![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একিদন- একরাত করেছি প্রেমের সাথে খেলা একরাত-একিদন করেছি মৃত্যুরে অবহেলা একিদন- একরাত;তারপর প্রেম গেছে চলে সবাই চলে যায়-সকলের যেতে হয় বলে
কী কারণে জানি না , ছোট্টবেলায় স্কুলে যেতে খুব ভয় পেতাম। স্কুলটা বেশ দূরে ছিল এটাও একটা কারণ।তাছাড়া স্যারেরা ভাঙ্গা জানালায় শিকের ফুটোয় বেত গুঁজে রাখতেন-খুব মনে আছে !একদিন আমি জিদ ধরলাম- স্কুলে যাব না ! তো কেউ আর আমাকে স্কুলে পাঠাতে পারল না। যে বাবাকে যমের মত ভয় পেতাম , তিনি বললেন, তোকে আজ আট আনা দিবানি-যা স্কুলে যা ! ১৯৮৮ সালের আট আনা - তখন আমার কাছে স্বপ্নের মত।আট আনায় অনেক কিছু পাওয়া যেত- মালাই,চালতার আচার, লজেন্স, বাদাম, বেলুন আরও কত্তকিছু !
যাহোক, স্কুলে আমাকে কেউ পাঠাতে পারল না।একবার টানা তিন মাস স্কুলে গেলাম না ! স্কুল থেকে লাল কাগজে নোটিশ পাঠিয়ে দেয়া হল।খুব লজ্জা পেলাম,খুব ভয় পেলাম।ভয়ে মৃতপ্রায় এই আমি আবার স্কুলমুখী হলাম।
তো আবার স্কুলে যাওয়া-আসা,কামাই দেওয়া।তখন উদয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হেডমাস্টার সুবল স্যার(বড় ভাইয়ের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়েছি স্যারের পুরো নাম সুবল চন্দ্র শর্মা )। পানখাওয়া লাল টকটকে দাঁত,ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত হেডস্যারের স্কুলে আগমন-আমাদের পিচ্চিদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত কে কার আগে স্যারকে আদাব কিংবা নমস্কার দেবে ! স্যারকে দূর থেকে আসতে দেখলেই আমরা দৌড়ে কাছে যেতাম,আদাব দিতাম,কেউ না কেউ স্যারের ছাতা ধরে এগিয়ে নিয়ে আসতাম।স্যারকে খুব ভাল মানুষ মনে হোত,এ কারণেই হয়তো খুব ভালবাসতাম স্যারকে।শিশুরা কখনও মানুষ চিনতে ভুল করে না।
স্যার আজ কেমন আছেন,বেঁচে আছেন কিনা-কিচ্ছু জানি না । সেই সুবল স্যার-ই হয়তো আমার ভেতরে স্বপ্ন বুনেছিলেন- আমি হেডমাস্টার হব !
তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেল- চার চারটা ফার্স্ট ক্লাশ নিয়ে ভার্সিটি পেরিয়ে গেলাম। চাকরি আর হয় না ! এটায় ভাইভা দেই,ওটায় অ্যাপ্লাই করি-অপো করি; পরীর স্বন্ন দেখি-পরীকে স্বপ্ন দেখাই-দেখিস একদিন আমরাও .....!
বহুদিন পর, জীবনের প্রথম দরখাস্ত করা খাদ্য অধিদপ্তরের অধীন ফুড ইন্সপেক্টর পদে দুই দুইবার ভাইভা দিয়ে চাকরিটা হয়ে গেল ! চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি পরী সত্যি !
২০১০ সালের জুনে চাকরি শুরু করলাম। সারাদিন অফিসে শুধু শুধু বসে থাকা।কোনও কাজ নাই! স্টাফরা দেখি কে কীভাবে পারবে টাকা মারার ধান্ধা ! আজব ফাপড়ে পড়লাম তো ! সারাদিন ঝিম মেরে থাকি-আমার কিচ্ছু ভাল্লাগেনা ।
এরই মধ্যে দু-তিন মাস কেটে গেল।প্রাইমারির প্রধান শিক্ষক পদে অনেকদিন আগে ভাইভা দিয়েছিলাম।আমি খোঁজ খবরও নিইনি কোনদিন। কবে রেজাল্ট বের হল কে জানে ! একেবারে জয়েন্ট করার শেষ দিনে আমার কাছে জয়েনিং লেটার এল ! কে জানে কী-আমি এলোমেলো হলাম। ভাববার সময় ছিল না-সবার সব কথা উপো করে আমি হেডমাস্টার হয়ে গেলাম !
সোনার হরিণ কে ছাড়ে ? আমি ছেড়েছি।আজ আমার হাতে ভুঁড়িভুঁড়ি সোনা। দূর থেকে স্কুলের পথে এলেই কচিকচি ছেলে-মেয়েরা ছুটে আসে-সালাম দেয়। আমি বিরক্ত হই না-প্রত্যেকের সালামের আলাদা আলাদা উত্তর দিই। সোনামুখ ছেলে-মেয়েরা ছুটে মোটর সাইকেলের সামনে এসে সালাম দেয় বলে আমি দূর থেকেই মোটর সাইকেল বন্ধ করে ঠেলে নিয়ে যাই ! ওরা আমাকে মোটর সাইকেল ঠেলতে সাহায্য করে।
সুবল স্যারকে বড্ড বেশি মনে পড়ে। নিজেকে মাঝে মাঝে সুবল স্যার মনে হয়।পার্থক্য এটুকুই- তিনি ছিলেন প্রায় বৃদ্ধ আর আমি ত্রিশের তাগড়া যোয়ান ! আমাকে দেখে কেউ বিশ্বাস-ই করে না আমি হেডমাস্টার!
কোথায় আজ আপনি সুবল স্যার ? গোয়ালন্দের অজোপাড়াগাঁর জেলে-কৃষক- দিনমজুরের প্রিয়মুখ ছেলে-মেয়েরা আপনার এই অধম ছাত্রকে খুব বেশি ভালবাসে,যেমন ভালবাসতাম আমরা আপনাকে। স্যার,আপনারা আমাদের মারতেন,খুব মারতেন-ভয়ে আমরা প্রায় মুতে দিতাম ! কিন্তু আমি বাচ্চাদের মারি না, সহকর্মিদের মারতে দিই না।কচিকচি ধুলোবালিমাখা মুখগুলোকে বড় ভালবাসি ! শুধু দিনশেষে আমার ঘরে নিকষকালো অন্ধকার ! আর আমি সেই অন্ধকারেই জোছনা খুঁজি ! নিজের সাথে, সবার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি স্যার। চার চারটা ফার্স্ট ক্লাশ,দু-দুইবার বিসিএস ভাইভা,আরও কত্ত কী ভাইভা-সব কাঁটা গলায় বিঁধে আছে স্যার ! গাঢ় অন্ধকারে আপনার মুখ দেখি স্যার; সেই মুখ -সেই আলোয় বন্ধুর পথ চলি। সবাই দূরে চলে যায়- তবে আপনি কেন স্যার আজও আমাকে ছেড়ে যান নি ! আপনার প্রতি এই অভিমান নিয়ে কতদিন বেঁচে থাকব স্যার ! যেখানে যেভাবেই থাকুন না কেন সুবল স্যার , আমার চুরি হয়ে যাওয়া শৈশব নিয়ে আপনি ভাল থাকবেন,খুব ভাল থাকবেন ।
বাজিতপুর,রাজবাড়ি
০৭/১২/২০১২
২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৮
কীর্ত্তিনাশা বলেছেন: আলো আলো!
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৬
কীর্ত্তিনাশা বলেছেন: আলো আলো!