নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।

কাল্পনিক আমি

আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।

কাল্পনিক আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ কি ধর্ষণ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে?

২৭ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

গত একমাসের সংবাদপত্র খানিকটা বিশ্লেষণ করলে যেকোন মানুষ সন্দেহাতীত ভাবে মেনে নেবে আমাদের বাঙালীদের ধর্ষাণুভূতি/শিশ্নানুভূতি হঠাৎ করে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আসুন একটু নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের চেষ্টা চালাই এই উক্তির সত্যতা যাচাইয়ে।

তিরিশ দিনের সংবাদপত্র টালী করে দেখলাম, গত এক মাসে কমপক্ষে ৫০ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তারমধ্যে বড় একটা অংশের ধর্ষণের শিকার মেয়েরা শিশু এবং শিক্ষার্থী। এছাড়া কমপক্ষে অর্ধেক ধর্ষক সরাসরি তাদের শিক্ষক। বিশেষ করে মাদ্রাসার শিক্ষক। এই মাসেই পরপর পাঁচজন মাদ্রাসার ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে যাদের বয়স যথাক্রমে ৫, ১০, ১২, ১৪ এবং ১৬ যাদের মধ্যে তিনজন ধর্ষিত হয়েছে তাদের সরাসরি শিক্ষকের হাতে। আমি কয়েকটি ঘটনা একেবারেই সংক্ষেপে তুলে ধরতে চাই

১) ঘটনাস্থল কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া মেয়েটার বয়স ছিল ১০ বছর। মেয়েটা প্রতিদিন সকালে মুমুরদিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় কোরআন শরীফ পড়তে যায়। মাদ্রাসা ছুটির পর তার শিক্ষক অন্য শিক্ষার্থীদের বিদায় দিলেও তাকে একটি কক্ষে নিয়ে মুখ রুমাল দিয়ে বেঁধে পাশবিক নির্যাতন করে। মাদ্রাসা থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে শিশুটি তার বাবা-মাকে এসব কথা জানায়। অভিযুক্ত শিক্ষক জয়নাল মিয়া মুমুরদিয়া বাজার জামে মসজিদের ইমাম।

২) ঘটনাস্থল নারায়ণগঞ্জের বন্দর ধর্ষকের নাম শাহ আলম যে কি না আবার কোরআনের হাফেজ, উপজেলার কাইকারটেক খেয়াঘাট সংলগ্ন আদর্শ কিন্ডারগার্টেন মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক। সোমবার সকাল ১০টার দিকে মাদ্রাসার সামনে শিক্ষকের কক্ষে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মেয়েটি একই মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী, সকালে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়।

৩) ঘটনাস্থল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের লাকচতল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, মেয়েটি সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী, বয়স ১২ বছর। অসুস্থ থাকায় মেয়েটির মা-বাবা সম্প্রতি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ছাত্রী ও তার ছয় বছরের ছোট ভাইকে সেনাব এলাকার বাড়িতে রেখে বড় ভাই রিপন বাবা-মাকে হাসপাতালে দেখতে যান। বাবা-মার অসুস্থতা বেড়ে গেলে ভাই ওই দিন আর ফিরতে পারেননি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে ওই ছাত্রী ছোট ভাইকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ১১টার দিকে ঘরের কাঠের দরজার খিল ভেঙ্গে একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান, সেন্দর আলীর ছেলে ভিলেন মিয়া, ইন্তাজ আলীর ছেলে সুমন ও সোহরাব হোসেনের ছেলে বাবু মিয়া। ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে পাশের বনের ভেতরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর নিজ বাড়িতে নিয়ে আবার ধর্ষণ করে ভিলেন মিয়া।

৪) নন্দাইলে চকমতি ঢিএস মাদ্রাসার ফাজিল শ্রেণির এক ছাত্রীকে গত ৪ মে মাদ্রাসা থেকে তুলে নিয়ে যান মাদ্রাসার দপ্তরি ইকবাল হোসেন। ওই ছাত্রী অভিযোগ করে জানান, প্রেমের ফাঁদে ফেলে ইকবাল তাঁকে নেত্রকোনা সদরে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর মামা নজরুল বাসায় রেখে বিয়ের কথা বলে তাকে আটকে রাখেন। এ সময় বেশ কয়েকবার নির্যাতনের শিকার হন তিনি। প্রতিবাদ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন ইকবাল।

৫) সৈয়দপুরে মাদ্রাসার এক শিশু শিক্ষার্থী অজ্ঞাত বখাটের ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ঘটনার পর থেকে শিশুটি অপ্রকৃস্থ আচরণ করছে। তার ভেতরের আতঙ্ক কাটেনি। এ ঘটনায় রিকশাচালক বাবা বাদী হয়ে মামলা করলেও এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

এত গেলো মাদ্রাসা,

আমরা দেখলাম মোহাম্মদপুরের একটি স্কুলে ধর্ষণ চেষ্টার প্রতিবাদে যখন সামাজিক গনমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠলো তখন এক-শ্রেণীর মাতব্বর সাংবাদিকেরা অনলাইন এক্টিভিস্টদের এই বাড়াবাড়ি নিয়ে খুব গোস্বা করলেন। খুবই আশ্চর্যজনক এই শুষিল সমাজ। আমরা দেখলাম চট্রগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ১২ বছরের একটি মেয়ে স্থানীয় শুষিল সমাজের প্রতিনিধি সমাজপতি শাহ আলমের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করত। ওই মেয়ের সঙ্গে শাহ আলম জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এরপর শাহ আলম মেয়েটিকে জোর করে গর্ভপাতে বাধ্য করে।

পরবর্তীতে অভিযোগ করলে পুলিশ মেয়েটির মা এবং ভাইকে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালায়, এমনকি মেয়েটির মা'কে বাধ্য করা হয় আসামির নামের পরিবর্তে মেয়েটির ভাইয়ের নাম নির্যাতনকারীদের তালিকায় যুক্ত করে তারা ধর্ষিতাকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করে!!

সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ!!

এরপর শুরু হয় বাস, ট্রেন, ট্রাকে ধর্ষণের উৎসব।

কিছুদিন আগে সাভারে বাসের ভেতর জোড়া ধর্ষণের ক্ষত না জুড়োতেই আবার ধর্ষণ হয় গাজীপুরের রাজপথে। ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় চিকিৎসক দেখিয়ে শনিবার রাতে স্ত্রী গাজীপুরের বাসায় ফেরার জন্য স্বামীকে নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু বাসে উঠতে না পেরে রাস্তার পাশেই দীর্ঘক্ষণ বসেছিলেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে এক ট্রাকচালক গাড়ি নিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ায় এবং গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।পরে ট্রাকচালক গাড়ি থামিয়ে অস্ত্রের মুখে মারধর করে ও গলায় কাপড় পেঁচিয়ে ধর্ষণ করে ওই নারীকে।

এই সবকিছুর ভেতর রাজধানীর স্বনামধন্য হলিক্রস কলেজে ধর্ম-শিক্ষক ক্লাস টেনের সৃজনশীল প্রশ্ন-পত্রে জুড়ে দেন অনন্য এক প্রশ্ন। সৃজনশীল প্রশ্নের শুরুতে দেয়া ভূমিকাটুকু পাঠকের জন্য তুলে ধরছিঃ

“সানজিদার চালচলন, বেশভূষা ও কথাবার্তায় বেশ মার্জিত সবাই তার সাথে সদাচরণ করে। অপরপক্ষে তার সহপাঠী রুমানা আটসাঁট পোশাক পরে। তাই সে গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট পরে প্রতিবছর বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন মেলায় অংশ গ্রহণ করে। মাঝে মধ্যে সে অনেক সমস্যায় পড়ে, তার কথাবার্তা চালচলন মার্জিত নয়। পাড়ার ছেলেরা অনেক সময় তাকে উত্যক্ত করে। এ বছর বৈশাখী মেলায় ঘটে যাওয়া বিষয় সম্পর্কে রুমানা –সানজিদাকে জানালে সানজিদা তাকে পোশাক পরিচ্ছদে শালীনতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়।"

খুব ভালো ভাবেই বোঝা যাচ্ছে হলিক্রস কলেজে হয়ত কিছুদিনের ভেতরেই একটা 'গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট'- পরিহিতা ছাত্রীকে তার শিক্ষক একান্তে কিছু পরামর্শ দিয়ে দেয়ার ঘটনা আমরা গনমাধ্যমে দেখতে পাবো।

তবে এতক্ষণ এত আলোচনার পরিসমাপ্তি টানবো একজনকে স্যালুট দিয়ে...

হ্যা সেই গারো মেয়েটির কথা বলছি...
মাইক্রবাসে পাঁচ জনের হাতে গণ-ধর্ষণের শিকার মেয়েটার কথাই বলছি...
তিনটা থানা ঘুরে মামলা করা পরিবারটার কথা বলছি...
পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া 'গারো' 'আদিবাসী' মেয়েটার কথাই বলছি...

আমার অনেক বন্ধুরা দেখছি মেয়েটাকে 'গারো' বলতে আপত্তি করছেন।
'ঐ মেয়েটাও তো আমার বোন...'
'আমরা সবাই বাঙালী...'

আরে রাখেন মিয়া...
আগে লেখাটার উপরে যান...
দেখবেন একটা লাইন আছে 'আমাদের বাঙালীর ধর্ষাণুভূতি/শিশ্নানুভূতি হঠাৎ করে অসহনীয় হয়ে উঠেছে'। হ্যা আমরা... এই আমরা বাঙালিরাই এখন ধর্ষক জাতি... তার তুলনায় সেই মেয়ে, তার পরিবার, তার কমিউনিটি তো অনেক ভালো। লক্ষ্য করেছেন এরকম পূর্বনির্ধারিত ভাবে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের শিকার হয়েও মেয়েটা ঠিকই থানায় গিয়েছে, বিচার চেয়েছে। উপরে তো অনেক গুলো ঘটনা দেখলেন, কয়টা ঘটনা থানা পর্যন্ত গিয়ে পৌছেছে বলেন তো? দেখেছেন মেয়েটার পরিবারের সাহস... থানা থেকে ঠিকমত সাহায্য না পেয়ে থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে... দেখেছেন তাদের গারো সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর স্বজাতির প্রতি মমত্ববোধ...?? নিজেরা গ্রুপে ভাগ ভাগ হয়ে নিজেদের মেয়েদের নিরাপত্তা দিচ্ছে... রাতের বেলা অফিস হলে নিজেরাই নিজেদের বোনদের বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে।

এরা গারো...
এরা আদিবাসী...
এরা নারীকে সম্মান দিতে জানে...
এদের মেয়েরা সম্মান নিতেও জানে...
শুধু দেয়ালে মাথা ঠুকে কাঁদে না...
প্রতিবাদ করে...
প্রতিরোধ করে...
শেষটা দেখে নেয়...

সুতরাং আপনি বাঙালী হয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে এমন কোন গুষ্ঠি উদ্ধার করে ফেলেন নাই, আপনার স্বজাতিই সেই মেয়েটাকে ধর্ষণ করেছে। আপনার স্বজাতির পুলিশরাই তাকে হেনস্তা করেছে। আপনার স্বজাতির শিক্ষকরাই বিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করে। দেশের পরিসংখ্যান আমাদের বলে সেইসব ধর্ষণের ৭০ ভাগই কোনদিন আলোর মুখ দেখে না।

তারচেয়ে বরং আসুন আমরা সবাই 'গারো' হয়ে যাই...
নারীদের সম্মান দিতে শিখি...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৪

সুমাইয়া আলো বলেছেন: ভাল বলেছেন ।

২৭ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৩২

কাল্পনিক আমি বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৭ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮

ঢাকাবাসী বলেছেন: অপরাধীর শাস্তি হয়না, শাস্তি দেয়ার আইনটা জটিল, প্রমানের জন্য ধর্ষিতাকে প্রচুর অপমানিতা আর হেনস্হ হতে হয়। সেজন্যই অপরাধীরা আরো অপরাধ করতে সাহস পায়।

৩| ২৭ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৩২

কাল্পনিক আমি বলেছেন: আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের শাসন নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.