![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বুদ্ধিবৃত্তির সঙ্গে প্রোটিনের একটি সম্পর্ক আছে। মস্তিষ্ক গঠনে প্রোটিন খুবই প্রয়োজনীয়। এখানে প্রোটিন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ওজন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ লুইজা পেটরে’কে উদ্ধৃত করি। তিনি প্রোটিন বিষয়ে বলেছেন, ‘ হরমোন এবং এনজাইম তৈরিতে সাহায্য করে প্রোটিন, যা আমাদের মস্তিষ্ক সচল রাখে। অ্যামিনো অ্যাসিড, টাইরোসিন শোষণে সাহায্য করে পর্যাপ্ত প্রোটিন। এই দুটি উপাদান নিউরোট্রান্সমিটার অর্থাৎ স্নায়ুর সংকেত আদান প্রদান পন্থাকে উজ্জীবিত রাখে। ফলে মনযোগ ও চিন্তভাবনায় ভাটা দেখা দেয় না।’
যারা ধর্মীয় কারণ ছাড়া শুধু শুধু নিরামিষবাদে বিশ্বাস করেন, তাদের সম্ভবত প্রোটিন সম্পর্কে জ্ঞানগম্যির ঘাটতি রয়েছে। এই বিষয়টা আরো বদ্ধমূল হয়েছে ব্রাত্য রাইসু’র সাম্প্রতিক বক্তব্যে। তিনি হিরো আলমকে অ্যাকটিভিস্ট ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে আগামীতে অন্য বুদ্ধিজীবীদের থেকে এগিয়ে রেখেছেন।
সম্প্রতি রাইসুর এক ভিগান বন্ধু যেভাবে তাকে সাপোর্ট করেছেন, তাতে মনে হয়েছে রাইসুও সম্ভবত ভিগান হয়েছেন। মানে নিরামিষভোজী। ধর্মীয় কারণে যারা নিরামিষ খান, তা বিশ্বাসের ভিত্তিতে। তাতে আপত্তি নেই। যেমন, সুফিবাদে নিজের শরীরকে চরম কষ্ট দেয়া হয়। এতে পরমাত্মার সাথে মিলিত হওয়া সম্ভব এমন বিশ্বাস রয়েছে সুফিদের। কিন্তু রাইসু যদি খান তবে তার খাওয়া এবং তার বন্ধুর খাওয়ার মধ্যে অন্তত ধর্ম নেই। তাই এই ভিগান নিয়ে প্রশ্ন করা যায়ই। এতে ধর্মানুভূতি আহত হবার প্রশ্ন নেই। আর লুইজা পেটরে’র উদ্ধৃতি অনুযায়ী প্রোটিন বিষয়ে প্রশ্নটাও অসঙ্গত বা অর্থহীন নয়।
অনেকের আপত্তি দেখলাম রাইসুর এমন তুলনায়। তাদের বলি, রাইসুর ধারাবাহিকতা দেখেন। দেখলে আপত্তি থাকার কথা নয়। শুরুতে রাইসু নানা বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতেন। দ্বন্দ্ব তৈরি করতেন। এটা ভালো। দ্বন্দ্ব থেকেই সত্যিটা দৃশ্যমান হয়। কুতর্কের দোকান ডটকম সম্ভবত তেমন চিন্তারই ফসল। কিন্তু মুশকিল হলো দ্বন্দ্ব সৃষ্টির প্রাবল্যেক্রমে রাইসু সম্ভবত মোহাক্রান্ত হয়ে উঠেছেন। যেমন হিরো আলম হয়ে উঠেছেন। সে প্রক্রিয়াতেই রাইসু নিজেই নিজ থেকে হিরো আলম হয়ে উঠছেন। তার সম্পর্কে যারা প্রথম দিকে দ্বিধায় ছিলেন। যারা তাকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাপোর্টও করেছেন, তাদের ধারণা পরিষ্কার হয়েছে রাইসুর ক্রমযাত্রায়। তারা বুঝতে পেরেছেন রাইসুর দৌড়।
রাইসুর হিরো আলম হওয়ার যাত্রাপথটা দেখেন। প্রথমে রাইসু দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করলেন, ফলে তার পরিচিতি একটা জায়গা পেলো। অর্থাৎ তিনি স্পেস দখল করলেন। ধীরে ধীরে সেই স্পেস বাড়তে লাগলো। নিজের বক্তব্য যাই হোক না কেন, অন্যের কথায় দ্বন্দ্ব সৃষ্টি তাকেও আলোচিত করতে লাগলো। আলোচিত হবার মোহে পড়ে গেলেন রাইসু। তিনি ধরে ফেললেন সামাজিকমাধ্যম ও প্রাকপ্রাথমিক বুদ্ধিবৃত্তি চর্চায় নাম পাবার কৌশলটা। হিরো আলম যেমনটা করেছেন। হিরো আলমের টার্গেট ছিলো সমাজের নিম্নবিত্ত একটা শ্রেণি। যারা বিনোদনটার মধ্যে বিনোদনটাই খোঁজেন, ‘আর্ট’ খুঁজতে যান না। কারণ তাদের আর্ট খোঁজার ফুসরত নেই। দু’বেলার অন্ন জোটাতেই সেই ফুসরত চলে যায়। মানসিক প্রশান্তির জন্য তারা স্রেফ খানিকের বিনোদন খোঁজেন।
রাইসুর টার্গেটও বুদ্ধিবৃত্তির এমন একটা অনগ্রসর শ্রেনি। যাদের চমকে দেয়া যায়। যাদের যুক্তিহীন তর্কে লিপ্ত করা যায়। বিতর্ক তার পছন্দ নয়, কারণ বিতর্ক অগ্রসর শ্রেণির ব্যাপার। এতে যুক্তি রয়েছে। প্রাকপ্রাথমিকদের ব্যাপার নয়। রাইসু নিজেও বুঝে গিয়েছেন তার দৌড়টা। যেহেতু নিজের পায়ে খুব বেশি এগুনো তার পক্ষে সম্ভব নয়, তাই পরের উপর দিয়ে সম্ভবত রেসটা লড়ে যেতে চান তিনি। আর সেজন্যে বুদ্ধিবৃত্তির চেয়ে কৌশলটা বেশি প্রয়োজনীয়। বুদ্ধিমান হওয়ার চেয়ে চালাক হওয়াটা জরুরি। আর সে কাজটাই করছেন তিনি। বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবীর তালিকা করাটাও সম্ভবত এমন চিন্তা থেকেই।
সুতরাং যারা তালিকা এবং তুলনা নিয়ে মেতেছেন তারা চালাকি বা চাতুরিটাই করছেন। তাদের চাতুরি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তারা যে লম্বা রেসের ঘোড়া নন, তা তারাই প্রমান করেছেন।
ওহ, আরেকটা কথা। রাইসুর অ্যাক্টিভিজম ও ইন্টেলেকচুয়াল এর মধ্যে পার্থক্য ধরতে না পারার ব্যর্থতাটাও তার মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তার ধারণায় নেই, সব বুদ্ধিজীবীই অ্যাক্টিভিস্ট, কিন্তু সব অ্যাক্টিভিস্টই বুদ্ধিজীবী নন।
©somewhere in net ltd.