নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক।

কাকন রেজা

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক ।

কাকন রেজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অশ্লীলতার মাপজোক কমেডি আর সিরিয়াসনেস

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫০


প্রশ্নটা তুলেছিলেন আমার এক বন্ধুজন সামাজিকমাধ্যমে আমার এক লেখার প্রেক্ষিতে। বলেছিলেন, ‘ধর্ম সভায় এমন সব সেক্সিস্ট কথাবার্তা হয় তা থামানো দূরের কথা তাকে ভোটের স্বার্থে আরো প্রমোট করা হয়’ অনেকটা এমন কথা। তার কথার সাথে দ্বিমত করার জায়গা নেই। তবে আলোচনার জায়গা রয়েছে। কেন এমনটা হয়, হচ্ছে এবং এর সমাধানের বিষয়ে কথা বলা যেতে পারে। সেই বন্ধুজনকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আলোচনা তোলার জন্য। আলোচনা না হলে কোনো কিছুরই সমাধান হয় না। তাই নিচের আলোচনা

রাজনীতিকদের কাছে ভোটের হিসাবটা জরুরি। কিন্তু যারা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করেন তারা কী করছেন। তাদের কাজ কী। ‘সেক্সিস্ট’ কথার বিপরীতে তারা কী বলেছেন, ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। আপনারা যখন এসব কথা বলেন তখন উপস্থিত অনেকেই লজ্জিত হন। এই যে তাদের লজ্জিত হওয়া তা কি ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক নয়?’ কোনো সোকল্ড বুদ্ধিজীবী কি এমন ভাবে বলেছেন কখনো? তারা কি আলোচনায় বসেছেন যারা ধর্মের নামে ‘সেক্সিস্ট’ কথাবার্তা বলেন তাদের সাথে? না। তাহলে বুদ্ধিবৃত্তির কাজটা কী? এই যে আলোকিত মানুষ-মানুষ করা হয়, তার মর্মার্থই বা কী? মানুষকে সত্য জানানোটাই বুদ্ধিবৃত্তির কাজ। সমাজকে সুস্থ রাখার দায়িত্বটা বুদ্ধিজীবীদের। অথচ উল্টো তারা রীতিমত যুদ্ধে নেমে যান। উগ্র কথার বিপরীতে আরেক ধাপ চড়িয়ে উগ্র কথা বলেন। তেমন না বলে যদি তাদের সাথে বসতেন, লজিক্যালি বোঝাতে চেষ্টা করতেন। নিশ্চিত ধর্মের নামে ‘সেক্সিস্ট’ কথা বলনেওয়ালারা যুক্তিতে পেরে উঠতেন না। যেহেতু ধর্মই অশ্লীল এবং মানুষের মনোকষ্টের কারণ হয় এমন কথা বলা নিষিদ্ধ করেছে। ধর্মের কথা দিয়েই তাদের জবাব দেয়া সম্ভব এবং তা খুব কঠিনও নয়।

অবশ্য আমাদের দেশে এমন আশা করাটাও দুরূহ। কেনো? কারণ আমাদের সোকল্ড বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিবৃত্তিটাও হাঁটুর নিচে। তাদের কোনো লজিক নেই। রয়েছে ইমোশন। যা বুদ্ধিবৃত্তিতে সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য। সে দিন এক সোকল্ড বুদ্ধিজীবীকে বলেছিলাম, ‘ফ্রান্সে এক বছরে প্রায় হাজার পঞ্চাশের মতন মুসলিম বিদ্বেষের ঘটনা ঘটেছে। তারমধ্যে শারীরিক আঘাতের সংখ্যা ছিলো আটষট্টি। হেইট স্পিচ দুইশত দশটি, বৈষম্যের ঘটনা ছয়শ আঠারো- এসব আপনি জানেন কি?’ তার হা হয়ে যাওয়া মুখ ছিলো দেখার মতন। এই তো আমাদের বুদ্ধিজীবী ব্রেকেটবদ্ধ ‘সোকল্ড’। সেই সোকল্ডদের মতন ফ্রান্সে যে সোকল্ড মুসলিম অঘটনটি ঘটিয়েছে তার নাম আমরা জানি। কিন্তু আরেকটি ঘটনার জন্যও কি দায়ী ব্যক্তি মুসলিম? কানাডার ঘটনায়? প্রশ্নটা করে দেখুন বুদ্ধিজীবীদের, আপনিও তাদের হা হয়ে যাওয়া মুখ দেখতে পাবেন। তারা শুধু সেই উগ্র উজবুক কথিত মুসলমানের নামই বলতে পারবেন অন্যদের নয়।

জিহাদি শব্দটা বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হয়। সেই উচ্চারণ ঘৃণার। দোষ দেন জিহাদের অনেকেই। হ্যাঁ, যে ধরণের সোকল্ড জিহাদ হচ্ছে এটা স্রেফ খুন-খারাপি। একে জিহাদ বলাটা মূর্খতা। কিন্তু প্রশ্ন হলো অনেক ধর্মের চেয়ে ইসলাম নবীন। খ্রিস্টানদের ক্রুসেডের জন্ম জিহাদের আগে। তেমনি দক্ষিণ এশিয়ার ধর্মযুদ্ধ শব্দটিও জিহাদের আগে এসেছে। অনেকে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন যুদ্ধবাজ হিসেবে। অথচ মহাভারত কিন্তু যুদ্ধেরই কাহিনি। গ্রিক-রোমান মিথোলজিও কি এর বাইরে? না। আর ইউরোপ তথা ফ্রান্সের রেনেসাঁস নিয়ে যারা বুক ফোলান তারা যদি অন্তত রেনেসাঁস সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতেও চোখ বোলাতেন তবে দেখতেন রেনেসাঁসের মূল ভিত্তিই মিথোলজি, অর্থাৎ ধর্ম। ফরাসিদের রেনেসাঁসের প্রয়োজন হয়েছিলো তাদের অসভ্যতা ঢাকার জন্য। অসভ্যতা তাদের জেনেটিক। তাদের অতীত তাই বলে। অ্যাফ্রিকান উপনিবেশবাদ যার বড় সাক্ষী। জার্মানও তাই। তারা এখন সভ্যতার মুখোশ পরে এ কারণেই যাতে তাদের অসভ্য মুখটা কারো দৃষ্টিগোচর না হয়। আর হোয়াইট সুপ্রিমেসি কী পরিমান অসভ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকে কালোদের দোষ দেন তারা অপরাধ প্রবণ বলে। ফ্রান্সের কথাই বলি, কী পরিমান অত্যাচার করেছে অ্যাফ্রিকানদের উপর। কত লক্ষ মানুষ মারা গেছে তার হিসেব কি জানেন আমাদের সোকল্ড বুদ্ধিজীবীরা। অত্যাচারিত এবং অবহেলিত একটি জাতি। যারা শোষিত ও শাসিত হচ্ছে এখন পর্যন্ত। তাদের মনোভাব আর কী আশা করেন সোকল্ড বুদ্ধিজীবী তথা আলোকিত মানুষেরা। মুসলমানদের অবস্থাও তো তাই। কথায় কথায় তাদের অপমানিত করার অপকৌশল তো আজকের নয়। সেই অপকৌশল তো মাঝেমধ্যে ব্যাকফায়ার করবেই।

ভুল বুঝিয়ে দিতে হয় মমতার সাথে। কেউ যদি ভুলকে ভুল দিয়ে সামলাতে যায়, তবে ভুলটা দ্বিগুন হয়ে উঠে। আমাদের সোকল্ড বুদ্ধিজীবীদের হয়েছে সেই অবস্থা। ফ্রান্স আর জার্মানির মতন বুদ্ধিবৃত্তিটা তাদের মুখোশ। এই মুখোশ খুললেই তো দেখা যাবে নির্বুদ্ধিতার বিভৎস রূপ। যে রূপের পুরোটা জুড়ে রয়েছে লোভ আর প্রতিহিংসা। তারা ভুলকে বুদ্ধি দিয়ে পরাস্ত করতে ভয় পায়, বুদ্ধিটা নেই বলে। তারা জোর করে, ভয় দেখিয়ে পরাস্ত করতে চায়। আর সে কারণেই তাদের প্রয়োজন হয় রাজ করুণার। অথচ সত্যিকার অর্থেই যদি আলোচনায় বসানো যেতো যারা ধর্ম ব্যাখ্যায় অশ্লীল শব্দ আর উদাহরণ ব্যবহার করেন তাদের। যারা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করেন তাদের। বলা যেতো ধর্মের কথা দিয়েই। বলা যেতো ধর্মই এর বিরোধীতা করে। তাহলে চিত্রটা হয়তো অন্যরকম হতো। কিন্তু যেখানে বিভেদ জিইয়ে রাখাটা উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। আর সেই উদ্দেশ্যকেই আদর্শ মানেন সোকল্ড বুদ্ধিজীবীরা তাহলে তো সমাধানে পৌঁছা অসম্ভব।

হুমায়ূন আহমেদ একটি চমৎকার কথা বলেছিলেন যা অনেকটা এ রকম, ‘হাসির নাটকের সংলাপে আমরা সিরিয়াস হয়ে যাই। আর সিরিয়াস সংলাপে হেসে উঠি।’ ধর্ম যখন হাসিঠাট্টা দিয়ে কিছু বোঝাতে যায়, তখন আমরা তা সিরিয়াস ভাবে নিয়ে নিই। অথচ যখন বুদ্ধিজীবীরা লেকচারের মধ্যে হাসিঠাট্টা যোগ করেন, তাকে আমরা হিউমার নামে মহিমান্বিত করি। স্ট্যান্ডআপ কমেডি’র নামে ভদ্রলোকের মাহফিলে ভয়াবহ অশ্লীল সব কথা বলা হয়। অথচ আমরা তাকে শিল্প ভেবে হজম করে ফেলি। কিন্তু আবার ধর্ম বিষয়ে যখন কথা উঠে তাকে আমরা খাঁমচে ধরি। এই যে দ্বিচারিতা এটাই সমস্যার মূলে। অশ্লীলতা বা সেক্সিস্ট কথা সবখানেই অশ্লীল-সেক্সিস্ট। যা নষ্ট তা সবখানেই নষ্ট। তা ধর্মেই হোক বা জিরাফেই হোক। এমন লজিক আরো অসংখ্য আছে। অনেক কথা বলা যায় এ ব্যাপারে। লিখা যায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। কিন্তু কি লাভ। তুলো দেয়া কান, আর পট্টি বাঁধা চোখে এসব শোনা বা দেখা যায় না। সুতরাং বলে লাভ কি?


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.