নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বস্ত্র কারখানার পেশাজীবি
ভোর ৫.৪৫ মি. ।
জানলার নীচে রাস্তায় অবিরাম গার্গল করার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে । গলায় পানি নিয়ে কুলি করার শব্দে বুঝতে পারি জবাই হচ্ছে । প্রতিদিন হয়, এ্কই সমযে । যে সকালে ঘুম পাতলা হয়, সে দিন বুঝতে পারি । মৃদু অস্বস্তি হয়, মাংস খেতে পছন্দ করি- কিন্তু জবাই সহ্য করতে পারি না । আমার প্রতিবেশী হিন্দু পরিবার, তদের তো আরো অসুবিধা হবার কথা । আর কারো কি এমন হয়, কে জানে । পাড়ার গলিতে রাস্তায় জবাই না করে দুরে কোথাও কি এটা করা যায় না ।
সিটি কর্পোরেশন, কি সেক্টর, সেকশন, মহল্লা কল্যান সমিতি ভেবে দেখবেন- বলে দেখলে কেমন হয় । নিজে থেকে বুঝে উঠার মত সেনসেশন বা সিভিক সেন্স এইসব সমিতি, কর্পোরেশন এর কর্তা, কর্মকর্তাদের আছে বলে মনে হয় না ।
দুরে হত্যা করুন, চোখের-কানের আড়ালে জবাই করুন । মৃত্যু পথযাত্রী পশুর আর্তনাদ সহ্য করতে পারি না । অতি-ব্যস্ত বাইডেন-নেতানিয়াহু টিভি সেটের সামনে বসার সময় পান না, তাই প্যালেস্টানের নারী-শিশূর রক্তাক্ত মুখ, শরীর বা আর্তনাদ সহ্য করতে হয় না । এভাবে প্যালেস্টাইনের ১৫,০০০ ক্যাজুয়ালটি শূধুাত্র সংখ্যা হয়ে সামনে আসে । ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট নাই, তাই তাদের কাছে কোন মানবিক তাৎপর্য বহন করে না । অথবা, অন্য ধর্ম-জাতির লোকের মৃত্যুচিৎকার বিষয়টি আমার মত আমিশাষী লোকের কাছে পশু জবাইয়ের শব্দ-শংকার মত সামান্য অস্বস্তির কারন হতে পারে ।
মি. প্রেসিডেন্ট, ড্যু ইউ থিংক থার্টিন থাউজ্যান্ড প্যালেস্টানীজ আর ইক্যুয়াল্টু থার্টিন হান্ড্রেড ইজরাইলীজ?
– হু কেয়ারস দ্য লাইফ অব ইনোসেন্ট পিপল ?
- হামাস, নেতানিয়াহু, বাইডেন, ম্যাক্রো, রিশি সুনাক, ওলাফ স্যুলজ এদের মতো ক্ষমতাধর কেউ; নাকি ইন্দোনেশিয়া, কলাম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশের নখ-দন্তহীন ব্যাঘ্র শাবকেরা ।
সমৃদ্ধ এরাবিয়ানদের জানালার নীচেই গলির মত স্ট্রিপে চলছে হিউম্যান স্লটারের অবিরাম গোঙানী ।
৬.০০ মি. ।
ফ্রি হ্যান্ড ওয়ার্ম-আপ করে নিচ্ছি, এরপর কার্ডিও-ভাস্কুলার সেশন শুরু করব । চেস্ট, নেক আর এ্যাবস-এর যে সব জায়গায় বেয়াড়া ফ্যাট জমে গেছে, ঝেড়ে ফেলতে হবে । ব্যাক-কিক, জাম্পিং জ্যাক, মাউন্টেন ক্লাইম্ব টোয়েন্টি রেপস দিয়ে হাপিয়ে উঠি, পুশ-আপ দেয়ার আগে রেস্ট নিই- টু মিনিটস; বার্পি, ব্যাক কার্ল, বিয়ার ওয়াক, সাইড লান্জ, সাইড প্ল্যাংক, গ্লূট ব্রিজ টুয়েন্টি রেপস শেষ করে শাওয়ার নিতে যাই ।
সোহানা এই মহুর্তে খাটের মাঝ বরাবর দখল নিয়ে ঘুমিয়ে আছে, কালো চুলের বর্ডারে সাদা পদ্মের মত তার মুখ জেগে আছে বালিশের কিনারে । নি:শব্দ, নিশংক নিদ্রা- কোন কিছুই থাকে এই সকালের আরাম থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না । মনে মনে তার সুনিদ্রা কামনা করে আমি বেডরুম পার হযে আমি এটাচড বাথরুমে শাওয়ার নিতে থাকি । সামনে পুরো একটা ব্যস্ত দিন শুরু করতে যাচ্ছি ।
৭.১১ মি.
বাসার নীচে নেমে দেখি বেশবড় জটলা । মাংসের দোকানে ঘিরে সবাই. চোখে-মুখে উৎসবের আমেজ । সবার সামনে বদরুল মামা, তিনিই আজকের বড় কাস্টমার, পুরো পনের টনের গোটাটাই নিতে চান এবং নিতে পারেন- কিন্তু না তিনি সেটা নেবেন না । যদিও তার হক আছে, পুরো পেমেন্ট তিনি এ্যাডভান্স করেছেন ৩৮ লাখ দিয়ে রেখেছেন, বছর জুড়ে নেবেন তিনি । তার বাড়ীতে মাংস ছাড়া খাবার হয় না, সেটা মাথায় রেখেই তিনি এই বাজেট দিয়ে রেখেছেন ।
অবশ্য কেউ কেউ বলে তাকেন, এটা বদরু মামার পাগলামী, তিনি এই এপি সিস্টেম চালু করেছেন এরপর কসাই ব্যাটা অগ্রীম ছাড়া গোশ্ত দেবে না, এইটা ঠিক না, বিড় বিড় করে বলছিল মোকারম- তার বাসায় কবে থেকে মাংস নাই তা কেউ জানে না । বদরু মামার তাতে কিছু যায় আসে না, আর কসাই নাটু বেপারী তার কাছের মানুষ, আর কেউ না জানুক নাটু ঠিক জানে বদরুলের কসাই থেকে আজকের গননায়ক হবার পেছনে রয়েছে নাটুর চৌদ্দ-পুরুষের ব্যবসার টাকা ।
লাল টকটকে মাংস, রক্তে মাখামাখি; দেখে জিভে জল চলে এল সোনাকুলের- একবার সে চট করে চোখ বুলিয়ে জিভ দিয়ে ঠোট চাটে আর তাকায় – আজকের মাংস লাল তরতাজা কচি, কাঁচাই খেতে পারবে সে । সোনাকুল বেপারীর হাব-ভাব বোঝার চেষ্টা করে, বদরু মামার পরেই সে এসেছে, খাতির জমিয়ে বেপারীকে দু’পিস ছুরি কিনে দিয়েছে গেল হপ্তায় । বেপারী আশা করা যায় সেটা ভুলে নাই – স্যুপ, স্টেক, হাফ বেক্ড, গ্রীল আরো কত কি কি ভ্যারিয়েশন হতে পারে মনে করে তার চোখ চকচক করে উঠে ।
সবার শেষে উল্লাহ সুলেমান এলেন, ঝানু ব্যবসায়ী বলে সবাই চেনে । বিনা লাভে একপা’ বাড়ায় না, এইটা নাটু মিয়া খুব জানে । তার বাপ-দাদার জানি দুশমন ছিল সুলেমান; তবু কাস্টমার বলে কথা- বদরু তাকে পঁই পঁই করে বলেছেন না চটাতে- দিয়ে দে বাপ দশ-বিশ কেজি টাকা লাগে আমি দোব । উল্লাহ তার দামী গোল্ডেন রিস্টওয়াচে সময় দেখে সোজা হেটে যান দোকানের কাউন্টারে, বেপারীর চোখের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে- এ্যাই ব্যাটা, রানের মাংস চাই আমার, শুধু রান, নো বোনস, হাড্ডি দিবি না, খবর্দাররর…..।
নাটুর মাথায় রক্ত উঠে যায় তুই-তোকারী শুনে, মাথার উপরে ধরা চাপাতির কোপ ঝুলিয়ে রাখে নীচে নামায় না, দেবে নাকি সোজা সুলেমানের মাথায় নামিয়ে- বাপ-চাচার জানের বদলা নিতে । ওদিকে সোনা আর মোকারম রে রে করে তেড়ে আসে- নো না কাভি নেহি, আমরা এসেছি কি করতে- তুই কোথাকার কে রে .. বদরুল অবস্থা জটিল হতে পারে আঁচ করে দ্রুত এগিয়ে যান, ছোট একটা হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে যেতে টাল সামলে মাঝখানে দাড়ান- হোই মিয়ারা, এত মাথা গরম ক্যাঁ, হ্যা, শুনি, এখানে মাত্র বিশ টন কাটা হয়েছে । আরো হাতে আছে এখন ১,৯৮০ টনের বিশাল স্টক, আরো বলি- তোরা জেনে খুশি হবি যে ওপারে পশ্চিম পাড়ে আরো ৩,৩০০ টনের রিজার্ভ আছে আমাদের হাতের নাগালে । এক নাগাড়ে বলে দম টানে বদরুল, বয়স হয়েছে, তারপরেও এত এত ক্যাওসের মধ্যে ক্যাম্নে কি করে হান্দাইলেন বুঝে উঠতে পারেন না; ঝুলে পড়া শুকনো স্ক্রুটামে উরুর বেমক্কা চাপ লেগে কড়াৎ করে শব্দ হলে সামনে রাখা প্লাস্টিকের টুলে ধপ করে বসে পড়েন ।
তিন তলার ব্যালকনিতে দাড়িয়ে হিরো অলম্বুস সদ্য ঘুমভাঙ্গা চোখে নীচের হৈ-হল্লা শুনে বিরক্ত হয় । গতরাতে একটা জম্পেশ পার্টি সেরে শেষরাতে ঘুমিয়েছে সে । কপালে দু’পাশ টনটন করে উঠছে, এতটা খাওয়া ঠিক হয়নি- নিজেকে কমিট করে যে এরপর আট পেগের বেশী একটাও না- স্যয়ার । সারা গায়ে যে পরিমান মাংস আছে তার, তাতে তার আর মাংস খাবার উপায় নেই । তাই এইসব হাভাতে ব্যাপারে সে নিজেকে এলাউ করে না । সে নিজেকে অটো সাজেশন দেয় যে, আসছে বছর থেকে সে ভেগান হবে, এ হোল-টাইম কমপ্লিট ভেজিটেরিয়ান ।
দশ তলায়, সবার উপরের তলায় মি. এলাহী নিস্পৃহ ভংগীতে সব দেখছেন । তিনি তাকিয়ে দেখলেন বরাবরের মত কতগুলো ডুয়ার্ফ রাস্তায় অকারনে হট্টগোল করছে । আরো জেনে বিরক্ত হলেন যে, এবারে তাদের বিবাদ বানোয়াট, ভিত্তিহীন অজুহাত সর্বস্ব এবং জিঘাংসা-লোভের কারনে হয়েছে ।
মি. এলাহী এই মূহুর্তে এন১০ ডাইমেনশন নিয়ে পরীক্ষা করছেন । তার এই নতুন ইকুয়েশন থেকে যেই ধরনের রিয়্যলিটি দেখা যাচ্ছে সেটা আগের যে কোন ডাইমেনশন থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন ফলাফল দেখাচ্ছে । এটা ঠিক বো্ঝা যাচ্ছে যে, এন১০ ডাইমেনশনে প্রানী, উদ্ভিদ এবং জড়বস্তুর নিউক্লিয়াসের ফ্রিকোয়েন্সী আলাদা, একই সাথে অভিন্ন হতে পারে এবং সমষ্টিগত যোগাযোগ করতে পারে- এখানে ফ্রিকোয়েন্সী নিজেই দৃশ্যমান চরম মাত্রা । সহজে বলতে গেলে, সেই ক্ষেত্রে ম্যাসিভ হোমোজেনাস ফ্রিকোয়েন্সীর বিরুদ্ধে কৃত্রিম শর্ট ওয়েভ ফিকোয়েন্সি কোন কাজ করবে না । তিনি তার এই আবিস্কারে তৃপ্ত বোধ করছেন, ইতিমধ্যেই তিনি ছোট একটি ল্যাব ডেমো করেছেন, যার ফলে তার পরীক্ষাগারের একটি জায়গা পুরো বদলে গিয়ে তার আদি শুন্যরুপে ফিরে গেছে ।
মি. এলাহী সিদ্ধান্ত নিলেন, এটা তিনি নীচে বদরুলদের এলাকায় টেস্ট করবেন এবং জীব ও জড়বস্তুর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য মাত্রা দুশ্যমান করবেন, যুদ্ধরত বামনদের অনাহেতু কুট-ক্যাচাল স্তব্দ করে দিয়ে অকৃত্রিম নৈ:শব্দ ও শান্তি ফিরিয়ে দেবেন ।
©somewhere in net ltd.