, তার থেকে ফিরে আসার আর কোন অবকাশ দেখতে পাচ্ছি না। কারণ, কিছুই আর অবশিষ্ট নেই আমার মাঝে। কেউ একজন আমার সবটুকু অনুভূতি আপন পদতলে পিষ্ট করে নির্দয়ভাবে আস্তাকূড়ে ফেলে দিয়েছে। সবটা পদপিষ্ট না করে যদি তার কিঞিত অবশিষ্ট রাখত, তাহলে তার সবটুকু দিয়ে হলেও আমি হয়তো আজ তোকে ভালবাসতাম... কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই... আর নিজের পাশে কাউকেই কেন জানি আর বিশ্বাস করতে পারি না... যদি খুব আদরে কাছে টেনে একই ভাবে আবারও সজোরে কেউ ধাক্কা দেয়... এই ভয়ে...



তবুও জানি না, ভবিষ্যতে কি লেখা আছে?

হয়তো আবারও কখনও সব জংশন ছেড়ে সেই কৃষ্ণচূড়ার নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো,

তুই জানবিও না...

হয়তো আবারও কখনও সেই ফুচকার টকে তোকে মনে করবো,

তুই জানবিও না...

হয়তো আবারও কখনও সেই কথা বলতে বলতে থেমে যাবো, "তুই আসলেই একটা...",

তুই জানবিও না...

হয়তো আবারও কখনও একাই লিখবো, একাই গাইবো,

তুই জানবিও না...



তুই হয়তো জানবিও না, হারিয়ে যাওয়ার পর তোকে কতটা অনুভব করবো?

আজও তুই জানিস না, কতটা অনুভব করি তোকে?



আজও অনুভব করি, সেই প্রথমদিন ল্যাবএইডের এক কোণে চুপচাপ বসে থাকা মেয়েটার ভারী চশমার আড়ালে অদ্ভূত দুই চোখ... আমার প্রতিটা এস.এম.এস. প্রাপ্তিতে ঠোঁটের কোণে তোর এক চিলতে হাসি... আর মোবাইলে রিনিঝিনি শব্দে বেজে ওঠা তোর সেই কন্ঠস্বর...



আজও বলা হল না তোকে... হয়তো বলা হবে না আদৌ...

তবুও মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা অদ্য অব্যক্ত অনুভূতি... আজ...



থাক না... কিছু কথা না বলা...



________________________

মূল গল্পঃ অচেনা জংশন (১ম পর্ব)

চরিত্রঃ অভ্র - প্রকাশি



রচনাকালঃ ৩১ শে শ্রাবণ ১৪২১ (বর্ষার শেষ প্রহর)



#উৎসর্গঃ এই মুহুর্তে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু...

যার জন্য এতদিন পর জংশনের এই ব্লগাবির্ভাব...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:০১

শীলা শিপা বলেছেন: রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে উঠা প্রকাশি কিভাবে নিয়ম ভাঙবে বলেন তো!! হয়ত সহজ, স্বাভাবিক কথাটাও সে খুব সহজে বলে ফেলতে পারেনা... আর হারিয়ে যাওয়া কাউকে খুজে বের করতে গিয়ে নতুন অনেক কিছুই হয়ত অভ্র হারিয়ে ফেলবে... কারো কষ্ট পাওয়াটাই কাম্য না... ভাল থাকুক অভ্র আর প্রকাশি দুজনেই... ভাল থাকুক একসাথে নয়ত দুজন দুই মেরুতে...

অনেক বড় মন্তব্য হয়ে গেল!!! অচেনা জংশনের ২য় পর্ব কিন্তু চাই... খুব তারাতারি... কোন শেষ প্রহরে না... প্রথম প্রহরে... :)

২১ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:০২

জংশন​ বলেছেন: প্রকাশি নিয়ম ভাঙবে না, অভ্র তাকে সে নিয়ম ভাঙতে দিবে না। স্বাভাবিক কথাটা বলার আর প্র​য়োজন নেই প্রকাশির​। প্রকাশির মনের কথা অনুধাবন করার জন্য তার অভ্রই যথেষ্ট। আর হারিয়ে যাওয়া কাউকে অভ্র আজও খুঁজে বেড়ায়, নাকি লুকিয়ে থাকে সব কিছু থেকে, সেটা প্রকাশি খুব ভাল করেই জানে।

ভাল থাকুক অভ্র আর প্রকাশি দুজনেই... ভাল থাকুক একসাথে নয়ত দুজন দুই মেরুতে...

ভাল থাকুক দুজনেই, শুধু হারিয়ে না যাক কোনদিন​। এভাবেই ভাল বন্ধু হিসেবে থাকুক সারাজীবন​। হয়তো আজকের মত প্রতিদিনের মত কথা না হোক​, দেখা না হোক​, কিন্তু খুব প্র​য়োজনে, খুব সুখে কিংবা খুব কষ্টের মুহুর্তে একজন অপরজনের পাশে থাকুক​, মুখে না বলেও অনুভব করিয়ে দিক, "আর কেউ না হোক​, আমি আছি, থাকবো, বন্ধু হিসেবে আজীবন​।" জন্মদিনের প্রথম প্রহরে শুভ জন্মদিন না বলে বলুক​, "কি রে কিপটা? খাওয়াবি না?"

মন্তব্য মোটেও ব​ড় হ​য়ে যায় নি, তবে মনের উঠোনে সাজিয়ে রাখার মত একটা মন্তব্য হ​য়েছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমার লেখার প্রথম মন্তব্যকারী হিসেবে কৃতজ্ঞতা জানবেন​।

আর দ্বিতীয় পর্ব অভ্র কেন​? শুরুটা অভ্র করে থাকলে শেষটা প্রকাশির করতে দোষ কোথায়?

এখন শুধু প্রহরের অপেক্ষা...
বর্ষার শেষ প্রহর নয়​... প্রথম প্রহর... :)

২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:২৩

জেরিফ বলেছেন: গল্পে বুদ হয়ে গেলাম । অসাধারণ ।সে আসবে , নিশ্চয় আসবে ! !


ভালো থাকুন । শুভ কামনা ! !

২১ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:১২

জংশন​ বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

বুদ হয়ে যাওয়ার মত গল্প হ​য়ে থাকলে বর্ষার শেষ রজনী জেগে থাকা সার্থক আমার। আর অসাধারণ বলে অভিহিত করাতে অনেক বেশি সম্মানিত বোধ করছি। আমি আসলে লিখতে পারি না। কে জানে? হ​য়তো এটাই শেষ... :)

প্রকাশির আসতে হবে না... প্রকাশি ছিল... থাকবে... আজীবন বন্ধু হিসেবে... আর কিছু না হোক​, অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝে তাদের এই বন্ধুত্বটা বেঁচে থাক​... অটুট থাক​...

শুভকামনা... :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.