![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বদরুল নিয়ে কী লিখব! এ দেশ বরং বদরুলদের হাতেই ছেড়ে দিয়ে চলুন চলে যাই। অভিবাসী হই। লোহিত সাগরে পাড়ি দিতে গিয়ে সলিল সমাধি হই। অথবা ইউরোপের তীরে উঠে মানবিকতার রশি টানাটানিতে করুণায় পাত্র হই। লাঠিসোটা টিয়ার গ্যাস খাই, প্রচণ্ড শীতে তাবু খাটিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করি অথবা ভিনদেশিদের হাতে গলাধাক্কা খাই। ওরা অন্তত এভাবে কোপাতে জানে না। এমনিতেও আমাদের, খাদেজাদের, তনুদের এদেশে জায়গা নেই। একটা বদরুলের ফাঁসি হলে দুদিন পরই আরেকটা বদরুল পয়দা হয়। একটু খোঁজ-খবর নিলেই জানবেন, এই বদরুলদের নিয়েই তাদের পরিবার,দেশ-জাতি গর্ব করে। এদের পেছনে মানুষ হাঁটে। যেকজন মানুষ ফুঁসে উঠেছে তাঁদের হাজারবার সালাম, স্যালুট। কিন্তু আমি ফুঁসে উঠতে পারছি না। আমি লজ্জায়, কষ্টে, অপমানে, ঘুণায় আপনার পায়ে আপনি পদদলিত হচ্ছি। আমি জানি, এ সমাজে আমার কোনো দাম নাই। বদরুল এটা প্রকাশ্যে না ঘটিয়ে একটু ধৈর্য ধরে নীরবে নিভৃতে ঘটালে নিশ্চয়ই সমাজের উপরতলায় একটা জায়গা করে নিতে পারত। বড় নেতা হতে পারত, আরও বড় বড় জায়গায় ঠাঁই পেত! এভাবে কত বদরুল কত বড় হয়েছে, কজনের খবর আমরা জানি! কজনের চুলচেরা হিসেব আমরা রাখি! একজন জঙ্গিরও মূল্য পাঁচ লাখ টাকা! স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে বলে তার পুরস্কার এককালীন পাঁচ লাখ টাকা মাত্র ! অথচ একজন সাধারণ মানুষ যখন এদেশেরই অব্যবস্থার ফলে সড়কে হত্যার শিকার হয়, তখন তাঁর দাম ধরা হয় ১০,০০০ টাকা মাত্র। তাও হিসেবের খাতায় নাম তুলতে পারলে। বদরুল পশু, নাকি জানোয়ার, নাকি হায়েনা, তা বলতে পারব না তবে বদরুল ওটা না ঘটালে অনেক দূর যেতে পারত এটুকু জানি। খাদিজা, বোন আমার, তোর জন্য বুকটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু করার কিছু নেই। তুই যখন চাপাতির কোপে খণ্ডবিখণ্ড হচ্ছিলি চারপাশে কত মানুষই না দেখলাম, হাঁ করে কী যেন দেখছিল, কেউ ভিডিও করছিল, হয়তো ভিডিওটা কিছুটা কাজে লেগেছে তবু মনে হচ্ছিল, ওরা যেন চিড়িয়াখানায় গেছিল, যেন ডিসকভারি চ্যানেলে হায়েনার পশুশিকার দেখছিল। এরা যেন টিভি দেখার মতোই উপভোগ করছিল। এত লোক কোপানো শেষ হলে সাহসী হয়ে উঠল। হলি আর্টিজানেও কিছু হায়েনা লোকচক্ষুর আড়ালে এভাবেই কুপিয়েছিল, কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিল কিছু দেশি, বেশকিছু ভিনদেশি অতিথি। তাঁদেরই আত্মীয়-স্বজন এখন কেউ একজনও স্বাভাবিক জীবনে এলে কাড়ি কাড়ি টাকা পাচ্ছে! দুঃখ হয়, কষ্ট হয়, জঙ্গি হয়ে জন্মালেও এদেশে তার মূল্য কত! কিছুদিন দেখেছি, জঙ্গিদের চেহারা-ছবি টিভিতে প্রচার করে তাঁদের মা-বাবার ছবি দেখিয়ে অতি আদরের ধন আখ্যায়িত করে বাড়ি ফেরার বিজ্ঞাপন হচ্ছিল। যেন বাপ, তুই ফিরে আয়, কত আদরের ধন তুই, সোনামণি জাদুরে! জঙ্গি হলেও কতই না আদর! হয়তো সেটি তথাকথিত ভালো ভালো ঘরের ছেলেরা ওইকুপথে গিয়েছিল বলেই কিনা জানি না। তবে ওটা দেখে মনের ভিতর একটা আপত্তির মেঘ জমত। খচখচ করত। কেননা যে মানুষ হত্যা করে, যারা সভ্যতার বিনাশ ঘটায়, যারা এক একটি ঠাণ্ডা মাথার কসাই, তাদের জন্য এত দরদ দেখালে তারা তো আরও কত কিনা করবে কে জানে! চুরি, ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, মস্তানি নিয়ে যে সমাজ সামনে অগ্রসর হয়, যে সমাজের আমি কে! সেখানে প্রচ্ছন্নভাবে চলবে সমস্ত অপকর্ম! আর আমরা আঙুল চুষব আর চাপাতির কোপে খাদিজা জখম হয়ে হাসপাতালের নিষ্ঠুর মৃত্যুশয্যায় বাহাত্তর ঘণ্টার আলটিমেটাম নিয়ে জীবনের যাবতীয় গরল পিয়ে জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে থেকে সব কষ্ট শুষতে থাকবে!
©somewhere in net ltd.