নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।

কাল্পনিক আমি

আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।

কাল্পনিক আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা আসবে এখুনি...

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০১

বাবা আমাকে এই প্রথম চরের জমি দেখাতে নিয়ে যাচ্ছেন। বাসা থেকে অনেক দূরে আমাদের জমিটা। আজ আমরা বর্গাচাষিদের বাড়িতে থাকবো। সারাদিন ধরে সেখানে শস্য মাপামাপি হবে, কাল ভোরে সেগুলোকে বিক্রি করে তবেই আমরা ফিরব। আমার সে কি কৌতূহল!!!
বাবা আর আমি পাশাপাশি সাইকেল চালিয়ে ছুটে চলেছি। কি মজা লাগছে আমার!! কঠোর শাসনে বেঁধে রাখা বাবা আজ আমার সাথে খুব নরম সূরে কথা বলছেন “ কিরে কষ্ট হচ্ছে সাইকেল চালাতে, একটু জিরিয়ে নিবি?” আমি বলি... না বাবা, পরক্ষনেই বাবার দরদ মাখা প্রশ্ন... খিদে লাগছে?কিছু খাবি... আমি আবারও বলি... না বাবা।
ঘণ্টাকয় পরেই আমরা পৌঁছে যাই বর্গাচাষিদের বাড়িতে।

দুপুরের খাবার সময় হয়। খাবারের মেনু... টাকি মাছের ঝোল, ডিমভুনা, আর ডাল। বাবা জানেন আমি টাকি মাছ খাইনা, তাও আবার ঝোলের ভিতর থেকে চামচ দিয়ে খুজে বের করে নিতে হবে সে মাছ। এমন অদ্ভুত রান্না দেখে আমি কিছুটা ঘাবড়ে গেছি, বাবার সেটা চোখ এড়ায়নি। তাই নিজের প্লেট থেকে ডিমটা আমার পাতে তুলে দিয়ে বললেন “ এটা খা, ইদানিং ডিম খেয়ে মজা পাইনা, আমি টাকি মাছ দিয়েই খেয়ে নেব”। আমার খেতে কষ্ট হচ্ছে দেখে বাবা তখন ডিম খাওয়াতে মজা পাচ্ছেন না, অথচ আমি তখনদেখছি... আঙ্গুলের ডগা দিয়ে নেড়ে নেড়ে কত কষ্ট করেই না বাবা তার প্লেটের খাবারগুলো গিলছেন। আমার নিজেকে খুব অপরাধি মনে হচ্ছিল তখন।

বাইরে কনকনে শীত। ছনের চালার নিচে একটি খাটে আমি আর বাবা পাশাপাশি সুয়ে আছি। বাবার গায়ে সাদা পাঞ্জাবী, আর পাতলা একটা চাদর। আমাদের গায়ের উপর বরগাচাসিদের ব্যাবহারিত মোটা ভারী একটা কাঁথা। মনে হচ্ছিল সেই কাঁথাটি গত দশ বছরেও ধোয়া হয়নি। কাঁথা থেকে বের হওয়া শিশুদের প্রস্রাবের উৎকট গন্ধে নিঃশ্বাস নেয়াটাই দায় হয়ে পড়ছে। বাবা খুক খুক করে কেশে চলেছেন। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল ওই কাঁথা গায়ে রাখতে। একটু পর বাবা আমার খুব কাছে এসে ঘেঁষলেন। নিজের চাদরের একপাশটাকে আমার বুক থেকে মাথা পর্যন্ত টেনে দিয়ে নোংরা কাঁথাটাকে কোমরের কাছে নামিয়ে দিয়ে বললেন “ এবার ঘুমা, আর তো মাত্র কয়েক ঘণ্টা”। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। বাবার আদরে সারা শরীরকেঁপে আমার কান্না আসে। চোখ দিয়ে অনর্গল ঝরে পড়া সে কান্নায় তখন বাবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা, শুধুমাত্র আমাকে তার মত একজন বাবার সন্তান হওয়ার সুযোগটুকু দেয়ার জন্য।

বাবা, প্রায় আঠারো বছর আগে আমার সেদিনের অতটুকু কষ্টে তুমি কেমন অস্থির হয়ে পড়েছিলে না!!! অথচ তুমি ছাড়া আমিতে এখন তারচে শতকোটিগুণ ঢের বেশি কষ্ট। একবার,শুধু একটিবারের জন্য বাবা, তোমার ওই চাদরটি নিয়ে আমার পাশে এসে দাঁড়াবে প্লিজ??? বুকের পাজরবন্দি সে কষ্টগুলোকে তোমার আদরের আলতো ছোঁয়ায় একটিবারের জন্য বের করে দেবে প্লিজ? আমি অনেক রাত ঘুমুতে পারিনা বাবা।

ধবধবে সাদা চাদরে লেগে থাকা তোমার গায়ের মিষ্টি গন্ধটা যে আমি এখনো টের পাই বাবা... ঠিক এখনো...।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৩

তাশমিন নূর বলেছেন: ভালো লিখেছেন। পাঁচ বছর হল বাবাকে হারিয়েছি। লেখাটি পড়ে নিজের বাবার কথা মনে পড়ল। আল্লাহ আমাদের সবার বাবা-মাকে ভালো রাখুন। আমিন।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৩

আমিনুর রহমান বলেছেন:



বিষাদময় লিখায় +

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৫

দীঘল গঁাােয়র েছেল বলেছেন: বাবা মা তো এমনই হয়।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৪৯

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: এক যুগ হল বাবাকে হারিয়েছি। বাবার শুন্যতা প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি।


পোস্টে প্লাস।

৫| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৪

কাল্পনিক আমি বলেছেন: ধন্যবাদ সকলের মতামতের জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.