![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নেতিবাচক আলোচনাই অনেক সময় সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে দাঁড়ায়। যে সব বিষয়ের নেতিবাচক প্রচারণা হয়েছে সেগুলো পরিচিতি পেয়েছে বেশি। এই যে ওয়েব সিরিজের অশ্লীলতা নিয়ে কথা হচ্ছে, ফলে সিরিজগুলোতে মানুষের চোখ পড়ছে। আগে যারা পয়সা দিয়ে কিনে সিরিজ দেখতে অনীহা প্রকাশ করতো, তারা অশ্লীলতার কথা শুনে তাই দেখছে। আমিও নিজেও অশ্লীলতা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা শুনে ইতোমধ্যে দুই তিনটা দেখে ফেলেছি। এক্ষেত্রে শুধু এটুকুই বলছি, যৌনতাও শিল্প হতে পারে যদি যে সেটা শিল্প বোঝে তার ধারনা নিয়ে-দিয়ে চিত্রায়িত হয়। যারা বোঝেন না, তাদেরটা হয়ে উঠে স্রেফ শারীরিকতা। আমাদের সেই ওয়েব সিরিজও তাই।
তবে এই ওয়েব সিরিজগুলো উত্থান সম্পর্কে বলতে গেলে সোজা সূত্রটা বলতে হয়, বিনোদন যখন মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়, তখনি ‘ডার্ক এন্টারটেইনমেন্টে’র প্রভাব বাড়ে। সাদা ও কালো আনন্দের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। আমাদের সিনেমা তো গিয়েছে। নাটকের অবস্থাও সেই রকমই। সেই প্রেম বিরহ এবং জোর করে হাসানোর চেষ্টা। একই ট্রেন্ডে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলা নাটক। হুমায়ূন আহমেদ গত হবার পর নাটকের বিনোদনও বিগত হয়েছে। এটাই রিয়েলিটি। সিনেমার কথা বলতে গেলে বলতে হয়, নিজেদের পা শক্ত হবার আগেই ক্রাচ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে হাতে। অর্থাৎ বাংলাদেশ আর ভারত মূলত কলকাতাকে মিশিয়ে ফেলা হয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে অশক্ত পায়ে ক্রাচ দিয়ে দৌঁড়াতে বলা হচ্ছে। আচ্ছা অদূর অতীতে কি আমাদের ব্যবসা সফল ছবি ছিলো না? মানসম্পন্ন ছবি ছিলো না? বেদের মেয়ে জোছনা তো আমাদেরই প্রডাক্ট, যার রিমেক করেছিলো কলকাতা। সেই রিমেকও ব্যবসা সফল। আমাদের রয়েছে সূর্য দীঘল বাড়ির মতন ক্লাসিক ছবি। অথচ এখন নাকি এফডিসিতে মাছি উড়ে! মাফিয়াতন্ত্র সিনেমা শিল্পটাকেও খেয়েছে। শেষ করে দেয়া হয়েছে আমাদের সম্ভাবনা।
মোটামুটি একটা মান থাকলেও একটা অনুষ্ঠান দীর্ঘদিন চলতে পারে। যেমন চলছে ইত্যাদি। হানিফ সংকেতের চিন্তার উৎকর্ষতা যে প্রবল তা বলছি না। তার অনুষ্ঠানের মানও যে খুব ভাল তা বলারও কারণ নেই। তারপরও মোটামুটি একটা মান নিয়েই জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে অনুষ্ঠানটি। এই মোটামুটি জায়গাটাও যদি আমাদের সিনেমা-নাটক ধরে রাখতে পারতো তবে ‘ডার্ক এন্টারটেইনমেন্টে’র সামগ্রিক উত্থান ঘটতো না। তারপরেও যখন ঘটেছে, তখন বাধ্য হয়েই বলতে হচ্ছে আমাদের বিনোদন জগত মানুষকে বিনোদন জোগাতে ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছে। সম্ভাবনা থাকা সত্বেও ব্যর্থ হচ্ছে।
কলকাতা কী করছে সেটা বলি। আমাদের মাঝারি মানের একজন শিল্পীকে বেছে নিচ্ছে এবং তাকে প্রমোট করছে। প্রচারণাটা এমন হচ্ছে যা দেখে মানুষ ভাবছে এই-ই বাংলাদেশের সেরা। ব্যাপারটা বোঝা না গেলে আরেকটু খোলাসা করি। প্রতিযোগিতায় আপনি যদি তিন নম্বরটাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন তাহলে এক আর দুই তো এমনিতেই ফোকাসের বাইরে চলে যায়। কলকাতার পলিসিটাও তাই। আমাদের বিনোদন জগতে যে গুণী শিল্পীরা রয়েছেন তাদের কাজে লাগানো যাচ্ছে না শুধু এই কারণেই। সাহিত্যেও একই অবস্থা। কলকাতা হুমায়ূন আহমেদকে কখনোই প্রমোট করেনি। করলে তাদের বইয়ের বাজার মার খেয়ে যেতো। সুতরাং নিজেদের অবস্থান কেউ হারাতে চায় না, শুধু লোভী বোকারা ছাড়া।
নেতিবাচক আলোচনা যে বড় বিজ্ঞাপন হতে পারে সে ধারণাটাও কলকাতা থেকে আসা। এই যে কদিন কলকাতার সারেগামাপা খ্যাত বাংলাদেশের নোবেল উল্টাপাল্টা কথা বললো, তা সেই কারণেই। র্যাবের কাছে গিয়ে নোবেল স্বীকারও করেছে সে মূলত নিজেকে লাইম-লাইটে রাখা মানে প্রচারের জন্যেই এই কাজ করেছে। তাহলে বুঝুন, নেগেটিভ তথা প্রচারণার ব্যাপারটির উৎস কোথায়। ভারতীয় কোনো একটা সিনেময়ায় সম্ভবত এমন একটি সংলাপ রয়েছে, ‘আমি সোজা কাজ উল্টো দিক থেকে শুরু করি।’ যা মূলত এমন নেতিবাচক চিন্তারই ফল।
উপরে উঠার দুটি রাস্তা রয়েছে। এক হলো যোগ্যতার সিঁড়ি বেয়ে। দ্বিতীয়টা হলো অন্যকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে। মগজ নেই অথচ গাট্টাগোট্টা মানে শক্তিমান, তাদের কৌশল হচ্ছে দ্বিতীয়টা। আমরা গঠনগত ভাবে হয়তো গাট্টাগোট্টা নই, তবে আমাদের মগজ রয়েছে। অবশ্য খালি মগজ থাকলেই চলে না, শক্তির মোকাবেলা করতে গেলে মগজের সাথে সাহসটাও থাকতে হয়। যেটা আমাদের নেই। আর সাহসের জন্য নৈতিকতাটা অবশ্য জরুরি। নৈতিকতা আস্থা ও সাহসের জায়গাটা তৈরি করে। সেটাও আমাদের নেই। থাকলে হয়তো চিত্রটা অন্যরকম হতো।
©somewhere in net ltd.