![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মর্গে নারীদের মৃতদেহের সাথে বিকৃত যৌনতায় লিপ্ত হতেন এক যুবক। যার দায়িত্ব ছিলো মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদের। সম্প্রদায়গত ভাবে যাদের বলা হয় ডোম। এ নিয়ে একদল চিৎকার শুরু করে দিলেন মৃত্যুর পরও নারীদের মুক্তি নেই। তারা মৃত্যুর পরও শ্লীলতাহানীর শিকার হন। গেলো গেলো, সব ধর্ষক হয়ে গেলো।
এই চিৎকারের সাথে কিছুটা দ্বিমত রয়েছে আমার। কেমন দ্বিমত। লক্ষ্য করুণ এক্ষেত্রে আমি মৃতদেহের সাথে যা ঘটেছে তাকে বিকৃত যৌনতা বলেছি, ধর্ষণ বলিনি। ধর্ষণ এত সরলীকৃত অপরাধ নয়। ধর্ষণ হলো ইচ্ছার বিরুদ্ধে, জোর করে, শক্তি ব্যবহার করে যে শক্তি হতে পারে নানা রকম, যৌনতার ঘটনা। মৃতদেহের সাথে এর কোনটাই ঘটে না। মৃতদেহের বাধা দেবার ইচ্ছা বা ক্ষমতা কোনটাই থাকে না। এখানে যা হয় তা মনোবিকার। মানসিক অসুস্থতা। সুস্থ মানুষ মৃতদেহের সাথে যৌনতার কথা চিন্তাই করতে পারে না। মৃতদেহ সুস্থ মানুষের মনে ভয়ের উদ্রেক ঘটায়। মানুষ মৃতদের ভয় পায়। এই ভয় মানুষ এনেছে তার মাতৃজঠর থেকে। এমন ভয়ের উর্ধ্বে যাওয়া মানে মানসিক সুস্থতা হারানো। কেউ বলবেন, ডাক্তাররা তো অ্যানাটমি শিক্ষায় পরীক্ষাগারে মৃতদেহ নিয়ে কাজ করে। ডাক্তারদের প্রশ্ন করে দেখতে পারেন, তারা কী পরিমান ভয় পায়। অনেকে ভয়ে পড়াই ছেড়ে দিতে চায়। অস্বস্তি লেগে থাকে তাদের মনেও।
মানসিক সুস্থতার ব্যাপারটি নিয়ে একটু কথা বলি। একজন মানুষ আর পশুর মধ্যে মূল পার্থক্য হলো মানুষের চিন্তা শক্তি রয়েছে, পশুদের নেই। মানুষ ভাবে গোশত রান্না করে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। পশু তা ভাবে না। তাদের রান্না এবং কাঁচা গোশতের মধ্যে কোনই ফারাক নেই। প্রকাশ্যে যৌনতা কিংবা জোর করে কামড়ে ধরে সঙ্গমের সাথে স্বাভাবিক সঙ্গমের কোনো তফাৎ নেই। সুস্থ মানুষের প্রমান তার চিন্তা। সেই চিন্তাটা নষ্ট হয়ে গেলে মানুষ আর পশুর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। যে ছেলেটি মৃতদেহের সাথে যৌনতা করেছে, তার চিন্তা শক্তিটাই নষ্ট হয়ে গেছে। ভালো-মন্দের বিভেদ ভুলে গেছে। সে অসুস্থ। আর একজন অসুস্থ মানুষ কোন কিছুর উদাহরণ হতে পারে না। এখানেও কেউ বলতে পারেন, ধর্ষণও তো সুস্থ স্বাভাবিক কোনো ব্যাপার নয়। তাদের বোঝাতে গেলে মনোবিদ্যা টেনে আনতে হবে। যেখানে মানসিক অসুস্থতা ও অপরাধের সুস্পষ্ট পার্থক্য করা রয়েছে।
ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হয় না। সদ্যকাল, অর্থাৎ এখন রাত প্রায় একটা বাজে; সেই কালের গণমাধ্যম জানালো, এক বাবা তার শিশু কন্যাকে আছড়ে মেরে ফেলেছে। হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘খারাপ মানুষ রয়েছে, খারাপ বাবা একজনও নেই।’ হুমায়ূন আহমেদকে ভুল প্রমান করার জন্য এমন ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে সামনে এনেছেন কেউ কেউ। এই যে বললাম ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হয় না। নিজ সন্তানকে যে হত্যা করতে পারে, সে মানসিক ভাবে অসুস্থ। তার চিন্তার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। একজন প্রফেশনাল খুনিও তার সন্তানের প্রতি স্নেহশীল। সে খুন করে যা উপার্জন করে তা তার সন্তানদের পেছনেই ব্যয় করে। এই যে আমাদের দেশের বড় বড় চোরেরা আমাদের হকের টাকা চুরি করে বিদেশে জমিয়েছেন। তারাও তা করেছেন উত্তরসূরিদের জন্য, তাদের সন্তানদের জন্য। সুতরাং যারা ব্যতিক্রমকে উদাহরণ করেন তাদের চিন্তাশক্তিও সম্ভবত এলোমেলো হতে শুরু করেছে। না হলে অপরাধ আর অসুস্থাকে এক করে দেখার কথা নয়।
আমরা যখন ছোট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের খলিল নামে একজনের কথা গণমাধ্যমই তখন জানিয়েছিলো। সেই খলিলও মর্গে কাজ করতো। তার নেশা ছিলো মৃত মানুষের কলিজা খাওয়া। সেই সময়ের রীতিমত হইচই ব্যাপার। সেটাও ছিলো মানসিক অসুস্থতা। এখন সেই ছেলেটি মৃতদেহের সাথে যা করেছে সেটাও তাই। এর সাথে ধর্ষণকে সরলীকরণ করা মানে, ধর্ষণ বিষয়টিকে মানসিক অসুস্থতার সাথে মিলিয়ে ফেলা। আর যে বাবা তার শিশু সন্তানকে আছড়ে মেরে ফেলেছে তাও মানসিক বিকার। একজন পাগল যদি কাউকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে এবং তাতে সে যদি মরেও যায়, তাহলে সেই পাগলকে মানসিক চিকিৎসালয়ে পাঠানো হয়। আর যার চিন্তা স্বাভাবিক তাকে দেয়া হয় ফাঁসি না হয় যাবজ্জীবন। দুটো মিলিয়ে ফেললে মূল অপরাধকে লঘু করে দেয়া হয়।
সুতরাং সব কিছুই উদাহরণ হয় না। সব কিছুর সাথে সব কিছু যায় না। এটা ভেবে দেখা উচিত। সব কিছু মেলানোর আগে দ্বিগ-বিদিক ভেবে নেয়াটাই সুস্থ চিন্তার পরিচায়ক।
পুনশ্চ : আমাদের দেশে যেভাবে অপরাধ বাড়ছে। খুন, গুম, ধর্ষণ, নির্যাতন, লাঞ্ছনার মচ্ছব চলছে তাতে অসুস্থতা ও অপরাধকে মিলিয়ে ফেলাটা হবে আরেকটা অপরাধ। মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপরাধ।
©somewhere in net ltd.