![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নির্বাচনের বাকি ছিল আর এক সপ্তাহের মতো। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল ষড়যন্ত্র, দল পাকানো আর হাঙ্গামা। প্রার্থীদের মধ্যে, আমার মতো করেই ক্লাসের সবার বিশ্বাস, আমিই সবচেয়ে শক্তিশালী। তবু বুকের মধ্যে যে একটুখানি ধুকপুক করছিল না- এটা হলফ করে বলা যাবে না। প্রার্থী আমরা চারজন। ছেলেদের মধ্যে আমি আর জুয়েল, মেয়েদের মধ্য থেকে পাপড়ি আর রেজোয়ানা।
এটা আমাদের ক্লাস নাইনের ক্যাপ্টেন নির্বাচনের গল্প।
এই যে ছোট্ট একটা নির্বাচন নিয়ে এতো ঝুট ঝামেলা তার জন্য কিন্তু আমাদের ছোটদের দায়ী করা যাবে না। ছোটরা তো বড়দের দেখেই শিখে। তাছাড়া আমাদের স্কুলের ক্যাপ্টেন পদবীটাও বেশ লোভনীয় ছিল। টিফিন পিরিয়ডের পর ক্লাস ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব রোল কল করা। উনি যদি কোন অনুপস্থিত ছাত্রকে প্রেজেন্ট দেখিয়ে দেন, তো ঐ ছাত্র বেঁচে যায় ৫০ টাকা ফাইন থেকে। তাই ছাত্রদের মধ্যে যারা টিফিন পিরিয়ডে স্কুল পালাতো, তাদের কাছ থেকে এটা সেটা উপহার বা প্রতিদিন জম্পেশ একটা ফিস্টের ইনভিটেশন লেগেই থাকতো। অন্যদিকে ক্লাসের টিচাররাও যথেষ্ট সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতেন ক্লাস ক্যাপ্টেনকে।
প্রার্থী হিসেবে আমি যেহেতু সবচাইতে স্ট্রং, বাকি তিনজন উঠে পড়ে লাগল আমাকে হারানোর জন্য। প্রতিদিন জোর প্রচারণা চালাচ্ছিল তারা। প্রচারণার নমুনা দেখুন:
1. একদিন পাপড়ি সবার জন্য নিয়ে এসেছিল তার বাসায় বানানো বিরাটাকার একটা পুডিং। উপলক্ষ তার জন্মদিন। জন্মদিন নাকি ছাই! নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানতে পেরেছিলাম, জন্মদিন তার সেপ্টেম্বরে। অথচ তখন কিনা জানুয়ারী মাস! সবই ভোটের জন্য!
2. জুয়েল প্রতিদিন টিফিন পিরিয়ডে পাশের রেস্টুরেন্টে সবাইকে নিয়ে যেত।
3. রেজোয়ানা ছিল সবচেয়ে ভাল স্টুডেন্ট। তার হ্যান্ড নোটের জুড়ি মেলা ভার। আমরা কতো চেষ্টা করতাম তার হ্যান্ড নোট জোগাড় করতে। সে কিছুতেই দিতো না। কিন্তু ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচন তার মনটাকে বড় করে তুলল অনেকখানি। ‘চাহিবামাত্র প্রদানযোগ্য’ ভিত্তিতে সে তার ব্যাক্তিগত হ্যান্ড নোট বিলি করছিল অকাতরে। আজিব!
আমার বাবার অতো টাকা-পয়সা ছিল না যে নির্বাচনে জেুার জন্য খরচ করব। আমি গাইড বই থেকে পড়ি, হ্যান্ড নোটের লোভও দেখানোর উপায়টাও ছিল না। তাই আমার জনপ্রিয়তার একমাত্র যে কারণ সেই ভাল ব্যবহার দ্বারা সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখলাম। দেখা যাক কি হয়! দুই দিন পর অবশ্য আমার ভাগ্য খুলে গেল। আমিও নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারলাম বেশ দক্ষতার সাথে। মামা বেড়াতে এসেছিলেন এক মাসের জন্য। তার সাথে খুব মজার একটা ভিডিও গেম। মামার কাছ থেকে গেমটা ধার করে স্কুলে তা নিয়ে যাওয়া শুরু করলাম। সবাইকে খেলতে দিলাম। আমার জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে গেল।
এটা দেখে তো বাকি তিনজনের চোখ ছানাবড়া। তাদের সাথে কথা হলেই বুঝতে পারছিলাম তুমূল ঈর্ষায় তারা জ্বলে পুড়ে মরছে। এক সময় তাদের তিনজনকে এক সাথে সময় কাটাতে দেখলাম। তারা কি জোট তৈরী করে ফেলল? তিনজন মিলে এক হয়ে গেলে তো সমস্যা! ভোটে জেতা কঠিন হয়ে যাবে। দেখা যাক কি হয়। আল্লাহ ভরসা।
তখন নির্বাাচনের আর দুদিন বাকি। টিফিন পিরিয়ডের পর প্রথম ক্লাস। হঠাৎ দেখতে পেলাম নায়লা, যে কিনা আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে রূপবতী মেয়ে, যাকে কিনা আমার খুব ভাল লাগত, কাঁদতে কাঁদতে স্যারের কাছে গিয়ে একটা কাগজের টুকরো ধরিয়ে দিয়ে কি জানি বলছে। পেছনে বসায় তার কথা শুনতে পারছিলাম না ঠিকমতো। নায়লাকে পাশে রেখেই স্যার আমাকে ডাকলেন। দুরু দুরু বুকে স্যারের কাছে গেলাম। জানিনা কি ঘটবে। স্যার আমাকে কাগজটা দেখিয়ে বললেন, ‘এটা কি তোমার ডায়রীর পাতা?’ আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম। মনের ভেতর তখন কেবল একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। নায়লা আমার ডায়রীর পাতা কোথায় পেল? স্যার এবার কাগজটি আমার হাতে দিলেন। কাগজটিতে লেখা:
আমি তোমাকে ভালবাসি। I Love you.
ইতি, সুমন।
ডায়রীর পাতায় মাঝে মাঝে এমন হিজিবিজি লেখা আমার অভ্যাস। কিন্তু ইতির অংশটাতো আমার লেখা না। আমার নাম কে লিখলো? অবাক হয়ে স্যারকে ব্যাপারটা জানালাম। স্যার উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, ‘ইতির অংশটা তোমার লেখা না? ফাইজলামী পাইসো?’ বলেই চুল ধরে পিঠে দুমাদুম ঘুষি মারতে থাকলেন! আমি নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করেও পারলাম না।একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হল।
যা হোক, পরদিন স্কুলে গিয়ে জানলাম প্রার্থী তিনজনের দাবীতে চরিত্রহীন এই আমার প্রার্থীতা নাকি বাতিল করা হয়েছে। তিনজনের ষড়যন্ত্রের কথা বুঝতে পেরে মন খারাপ থাকল সারাক্ষণ।
টিফিন পিরিয়ডে যখন আমি একা একা ক্লাস রুমে বসে আছি, তখন আমাকে অবাক করে দিয়ে নায়লা এগিয়ে আসল। জিজ্ঞেস করল, ‘কাল খুব ব্যাথা পেয়েছো, তাই না? আমি স্যরি। আমার ওভাবে রিয়েক্ট করা ঠিক হয়নি। মন খারাপ করো না।’
সাহস করে অবশেষে কথাটা বলেই ফেললাম যা আমি এতোদিন বলতে পারিনি। বললাম, ‘তুমি যদি আমার পাশে থাক তবে মন ভাল হয়ে যাবে।’
নায়লা তার কথা রেখেছিল। বাবা ট্রান্সফার হবার আগ পর্যন্ত নায়লা আমার পাশেই ছিল। আমার সেই প্রথম প্রেম নায়লাকে আজো মনে পড়ে।
০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৯
কয়েস সামী বলেছেন: ছোটদের জন্য লিখতে চেয়েছিলাম। কি যে লিখলাম নিজেও বুঝতেছি না।
২| ০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৩
কালোপরী বলেছেন:
০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৯
কয়েস সামী বলেছেন: বুঝতেছি না।
৩| ০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:০৪
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
পিচ্চিরাও দেখি কম যায় না
০৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৭:৫৮
কয়েস সামী বলেছেন: পিচ্চিরাও দেখি কম যায় না!অাপনার মন্তব্য পেয়ে ভাল্লাগছে!
৪| ০৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১৫
মামুন রশিদ বলেছেন: যাক, শেষমেষ আপ্নেই জিতেছিলেন ।
০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:০১
কয়েস সামী বলেছেন: ঠিক তাই! পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
৫| ০৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:১৪
সোহাগ সকাল বলেছেন: কাল খুব ব্যাথা পেয়েছো, তাই না? :#>
০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:০১
কয়েস সামী বলেছেন: রোমান্টিক না?
৬| ০৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:০২
মারুফ মুকতাদীর বলেছেন: এটা কি ফেবু বা অন্য কোথাও দিয়েছিলেন ? কোথায় যেন পড়েছি।
০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:০২
কয়েস সামী বলেছেন: চতুরে দিয়েছিলাম। ধন্যবাদ।
৭| ০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৩৯
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বাচ্চা ভয়ঙ্কর কাচ্চা ভয়ঙ্কর।
প্রেম ভালো।
০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:০২
কয়েস সামী বলেছেন: প্রেম ভালো!
৮| ০৭ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:২৩
সোহাগ সকাল বলেছেন: সে আর বলতে হয় নাকি! :#>
৯| ০৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৫৮
মাহমুদ০০৭ বলেছেন: হাহাহাহা, ভাই মজা পেলাম ।
আপনার শুরুটা সবসময় আকর্ষণীয় হয় , খুব চমৎকার ভাবে আপনি গল্পের
ভিতর পাঠককে ঢুকিয়ে ফেলেন ।
অনেক দিন ধরে যখন লিখছেন এবার কিছু স্পেশাল গল্প আমাদের উপহার
দিন । ঠিক ' বাজি ' গল্পটার মত ।
ভাল থাকবেন ।
০৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:০৬
কয়েস সামী বলেছেন: অাপনার মন্তব্যে ভীষন অনুপ্রাণিত হলাম। আসলে ইচ্ছে করে বাজির মতো গল্প লেখা যায় না বোধহয়। ওটা হয়ে যায়। নয়তো সবগুরা গল্পই বাজির মতো হতো। ভাল থাকবেন। পাশে থাকবেন।
১০| ০৯ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩৪
প্লিওসিন অথবা গ্লসিয়ার বলেছেন: আমি কোনদিন ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচনে দাঁড়ায় নি !
ক্লাসে খুব নিরীহ এবং ভদ্র টাইপ ছেলে ছিলাম !
লেখা ভালো লেগেছে
০৯ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩৬
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।
১১| ০৯ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৫৫
অবাধ্য সৈনিক বলেছেন: মজা পাইচি
১০ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৭:২১
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।
১২| ১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৫৬
নাছির84 বলেছেন: কখন যে ডুব মেরেছি,বুঝতেই পারিনি। ভাল লিখেছেন।
১৩ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৭:০৭
কয়েস সামী বলেছেন: পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
১৩| ১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:২৭
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: দারুণ!! চমৎকার !! ভালো লাগলো ভাইয়া। আমাদের ক্লাস ক্যাপ্টেন কে হবে সেটা অবশ্য স্যাররাই ঠিক করে দিতেন
১৩ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৭:০৭
কয়েস সামী বলেছেন: ভাল লাগাতে পেরে ভাল লাগছে! ভাল থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩৪
হাসান মাহবুব বলেছেন: ছোটদের মধ্যেও প্যাচঘোচ কম না!