নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক।

কাকন রেজা

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক ।

কাকন রেজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুরুষ দিবস, নারীবাদ ও হুমায়ূন আহমেদের মতিন সাহেব

১৯ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৯



হুমায়ূন আহমেদ তার ‘নিমমধ্যমা’য় মতিন সাহেবকে নিয়ে লিখেছেন। মতিন সাহেবের ধারণা তাকে কেউ পছন্দ করে না এবং তার স্ত্রী সেও নয়। হুমায়ূন আহমেদ যেভাবে মতিন সাহেবকে উদ্ধৃত করেছেন সে ভাবেই তুলে দিচ্ছি।
“তাঁর স্ত্রীকে অবশ্যি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন। নাশতা খেতে খেতে অন্য দিকে তাকিয়ে বললেন, একটা কথা, তুমি আমাকে পছন্দ করো না কেন?
মতিন সাহেবের স্ত্রী রাহেলা বেগম তীক্ষ্ন গলায় বললেন, তুমি কী বললে?
‘না- কিছু বলিনি।’
‘পছন্দের কথা কী যেন বললে?’
‘মানে জানতে চাচ্ছিলাম- তুমি আমাকে পছন্দ কর কিনা।’
‘তোমার কি ভীমরতি হয়ে গেল না কি, আজেবাজে কথা জিজ্ঞেস করছ।’
‘আর করব না।’
তাঁর স্ত্রী যে তাঁকে দু’চোখে দেখতে পারেন না তা মতিন সাহেব জানে। তিনি থাকেন একা একটা ঘরে। সেই ঘরটাও বাড়ির সবচে’ খারাপ ঘর।”

আজকে ছিলো পুরষ দিবস। হুমায়ূন আহমেদকে উপলক্ষ্য করে মতিন সাহেবকে উদ্ধৃত করলাম এ কারণে যে, একজন ‘নারীবাদী’ লিখলেন এদেশের অসংখ্য মেয়েকে যখন স্বামীর রোজগারে খেতে হয় তখন পুরুষরা অত্যাচারিত হয় কীভাবে- তার দৃষ্টি আকর্ষণেই মতিন সাহেবের দ্বারস্থ হওয়া। সে হওয়াও ভয়ে ভয়ে। বলা যায় না আবার কখন চামুণ্ডা রূপের সম্মুখিন হতে হয়।

বাংলাদেশে এক শ্রেণির ‘রাম-নারীবাদী’ আছেন, যাদের কাছে পুরুষ মাত্রেই অত্যাচারী। আর নারী হলেই প্রলেতারিয়েত। ও, ‘রাম-নারীবাদী’ লিখার ব্যাখ্যাটা দিয়ে নিই। বাংলা ভাষায় তাবৎ বড় কিছুর আগে রাম বসানো হয়। রামছাগল, রামদা ইত্যাদি সব। আমাদের দেশের ‘নারীবাদী’রা বিশ্বের তাবৎ ‘নারীবাদী’দের চেয়ে চিন্তা-ভাবনায় সম্ভত বড় বলেই ‘রাম’ বসানো। যেখানে সকল নারীবাদীরা মানুষের মর্যাদা দিতে চান নারীকে তখন আমাদের ‘নারীবাদী’রা পুরুষ হতে চান। জরায়ুর স্বাধীনতা চান। হয়তো ‘বাঁচতে হলে জানতে হবে’ এমন স্লোগানকে অগ্রাহ্য করেও চান। তা তারা চাইতেই পারেন। চাওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই। প্রেমিক প্রেমিকাকে চাঁদ এনে দিতে চান। বিয়ের পরে সেই প্রেমিকার হাতে চাঁদ হয়ে যায় ঝলসানো রুটি। তা যাক। মতিন সাহেবের চাওয়ার কথা বলি।

মতিন সাহেবের বাসায় কক্সবাজার যাবার যোগাড়-যন্ত্র চলছে। মতিন সাহেবেও নিজের মতন তৈরি হচ্ছেন। অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন। তিনি সমুদ্র দেখেননি, এ বয়সে সমুদ্রটাও দেখা হয়ে যাবে। মতিন সাহেব মহা আনন্দে আছেন। অথচ যাত্রার দিন দেখা গেলো তাকে বাসাতেই থাকতে হবে পাহারাদার হয়ে। স্ত্রীর ধমকিত আদেশ। তার সব আনন্দ জমে জল চোখের কোনায়। আহা মতিন সাহেব! মতিন সাহেবদের এ চিত্র ঘরে ঘরে। না, আমাদের ‘নারীবাদী’দের এমনটা চোখে পড়ে না। পড়ার কথা নয়, তাদের দৃষ্টি জুড়ে পুরুষতান্ত্রিক নিষ্ঠুরতার অর্ধসত্য উপাখ্যান। তাদের চিন্তায় পুরুষতন্ত্র দমন করে নিজেদের পুরষ হয়ে ওঠার দুর্বৃত্ত ইচ্ছা। মতিন সাহেবের স্ত্রী রাহেলাকে সরাসরি উদ্ধৃত করি, বুঝতে সুবিধা হবে।

‘রাহেলা অবাক হয়ে বললেন, তোমাকে ছুটি নিতে কে বলল? আগ বাড়িয়ে যে এক একটা কাজ করো রাগে গা জ্বলে যায়। আমি কি বাসা খালি রেখে যাব না কি? রোজ চুরি হচ্ছে। তুমি থাকবে এখানে।’

বলুন তো, জবাবে কী বললেন মতিন সাহেব। ‘আচ্ছা’ বলা ছাড়া কী আর বলতে পারেন তিনি। তার জন্যে ফ্রিজে গোশত রান্না করা আছে। চালটা শুধু ফুটিয়ে নিতে হবে। এতটুকু পারবেন না বিনে পয়সার পাহারাদার মতিন সাহেব! তাকে তো পারতেই হবে, না পারলে চলবে কী করে! তিনি তো বাড়ির কর্তা, প্রধান। আহারে কর্তা, আহারে প্রধান!

এই যে নামে বাড়ির কর্তা, প্রধান; এটুকুই ‘নারীবাদী’দের চোখে পুরুষতন্ত্র। এই নামেরও অবসান চায় তারা। ক্রিয়া ভিত্তিক শব্দার্থ অনুযায়ী পুরুষ শব্দের অর্থ হচ্ছে ক্ষমতাবান। ‘পুর’ ছড়াতে যে সক্ষম সেই পুরুষ। অর্থাৎ ক্ষমতা যার রয়েছে সেই পুরুষ, এখানে লিঙ্গ কোন বিষয় নয়। রাহেলা বেগম সে অর্থে পুরুষ। লিঙ্গভেদে মতিন সাহেব নামে পুরুষ, কিন্তু ক্ষমতাহীন।

উদাহরণটা এভাবেও দেয়া যায়। জনগণ তখনই পুরুষ মানে ক্ষমতাধর যখন তাদের ভোট দেবার ক্ষমতা আছে। এখানে ভোট হচ্ছে ‘পুর’ মানে সক্ষমতা। যখন ভোট দেবার ক্ষমতা না থাকে জনগণ তখন নামে ক্ষমতাবান, মতিন সাহেবের মতন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.