| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কালমানব
বস্ত্র কারখানার পেশাজীবি
বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিমানবন্দরকেন্দ্রিক এই তিনটি ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । তিনজন নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপট, সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ এবং তারেক রহমানের সামনের পথচলা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা:
১.প্রেক্ষাপট ও জনসমর্থন
• শেখ মুজিবুর রহমান (১৯৭২): দীর্ঘ লড়াই ও মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে তিনি দেশে ফেরেন । তখন দেশের মানুষের আবেগ ও সমর্থন ছিল নজিরবিহীন । একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের বিশাল দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে ।
• ড. মুহাম্মদ ইউনুস (২০২৪): ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন । রাজনৈতিক দল না থাকলেও তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ মানুষের অভাবনীয় প্রত্যাশা ও সমর্থন তাঁর পেছনে ছিল । রাষ্ট্র সংস্কার ও স্থিতিশীলতা ফেরানোই ছিল তাঁর মূল ম্যান্ডেট ।
• তারেক রহমান (২০২৫): দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় প্রবাসে থাকার পর ২০২৫ সালে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বিএনপি এবং সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে বিশাল উন্মাদনা দেখা যায় । একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক কাঠামো ও সুসংগঠিত দলের নেতা হিসেবে তাঁর ফেরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে ।
২. বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ
তারেক রহমান এমন এক সময়ে দেশে সক্রিয় হয়েছেন যখন দেশ বহুমুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । মূলত প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে:
• ভঙ্গুর অর্থনীতি: গত কয়েক বছরের লুটপাট ও অর্থপাচারের ফলে ব্যাংকিং খাত ও রিজার্ভে যে ধস নেমেছে, তা পুনরুদ্ধার করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ । সাধারণ মানুষের জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা তাঁর জন্য অগ্নিপরীক্ষা ।
• আইন-শৃঙ্খলা ও সামাজিক অস্থিরতা: দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে আইন-শৃঙ্খলার যে অবনতি হয়েছে, তা ফেরাতে শক্ত হাতে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন ।
• প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্ক: বিশেষ করে ভারতের সাথে বিদ্যমান অমীমাংসিত ইস্যুগুলো (যেমন: রোহিংগা ইস্যু, সীমান্ত হত্যা, পানি বণ্টন, ট্রানজিট) নিয়ে সমমর্যাদার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি সাজানো তাঁর নেতৃত্বের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হবে ।
• পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্র: বিদেশে বসে বা দেশে গোপনে থাকা আগের শাসনের সুবিধাভোগীদের অপতৎপরতা মোকাবিলা করা এবং কোনো প্রকার অরাজকতা ছাড়াই গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখা তাঁর জন্য বড় বাধা ।
৩. জাতির প্রত্যাশা ও তারেক রহমানের ভূমিকা
বিগত দুই নেতার সমালোচনা বা ব্যর্থতার কথা মনে করে দেশের মানুষ এখন তৃতীয় নেতৃত্ব তথা তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে । তাঁর কাছে জাতির মূল প্রত্যাশাগুলো হলো:
বৈষম্যহীন রাজনীতি: প্রতিশোধের রাজনীতি পরিহার করে একটি বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়া,
রাষ্ট্র সংস্কার: পুলিশ, প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করা,
আস্থার প্রতিফলন: ড. ইউনুস বা শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষেত্রে জনসমর্থন থাকলেও প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক বাস্তবতায় যে গ্যাপ তৈরি হয়েছিল, তারেক রহমানকে তা পূরণ করতে হবে তৃণমূলের সাথে নিবিড় সংযোগের মাধ্যমে ।
তারেক রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং শক্তিশালী দলীয় ভিত্তি তাঁকে অন্য দুই নেতার চেয়ে কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে । তবে বর্তমানের জটিল ভূ-রাজনীতি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সংকটগুলো উত্তরণে তিনি কতটা সফল হন, তার ওপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ । জাতি এখন গভীর আগ্রহে দেখছে তিনি 'জাতীয় ঐকমত্য' গড়ে তুলে সংকট উত্তরণ করতে পারেন কি না ।
©somewhere in net ltd.