![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।
সময়টা ছিল ২০১০ সাল ।
কোচিং করতে ঢাকা এসেছি ।
আক্রান্ত হলাম এফ এম নামক ভয়াবহ এক ভাইরাসে ।
হাতে কোচিং এর লেকচার শিট নিয়ে, সারাদিন হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনি , RJ নামক বিশেষ "এক বস্তুর" নাক/ঠোটের মিশ্রিত আঠালো আঠালো বকবকানি শুনি!
ন্যাকা ন্যাকা/ইয়ো ইয়ো টাইপের মেয়ে-ছেলেদের পাঠানো এসএমএস শুনি RJ-দের মুখে ।
অনেক ছেলে-মেয়ে তো RJ বলতে অজ্ঞান ।
পারলে RJ যা চাইবে, তাই দেয়ার জন্য রাজি ।
RJ-দের অনেক কুকীর্তি পরবর্তিতে আমরা দেখেছি এবং শুনেছি ।
যাইহোক, এরপর একটি এফএম চ্যানেলে শুরু হলো "ভালোবাসার গল্প" টাইপের একটা প্রোগ্রাম।
অনেকেই এসে তাদের ভালোবাসার গল্প বলতো ।
সুখের গল্প শুনে আনন্দ পেতাম, দুঃখের গল্প শুনে কষ্ট!
তখনো ভালোবাসার নামে "দেবর আর রাঙ্গা বৌদিদের" কুৎসিত কাহিনী শুরু হয়নি, এফ এম চ্যানেল গুলোতে ।
প্রথমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে, আমার এফএম ম্যানিয়া ছুটে গেল!
মানে ছুটতে বাধ্য হলো ।
দ্বিতীয়বার পরীক্ষার পর যখন ঢাবিতে চান্স না পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গেলাম, হলে উঠলাম, তখন একদিন কৌতূহল বশত এফএম চ্যানেলে ভালোবাসার গল্প শুনতে বসলাম এক রাতে ।
বাপরে বাপ!
১ বছরে ব্যাপক পরিবর্তন যাকে বলে ।
এক ছেলে আসছে তার ভালোবাসার গল্প বলতে ।
সে শুনালো ক্যামনে সে তার প্রেমিকার সাথে দৈহিক সম্পর্ক করেছে, কোথায় গিয়ে করেছে ।
এরপর সেই মেয়ে আবার তার সাথে প্রতারনা করে, অন্য ছেলের সাথে কোথায় কোথায় গিয়ে রাত কাটিয়েছে ।
RJ ব্যাটায় আবার গল্পের ফাঁকে ফাঁকে টুইস্ট আনার জন্যে, আপনি কিভাবে তাকে রাজি করালেন সেক্স করার জন্য? কতবার সেক্স করেছেন ? টাইপের প্রশ্ন করছে!
আরেকটা নতুন প্রোগ্রাম ততদিনে শুরু হয়েছে । "ভুতের গল্প " নিয়ে ।
একেকজন নাকি সেই সব ভুতের গল্প শুনে, একা আর টয়লেটে যাইতে পারে না ।
দলবেঁধে টয়লেটে যাইতে হয়!
সেইরাম হরর স্টোরি!
সেই হরর স্টোরি একদিন শুনে বুঝলাম, পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে ভুতের গল্প তৈরি করা!
আমাদের ক্যাম্পাসের এক গাঁজাখোর বড় ভাই একদিন গিয়ে ভুতের গল্প শুনিয়ে এলেন!
আমরা তো তার গল্প শুনে হাসতে হাসতে শেষ ।
সে নাকি একজনরে তিন জায়গায় তিনবার দেখে ।
পাশে থেকে এক বন্ধু টিপ্পনি কাইট্যা কইলো, ব্যাটায় কলকিতে যে টান দেয়, তাতে দশ জায়গায় যে দশজনরে দেখে না এটাই তো আশ্চর্য!
এই হলো আমাদের এফএম চ্যানেল গুলোর অবস্থা ।
সিনেমার জন্য সেন্সর বোর্ড রয়েছে ।
কিন্তু এফএম চ্যানেল গুলোর আদৌ কোন নীতিমালা আছে কিনা সন্দেহ আছে ।
ফলে দেবর আর রাঙ্গা বউদিদের পরকীয়া/লীলাখেলার মতো কুৎসিত কাহিনী সদর্পে চলছে ।
আর বানিয়ে বানিয়ে ভুতের গল্প শুনিয়ে, সবাইকে একতাবদ্ধ করে টয়লেটে যেতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে ।
বিভক্ত বাঙ্গালী জাতিকে অন্তত একটা জায়গায় ঐক্যবদ্ধ করতে তো পেরেছে, এটাই বা কম কি!
©somewhere in net ltd.