নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত \'মানুষ\' হওয়ার প্রচেষ্টা। \'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য\', \'বায়স্কোপ\', \'পুতুলনাচ\' এবং অনুবাদ গল্পের \'নেকলেস\' বইয়ের কারিগর।

কাওসার চৌধুরী

প্রবন্ধ ও ফিচার লেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। পাশাপাশি গল্প, অনুবাদ, কবিতা ও রম্য লেখি। আমি আশাবাদী মানুষ।

কাওসার চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডক্টর ত্রিগুণা সেন - মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক (ব্যক্তিত্ব)

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:৩৬


অধ্যাপক ডক্টর ত্রিগুণা সেন। একটি নাম, একটি ইতিহাস, একজন শিক্ষক, একজন রাজনীতিবিদ ও একটি বিপ্লবী চেতনার নাম। সিলেটের জকিগঞ্জে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠককে আমরা কয়জনই বা চিনি? তিনি ছিলেন বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অগ্রপথিক। অন্যতম সংগঠক।

ড. ত্রিগুণা সেন ১৯০৫ সালে সিলেট জেলার করিমগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জকিগঞ্জ উপজেলা) বিরশ্রী গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর পৈত্রিক নিবাস একই মহকুমার মাইজগ্রামে (ভারতের আসাম প্রদেশের করিমগঞ্জ)। তাঁর বাবা গোলক চন্দ্র সেন এবং মা সুশীলা সুন্দরী দেবী। ড. সেনের নানা ছিলেন তৎকালীন সিলেট জেলার করিমগঞ্জ মহকুমার বাদে-কুশিয়ারাকূল পরগনার বিখ্যাত জমিদার রাজকৃষ্ণ দত্ত চৌধুরী। তাঁর মামা ছিলেন ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা বাবু গুরু সদয় দত্ত।

উল্লেখ্য যে, বাবু গুরু সদয় দত্ত ১০ই মে, ১৮৮২ খৃষ্টাব্দে বীরশ্রীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কখনো ব্রিটিশদের দেওয়া পারিবারিক উপাধি "চৌধুরী" ব্যবহার করতেন না। ১৮৯৯ সালে তিনি এন্ট্রান্স (মাধ্যমিক) পরীক্ষায় আসাম প্রদেশে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ১৯০৪ সালে তিনি আইসিএস (ICS) পরীক্ষায় ভারতবর্ষের মধ্যে সপ্তম স্থান লাভ করেন। তিনি সচিব পদমর্যাদায় উচ্চ পদে চাকরি করলেও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি জাত-পাত ও জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি সাহিত্যপ্রেমী ও গবেষক ছিলেন। তাঁর রচিত অনক বিখ্যাত রচনাবলী আছে। দেশের শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি একাধিক স্কুল প্রতিষ্টা করে গেছেন।

এবার আসি ড. ত্রিগুণা সেনের কথায়, যাকে নিয়ে আমার আজকের লেখা। তাঁর জন্ম ও বেড়ে উঠা বীরশ্রীর নানা বাড়িতে। তাঁর নানার প্রতিষ্ঠিত বীরশ্রী এম. ই. স্কুলে নিম্ম মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করে ১৯২১ সালে শিলচর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন (মাধ্যমিক) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন। অসংখ্য ব্রিটিশ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও নেতৃত্ব দেন তিনি। এজন্য ব্রিটিশদের চক্ষুশুল হয়ে পড়েন ও দুই-দুইবার কারা বরণ করেন।

১৯২৬ সালে তিনি বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিইশন (Bengal Technical Institution) থেকে ডিস্টিংশন সহ ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের শাস্তি স্বরুপ সরকার বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ সম্রাজ্যের সর্বত্র তাঁর সরকারি চাকরি ও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের অধিকার খর্ব করে।


১৯২৯ সালে ড. সেন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট (Indian Institute) থেকে স্কলারশীপ নিয়ে জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৩২ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রকৌশল বিদ্যায় পি.এইচ.ডি. (PhD) ডিগ্রী অর্জন করেন। অনেক ভাল চাকরি ও অর্থের প্রলোভনও তাঁকে জার্মানিতে আটকে রাখতে পারেনি। পড়াশুনা শেষ করেই দেশে ফিরে এসে আবারো ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এবার সরকার তাঁর প্রতি আর কঠোর হয় এবং গ্রেফতার করে। এক বছর কারাবাসের পর ১৯৩৩ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন।

ব্রিটিশ বিরোধী ভূমিকার জন্য তাকে বাংলা থেকে বহিষ্কার করা হয়। বাঙলা থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি আসামে টিউবওয়েলের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি। ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিষিদ্ধ ছিলেন বলে বিভিন্ন বেসরকরি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সাচল্লিশে দেশভাগের সময় পরিবার পরিজন নিয়ে কলকাতায় স্থানান্তরি হন। যা মেনে নেওয়া তাঁর মত দেশপ্রেমিকের জন্য অনেক কষ্টের ছিল। নিয়তির করুণ পরিহাসে ব্রিটিশদের তাড়াতে গিয়ে নিজেই বিতাড়িত হলেন স্বদেশ থেকে।

এই পরিণতি কখনো মেনে নিতে পারেননি ড. সেন। প্রিয় মাতৃভূমি থেকে ব্রিটিশরা চলে গেল ঠিকই, শুধু ধর্মের নামে পাকিস্তানীরা নতুন করে পূর্ববঙ্গের দখল নিল। যা ছিল তাঁর মত স্বদেশী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতার জন্য বিষাদের, পাশাপাশি চরম অপমানের। এজন্য সব সময় স্বপ্ন দেখতেন বাঙ্গালীদের স্বাধীন সত্তার, স্বাধীন দেশের। সারা জীবন তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেছেন। জাত-পাত ও জমিদারি প্রথার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি।

দেশভাগের পর তিনি কলকাতার বিখ্যাত রিপন কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজে দীর্ঘ দিন শিক্ষকতা করেন। এছাড়া তাঁর হাত ধরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তী সময়ে ড. সেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন । ১৯৬৭ সালে ভারতের বিখ্যাত বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন ও বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়লে সরকার তাকে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ দিলে দক্ষতার সাথে তিনি পরিস্থিতি সামাল দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পরিবেশ ফিরিয়ে আনেন।

২০০৬ সালে আসাম ইউনিভার্সিটিতে ত্রিগুণা সেন স্কুল অফ টেকনোলজি (Triguna Sen School of Technology) নামে একটি ডিপার্টমেন্ট খোলা হয়। উল্লেখ্য যে, ত্রিগুণা সেন প্রকৌশল বিদ্যার (Engineering) উপর ডক্টরেট ছিলেন। এছাড়া কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে "ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়াম" নামে একটি মিলনায়তন আছে।


কর্মজীবনে উল্লেখযোগ্য সময় তিনি শিক্ষকতা করলেও রাজনীতি ছিল তার অস্থি-মজ্জায়। একটা সময় তিনি কলকাতা পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। এটি ছিল সিলেট তথা পূর্ব বাংলায় জন্ম নেওয়া কোন বাঙালির কলকাতার মত বিখ্যাত শহরের পৌরসভার চেয়ারম্যান হওয়ার প্রথম কৃতিত্ব। ইন্দিরা গান্ধির প্রথম মন্ত্রীসভায় তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৬৮ সালে ইন্দিরা গান্ধী ড. সেনকে দ্বিতীয় বারের মত কেন্দ্রীর শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর সাথে মতবিরোধের জেরে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেন। তারপর তাকে আর সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে দেখা যায়নি।

২০১০ সালে ভারতের ডাক বিভাগ ডক্টর সেনের সম্মানে স্বারক ডাক টিকেট ছাপায়।


বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের কথা ভাবছিলেন তখন ড. ত্রিগুণা সেন ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর। ১৯৬১ সালে যখন আসামের কাছাড়ে ভাষা আন্দোলন হয় তখন তিনি আসামের শিলচরে ছিলেন। এসময় পূর্ব বাংলার নেতাদের সাথে তাঁর পরিচয় হয়। এসব নেতাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুও ছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধুর সাথে বেশ ঘনিষ্ঠতা হয় ড. সেনের। বাঙালিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বঙ্গবন্ধুকে তিনি পরামর্শ দেন এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতার ব্যাপারে ভূমিকা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তিনি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য তৎকালীন নেহরু সরকারকে প্রভাবিত করার দায়িত্ব নেন। সে অনুযায়ী ১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধু আগরতলায় যান। এ সময় ড. সেন ত্রিপুরার রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। আগরতলায় বঙ্গবন্ধুর সাথে মিটিংয়ে তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন।

ড. ত্রিগুণা সেন আজাদ বাংলা ও আজাদ পূর্ব পাকিস্তান বেতার কেন্দ্রের অভিজ্ঞতা নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত করতে শক্তিশালী ট্রান্সমিশন বসাতে ইন্দিরা গান্ধীকে পরামর্শ দেন। ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকায় পূর্ববঙ্গ ও ইন্দির গান্ধীর সাথে সেতুবন্ধক হিসাবে কাজ করেন।


১৯৭১ সালের মে মাসে তিনি ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ দূত হিসাবে আগরতলায় শরণার্থী শিবির ও মুক্তিবাহিনীর ক্যম্প পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি শরণার্থীদের সান্তনা দেন এবং তাদের সমস্যার কথা শুনেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং তাদের অনুপ্রাণিত করেন।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর বিশেষ আমন্ত্রণে ড. ত্রিগুণা সেন ঢাকায় আসেন। আবেগ আপ্লুত হয়ে বঙ্গবন্ধু তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু ড. সেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। পরে দুই নেতা দীর্ঘ সময় দেশ গঠনের ব্যাপারে মতবিনিময় করেন ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত ঢাকা শহরের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যারা বিভিন্নভাবে দেশকে সহযোগিতা করেছিলেন তাদের সবাইকে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সম্মাননা দিয়েছেন। এসব সম্মাননা প্রাপ্তদের অন্যতম হলেন আমাদের জকিগঞ্জের গর্ব ড. ত্রিগুণা সেন।

আমরা প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি। চেতনার ধারক, বাহক ও প্রচারক হিসাবে নিজেদের জাহির করতে ব্যস্ত থাকি। চেতনার নামে সমাজে ঘৃণা ছড়াই এবং সমাজকে বিভক্ত করি। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেতনার উদ্ভোধ্যকারী মানুষদের অবদান ও ইতিহাস জানতে বড়ই অনীহা আমাদের। যে প্রচারবিমুখ শুভাকাঙ্খী মানুষদের জন্য দেশ স্বাধীন হলো তাদেরকে প্রচারের আলোয় আনি না। কৃতিত্ব দেই না। নিজেদের প্রচারে সর্বদা ব্যস্ত থাকলেও যাদের প্রচার হওয়ার কথা তাদের অবদান স্বীকার করতে, জানতে এবং অন্যদের জানাতে তেমন আগ্রহ নেই আমাদের। সুক্ষ কৃপণতা!

প্রকৃত দেশপ্রেমিকরা কখনো নিজের ঢোল নিজে পেটায় না। এরা দেশ মাতৃকার সেবা করেন নীরবে, নিভৃতে। এরা সত্যিকারের হিরো। আমাদের সবার দায়িত্ব এ স্বর্ণ সন্তানদের খুঁজে বের করে দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা। এতে নতুন প্রজন্ম প্রকৃত হিরোদের চিনতে পারবে, জানবে। এসব গুণী মানুষদের দেখে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।

সত্যি সত্যি দেশপ্রেমিক হওয়াটাই চেতনা; সত্যিকারের চেতনাবাজদের খুঁজে বের করাই চেতনা; সবাইকে একসাথে নিয়ে চলতে পারাই চেতনা; মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ বুকে ধারণ করাই চেতনা; সংখ্যালঘু শব্দটি মাটি চাপা দিয়ে পারস্পপরিক অধিকার ও মর্যদা নিয়ে একসাথে বসবাস করাই চেতনা; অন্যায়-অবিচার, ঘুষ-দুর্ণীতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখাই চেতনা। বাকী সব ভন্ডামি।




তথ্যসূত্র-
The Royal Asiatic Society(Journal),
part 1, January (Yuan Chwang).
Ramesh Chandra Majumdar (8 edi)
Delhi, 1977.
daakticketindia.com
jaduniv.edu.in
aus.ac.in
mhrd.gov.in
etceju.org
ঢাকা টাইমস (জুন ১, ২০১৬).
যায়যায় দিন (মার্চ ১১, ২০১৫).


ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

মন্তব্য ৩৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৩৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:৩৯

কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: একটি দীর্ঘশ্বাস
হাফেজ আহমেদ

স্বাধীনতা চাই বলে করেছি হুঙ্কার,
করেছি সভা মিছিল কতকাল ধরে,
ছেড়েছি আপন ভিটা ছেড়েছি আহার,
দাবি আদায়ের হাল ধরেছি অঝোরে।
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বহে মহাচরাচরে,
আপন স্বজন সাথী ফিরে না যে আর,
লাশের মিছিল রন্ধ্রে রন্ধ্রে মৃত্তিকার,
হায়েনারা হলি খেলে রক্তের সাগরে।

দেশ পেয়েছে রক্তিম এক লাল সূর্য,
দাবিগুলোর মিলেছে পূর্ণ স্বাধীনতা,
বেনামীরা অধিকার করে নিল ধার্য,
পর গোলামী আজও মোর জান পন্থা।
এ কি ছিল তবে মোর স্বপ্নের লালনে?
প্রশ্নটির স্বাধীনতা বিলুপ্ত হরনে।

আমার এ লিখাটি এতদিন এমন একটি পোষ্টের অপেক্ষায় ছিলো। আশাকরি এভাবেই সত্য তুলে ধরবেন। না হয় মানুষ জানবে কি করে? আমিও আজ জানলাম। পোষ্টটির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:৪৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, হাফেজ ভাই। কবিতাটি দারুণ হয়েছে। আমার লেখার সাথে কবিতাটির মিল খুঁজে পেয়েছেন জেনে ভাল লাগল। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা প্রকৃত চেতনাবাজদের আড়াল করে নিজেদের মিথ্যা চেতনার বড়াই করি। প্রকৃত দেশপ্রেমিকরা কখনো নিজের ঢোল পিটান না। দেশ মাতৃকার সেবা করেন নীরবে, নিভৃতে। এরাই সত্যিকারের হিরো। আমাদের সবার দায়িত্ব এ স্বর্ণ সন্তানদের খুঁজে বের করে দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা। এতে নতুন প্রজন্ম সত্যিকারের হিরোদের চিনতে পারবে, জানবে। এসব গুণী মানুষদের দেখে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।

২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:৪২

রাফা বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট,মুক্তিযুদ্ধ এত বিশাল ছিলো যে যা এখণও পুরোপুরি আবিস্কারই হয়নি।৩০%এর যন্ত্রনায় এটা হারিয়ে যাচ্ছিল।এগুলো নাকি চেতনার ব্যবসা।তাই এখনও অনেকেই লিখতে কুন্ঠা বোধ করে।কিন্তু সত্য উদ্ভাসিত হয় আপন মহিমায়।

ধন্যবাদ,কা.চৌধুরি।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:৫৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। লেখকদের দায়িত্ব সত্যকে তুলে ধরা, কারো তাবেদারী করা নয়। সস্তা কেনা বুদ্ধিজজীবী আর চাটুকার লেখকরা একই মানের। এরা উভয়ই ইতিহাস বিকৃত করেন। এজন্য এরা সর্বদা বর্জনীয়। আমার ডর ভয় নেই। যা সঠিক মনে হয় তাই লেখি। বিবেককে কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেই না।

আপনার সাথে পরিচিত হলাম। শুভেচ্ছা রইলো।

৩| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:৫৪

কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: হুম। এ বিষয়ে আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করছি। আমাদের উচিত সঠিক ইতিহাস জানা এবং তা নতুন প্রজন্মের দ্বারে দ্বারে পৌছে দেওয়া। প্রতিউত্তরের জন্য শুভেচ্ছাসহ ভালোবাসা জানবেন।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:০৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: হ্যা, এটাই করতে হবে। আমার কলম যতদিন চলবে ততোদিন সত্যের জয়গান গাইবে। আমি কারো তাবেদারী করি না, ভবিষ্যতে সে সম্ভাবনাও নেই। চেতনা কারো জমিদারী না, সত্যিকারের দেশপ্রমই হলো চেতনা। বাকি সব ভন্ডামি।

৪| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:৩২

কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: হুম। সহমত।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:৩৬

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ। সময় সুযোগে আপনার কবিতা পড়বো।

৫| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:৩৯

রিফাত হোসেন বলেছেন: +

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৪:০০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: রিফাত ভাই, ধন্যবাদ।

৬| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:৪৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


মনে হচ্ছে, ড: সেন আগরতলা এসেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর দুত হিসেবে, উনি ভারতীয় অফিসারদের সাথে হয়তো কোনভাবে কাজ করেছেন; আগরতলায় মুলত: শরণার্থীরা ছিলো, ও ন্যাফ'এর লোকজন ছিলেন; বাহিরের কেহ তো উনাকে জানার কথা নয়।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:৫৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: হ্যা। ঠিক তাই। মূলত একাত্তরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে প্রধান দূত ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী উনাকে খুব পছন্দ করতেন। এছাড়া তখন তিনি ভারতের শিক্ষামন্ত্রী থাকায় বিষয়টি আরো সহজ হয়। তিনি সব সময় মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে ইন্দিরা গান্ধীকে পরামর্শ দিতেন। আসলে লেখে উনার অবদান বলে সম্ভব নয়।

৭| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:৫০

অর্ধ চন্দ্র বলেছেন: জানলাম তৃপ্ততা নিয়ে, ধন্যবাদ

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৫৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৮| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:২১

রাজীব নুর বলেছেন: সকলের চাওয়া ভিন্ন ভিন্ন,
একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

পাকি বাহিনী রাজবাড়ী জেলায় হাযার হাযার লোককে হত্যা ও নির্যাতন করে । ধর্ষণ করে শত শত মা বোনকে । রাজবাড়ীর রেল গেটে পাকি বাহিনীর সামনে একজন পাগল 'জয় বাংলা' বলে চিৎকার করে উঠলে সাথে সাথেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয় ।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:০২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: এমন অসংখ্য গঠনা মুক্তিযুদ্ধে ঘটেছল। সব ইতিহাস জানা হয়তো সম্ভব নয়। তবে আমাদের জানার চেষ্টা করা প্রয়োজন। ধন্যবাদ, রাজীব ভাই।

৯| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৪১

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: চৌধুরী ভাই, গ্যাপ দিয়ে লেখায়, পড়তে সুবিধা হল। :)লেখা বরাবরের মতই। ইউনিক।

আচ্ছা! আপনি সব লেখা কি নিজে টাইপ করেন? নাকি আগে লেখা ছিল???

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:০৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: মন্ডল ভাই, ধন্যবাদ। আমি কোন লেখাই সরাসরি টাইপ করি না। আগে ট্যাবে লিখে, এডিট করে পরে ব্লগে কপি করি। এতে ভুল কম হয়। লেখার মানও ভাল হয়।

১০| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:১৭

মাআইপা বলেছেন: ভাল কিছু জানলাম।
লেখা চমৎকার হয়েছে।
শুভ কামনা রইল।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:০৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি আমার প্রতিটি লেখা পড়ে কমেন্ট করেন। এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনার প্রতি অনেক শুভ কামনস রইল।

১১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:১২

সনেট কবি বলেছেন: অজানা বিষয় জানতে পারায় ধন্যবাদ।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: সনেট কবিকে ধন্যবাদ।

১২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:২৭

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: অনেক সুন্দর লেখা, পড়লাম!

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: মন্তব্যে প্রীত হলাম।

১৩| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: বড় মাপের মানুষদেরকে নিয়ে বেশী বেশী আলোচনা হওয়া দরকার।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: ডক্টর ত্রিগুণা সেনকে দেশের মানুষ চেনে না। কারণ উনার পরিবার এখন কলকাতা ও দিল্লীতে সেটেলড। আমরা যারা লেখালেখি করি তাদের দায়িত্ব হলো এসব বিরল ব্যক্তিত্বদের খুঁজে বের করে জাতির সামনে তুলে ধরা। এটা আমাদের দায়িত্ব।

কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ।

১৪| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৮

আখেনাটেন বলেছেন: একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষের কথা জেনে বেশ ভালো লাগল। আমরা অনেকেই অনেক কৃতি মানুষকে জানি না।

এই অসাম্প্রদায়ীক মানুষটির জন্য রইল অসীম শ্রদ্ধা।

চমৎকার লিখেছেন।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৩

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, ভাই। আমার পরিচয় আমি একজন মানুষ। তাই সত্যিকারের মানুষদের কথা সব সময় বলবো, নির্দিধায়।

১৫| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:২৩

আল আমিন সেতু বলেছেন: এত বড় নিবন্ধ লিখার জন্য স্যালুট। আপনার ধৈর্যের প্রশংসা করতে হবে। ধন্যবাদ।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:২৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: কি যে বলেন? এটা তো তুলনায় ছোট। আমার লেখাগুলো আরো বড় হয়।

১৬| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৩৬

আল আমিন সেতু বলেছেন: আমি তো পড়তে পড়তে হয়রান। ব্লগে ঢুকলেই আপনার ইয়া বড় বড় দফতর চলে আসে সামনে। যা না পড়েও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আবার স্বভাবদোষ হেতু কষ্ট ও লাগে। তাই ব্লগে ঢুকতেই ভয় করে । :(

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:২২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: সরি। কষ্ট দেওয়ার জন্য। আমি আসলে ফ্যাক্ট নির্ভর ফিচার লেখি। আর কিছু লেখা রিসার্চ বেইস। এজন্য একটু বড় হয়। পাঠক পড়ে যাতে পুরোটা বুজতে পারেন, উত্তরগুলো খুঁজে পান সে চেষ্টা থাকে। চাইলে আমার গল্পগুলো পড়তে পারেন। খুব বড় নয়। আশা করি ভাল লাগবে।

ধন্যবাদ, সেতু ভাই।

১৭| ১১ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:২৯

পদ্মপুকুর বলেছেন: আপনার এই লেখা প্রকাশের সময়ে বোধহয় ব্লগে ঢোকা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। আপনার দেয়া লিংক ধরে আসলাম।
গুণীজনদেরকে সম্মান জানাতে আমাদের কৃপণতা অপরিসীম। সে সাথে শেষের দিকে এসে যে বিষয়ে বলেছেন সেটা আমারও উপলব্ধি।

এই গুণী মানুষগুলো চলে যাওয়ার পেছনে সাম্প্রদায়িকতার চেয়ে রাজনীতিই বড় হয়েছে সবসময় বলেই আমার মনে হয়।

১২ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:১৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ।
আপনি লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য কৃতজ্ঞতা রইলো। ডক্টর ত্রিগুণা সেন বাংলাদেশের গর্ব। উনাকে নিয়ে খুব একটা সাড়াশব্দ নেই। এদেশে নিজের ঢোল নিজে না পেটালে কিংবা দলবাজি, সিন্ডিকেটবাজি না করলে আলোচনায় আসা কঠিন। আমি চেষ্টা করেছি তাঁর মুক্তিযুদ্ধকালীন অবদান এবং অসহযোগ আন্দোলন সহ শিক্ষা ও রাজনৈতিক অঙ্গনে অবদানকে সামনে নিয়ে আসতে। যে মানুষটি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করে নিজের জন্য স্বাধীন দেশ চেয়েছিলেন সেই তিনি সাতচল্লিশে দেশভাগের নামে ধর্মভাগের নির্মম শিকার হয়ে স্বদেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন।

ভালো থাকুন।

১৮| ১২ ই জুন, ২০২০ রাত ১:১৬

মা.হাসান বলেছেন: বড় আফসোস সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যিনি আজীবন লড়াই করে গেলেন তাকেই সাপ্রদায়িকতার শিকার হয়ে নিজ ভূমে পরবাসী হতে হলো।
বাংলাদেশের বন্ধু এই মনীষীকে নিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

১২ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৪৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ, মা.হাসান ভাই। উনাদের পরিবার বাদে-কুশিয়ারা অঞ্চলের প্রভাবশালী জমিদার হলেও খুব উদারমনা ছিলেন। পরিবারে উচ্চশিক্ষিত লোকজন বেশি ছিলেন। ইংরেজদের দেওয়া পদবী, জাত-পাত নিয়েও তাদের কোন আগ্রহ ছিলো না। ডক্টর সেনের পরিবারের একটি অংশ মুসলিম ছিল। হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হলেও তারা একসাথে বসবাস করতেন। বাড়ির দরজা সব ধর্মের মানুষের জন্য খোলা থাকতো। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন ডক্টর সেন। সাতচল্লিশে ধর্মের নামে দেশভাগ তাকে খুবই হতাশ করেছে। দুঃখজনক।

আশা করি, ভালো আছেন। ভালো থাকুন। সাবধানের থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.