নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-"ধুর ! ঘোড়ার ডিম !" "কিরে ভাই এত সকালে ফোন দিসস ক্যান ,কমন সেন্স নাই !"
-"ঐ হইছে থাম । কয়টা বাজে ?"
-"ক্যান কি হইছে ?"
-"আজকে ক্লাসে আবি না ?"
-"নারে দোস ভাল্লাগতেছে না "
-"আবি আবি !একটা কথা কইলেই দৌড়ায়া আয়া পড়বি"
-"কি ?"
-"মামা নুসরাত ক্লাসে আসছে কিন্তু "
-"ও আচ্ছা দেখি আসতে পারি কিনা বাই"
রিশাত আবার ঘুমাতে চেষ্টা করে কিন্তু তার ঘুম আসছে না ।বারবারই তার মনে উকি দিচ্ছে নুসরাতের কথা ।সে উঠে বসল । চুপচাপ কিছুক্ষন বসে থাকে ।তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে মাকে নাস্তা দিতে বলে ।
-"কি ব্যাপার আজকে এত সকাল সকাল ?"
-"আরে মা ক্লাস আছে"
মা রিশাতের চোখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায় । রিশাত রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি নাস্তা সেরে বের হয়ে পড়ে ।একটা সিগারেট ধরিয়ে রিকশায় উঠে পড়ে ।সে যখন ভার্সিটিতে পৌঁছায় ততক্ষনে একটা ক্লাস শেষ ।সে ক্লাসে যায় দেখে যে যার মত গল্প করছে । সে নুসরাতকে খোঁজে । না পেয়ে রায়হানকে একটা চাটি মারে ।
-"শালা মিথ্যুক ! নুসরাত না আসছে ? "
-"হরে ভাই আসছে তো "
-"থাপড়ামু শালা "
পরের ক্লাসটা শুরু হতে দেরি আছে ।সে ভাবে ততক্ষনে একটা চা খেয়ে আসা যাক ।সে রায়হানকে নিয়ে নিচে ফারুক মামার টঙে যায় ।চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কথা বলছে হটাত্ তার চোখ গেল ফটোকপির দোকানের দিকে ।তার মনে হল সূর্যটা বোধহয় আজকে সব আলো শুধু নুসরাতের দিকেই ফেলছে ।সৌন্দর্য যদি কেনাবেচা হত তাহলে মনে হয় বিল গেটসও এই মেয়েটার সৌন্দর্য কিনতে পারত না ।রায়হানের কথায় হঠাত্ তার সম্বিত ফিরে আসে ।
-"কিরে শালা বলছিলাম না নুসরাত আসছে "
ফটোকপিওয়ালাকে টাকা দিয়ে নুসরাত পিছনে ঘুরতেই দেখে রিশাত হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।সে রাগ করবে না হাসবে বুঝতে পারে না ।মনের একটা অংশ বলছে রাগ করতে আর আরেকটা অংশ বলছে হাসতে ।সে দুইটার একটাও করল না ।ক্লাসে চলে গেল ।এই রিশাত ছেলেটা আজকে অনেকদিন যাবত্ তাকে লক্ষ্য করছে ।মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগলেও খুব একটা যে খারাপ লাগে তাও না ।ক্লাস শেষ করে সোজা বাসায় যায় রিশাত ।ল্যাপটপটা বের করে নুসরাতকে খুঁজে বের করে ফেসবুকে ।সে নুসরাতকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় । তারপর কিছুক্ষন নিউজ ফিড ঘেটে সে ঘুমিয়ে পড়ে ।হঠাত্ তার ঘুম ভেঙে যায় ।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে আটটা বাজে ।রাত না সকাল বুঝার জন্য বাইরে তাকায় সে ।দেখে রাত হয়ে গেছে ।ল্যাপটপটার দিকে চোখ যায় তার ।দেখে ল্যাপটপটা এখনো চলছে ।সে ল্যাপটপ বন্ধ করতে যাবে হঠাত্ নটিফিকেশন বারের দিকে খেয়াল করে সে ।অনেকগুলো নটিফিকেশন ।এরমধ্যে "nusrat bristy accepted your friend request" ও ছিল ।আনন্দে লাফ দিয়ে উঠে সে ।বেশ কিছুক্ষন তার প্রোফাইল ঘাটায় সে । ভয়ে ভয়ে নক করে সে নুসরাতকে ।সেদিন অনেকক্ষন কথা হয়েছিল ওদের ।পরদিন ভার্সিটিতে নুসরাতের সাথে দেখা হয় তার ।এই প্রথম সে নুসরাতের সাথে কথা বলে ।বেশ কিছুদিন কেটে যায় ।এরমধ্যে রায়হান ফেসবুকে দেখে
"Rishat ahamed is in a relationship with Nusrat bristy"
আজকে নুসরাতকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে রিশাত ।অনেক ঘুরে সারাদিন ।অনেক জায়গায় যায় তারা ।সন্ধ্যা হয়ে যায় ।রিশাত নুসরাতকে কিছুদূর এগিয়ে দিয়ে আসে । তারপর সে বাসে উঠে ।
নুসরাত রিকশা করে বাসায় যাচ্ছে ।বাসায় পৌছেই সে রিশাতের ফোন পায় ।
-"হ্যা জানু বল ।"
-"হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম ।এই মোবাইলটা যার সে কি আপনার আত্নীয় ? "
-"জ্বী কেন"
-" জ্বী আপনি এখনই বকশীবাজার চলে আসুন "
-"কেন কি হয়েছে ?"
-"আপনি আসুন তারপর সব বলছি"
নুসরাত ভাবে হয়ত মোবাইলটা হারিয়ে গেছে কোন সত্ লোক ফোনটা পেয়েছে ।তারপরও মনে একটা শঙ্কা ঠিকই থাকে তার ।যাই হোক সে বকশীবাজার এসে রিশাতের মোবাইলে ফোন দেয় ।
নুসরাত লোকটিকে দেখতে পায় ।লোকটি তাকে যা বলে তার সারমর্ম এরকম যে রিশাত বাসে করে কিছুদূর যাওয়ার পরই ওদের বাসে পেট্রোল বোমা মারে কেউ একজন ।এতে তার শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যায় ।
নুসরাতের দুনিয়া ঘুরে উঠে ।এবার সে বুঝতে পারে লোকটি কেন তাকে ঢাকা মেডিকেল না বলে বকশীবাজার বলেছে ।সে দৌড়ে লোকটির সাথে বার্ন ইউনিটে যায় ।লোকটি তাকে একটি বেড দেখিয়ে দেয় । নুসরাত দেখে পোড়া শরীরের উপর সাদা ক্রিমের আস্তরন ।সে চেহারাটার দিকে তাকায় ।চেহারা বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই এই পোড়া মানুষটির ।নুসরাত বিশ্বাস করতে পারে না এটা রিশাত ।"ধুর ! এটা রিশাত হয় ক্যামনে ! ধুর !"
"এই রিশাত !
রিশাত!
জান তুমি কই"
"দেখো না ওরা আমাকে বোকা বানাইতেছে"
"বলতেছে এইটা নাকি তুমি! "
"রিশাত এই রিশাত"
©somewhere in net ltd.