![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার গলায় ওদের ওই নরঘাতকদের ছুরি
আমার গলার চামড়া-মাংস-কণ্ঠনালী
ভেদ করে ছুরির ধারালো অংশ অপর প্রান্তে
ক্যাঁচক্যাঁচ করে ঢুকে যাচ্ছে,
কী বিভৎস, কী করুণ, কী অসহায়,
মানবতা ভুতলে লুটায়!
আমার শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে যাচ্ছে
রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘরের মেঝে, আমার শরীর,
আমি টের পাচ্ছি, আমার অস্ফূট আর্তনাদ
রেস্তোরাঁর কক্ষজুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে,
যেখানে আমাদের বন্দি করা হয়েছে,
ওরা দেখছে আর হাসছে
আর আনন্দে ফেটে পড়ছে, কী পাশবিক উল্লাস!
কক্ষের ভেতরে অাটকে পড়া অসহায় বিদেশি বন্ধুরা
যাদের গলায় এখনো ছুরি চালায় নি
তারা ভীষণ যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠছে,
অস্ফূট সে আর্তনাদ যেন ফেটে বেরিয়ে পড়ছে
গুলশান, বনানী, বারিধারা, ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে সে আর্তনাদ
যেন সুপারসনিক জেট ফাইটারের বিকট শব্দে ছুটে যাচ্ছে
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি জাপান, ইটালি, কোরিয়ায়;
কিন্তু ওই হায়েনার দল আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে,
আমার ধর্মে আর ওর ধর্মে মিল নেই,
তাই কি আমার দেহ থেকে আমার মাথা ওরা আলাদা করে ফেলছে!
কিছুক্ষণ ছটফট করে আমার দেহ নিথর পড়ে রইলো কক্ষের মেঝে
আর ওরা কালেমা না পারা আরেকজনকে ধরে
কোরবানির গরুর মতো মেঝেতে ফেলছে
আর জবাই করছে যেন পশু কোরবানি করছে
শুধু ধর্মের ভেদ, সেজন্যই ওরা আমাদের হত্যার নিশানা করেছে
আর আমরা ওদের নির্মমতার বলি হচ্ছি!
ওরা ওদের স্বদেশি সুন্দরী নারী আখন্দকেও রেহাই দেয় নি,
অবন্তী কবির কিংবা ফারাজ তাদেরও নয়!
আমাদের অনেকেই ওদের অর্থনীতিকে হৃষ্টপুষ্ট করে
মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে সাহায্য করতে গিয়েছি
ওদের মেট্রোরেল হলে ওরাও আমাদের মতো উন্নত শহরে বাস করবে,
ওরাও আমাদের মতো দ্রুতগতির উন্নয়নের সোপান বানাবে,
ওদের ব্যবসাকে চাঙ্গা করার জন্যই জীবনের
সুবর্ণ সময় গত বিশটা বছর কাটিয়ে দিয়েছি ওদের দেশে,
ওরা আমাদেরই হত্যা করলো!
ওদেরই দেশে গিয়েছিলাম ওদেরই জন্য
অথচ ওরা কিনা আমাদেরই পশুর মতো জবাই করলো!
হয়তো এইজন্যই সৃষ্টিকর্তা বলেন:
যে জাতি তার নিজের ভাগ্যের বদল চায় না,
সে জাতিকে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও সাহায্য করেন না।
এ বাণী আমাদের নয়, ওদেরই!
ওদের ধর্মই তো বলে:
যে ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে
সে যেন গোটা মানবজাহানকেই হত্যা করে।
তাহলে কীসের লোভে, কোন প্রতিহিংসার বশে
ওরা ওই বর্বর খেলায় মেতে উঠলো!
ওরা তো শুনেছি কোটি টাকা খরচ করে
ওদের ব্যয়বহুল প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়েছে-লিখেছে,
যেখানে ওদের গরিব-সাধারণ ঘরের ছেলেরা পড়বে বলে
কল্পনাও করতে পারে না
অথচ ওরা ভিনদেশি হত্যায় মেতে উঠলো!
ওরা ওদেরকেও হত্যা করলো!
তবে কি ওদের ধর্ম হত্যায়, ওদের ধর্ম বিকৃতমনে মনস্কতায়,
ওরা কি পথভ্রষ্ট তরুণ হত্যকারী!
যারা নিজেরাই নিজেদের গতিকে থামাতে চায়,
ওদের জন্য দুঃখ হয়, লজ্জা হয়, ঘৃণা হয়,
ওরা মানবতার কলঙ্ক!
ওরা কি জানে না একটা মানুষ যদি অপরাধীও হয়,
আর সে যদি শত্রুর ঘরে আশ্রয় নেয়,
তবে শত্রুও তাকে হত্যা করে না,
শত ধিক ওই সব পথভ্রষ্ট তরুণদের
আমরা অভিশাপ দিচ্ছি,
ওরা পৃথিবী থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হবে!
সেদিন আর বেশি দূরে নয়,
ওদের ওই বিকৃত চিন্তা অবশ্যই একদিন পরাজিত হবে!
আমাদের নিজ নিজ দেশে আমাদের মা-বাবা-সন্তান
আমাদের হত্যার খবর পেয়ে কতটা অসহায় বোধ করবে
আর মানবতার শত্রু ওইসব কুলাঙ্গারকে ধিক্কার দেবে,
তাদের নিশ্বাসে ওদের আত্মা মৃত্যুর পরও
যন্ত্রণায় ছটফট করবে, জাহান্নামের আগুনে পুড়বে,
আমাদের এই অস্ফূট আর্তনাদ কেয়ামত পর্যন্ত বাতাসে ভাসবে
আর ওদের অভিশাপ দেবে।
ছবি: সামহোয়্যার ব্লগের সৌজন্যে
©somewhere in net ltd.