![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দিয়েগো ম্যারাডোনা, একজন কিংবদন্তি ফুটবল খেলোয়ার, এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু তাকে যখন ‘ফুটবল ঈশ্বর’ বলা হয় তখনি আপত্তিটা। প্রথমত মানুষ কখনো ঈশ্বর হতে পারে না। কোনো কোনো ধর্মে কেবল অবতার হতে পারে। একেশ্বরবাদে তো ঈশ্বরই এক। সুতরাং তুলনা, উপমা যাই করা হোক না কেনো, করতে হবে ভেবে-চিন্তে।
ঈশ্বর প্রশ্নে বলি, যারা ঈশ্বরে অবিশ্বাসী, সমাজতান্ত্রিক ধারার মানুষ, তাদের অনেকের কাছে ম্যারাডোনা খুব প্রিয় ব্যক্তি। হতেই পারে। খেলা প্রিয় মানুষের কাছে এটাই স্বাভাবিক সঙ্গত। কিন্তু অসঙ্গতিটা শুরু হয় ম্যারাডোনাকে ‘ফুটবল ঈশ্বর’ অভিধায় আখ্যায়িত করায়। ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করেও, মানুষকে ঈশ্বর হিসেবে চিন্তা করা একটি মোটাদাগের প্রবঞ্চনা, প্রতারণা। জর্জ অরওয়েল এমনিতেই ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ লিখেননি। দ্বিচারিত্বের শুরুটা এ দিয়েই।
দ্বিতীয় আপত্তিতে যাই, সেটা হলো চে গেভারা কিংবা ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে সামনে এনে ম্যারাডোনার ট্যাটুকে সাক্ষী রেখে তাকে ‘রেড ম্যারাডোনা’ বানিয়ে দেয়া নিয়ে। যারা দিয়েছেন তাদেরকে বলি। তাদের সেই রেড ম্যারাডোনা ড্রাগ ডিলারদের সাথে প্রস্টিটিউটদের নিয়ে জেলের ভেতর মজমা করেছেন। এই যে ড্রাগ ডিলারদের সাথে মজমা এটা পুঁজিবাদের সবচেয়ে খারাপ রূপ। বলতে পারেন পুঁজিবাদের বাজে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সেই মদ ও মজমার টাকা কিন্তু প্রলেতারিয়েতদের রক্ত-ঘামের। এমন ম্যারাডোনাকে যখন ‘রেড ম্যারাডোনা’ হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা হয় তখন দ্বিচারিতাটা আরো প্রকাশ্য হয়, পরিষ্কার হয়।
মুশকিলের বিষয় হলো এই যে, ম্যারাডোনাকে ‘ফুটবল ঈশ্বর’ বা ‘রেড ম্যারাডোনা’ বানানোর চিন্তা বা চেষ্টাচরিত্তির তা ভারত ও বাংলাদেশের বামপন্থীদের মধ্যেই বেশি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইদানিং একটা কথা উচ্চারিত হচ্ছে ‘একুশে রাম, ছাব্বিশে বাম’। অর্থাৎ মমতাকে ঠেকাতে আরএসএস আনতে হবে, তারপর তাদের আঁচল তলে বামেরা প্রতিষ্ঠা পাবে। এই ‘একুশ’ আর ‘ছাব্বিশ’ এর সমন্বিত রূপই ম্যারাডোনা। এই সমন্বিত রূপের মজমা আমাদের দেশেও যুগ ধরে দেখছি আমরা। পুঁজিবাদের সর্বময় রস-রূপ উপভোগ করেও অনেকে বাম থেকে যান। চরম পুঁজিবাদী, মানুষের স্বার্থবিরোধী প্রতিষ্ঠানের মালিক-সহযোগি হয়েও বনে যান শিল্প-সংস্কৃতির চরম ‘মহামানব’। সত্যি, বড়ই বিচিত্র সমাজবাদ আর পুঁজিবাদের এই ককটেল।
পুনশ্চ : ম্যারাডোনা সম্পর্কিত বিবিসি’র খবরটি উল্লেখ করবো কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। কারণ ব্যক্তিগত কোনো বিষয় সাধারণত আমি আলাপে আনতে চাই না। কিন্তু সঙ্গত কারণেই “ম্যারাডোনার সম্পত্তি নিয়ে কি ৬ নারীর ১০ সন্তানকে আইনী 'লড়াই'য়ে নামতে হবে?” বিবিসি’র এমন শিরোনামটি উল্লেখ করতে হলো। কেন হলো তা বোঝা যাবে খবরের ভেতরে দৃষ্টি দিলেই। ‘চোখ-ধাঁধানো ফুটবল খেলে দিয়েগো ম্যারাডোনা বিপুল অর্থ কামিয়েছিলেন, হয়েছিলেন বহু বাড়ি, লোভনীয় প্রচারস্বত্ব থেকে শুরু করে বেলারুস থেকে পাওয়া উভচর ট্যাংকের মত বহু সম্পত্তির মালিক।’ বুঝলেন তো কথিত ‘রেড ম্যারাডোনা’র অবস্থা। এমন ‘রেড ম্যারাডোনা’র এর ‘প্রলেতারিয়েত’ বান্ধবী ও সন্তানরা এখন সেই সম্পদ দখলের বিপ্লবে সামিল হবেন।
ফুটনোট : স্বৈরশাসনকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিটা সময়েই কিছু ভুয়া বাম, কিছু ভুয়া ধার্মিক ও নাস্তিক তৈরি হয়েছে। এদের কাজ মূলত স্বৈরশাসন দীর্ঘায়িত করা, এর বেশি কিছু নয়।
©somewhere in net ltd.