নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
।
নামাজ না পড়ার শাস্তি
মুসলমানদের জন্য সালাত বা নামাজ সুনির্দিষ্ট ফরজ ইবাদত ও ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। ঈমান আনার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো নামাজ। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, ইশারায়—যে অবস্থায় সম্ভব নামাজ ছাড়া যাবে না। একজন মুমিন ঘরে-বাইরে, পথে-ঘাটে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানেই অবস্থান করে, তাকে নামাজ পড়তেই হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘...নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)
নামাজ দীনের গুরুত্বপূর্ণ বিধান
যে নামাজ পড়ে না তার ঈমান খুবই দুর্বল। ইসলামে তার হিস্যা খুব সামান্যই। নামাজ না পড়াকে মহানবী (স.) কুফরি কাজ ও অবিশ্বাসীদের স্বভাব বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এক হাদিসে এসেছে, যার ভেতর নামাজ নেই, তার ভেতর দীনের কোনো হিস্যা নেই। (মুসনাদে বাজ্জার: ৮৫৩৯)
আরও পড়ুন: মসজিদে শুধু বসে থাকলে যে সওয়াব
নামাজ মুমিন ও কাফেরের পার্থক্যকারী
নামাজের মাধ্যমে ঈমান ও কুফরের পার্থক্য হয়। জাবির (রা.) বলেন, আমি নবী (স.)-কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ছেড়ে দেওয়া। (মুসলিম: ১৪৮)
নামাজ না পড়ার পরকালীন শাস্তি
নামাজ না পড়া পরকালে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘(জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে) তোমাদের কোন জিনিস সাকারে (জাহান্নাম) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ৪২-৪৩)
পবিত্র কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী, কেয়ামতের দিন বেনামাজিকে জাহান্নামের গভীর গর্তে নিক্ষেপ করা হবে। নূহ, ইবরাহিম ও ইসরাঈল (আ.)-এর ব্যাপারে বর্ণনার পর মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা সালাত নষ্ট করল ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই ‘গাইয়া’ প্রত্যক্ষ করবে।’ (সুরা মরিয়ম: ৫৯)
‘গাইয়া’ হলো, জাহান্নামের একটি নদীর তলদেশ, যার গভীরতা অনেক, যেখানে আছে রক্ত ও পুঁজের নিকৃষ্টতম আস্বাদ। (তাফসিরে ইবনে কাসির) ‘গাইয়া’ জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম। (তাফসিরে কাশশাফ ও নাসাফি)
আরও পড়ুন: জাহান্নামের খাবার
কেয়ামতের দিন বেনামাজি সর্বপ্রথম যে অপদস্থতা ও লাঞ্ছনার শিকার হবে, কোরআনের একটি আয়াতে তার বিবরণ এসেছে— ‘স্মরণ করো সেদিনের কথা, যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচন করা হবে। সেদিন তাদের আহ্বান করা হবে সেজদা করার জন্য, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদের আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল, তখন তো তাদের আহ্বান করা হয়েছিল সেজদা করতে।’ (সুরা কালাম: ৪২-৪৩)
নামাজ না পড়লে কেমন শাস্তি হবে তার কিছুটা অনুমান করা যায় আরেকটি হাদিসে। ‘..এক দিন সকালে রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘আজ রাতে আমার কাছে দুজন আগন্তুক এসেছিল। তারা আমাকে বলল, আমাদের সঙ্গে চলুন। আমি তাদের সঙ্গে গেলাম। আমরা এমন এক লোকের কাছে পৌঁছলাম, যে চিত হয়ে শুয়েছিল। অন্য এক ব্যক্তি পাথর নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে পাথর দিয়ে শুয়ে থাকা ব্যক্তির মাথায় আঘাত করছে এবং থেঁতলে দিচ্ছে। যখন সে পাথর নিক্ষেপ করছে তা গড়িয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। লোকটি গিয়ে পাথরটি পুনরায় তুলে নিচ্ছে এবং তা নিয়ে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই লোকটির মাথা পুনরায় পূর্বের মতো ভালো হয়ে যাচ্ছে। সে আবার লোকটির কাছে ফিরে আসছে এবং তাকে পূর্বের মতো শাস্তি দিচ্ছে। আমি আমার সঙ্গী দুজনকে জিজ্ঞাস করলাম- সুবহানাল্লাহ! এরা কারা? তারা জবাবে বলেন, এ ব্যক্তি ফরজ নামাজ না পড়েই ঘুমিয়ে যেত।’ (রিয়াদুস সালেহিন: ১৫৪৬)
আরও পড়ুন: যে দুই রাকাত নামাজ দুনিয়ার চেয়ে দামি
নামাজ না পড়ার ইহকালীন শাস্তি
শুধু পরকালীন শাস্তি নয়, নামাজ না পড়লে ইহকালীন জীবনও বরকতশূন্য হয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তির আসরের সালাত কাজা হয় তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল। (মুসলিম: ১৩০৪)
আরেক বর্ণনায় নামাজ না পড়ার ৬টি দুনিয়াবি শাস্তির উল্লেখ রয়েছে। ১. জীবনের বরকত উঠিয়ে নেওয়া হবে। ২. চেহারা থেকে নূর ও জ্যোতি উঠিয়ে নেওয়া হবে। ৩. ভালো কাজ করলে তার সুফল ভোগ করতে পারবে না। ৪. দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন না। ৫. আল্লাহ ও ফেরেশতা অসন্তুষ্ট থাকবেন, ফলে মানসিক অস্থিরতা বিরাজ করবে। ৬. ইসলামের শান্তি ও প্রতিশ্রুতি থেকে বঞ্চিত হবে। (শারহুল আকিদাতুত তাহাবি: ২৬৮)।
নামাজ পরকালে মুক্তির উপায়
বুরাইদা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মধ্যে (মুক্তির) যে প্রতিশ্রুতি আছে তা হলো নামাজ। সুতরাং যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দেয়, সে কুফরি কাজ করে। (তিরমিজি: ২৬২১)
আরও পড়ুন: নামাজ না পড়া শিরক, না কুফরি?
এই হাদিসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। একটি ব্যাখ্যা হলো- যখন কেউ নামাজ ছেড়ে দেয়, তখন সে যেন কুফরের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হয়। তার নামাজ না পড়াটা কুফরি কাজের সমতুল্য। নামাজ না পড়া কুফুরিসদৃশ কাজ। তবে ওই ব্যক্তিকে সরাসরি কাফির বলা যাবে কি না, বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
নামাজ পড়া সৌভাগ্যের বিষয়! আর নামাজ না পড়া বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়! হাদিসে এসেছে— যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যত্নের সঙ্গে আদায় করবে, কেয়ামতের দিন এ নামাজ তার জন্য আলো হবে। তার ঈমান ও ইসলামের দলিল হবে এবং তার নাজাতের ওসিলা হবে। আর যে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে না, কেয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে নামাজ তার জন্য আলো হবে না। দলিলও হবে না এবং সে আজাব থেকে রেহাইও পাবে না। (মুসনাদে আহমদ: ৬৫৭৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাসময়ে গুরুত্বসহকারে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন
©somewhere in net ltd.