নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেরা-অফেরা

কীর্ত্তিনাশা

একিদন- একরাত করেছি প্রেমের সাথে খেলা একরাত-একিদন করেছি মৃত্যুরে অবহেলা একিদন- একরাত;তারপর প্রেম গেছে চলে সবাই চলে যায়-সকলের যেতে হয় বলে

কীর্ত্তিনাশা › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুই ফেলে এসেছিস তারে

০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ৯:৪০

তুই ফেলে এসেছিস তারে



“ নদী , দ্যাখতো মামনি কে এলো। আচ্ছা থাক্ থাক্ , আমি-ই দেখছি। ”

সীমা শাড়ীর আঁচলে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। নদী খাতায় ছবি আঁকছিলো। আম্মুর অবস্থা দেখে একগাল হেসে বললো , “ আম্মু , তু..... তো..... তোমার যা অ..... অবস্থা হি হি হি আমি-ই দেখি না কেন। ” সীমা মেয়ের হাসি দেখে অবাক হয়ে গেলো। কী পবিত্র সুন্দর হাসি। মেয়েটা তোতলা হয়েছে বলে কথাগুলো শুনতে আরো মিষ্টি হয়েছে। তারপর কি ভেবে যেন বললো , “ আচ্ছা তুই-ই দ্যাখ্। আমি ততণে হাতমুখ ধুয়ে আসি। ”

গুটিগুটি পায়ে নদী এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। দরজাটা খুলতে তার অনেক কষ্ট হলো। সে দেখলো এক ভদ্রলোক হাসিমুখে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। সে তোতলাতে তোতলাতে বললো , “ আ..... আ..... আপনি কাকে চান ? ” পরাগ দেখলো তার স্যারের কথামতোই মেয়েটি অসম্ভব রূপসী হয়েছে। দেখলেই হাত দিয়ে নরম গাল ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে।

পরাগ হাসিমুখে বললো , “ আমি কি একটু আদর করতে পারি আেমাকে নদী ? ” নদী বেশ চিন্তিত কণ্ঠে বললো , “ কি..... কি..... কিন্তু আমি যে আ..... আ..... আপনাকে চিনি না। ” পরাগ বেশ খানিকটা নদীর দিকে ঝুঁকে এসে বললো , “ কিন্তু আমি যে তোমাকে চিনি। তোমার নাম নদী, তোমার আম্মুর নাম সীমা , আর তোমার বাবার নাম .....। ” পরাগ হঠাৎ চুপ করে গেলো। দেখলো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অসম্ভব সন্দরী এক নারী। বয়স কত-ই বা আর হবে Ñ ছাব্বিশ সাতাশ কিংবা একটু বেশি। পরিপাটি বেশবাশ। পরাগ মাথা নিচু করে অত্যন্ত নিচু স্বরে বললো , “ আপনি-ই কি সীমা অর্থাৎ মিসেস্ রাতুল ? ” সীমা মুহূর্তের জন্য অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো , “ জ্বি ..... কিন্তু আপনি ? ” পরাগ তেমনি বিনম্রস্বরে বললো , “ আমি আপনার কাছেই এসেছি। ” তারপর পরাগ একটি প্যাকেট সীমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো , “ এটা আমার স্যার আপনার জন্য পাঠিয়েছেন। ” সীমা বেশ কুণ্ঠিত ভাবেই প্যাকেটটা গ্রহণ করলো। তারপর সবিস্ময়ে মাথা দুলিয়ে বললো , “ কিন্তু আপনার স্যারটা কে ..... আর আপনি-ই বা কে ? ” পরাগ এবার বেশ মিষ্টি করে হাসলো। বাম হাত দিয়ে চশমাটা ঠিক করতে করতে বললো , “ আমার নাম পরাগ। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে বাংলায় পড়ি। নদীর সামনে স্যারের নামটা বলা বোধ হয় ঠিক হবে না। ” সীমা কি মনে করে যেন হঠাৎ বেশ খানিকটা ব্যস্ত হয়ে বললো , “আপনি বসুন।” পরাগ বেশ লাজুক ভঙ্গিতে সোফায় বসলো। তারপর অত্যন্ত বিনীত ভঙ্গিতে বললো , “ আমাকে এুনি উঠতে হবে। বিশেষ একটা কাজ আছে Ñ সবচে বড় কথা আপনাকে দেখার বড্ড ইচ্ছে ছিলো। ” সীমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ছেলেটির দিকে। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা , ফর্সা সুন্দর লাজুক মুখ। পরাগ নদীর চিবুকে হাত দিয়ে একটু আদর করলো। তারপর সীমাকে সালাম দিয়ে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে।

সীমার হঠাৎ মনে হলো , আরে ! ছেলেটাকে চা বিস্কিট কিছুই খাওয়ানো হলো না। নদী জিঞ্জাসু দৃষ্টিতে আম্মুর দিকে চেয়ে বললো , “ আম্মু ও ..... ও ..... ওটা কি ?” সীমার এতণ খেয়াল-ই ছিলো না যে তার হাতে একটি প্যাকেট। সেও বেশ চিন্তিত কণ্ঠে বললো , “ জানি নাতো মা কি আছে প্যাকেটে। ” নদী আবদারের সুরে বললো , “ খোল-ই না আম্মু দে ..... দে ..... দেখি কি .... কি ..... আছে।”

সীমা বললো , “ চল শোবার ঘরে গিয়ে দেখি। সম্ভবত বই-টই আছে। ” কথাটি তেমন পছন্দ হলো না নদীর। সে মায়ের পিছু পিছু শোবার ঘরের দিকে এগুলো। সীমা ঘরে ঢুকেই বেশ ব্যস্ত হয়ে বললো , “ এ্যাই নদী , তোমারতো এখন খাবার সময় হয়েছে মা। চল খেয়ে-দেয়ে ঘুমাবে। ” নদী বিরক্ত হয়ে বললো , “ আ ..... আ ..... আমি এখন খা ..... খা ..... খাব নাতো আম্মু। ” সীমা মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে বললো , “ তাই কি হয় মা। প্রায় একটা বেজে গেলো Ñ একটু পরেই তোমার ঘুমানোর সময়। ”

সীমা মেয়েকে খাইয়ে দাইয়ে নিজের পাশে শুইয়ে দিলো। টেবিল ফ্যানটার স্পিড আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে সে নদীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। নদী মনে হয় প্যাকেটটার কথা ভুলে গিয়েছিলো , তাড়াতাড়ি-ই ঘুমিয়ে পড়লো সে।

সীমা শোয়া থেকে ধীরে ধীরে বিছানার উপর উঠে বসলো। হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে প্যাকেটটা নিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। হয়তো ভাবলো কাগজে মোড়ানো প্যাকেটটায় কী থাকতে পারে কিংবা কে-ইবা দিতে পারে। তারপর ধীরে ধীরে সে প্যাকেটটা খুললো। ঝপাৎ করে তার কোলের উপর কী যেন পড়লো। সীমা কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলো সেটা একটি চিঠি। সে চিঠিটা খুলে পড়তে বসলো। মনে হচ্ছে চিঠিটা খুব দ্রুত লেখা। তবে পত্র প্রেরকের হাতের লেখা যে অসম্ভব সুন্দর সীমাকে ত স্বীকার করতেই হলো। গোটা গোটা হরফে লেখা চিঠিটায় সে একবার হাত বুলিয়ে নিলো।

প্রিয় সীমা ,

আমার হাতের লেখা কী তুমি চিনতে পেরেছো ? সম্ভবত না। তোমার কাছে আমার এই প্রথম ও এই শেষ লেখা। তাই কোনো ভুল করে থাকলে প্রথমেই মা চেয়ে নিচ্ছি।

সীমা , তোমাকে একটি ডায়েরি ( কিংবা কিছু স্মৃতিও বলতে পার ) পাঠিয়ে দিলাম। ডায়েরিটা তোমাকে দেয়ার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না আমার। কিন্তু একদিন পরাগ বললো , যাকে জীবনের সবচে অমূল্য ধন দিয়েছেনÑ শুধু শুধু নিজের কাছে কিছু স্মৃতি রেখে কী লাভ। ওগুলোও দিয়ে দিন। আমিও ভাবলামÑ নিজের কাছে আর কিচ্ছু রাখবো না। অনেক ভেবে দেখলাম ডায়েরিটা একমাত্র তোমাকেই দেয়া যায়-আর কাউকে নয়। তবে ব্যাপারটা তুমি ঠিক কীভাবে গ্রহণ করবে ধরতে পারছি না।

ডায়েরি লেখার কোনো অভ্যাস-ই আমার ছিলো না। জীবনে এই একটি-ই ডায়েরি কিনেছি , সম্ভবত কলেজ জীবনের শুরুর দিকে। আর তার পাতা দখল করতে আমার আট-দশ বছর সময় লেগেছেÑ তাও শেষ করতে পারিনি। ডায়েরিটা তোমাকে দিতাম না , একমাত্র পরাগের জন্য দিলাম। ও আচ্ছা , পরাগের সাথে তোমার পরিচয় নেই , তাই না ! পার্কে ছেলেটার সাথে দেখা। খুব বড়লোকের ছেলে। কি কারণে জানি না , শুরু থেকেই ও আমাকে স্যার বলে ডাকে। খুব ভালো ছেলে বলেই কিনা বিধাতা ওকে সীমাহীন অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। পরাগের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসছে। কী নিষ্ঠুর !

সীমা , নদীকে আমার পরিচয় দেবার দরকার নেই। ও তোমাদের পরিচয়েই বড় হোক। ভয় পেয়ো না , যদি বেঁচেও থাকি , কোনদিন পিতৃত্বের দাবি নিয়ে তোমার সামনে আমি দাঁড়াবো না। আমার জীবনের সবচে বড় উপহার তোমাকে দিলাম।

সীমা , এই ডায়েরিটা তোমার কাছে যখন পৌঁছাবে তখন আমি হয়তো আকাশের নীলের মধ্যে ভেসে বেড়াবো। হঠাৎ পৃথিবীটাকে একটু ঘুরে-ফিরে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে হলো। জমি-জমা সব বিক্রি করে বেড়িয়ে পড়লাম। নদীর জন্য আমি কী-ই আর দিতে পারি ! আমি জানি তুমি-ই ওর সব। তবুও পরাগের কাছে ওর জন্য কিছু রেখে গেলাম। খুব বেশি কিছু না হলেও আশা করি ওতেই নদীর জীবনটা নিশ্চিন্তে কেটে যাবে। ছেলেটা সেসব একদিন তোমার কাছে রেখে আসবে। সব কিছু দিয়ে যেতে ইচ্ছে থাকলেও পৃথিবীটাকে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।

সীমা , আজ সকালে নদীকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করলো। তুনি চলে গেলাম তোমাদের বাসার সামনে। দেখলাম তুমি নদীকে স্কুলে দিতে যাচ্ছ। হঠাৎ কী মনে হতে তুমি নদীকে উঠোনে দাঁড় করিয়ে রেখে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলে।

আমিতো আম গাছটার আড়ালেই ছিলাম। নদীর সামনে গিয়ে বললাম, নদী কেমন আছিস্ মা? নদী অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। আমি হাসিমুখে ওর চিবুক ছুঁয়ে দিলাম। ও দৌড়ে ঘরের মধ্যে চলে গেল। হাসতে হাসতে আমার চোখে পানি এসে গেল। মেয়েটিকে তিন বছর পর দেখলাম। ওর স্মৃতি থেকে আমার অস্তিত্ব ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। যাক ! কোন তি নেই। যা হোক, হাতে আর সময় নেই। রাতুলকে আমার ভালোবাসা দিও। ওকে যে কতটা পছন্দ করি তা শুধু বিধাতাই জানেন। নদীকে আমার হয়ে তুমি একসময় একটু বেশি আদর করে দিও। তোমাদের সাথে আর দেখা হবে কিনা জানি না ।

তোমাদের নিত্য মঙ্গল কমনায়

-নিলয় রহমান।



সীমা চিঠিখানা পড়েই নদীর দিকে তাকালো । ঘুমন্ত মেয়েটিকে কী সুন্দর-ই না লাগছে ! ফ্যানের ঝিরঝিরে বাতাসে মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। সে হাত দিয়ে নদীর চুলগুলো ঠিক করে দিল।

সীমা চিঠিখানা ভাঁজ করে রাখলো। তারপর ডায়রিটা হাতে নিয়ে কি যেন ভাবলো- আবার তাকালো নদীর দিকে । মেয়েটিকে সে যতই দেখে ততই অবাক হয়। নদীর নরম তুলতুলে মুখখানা দেখলেই ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। সীমা নদীর কপালে আলতো ভাবে চুমু খেল। তারপর ডায়রিখানা তুলে ধরলো হতের উপর। ডায়রির মলাটটা বেশ পুরনো হয়ে গেছে। সে ঝুঁকে পড়ে ডায়রিটার গন্ধ নেয়ার চেষ্টা করলো । ধূসর জাতীয় কি যেন একটা অচেনা গন্ধ ; গন্ধটার সাথে হয়তো কিছু স্মৃতির গন্ধও মিশে আছে।

সীমার গভীর বুকের মাঝখানে কেমন যেন করে উঠলো। নিলয়কে একদিন সে ভালবাসতো কিন্তু প্রকাশ করেনি কিংবা করার চেষ্টাও করেনি। নিলয় কী তাকে ভালবাসতো ? কৈ এতদিনে তো সে কিছুই জানতে পারেনি ! সীমার বুকচিরে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল।

নিলয় এবং রাতুল দুই বন্ধু ছিল। সীমাদের বাড়ী থেকে ওদের বাড়ি খুব একটা দূরে ছিল না । প্রতিদিন দু’বন্ধু তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে স্কুলে যেত। সীমা ছোট কাসে পড়ত বলে ওরা তাকে সঙ্গে নিত না । হঠাৎ নিলয়ের বাবা মারা যাওয়ায় নিলয় চলে গেল ওর মামার বাড়ি। ওখানে থেকেই সে কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করেছে। মাঝে মাঝে গ্রামে এসে নিলয় রাতুলকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসতো । কিন্তু রাতুল ততদিনে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সীমাকে । সীমাও টের পায়নি, রাতুলও টের পায়নি ; হয়তো নিলয়ও টের পায়নি । ধীরে ধীরে ভুলে গেছে নিলয়কে ।

সীমা নদীর পাশে আধশোয়া হলো । তারপর ডায়রিটা খুললো । ডায়রিটা যে বেশ দামি তাতে সন্দেহ নেই । প্রত্যেকটি পৃষ্ঠায় একগুচ্ছ রজনীগন্ধার জলছাপ ছবি। প্রথম তিনটি পাতায় কিচ্ছু লেখা নেই। তারপর থেকে লেখা- কিছুটা গোটা গোটা হরফ। প্রত্যেক পাতার একপাশে লেখা , অন্য পাশে ফাঁকা । প্রত্যেকটি লেখারই আলাদা আলাদা ভাবে তারিখ দেয়া । সীমা লেখার উপর দিয়ে একবার হাত বুলিয়ে নিল। আহা কী সুন্দর হাতের লেখা ! সে পড়তে আরম্ভ করল ঃ



২০.০৩.১৯৮৮

রবিবার

রাত ঃ ১১.৩১.০২

আজকের বিকেলটা দারুন ছিল। ঘননীল আকাশ চুঁইয়ে পড়া নরম রোদে আমাদের বাড়িটা (মামার বাড়ি) ভরা ছিল। কি মনে করে যেন বাড়ি থেকে বের হয়ে এলাম । আমার পরনে ছিল ট্রাউজার , পায়ে চটি , আর গায়ে একটা টিশার্ট। মার্কেটের ভিতর দিয়ে বেশ কিছুণ হাঁটাহাঁটি করলাম। সন্ধ্যার কিছু পূর্বমুহুর্তে ভীড় দেখে একটা দোকানে ঢুকে পড়লাম। দেখলাম প্রায় হাফডজন তরুণি হাস্যকলরবে ডায়রি কিনছে। আমি কি আর করি- ডায়রি কেনার কোনই শখ আমার নেই এবং কোন কালেই ছিল না । কিন্তু তবুও সেলস্ম্যানকে সুন্দর দেখে ডায়রি দেখাতে বললাম । কোন কিছুই পছন্দ হয় না । পাশ থেকে হঠাৎ একটি মেয়ে বলে বসলো , আপনি এই ডায়রিটাই নিয়ে নিন না ! দেখতে তো বেশ । আমি ভুরু কুঁচকে তাকালাম মেয়েটির দিকে। আসলেই মেয়েটির দেখানো ডায়রিটাই আমার পছন্দ হয়েছিল কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলাম , ওটা কিছুতেই নেয়া চলে না । কিন্তু একটা তো নেয়া চাই । তা না হলে.............

মেয়েটি কে না কে জানতে ইচ্ছে করেনি। বড়লোকের মেয়েতো বটেই ! মুখখানা দেখতে তো খারাপ না । এই মেয়েটির সাথে আমার আর কোন দিন দেখা হবে না ।

ডায়রিটা কিনে বেশ উৎফুল্ল মনেই ঘরে ফিরছিলাম। কিন্তু মনে আমার চাপা ভয় ছিল , মামার বকুনি খাওয়াটা আজ আর মিস হবে না । মাগরিবের নামাজটা ওনার সাথে না পড়লেই আমার প্রাপ্যটাও পেয়ে যাই এবং অপ্রাপ্যটাও পেয়ে যাই। কিন্তু কি এক অদ্ভুত কারণে মামা আজ আমাকে কিছুই বললেন না।

কিন্তু এখন ডায়রি লিখতে বসেই পড়লাম ভীষণ বিপদে। ডায়রিটা যে কিভাবে শুরু করবো , আর কিভাবেই বা শেষ হবে- এই ভাবনায় কেটে গেল ত্রিশ মিনিট । ডায়রিটায় কি লিখবো ? আমিতো আর কবি সাহিত্যিক না ? আমি নিলয় রহমান । বাড়ি জলঝরা নদীর একটু উত্তর পাশে- দূর্গাপুরে।

ধুর..... এসব লেখার কোন মানেই হয়না ।



২৩.০৩.১৯৮৮

বুধবার

দুপুর ঃ ০২.১০.০০

আজ অনেক দিন পর বাবার কথা মনে পড়ল। আমি শুয়ে আছি । হঠাৎ মনে হল , বাবা আমার মাথাটা ছুঁয়ে আছেন । ধড়মড় করে বিছনায় উঠে বসলাম। চার বছর আগে এমনি কোনো দুপুরে বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন । এমনতো কোনদিন হয়নি ! হঠাৎ মনে হল , বাবাকে আর কোন দিন দেখব না ।



২৯.০৩.১৯৮৮

মঙ্গলবার

সকাল ঃ ০৬.৩০.০০

অনেক দিন পর আজ সকালে ঘুম ভেঙ্গেছে । ঝুমুটা যা পাঁজি হয়েছে । সকালের ঘুমটা নষ্ট করে দিল । এই পুঁচকে মেয়েটা আমাকে সবসময় জ্বালাতন করে । ওকে পড়াতে গেলেই হয় সব সমস্যা । মাথায় ঘিলু বলতে যদি কিছু থাকে ! আমি যদি বলি আকাশ ও বলবে মাটি!! পাতাল বললেও না হয় একটা কিছু হোত। অথচ এই অপদার্থ বালিকাটিই পড়ে নাইনে ।



০১.০৪.১৯৮৮

শুক্রবার

ভোর ঃ ০৬.০২.৫৯

আজকেও খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল। তবে গত তিন দিনের মত আজ ঝুমু ঘুমটা ভাঙ্গায়নি বলে তেমন রাগ লাগছে না । আমি যত বেশি ভোরে উঠি মামা তত বেশি খুশি হন। আজ উনি আমাকে দেখে বললেন , বুঝলি নীলু, যত ভোরে উঠবি শরীর স্বাস্থ্য মন তত বেশি ভালো থাকবে। তাছাড়া ক’দিন পরেইতো তোর আই,এ পরীা । এখন থেকে খুব ভোরে উঠবি আর নামায কালাম একটু রেগুলার পড়বি। ঠিক আছে ? আমি মাথা দোলালাম । উনি আরও খুশি হয়ে বললেন , ঝুমুকে আর পড়ানোর দরকার নেই । তোর পরীার পর আবার দেখা যাবে। মনে মনে আল্লাহুর শুকরিয়া আদায় করলাম । যাক পাঁজিটার হাত থেকে তো নিস্তার পাওয়া গেল।



০৬.০৪.১৯৮৮

বুধবার

সন্ধ্যা ঃ ০৭.০০.০০

ঝুমুর ব্যবহারে আমি ভীষণ অবাক। আমার এখনো কেমন যেন লাগছে। হাফ ঘন্টা আগে এই ঘরের মধ্যে হঠাৎ ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল- আর ছাড়তেই চায় না। আমি ভয়ে আধমরা হয়ে বললাম , এ্যাই ঝুমু কি করছিস! ও চোখ মুখে হাসি ছড়িয়ে দিয়ে বলল , কাল তুমি আমাকে যে থাপ্পরটা দিয়েছিলে এটা তার প্রতিশোধ।

ঝুমুর মাথাটা ঠিক আছে কিনা আমাকে পরীা করতে হবে।



০৭.০৪.১৯৮৮

বৃহস্পতিবার

সকাল ঃ ০৯.০০.০০

খাবার টেবিলে ঝুমু আমাকে পা দিয়ে গুতা দিল। মামাকে বলা ঠিক হবে কিনা ভাবছি।









০৮.০৪.১৯৮৮ ইং

শুক্রবার

দুপুর ঃ ০২.০৪.১০

আজ জুমআর নামায খুব ভালভাবে পড়লাম । পরীার জন্যও.......



০৯.০৪.১৯৮৮ ইং

শনিবার

দুুপুর ঃ .........

ঝুমুর মাথাটা ঠিক আছে কিনা আমাকে সত্যি সত্যি-ই ভাবান্বিত করে তুলেছে ॥



১৫.০৪.১৯৮৮ ইং

শুক্রবার

সকাল ঃ ০৭.৫০.০৩

আজ খুব মেঘ করেছে। যে কোন সময় ঝুম বৃষ্টি নেমে যেতে পারে।



১৬.০৪.১৯৮৮ ইং

শনিবার

রাত ঃ ১১.৪৫.০০

আমার মাথায় চিন্তারা ফুটবল খেলছে। পরীা কেমন হবে ? পাশ করবো তো ! তা না হলে তো মামা মনে হয় ঘাড় ধরে বের করে দেবেন পথে। যদিও মামাটা খুব ভাল মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে আর পনের ওয়াক্ত পান খান ।

আমি বাইরে বেরিয়ে দেখলাম আকাশে গভীর চাঁদ। পূর্ণিমা হতে পারে হয়তো । ছাদে বসার জায়গা নেই দেখে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এলাম । তাছাড়া রাতে ছাদে উঠা আমার জন্যে মামা নিষেধ করে দিয়েছেন। তবুও মাঝ রাতে হঠাৎ হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি ছাদে উঠে যাই। ওই দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি কিছুণ। আর বাবকে মনে পড়ে যায়।



২১.০৪.১৯৮৮ ইং

বৃহস্পতিবার

সকাল ঃ ০৬.০০.০০

ঝুমু আর আমাকে বিরক্ত করে না।



২২.০৪.১৯৮৮ ইং

শুক্রবার

সকাল ঃ ০৭.০০.০০

আর নয়দিন পর আমার আই, এ পরীা ।



০২.০৬.১৯৮৮ ইং

বৃস্পতিবার

দুপুর ঃ ০৩.১৫.০৮

আজ আমার পরীা শেষ হলো। পরীার হল থেকে বের হয়ে মনে হলো মানুষের জীবনে পরীা না হয়ে শুধু যদি পড়াশুনা হোত! কতদিন আরাম করে ঘুমাইনা । দেখি একটু আরাম করে ঘুমানো যায় কিনা ।



০২.০৬.১৯৮৮ ইং

বৃস্পতিবার

সন্ধ্যা ঃ ০৭.১১.০০

ঝুমুর ডাকে আমার ঘুম ভেঙ্গেছে। আমি চোখ রগড়াতে রগড়াতে বিছানায় উঠে বসতেই পাঁজিটা একবার ফিক করে হেসেছে। কিছু একটা করা দরকার । নিশ্চয়ই কিছু একটা করা দরকার । কাল বাড়ি যাবার আগেই কিছু একটা করা দরকার।



৩০.০৬.১৯৮৮ ইং

বৃহস্পতিবার

রাত ঃ দ্বি প্রহর

বাড়ি থেকে ফিরেই মনটা খারাপ। মাকে একলা গ্রামে ফেলে রাখার কোন মানেই হয় না । কিন্তু করার তো কিছুই নেই। গতকাল মা কথায় কথায় আমাকে বিয়ের আভাস দিলেন। আমি বললাম , পাগল হয়েছে মা । আমার কপালে বিয়ে টিয়ে নেই। ওসব নিয়ে তোমাকে আর ভাবতে হবে না।

কিন্তু ভাবতে বারণ করলেও আমি নিজেই অনেক কিছু ভাবছি। আমি কি কখনও কাউকে পছন্দ করেছি বা করি । ছোট কালে এক বালিকাকে পছন্দ করতাম। প্রচন্ড পছন্দ করতাম। তার নাম .....। আমি কি এখনো তাকে ভাবি!!



০৫.০৭.১৯৮৮ ইং

মঙ্গলবার

রাত ঃ ১২.০০.০০

আজ নিজেকে নতুন রূপে দেখতে পেলাম । এতদিনে ভাবতাম আমি দেবতা । পৃথিবীর কোন পাপ আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না । কিন্তু আজ আমার ধারণার প্রাচীরে প্রচন্ড আঘাত লেগেছে। বুঝলাম আমারও কামনা-বাসনা, হিংসা - বিদ্বেষ ,প্রেম - ভালবাসা আছে ; আমারো প্রেম ভালবাসার বড্ড প্রয়োজন। আমিও পৃথিবীর অন্য মানবদের মতই দেবতা নই। কিন্তু আজ আমি হঠাৎ করে এমন হয়ে গেলাম কেন ! কি এক অস্বস্তিকর গভীর সুখে হৃদয়টা পরিপূর্ন। আজ এত লিখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কি লিখি! আমার বুকটা কি এখনো কাঁপছে ! আচ্ছা ঝুমুটা এখন কি করছে ?



রাত ঃ ০১.১৫.৩০

আজ ( না ..........না আজ নয় এখনতো আবার বারটার বেশি-ই বেজে গেছে ) এগারটার দিকে বিছানায় শুয়ে আছি। কিন্তু ঘুম আসছিল না। আধাশোয়া হয়ে দৃষ্টির নোঙর ফেললাম জানালার সুদূুরে। গভীর জোছনায় পৃথিবী ছাওয়া। মনটা ভীষণ উদাস হয়ে গেল । কি যেন কি ভেবে বিছানায় উঠে বসলাম। ভাবলাম একটু ছাদে উঠি। জোছনায় পড়া যায় কিনা তারো একটা পরীা হয়ে যাক। কিন্তু কি বই নিয়ে ছাদে উঠলাম তা মনে করতে পারছিনে। কারণ বইটা শুধু আমার হাতেই ছিল কিন্তু দৃষ্টি দেয়া হয়নি।

আমি ছাদে উঠে দেখলাম গভীর জোছনায় পৃথিবী ছাওয়া। কী এক গভীর সুখে হৃদয়টা ছেয়ে গেল। এবং পরপরই কি এক অজানা ব্যথায় হৃদয়টা মোচড় দিয়ে উঠল। এ বাড়িতে আমাকে কেউ অনাদর করে না, কিন্তু নিজেকে সবসময় কেমন যেন পরপর লাগে । আর মা আমার একাকী পড়ে আছে কোন পরবাসে। এর কোন মানেই হয় না। আমি তাকালাম আকাশের দিকে। মেঘগুলোকে ফাঁকি দিয়ে চাঁদটা ছুটে চলেছে আকাশ হতে আকাশে। হঠাৎ আমার চোখ দুটো কার নরম হাতের ছোঁয়ায় যেন ঢাকা পড়ে গেল। আমি নিশ্চিত হলাম , এ ঝুমু ছাড়া আর কেউ নয় । কিন্তু এত রাত্রে ও ছাদে কেন ! মামা-মামী টের পেলে আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে । কিন্তু মেয়েটাও হয়েছে পাঁজির হাঁড়ি। ওর একটা উচিৎ শিা দেওয়া ভীষণ দরকার - অসম্ভব দরকার - প্রচন্ড দরকার - ভয়ানক দরকার .......

আমি আর কাল বিলম্ব না করে ঘুুরে দাঁড়িয়েই ঝুমুকে জড়িয়ে ধরলাম । মেয়েটা ফাজলামির মজাটা বুঝুক! কিন্তু .....যখন বুঝলাম চোখে চোখ , ওর নবাগত বুকটা মিশে গেছে আমার বুকে , হৃদয়ে হৃদয়ের শব্দ .... দেখলাম আকাশটা অনেক নিচে নেমে এল। তারপর ঝাঁকঝাঁক বিদ্যুৎ এসে আমার শরীরে আছড়ে পড়ল। আমি নিজেকেও ছাড়াতে পারলাম না - ওকেও ছাড়তে পারলাম না।

কতণ কেটে গেল হুঁশ নেই । একসময় বুঝলাম আমার হাতটা শিথল হয়ে আসছে। ঝুমুর গভীর চোখ লজ্জায় অবনত। দুজনার পায়ে কে যেন লোহার শিকল পরিয়ে দিলেছিল। দুজন কেউ একটুও নড়তে পারলাম না। এভাবেও কেটে গেল বেশ কিছুণ। আমি ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলাম । আর ভাবতে লাগলাম , আজ এ কোন সর্বনাশা পথে হাত বাড়ালাম।

আচ্ছা আমি কি ঝুমুকে ভালবেসে ফেলেছি ? কিছুতেই না। ঝুমুকে আমি নিজের বোনের মতই মনে করি । আর আজ কী যে মাথায় এল! ঝুমু উল্টো কিছু মনে করতে পারে । ঝুমুর ব্যবহারওতো দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে । ইদানিং ঝুমুকে ভীষণ রহস্যময় মনে হচ্ছে। আচ্ছা ঝুমু কী আমাকে ভালবাসে ? কিন্তু তা কি করে সম্ভব । এর সঠিক মিমাংসায় আমাকে উপনীত হতেই হবে। আজকের ঘটনাটা ঘটানো মোটেই উচিৎ হয়নি। এতে ঝুমু অবশ্যই কিছু মনে করবেই করবে।





২৯.০৭.১৯৮৮ ইং

পূর্বাহ্ন ঃ ১১.৫০.০০

অনেকদিন পর আর নিজেকে নিজের মনে হলোনা। গভীর চিন্তা করেও নিজের অস্তিত্ব নিরূপণ করতে পারলুম না। আজ থেকে বহুকাল পরে আমিও বোধ হয় ঘাস হবো , আকাশ হবো , নত্র হবো , মাটি হবো ! মাথায় কি সব আবোল - তাবোল জিনিস আসছে।

একদিন একরাত করেছি প্রেমের সাথে খেলা ।

একরাত একদিন করেছি মৃত্যুরে অবহেলা।

একদিন একরাত , তারপর প্রেম গেছে চ’লে-



০৩.০৮.১৯৮৮ ইং

বুধবার

দুপুর ঃ ০১.০১.৩৫

সীমা ঃ পৃথিবীর সুখ নিয়ে যে নারী বহুদূরে......

রাতুল ঃ শৈশব ও কৈশোরের অধিকাংশ সুখ - দুঃখের পরম সাথী ; যাকে বছর খানেক দেখিনা ।

ঝুমু ঃ পাঁজির হাড়ি!

মা ঃ জীবনে কখনো কাউকে যদি মনে প্রাণে ভালবেসে থাকি সে আমার মা।

বাবা ঃ বাবাকে কতদিন দেখিনা ! আর কি কোনোদিন তাকে দেখতে পাব না ! আচ্ছা বাবার দেহ কি আজ ঘাস - না মাটি নাকি ...

হাসি ঃ কাস ফোরে থাকতে ও একদিন আমাকে শিউলি ফুলের মালা দিতে চেয়েছিল। হাসিরও মালা দেয়া হয়নি , আমারও মালা নেয়া হয়নি। হাসির আজ দু’টি ছেলে তিনটি মেয়ে ।

মানিক ঃ যার কলম মারার দাগ এখনো আমার হাতে আছে।



২১.০৮.১৯৮৮ ইং

রবিবার

ভোর ঃ ০৫.৩০.০০

আজ মামার সাথে ফজরের নামাযটা পড়লাম । নামায শেষে মামা বললেন , নীলু , রেজাল্টের আগে একবার বাড়ি থেকে ঘুরে আয় । তোর মা কেমন কি আছে কে জানে ! আমিও কয়েক দিন থেকে তাই ভাবছি । মামাকে বললাম , আমি দু এক দিনের মধ্যেই বাড়ি যাব মামা।



০২.০৯.১৯৮৮ ইং

শুক্রবার

রাত ঃ ১০.০০.০০

আজ দুপুরে বাড়ি থেকে ফিরলাম । জুমআর নামাযটাও এখানে এসে পড়েছি। তবে এবার বাড়িতে একা যাইনি। ঝুমাও গিয়েছিল। গত ঊনত্রিশ তারিখে আমি যখন বাড়ি যাব , ঠিক তখন ঝুমা বেঁকে বসল , সেও যাবে। মামী তো রীতিমতন বকাঝকা বর্ষণ করলেন ঝুমার উপর । তবে মামা বললেন , ও যখন যেতে চাচ্ছে যাক না নীলুর সাথে। অসুবিধা কি ? কিন্তু অসুবিধা মামানী টের পেয়েছিলেন কিনা বলতে পরবনা ; তবে আমি টের পেয়েছি । মেয়েটির সাহসে আমি এখনও হতভম্ব।

বাড়িতে মা ঝুমার আদরের কোনো ত্রুটি করেননি। কয়েক পদের পিঠা বানিয়ে খাইয়েছে। রাস-রাসীর গল্প শুনিয়েছে দুইবার।

গত একত্রিশ তারিখে সীমাকে দেখলাম। কতদিন পর মেয়েটিকে দেখলাম ! সীমাদের বাড়ির সামনে আমাকে আর ঝুমাকে দেখে সীমাতো অবাক। আমি সীমাকে বললাম , চিনেছিসতো ! সীমা না সূচক মাথা নাড়াল। আমি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলাম , আমার মামাতো বোন ঝুমু ! সীমা অবাক চোখে জিজ্ঞেস করল , নীলুদা তুমি কেমন আছো ? আমি হেসে দিয়ে বললাম , অনেকদিন পর দেখা তাই না ?

আজ পথে আসতে আসতে ঝুমু আমাকে তিনবার জিজ্ঞেস করেছে , মেয়েটা কে ? আমি তিনবারই হেসেছি। তবে চতুর্থবার আর হাসতে পারলাম না । বুকের গভীরে মোচড় দিয়ে উঠলো । সত্যিই তো সীমা আমার কে ! সীমা আমার কে তা ঝুমুকে কি করে বলি ! আমি চুপ করে রইলাম । ঝুমু বেশ খানিকটা গ¤ী¢র হয়ে বলল , তুমি কি সীমাকে ভালবাস ? আমি ঝুমুকে হালকা একটা ধমক লাগালাম । ঝুমু হঠাৎ আমার রক্ত হিম করে দিয়ে হাত ধরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল ,ভাইয়া আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবনা। আমি হতভম্ব হয়ে ঝুমুর দিকে তাকিয়ে আছি। এই মেয়েটা বলে কি ! আমি মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করে ঝুমুকে শক্ত ধমক লাগালাম , মারব এক থাপ্পড়। ঝুমা এবার সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলল। আমি মহাসমস্যায় পড়লাম। রাস্তায় যে কেউ দেখে ফেলতে পারে। আমি ঝুমুকে শক্ত হতে বললাম । আর নিজেকে আবিস্কার করলাম মহাঝামেলার মাঝে। মামার বাড়িতে টেকা যাবে কিনা এখনো বুঝতে পারছি না। কিন্তু .... আমি এখন কি করি...



০৬.০৯.১৯৮৮ ইং

মঙ্গলবার

দুপুর ঃ ০১.২৫.৪৩

পরশুদিন আমার রেজাল্ট। নামায ইদানীং পাঁচ ওয়াক্তই পড়ছি। আল্লাহ আমার ভাগ্যে কি রেখেছে কে জানে ।



০৮.০৯.১৯৮৮ ইং

বৃহস্পতিবার ]

সন্ধ্যা ঃ ০৬.০০.০০

আমি খুশি- সুখি। মামা বললেন , সেকেন্ড ডিভিশন খুব একটা খারাপ না । আগামি কাল বাড়ি যাব । রাতুল কি করেছে কে জানে ! কাল বাড়ি গিয়েই সীমাকে দেখতে যাব। সীমা ডায়রী পড়তে পড়তে এখানে এসে থমকে যায়। পরপর তিন পৃষ্ঠায় অপরিচিত একটা হাতের লেখা । প্রত্যেক পৃষ্ঠায় একটি লাইন-ই লেখা

ও খঙঠঊ ণঙট

চতুর্থ পৃষ্ঠায় লাল কালিতে বড় করে একটা ক্রস চিহ্ন দেয়া । পঞ্চম পৃষ্ঠায় অত্যন্ত যতœ করে বড় করে লেখা

= ঝুমু =

তারপর আবার সেই সুন্দর হাতের লেখা । সীমা আবারো মনে মনে বললো, কী সুন্দর ! কী সুন্দর !



২৮.০৫.১৯৯০ ইং

সোমবার বিকাল ঃ ০৩.৫১.৫০

ডায়রিটা যে আবার হতে পাব কোনোদিন কল্পনা- ই করিনি।

অথচ বছর দেড়েক আগে ঝুমুই কসম খেয়ে বলেছিল , ডায়রিটা সে নেয়নি। আজ এসএসসি পরীা শেষ করে এসে সে আমার হতে ডায়রিটা দিয়ে বলল , ভাইয়া , তুমি ডায়রিতে হাবিজাবি কি লিখেছো ? আর আমাকে পাঁজি বলেছ কেন ? আমি অবাক হয়ে বললাম , তাহলে ডায়রিটা তুই - ই নিয়েছিলি ! তোকে যে কি করি .......... এই দাঁড়া ..... দাঁড়া । ঝুমু ডায়রিটা দিয়েই ছুটে পালাল। ঝুমু বলেছে , সে অংক পরীায় তেরো চৌদ্দ’ র বেশি পাবে না । মেয়েটির এত ফুর্তি আসে কোথা থেকে । আশ্চর্য !

কতদিন পর ডায়রি লিখছি । ঝুমুও মেট্রিক দিয়ে দিল । সামনে আমার পরীা । এতদিন ঝুমুকে পড়ানো নিয়ে বেশ ঝামেলায় ছিলাম । এখন পড়া শোনায় একটু মন দিতে হবে। না হলে .....



১৫.০৬.১৯৯০ ইং

শুক্রবার

রাত ঃ দ্বি প্রহর

এবারে বাড়িতে গিয়ে বেশ কিছুদিন থাকলাম । রাতুল অনেকখানি বদলে গেছে । রাতুল আমাকে কি যেন বলতে চায় , কিন্তু বলে না । কিংবা বলতে পারে না। গতকাল রাতুল আমাকে সীমাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল।

সীমা বেশ বড় হয়ে গেছে। সীমার চোখ সীমার মুখ আমাকে মাতাল করে দেয় । কিন্তু আমি জানি , পরম সত্য কথাটা সীমাকে কোনোদিন আমি বলতে পারব না ।

সীমানার ওপারে কে তুমি দাঁড়িয়ে নারী !

মাঝে আজ দূরপথ বহে সারি সারি.......

সীমা , কখনো যদি তোমার সামনে গিয়ে দু’হাত বাড়ায়ে বলি , তোমাকে চাই নারী ! তুমি কি করবে ?







২৩.০৬.১৯৯০

শনিবার

রাত ঃ ০৯.৩০.০০

অনেকদিন পর রাতুলের চিঠি পেলাম। রাতুল লিখেছে ঃ

নীলু,

দারুণ একটা খবর আছে । কিন্তু তোকে এখন বলা যাবে না। তোকে যা সারপ্রাইজ দেব না! উহ্ তুই আগামি ৬ তারিখ শুক্রবার বেলা ২টার সময় স্টেশনে থাকবি।আমি আনতে হয়তো পারব না, কিন্তু মানিককে স্টেশনে পাঠিয়ে দেব।তুই কিন্তু অবশ্যই আসবি-আল্লাহর কসম! আমরা ভাল আছি-দারুণ আছি। চলে আয়।

- রাতুল ।



আমি অনেক চেষ্টা করেও আসল ব্যাপারটা ধরতে পারলাম না। ব্যাপারটা কী! তবে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ,আমি বাড়ি যাব এবং রাতুলকে অবাক করে দিয়ে বলব, আমি এত সহজে আশ্চর্য হই না।



০৭.০৭.১৯৯০

শনিবার

দুপুর ঃ ০২.৩৭.৫৮

কিন্তু আমি রাতুলকে চমকে দিতে পারিনি।রাতুল-ই আমাকে চমকে দিয়েছে।শুধু যে চমকে দিয়েছে তাই না,আমি জীবনে এত বড় আশ্চর্য হয়েছি বলে মনে পড়ে না।রাতুল তুই ঠিক-ই লিখেছিলি আমাকে চমকে দিবি।কিন্তু হৃদয়ে পাড় ভাঙ্গার শব্দ যে বেড়েই চলেছে।এতদিন মনে মনে যাকে আরাধনা করেছি - তাকে আজ কল্পনাতেও বলতে পারব না-

তবু মনে রেখ নারী

তোমাকে সব দেয়া যায়, সব দিতে পারি !

গতকাল সীমার বিয়ে হয়ে গেছে । আমার চে’ রূপে - গুনে শুভ্রতায় অনেকগুণ ভালো। নাম রাতুল। আমারই প্রিয় বন্ধু। স্টেশনে মানিককে জিজ্ঞাসা করেও জানা যায়নি, আসল ব্যাপারটা কি । রাতুল নাকি তাকে বারণ করে দিয়েছে। মানিক আমাকে বাড়িতেও যেতে দিল না । যখন রাতুলদের বাড়িতে উপস্থিত হলাম , তখন আড়াইটা বেজে গেছে। ওদের বাড়িতে পা দিয়েই বুঝলাম , ংড়সবঃযরহম রং ফবভবহরঃবষু ৎিড়হম . রাতুল হুড়মুড় করে এসে আমার হাত ধরে বলল , এতণ তোর জন্যই অপো করছি। সব ঠিকঠাক । আজ আমার বিয়ে । ছোট্ট কালে বলেছিলাম না , আমার বিয়ের সময় তুই পাশে থাকবি ! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি রাতুলের দিকে। কোন রকমে বললাম , কিন্তু বউটা হবে কে ? রাতুল চোখে মুখে আলো ছড়িয়ে বলল , একটু অপো কর না- তোর মাথা ঘুরে যাবে।

সীমাকে দেখে শুধু যে আমার মাথাই ঘুরে যায়নি তা নয় , বুকের মধ্যে কেমন করে যেন উঠল। কী একটা অচেনা কষ্ট ! হৃদয় ছিঁড়ে যেতে চায় ...

আমরা দু’জন একটি গাঁয়েই থাকি

সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ,

তাদের বনে গায় যে দোয়েল পাখি

তাহার গানে ...

বাসর রাতে রাতুল আমাকে কাছে ডেকে সীমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল , আমাদের কেমন মানিয়েছে বলতো ? হাসতে হাসতে আমার চোখে পানি এসে গেল। সীমাকে কী অস্পষ্ট দেখাচ্ছে ! মনে হচ্ছে কত দূরে চলে যাচ্ছে সে ... অনেক দূর ! রাতুল চোখ বড় বড় করে বলল, কি ব্যাপার? আমি হাসতে হাসতেই বললাম, চোখে কি গেল বলতো? না না তোকে উঠে আসতে হবে না । ঘর থেকে বেরুবার সময় সীমাকে ভীষণ ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হল। আহ্ কী চোখ - কী মুখ ...। শুধু বললাম , এটুকু জেনে রাখিস রাতুল , তোরা সুখী না হলে বিধাতাকে ভয়ঙ্কর অভিশাপ দেব আমি।

মামার বাড়ি আসার সময় পরদিন মা বললেন, এত তাড়াতাড়ি যাবি কিরে ! দু’দিন থেকে যা । আমি বললাম না মা , অনেক কাজ আছে। মা চিন্তিত কন্ঠে বললেন , তোকে এমন শুকনো শুকনো লাগছে কেন ? আমি বললাম, ও কিছুনা মা- রাত জেগেছি তাই। তুমি বাড়ি যাও , চিন্তা করো না । ঠিক বড় রাস্তায় উঠার সময় মা আমার হাত ধরে বললেন , হ্যাঁরে নীলু , রাতুলতো বিয়ে করেই ফেলল- এখন তুই একটা কর না বাপ। আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে বললাম , দেখি কি করা যায় । তুমি বাড়ি যাও তো মা ।





০৮.০৭.১৯৯০ ইং

রবিবার

অপরাহ্ন

এই বাড়িতে আমার আর বোধ হয় থাকা হলো না। আজ দুপুরেই মামী আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, ঝুমু নাকি আমাকে চিঠি দেয়। একটু আগে ঝুমুকে কাছে পেয়েছিলাম। ও বলল , ও নাকি চিঠি ঠিকই লিখতো , কিন্তু আমাকে দিত না । বইয়ের ভিতর লুকিয়ে রাখত। তাই মামীর হাতে পড়েছে। এদিকে আমার মনটা খুবই খারাপ। ঝুমুকে শুধু বললাম, তুই আর আমাকে থাকতে দিলিনারে। ঝুরু কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল , তুমি কেন যাবে ? যা করার আমিই করব।



১৯.০৭.১৯৯০ ইং

শুক্রবার

রাত ঃ ০৮.৩০.০০

মামী আজ আমাকে প্রায় গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। মনে কষ্ট হলেও- কিছু বলিনি, কিছু বলা যায় না। যারা আমাকে কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছেন, তাঁদের কী কিছু বলা যায়! আসবার সময় ঝুমুকে দেখার বড্ড শখ ছিল। একটা গোপন কথাও বলে আসতে চেয়েছিলাম ; মামীর জন্য সম্ভব হয়নি। আজকাল বার বারই মনে হয় , নিয়তি-ই আমার জীবনের সব চে’ বড় অভিভাবক। তাই তেমন দুঃখ লাগে না এ বুকে। মা সব শুনে তো কান্নাকাটি জুড়ে দিলেন , আর আমার ঘাড়েই সব দোষ চাপালেন। আমি একটুও প্রতিবাদ করিনি। আমার আর কি বলার থাকতে পারে ! বি,এ পরীাটা যেভাবে হোক আমাকে দিতেই হবে। দু’চারটি ছেলে-মেয়েও পড়ানো যেতে পারে । তা ছাড়া তো হবে না। কিন্তু মাকে সান্ত্বনা দেবার মত ভাষা আমার জানা নেই । আজ রাতটা বোধ হয় বিনিদ্রই কাটাতে হবে।



২১.০৭.১৯৯০ইং

রাত ঃ ০২.৫০.২০

অনেক অনেক দিন পর গ্রামের রাস্তায় রাত্রে হাঁটলাম। আজ আকাশে বেশ দেরি করে চাঁদ উঠেছে। মধ্যরাত্রের নিঃসঙ্গতা বুকে ধারণ করে চাঁদকে সাথী করে পথ চলতে ভলোই লাগছিল। হঠাৎ নিজেকে আবিস্কার করলাম রাতুলদের বাড়ির সামনে। রাতুলের রুমে আলো জ্বলছে , একটি জানালা খোলা । ও কার চুল ! সীমা হবে বোধ হয় । কতণ দাঁড়িয়ে ছিলাম মনে নেই । হঠাৎ দেখলাম জানালায় সীমার মুখ আলোয় ঝলমল করছে। আমার স্মৃতির অরণ্য থেকে সীমা নামের লজ্জাবতী লতাটি কি মরে যাবে। আমি জানি না , জানতেও চাই না ।জানালায় আর সীমার মুখ নেই , স্মৃতি আছে। নিয়তি কি নিষ্ঠুর ! ওই রুমের জানালাটা বন্ধ হয়ে গেছে অনেকণ আগেই। আমি বাড়ির পথে পা বাড়ালাম । সীমাকে যে এতটা ভালোবাসতাম , আগে কখনো তা অনুভব করিনি । আজ সীমা দূরে চলে গেছে- স্বপ্নের আকাশও দূরে চলে গেছে। ওদিকে ঝুমু কি করছে কে জানে । ওরও বোধ হয় বিয়ে হয়ে যাবে। একদিন ঐ কিশোরীও ভুলে যাবে আমাকে । ওর স্মৃতির অরণ্যের আগাছা হয়ে যাব আমি । ওর সাময়িক আবেগ কেটে যেতে বেশি সময় লাগবে না ।

উইড়া যায়রে সোনার পঙ্খী - পইড়া থাহে ছায়া!



০১.০৮.১৯৯০

বুধবার

দুপুর ঃ ...........

মামা আজ আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসছেন । মামা জানেন , আমার কোন দোষ নেই। তিনি আমাকে ডেকে বললেন , নীলু তুই কোন চিন্তা করিস না । আপাতত বাড়িতেই লেখা পড়া কর । পরীার সময় আমি-ই দেখব। ও - আচ্ছা , তুই শুনিসনি বোধ হয় ঝুমুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । ছেলে প্রাইমারি স্কুলের শিক। বংশ খারাপ না। আমি অত্যন্ত খুশি হবার ভান করলাম । মামা অবশেষে বললেন , তোদের নিতেই এসেছি। আমি হেসে বললাম , মামা সবাই গেলে বাড়ি দেখবে কে ? আপনি মাকে নিয়ে যান - আমি না হয় বিয়ের দিন ... । মা বাধা দিয়ে বললেন , বাড়িতে রাধবে কে ? আর খাবি কি ? আমি বললাম ও নিয়ে চিন্তা করো না মা । রহিমা চাচী যেহেতু আছে , অসুবিধা হবার কথা নয় । মামা মাকে নিয়ে একটু আগে চলে গেছেন।









০৭.০৮.১৯৯০ইং

মঙ্গলবার

রাত ঃ ০৯.২২.০০

আজ ঝুমুর বিয়ে । আজ আমার যাবার কথা ছিল , কিন্তু শেষ মুহুর্তে সিদ্ধান্ত নিলাম কী দরকার ! মেয়েটাকে আর কষ্ট দিয়ে কি লাভ ? এরচে’ দূরে থাকাই ভাল । আচ্ছা ঝুমু কি সুখি হবে ? আমার প্রতি দূর্বলতাটুকুতো ওর কেটে যাবার কথা। আজ বিকেল থেকেই বৃষ্টি নামছে। আচ্ছা ঝুমুদের ওখানে কি এমন ঝুম বৃষ্টি নেমেছে? রাতুল কাল একবার যেতে বলেছে। কি দরকার কে জানে।



০৩.০৯.১৯৯০ ইং

সোমবার

রাত ঃ ১০.২৩.০৫

আজ রাতে খাবার সময় মা আবারো আমার বিয়ের কথা পাড়লেন । আমিও ভাবছি । মা একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন। কিন্তু বি,এ পরীার আগে বিয়ে করার কোন মানেই হয় না । মাকে তাই আজ জানিয়ে দিলাম । আর মেয়ে টেয়ে টুকটাক দেখতে বললাম । আর বললাম , এমন মেয়ে আমি বিয়ে করতে চাই , যাকে এই পর্যন্ত দেখি-ইনি । মা তো হেসেই খুন । মাকে আবার বললাম , বিয়ে করে বউকে খাওয়াবো কি ? মা হেসে বললেন , ততদিনে নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা হবে ।



৩০.১০.১৯৯০ইং

বুধবার

সময় ঃ ঘড়ি নষ্ট

আজ ঊনিশদিন পর সীমাকে দেখলাম । সীমাকে দেখে মনে হল , সে আগের চেয়ে বেশি সুন্দরী হয়েছে । ইদানীং সীমাকে দেখলেই ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে যাই। ওকে যে আমি কি বলবো ভেবে মরি। আজ ও আমাকে দেখেই হেসে ফেলল। হাত নেড়ে নেড়ে বলল , নীলুদা , আপনাকে তো দেখাই যায় না । কেমন আছেন ? আমি থতমত খেয়ে গেলাম । শুকনো হেসে বললাম , তোমার সম্বোধনের পাল্লাটা ইদানীং বড্ড ভারী লাগছে । বেশিদিন সহ্য হবে বলে তো মনে হয় না। আমি তাকিয়ে দেখি , সীমা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে । আমার হঠাৎ মনে হল, এই মেয়েটিতো আমারো হতে পারতো ! আমি একে সুখের চাদর দিয়ে ঢেকে হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে রাখতাম । সীমা অবাক হয়ে বলল , কি ভাবছেন নীলু ভাই । আমি ওকে কি করে বলি , কি ভাবছি । ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম , রাতুল নেই - না ?? সীমা না সূচক মাথা নাড়ল । আমি রাস্তায় উঠে এলাম । রাস্তায় আসতে আসতে মনে হল , এই মেয়েটির কাছ থেকে আমাকে অনেক দূরে চলে যেতে হবে । এভাবে বাঁচা যায় না ।

এইতো শুধু আমার জন্যে কারাগার ... কিন্তু আমি যাই কোথায় ? মামার বাসায় আর কোনদিন যাওয়া হবে কিনা সন্দেহ। আমার চারপাশে সীমাবদ্ধতার দেয়াল কাটা তার দিয়ে ঘেরা- ডিঙানোর কোন উপায় নেই ।



১১.১১.১৯৯০ ইং

রবিবার

রাত ঃ ১২.০২.১০

সুদর্শনা সীমা ,

মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যদি জীবনানন্দ দাশ হতে পারতাম । কিংবা তিনি যদি আজ বেঁচে থাকতেন , তবে তার কাছে গিয়ে বলতাম , দাদাবাবু , আমার সীমার জন্য একটি কবিতা লিখে দিন তো । সে কবিতা হবে পৃথিবীর অনন্য কবিতা । সে কবিতার সাথে কোন কবিতার তুলনা হতে পারে না । কিন্তু কবির হৃদয় আজ ঘাস !



সীমা ,

তুমি কি ভেবেছো কখনো রাতে ঘুম না এলে তার কি জ্বালা । অথচ তুমি স্বামীর বুকে মাথা রেখে কি শান্তিতে ঘুমাও । আমার দু’চোখে শুকনো মরিচ ভাঙ্গে রাত্রির ঢেউ। তবুও এটুকু ভেবে শান্তি পাই , তুমি সুখে আছ। হয়তো তুমি জানবে না , তোমাদের পৃথিবীর-ই একজন নিঃস্ব যুবক তোমাকে ভেবে ভেবে বয়স বাড়ায় । আজ তুমি কোথায় , আর আমি কোথায় ? বড্ড আপসোস থেকে গেল সীমা , রাত্রির পাপরিতে তোমাকে নির্মান করি নারী , দিনের আলোতে হৃদয়ে তা বিসর্জন দেই । তোমাকে ভালোবাসি এই পরম সত্যটুকু জানতে বড্ড দেরি করে ফেলেছি ।



সীমা , তোমার কি মনে আছে ? সেই যে তখন আমরা দূর্গাপুরে পড়ি । তুমি থ্রিতে , আমি ফাইভে । একদিন সকালে তুমি স্কুলে যাচ্ছ। নিতান্তই বালিকা তুমি । আমি দূুর থেকে দেখলাম তুমি গুটিগুটি পায়ে স্কুলে যাচ্ছ। তোমার হাতে শিউলি ফুলের মালা। আমি তোমার মালা নেব , তুমি দেবে না । আমি যখন তোমার মালা কেড়ে নিলাম , তুমি কেঁদেকেটে বাড়ি ফিরে গেলে। সেই মালাটি এখনো আমার কাছে আছে। চেনাই যায়না তা শিউলি ফুলের মালা । মালাটিকে নাকের কাছে নিয়ে বার বার গন্ধ নেয়ার চেষ্টা করি। গন্ধ নেই , স্মৃতি নেই । একদিন মালাটি তোমাকে ফিরিয়ে দিব। সরাসরি হয়তো দিতে পারবো না। হয়তো তোমার কোন সন্তান হবে। তুলতুলে সেই সন্তানটিকে কোলে নিয়ে আমি আদর করব। তোমার অল্েয সেই শিউলিমালাটি পরিয়ে দিব তোমার সন্তানের গলায় । হঠাৎ গলায় মালা আবিস্কার করে অবাক হয়ে বলবে , কে দিল এটা ? তুমি জানবে না কোনদিন। অথচ আমার ফেরত দেয়া হয়ে গেল!

সীমা , যদি কখনো আমার কাছে তুমি কিছু চাও , সে যাই হোক না কেন আমি তা দেব। অবশ্যই দেব । অথচ তোমার সাথে আমার আর দেখা হবে কি না তাই জানি না । পৃথিবীর সব সুখ তোমাকে পাহারা দিক । তুমি নিশ্চিন্ত থাক , আমার ভয়ঙ্কর হাত তোমাকে ছুঁবে না কোনদিন ।

- নিলয়



০১.০১.১৯৯১ ইং

মঙ্গলবার

ভোর ঃ ০৬.০০.০০

বেশ কিছুদিন পর আজ নামায পড়লাম । আজ নববর্ষ আমার জানাই ছিল না । হঠাৎ মনে পড়ল ঃ

সীমা ঃ তোমাকে ভুলে যেতে কষ্ট হয় । হৃদয় হাতড়ে নিশিদিন তোমার অস্তিত্ব অনুভব করি । ‘তুমি সুখি হও’ বিধাতার কাছে এই প্রার্থনা করতে ভুলি না কখনো ।

রাতুল ঃ তোকে যে কি রকম ভালবাসি .......

ঝুমু ঃ কত দিন পর মেয়েটিকে মনে পড়ল। কেমন আছে ঝুমু , জানতে ইচ্ছে করেনি কোনদিন । তবে আজ প্রচন্ড জানতে ইচ্ছে করছে ।

মা ঃ আমার জানা নেই .,...............

বাবা ঃ পৃথিবী আর আগের মত নেই । খুব জানতে ইচ্ছে করে , স্বর্গের পথে দাঁড়িয়ে তুমি কি পৃথিবীর ওই নত্রভরা আকাশ দেখতে পাও ! বাবা , আজ থেকে বহুকাল পরে আমিও তোমার মত ঘাস হবো , মাটি হবো , আকাশ হবো- আরো কত কি ! তুমি টের পাবে তো ?



১৪.০২.১৯৯১ ইং

বৃহস্পতিবার

রাত ঃ০১.০০.০০

আজ পূর্ণিমা । আকাশ ছাওয়া জোছনা । আজ রাতে অনেকণ পথে হাঁটলাম । জলঝরা নদী পর্যন্ত .... ঘন্টাখানেক ছিলাম ।



২৩.০২.১৯৯১ ইং

শনিবার

সকাল ঃ ০০.০০.০০

ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট পড়াতে খারাপ লাগে না । সময়টা বেশ ভালই কেটে যায় । কিন্তু মার বুকের ব্যথাটা বেড়েই চলেছে । বিকেলে একবার ডাক্তার চাচার কাছে যেতে হবে ।













১৩.০৩.১৯৯১ ইং

বুধবার

রাত ঃ ০৩.০০.০০

মা আমাকে আজ বেশ বকাঝকা করলেন । রাতে হাঁটাচলা মা একদম সহ্য করতে পারেন না । কিন্তু রাতে ঘরে যে ভাল লাগে না । নিজেকে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে । নাহ্ আমাকে সুবোধ বালক হয়ে যেতে হবে। একটা চাকরি পেলে ভালই হতো । বিয়ে করে এক্কেবারে সংসারী হয়ে যেতাম ।



২৬.০৩.১৯৯১ ইং

মঙ্গলবার

দুপুর ঃ ১২.০০.০০

আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস । সকালটা বেশ ব্যস্ততার মাঝে কাটিয়েছি । গ্রামের স্কুলটিতে এই দিবস উপলে অনুষ্ঠানে আমাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়েছে । রাতুল যে এত ভাল কবিতা লিখতে এবং আবৃত্তি করতে পারে আমার জানাই ছিল না ।



১৭.০৪.১৯৯১ ইং

বুধবার

০৭.০৩.০১

এখন আমি বাড়ি থেকে তেমন বের হই না । কেমন অলস হয়ে গেছি আমি ! মা আমাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। আজ সকালে মা বললেন , নীলু তোর কি হয়েছে সত্যি করে বলতো । আমি কি আর বলি ? হেসে দিয়ে মার আঁচল ধরে বললাম , তেমন কিছু না । সামনে আমার পরীাতো , তাই টেনশনে আছি । পাশ না করলে তো চাকরি বাকরি পাওয়া যাবে না ! মা অবাক হয়ে বললেন , সে কিরে ! তুই ফেল করবি কেন ? তুই কি ছাত্র হিসেবে খারাপ ? আমি আর কোন কথা বললাম না । মাকে কি করে বলি , আমার আর পড়তে ভালো লাগে না ।



০৭.০৬.১৯৯১ ইং

শুক্রবার

সময় ঃ জানা নেই ।

অনেক দিন পর সকালে ঘুম থেকে উঠেই সীমাকে মনে পড়ল।



২৯.০৭.১৯৯১ ইং

সোমবার

সময় ঃ ১২.২৩.২৮

এখন ডায়েরি লিখতে ইচ্ছে করে না । কি লিখবো , আর কি - ই বা হবে ! তাছাড়া ইদানিং বেশ পড়াশোনা করছি । পাশ করতে হবে তো !



২২.১০.১৯৯১ ইং

মঙ্গলবার

সময় ঃ নাই

ঝুমু কেমন আছে আমি জানি না । মামার বাড়িও আর আমার যাওয়া হয়নি।



০১.১১.১৯৯১ ইং

শুক্রবার

সকাল ঃ ০৭.৩০.০০

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাকে বললাম , মা আমার পরীা তো এসেই গেল । পাত্রী-টাত্রি ঠিক করেছো তো ? মাতো হেসেই খুন । বললেন , তোর মামাকে সব বলেছি । ও- ই সব ঠিকঠাক করে ফেলবে । আমার মাথায় হঠাৎ এক ঝাঁক চিন্তা ছুটে এলো । বিয়ে তো করবো । কিন্তু বউকে খাওয়বো কি ? তাছাড়া মার অসুখটাও আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। আমাকে একটা কিছু করতেই হবে ।



১৪.০১.১৯৯২ ইং

মঙ্গলবার

বিকাল ঃ ০৪.৩০.০০

আজ আমার পরীা শেষ হলো । ইংরেজিটা একটু খারাপ হলেও পাশ করে যাব হয়তো । মা একটু আগে মামার বাড়ি গেছেন । মামাই এসে নিয়ে গেছেন। আমার বিয়ের পাত্রি দেখতে বিয়েটা শেষ পর্যন্ত বোধ হয় করতেই হলো ।



১৬.০১.১৯৯২ ইং

সীমাকে আজ বেশ রোগা দেখালো । হয়তো অনেক দিন পর মেয়েটিকে দেখেছি - তাই এমন মনে হলো। কিংবা এও হতে পারে , ওর কোন অসুখ হয়েছিল ।রাতুলকেও অনেক দিন দেখিনা । শুনলাম ও একটি চাকরি পেয়েছে । আমার সাথে দেখা করেনি । কি দরকার । মা গত কাল-ই বাড়ি ফিরে এসেছেন । মামা আমাকে বললেন , মেয়েটি খুব ভালো । আরবি পড়া জানে । তবে এদিকে তেমন লেখাপড়া করেনি । কাস এইট পর্যন্ত পড়া । বংশ ভালো । আমি বেশ লাজুক মুখে বললাম , তোমরা যা ভালো বোঝ তাই করো মা। আমার কোন আপত্তি নেই ।



২৪.০১.১৯৯২ ইং

রাত ঃ ১১.৪০.০০

আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামি শুক্রবার । মামা বলেছেন , ঐ দিনটি নাকি খুবই ভালো । আচ্ছা যে মেয়েকে আমি জীবনেও দেখিনি , সে এক রাতে আমার হয়ে যাবে ? মেয়েটির বয়স বোধহয় খুবই কম। চোদ্দ পনের হতে পারে , আবার কমও হতে পারে । আচ্ছা , মেয়েটির চোখ কেমন, মুখ কেমন ! সীমার মত হয়তো না । দুর ........... কি সব চিন্তা মাথায় আসছে । মা যেহেতু মেয়েটিকে দেখে শুনে আনছেন , তাহলে নিশ্চয়ই মেয়েটি খারাপ না ।



০২.০২.১৯৯২ ইং

রবিবার

রাত ঃ ১২.০০.০০

মেয়েটিতো মনে হচ্ছে ঘুমে খবই কাতর । কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে নূরজাহান ঘুমন্ত নারীকে এত সুন্দর দেখায় ! একটু ছুঁয়ে দেখবো নাকি ? নাহ - থাক । জেগে উঠতে পারে। আচ্ছা নূরজাহানের ডাক নামটা কি ? এক সময় জেনে নিতে হবে। আচ্ছা ঐতিহাসিক নূরজাহানের আরেক নাম ছিল মেহেরুন্নেছা । আমি নুরজাহানকে মেহেরু বলেই ডাকবো । আমার পাশে শুয়ে থাকা এই কিশোরী মেয়েটি এখন পুরোপুরি আমার , ভাবতে কেমন লাগে । আচছা , মেহেরু যদি কখনো জানে আমি একজনকে ভালবসতাম , তাহলে সে কি কষ্ট পাবে ? নিশ্চয়ই পাবে । এই নির্দোষ মেয়েটিকে কখনোই আমার ডায়রিটা দেখতে দেয়া যাবে না ।



২১.০২.১৯৯২ ইং

শুক্রবার

ভোর ঃ ০৬.২৩.০০

মেহেরু আজ খুব ভোরে ডেকে তুলেছে আমাকে। ফিক করে হেসে দিয়ে বলেছে , মালাটা শহিদ মিনারে দিয়ে আসেন । আামি চোখ মুখ করুণ করে বললাম , তুমি কি কখনো আমাকে তুমি করে বলবে না ? মেয়েটির সে কি হাসি ! আমি এমন কি হাসির কথা বলেছি যে এমন করে হাসতে হবে ?

মেয়েটি কারণে অকারণে হাসে বলেই , আমি মেহেরুকে ভালবাসি ।



১৬.০৩.১৯৯২ ইং

সোমবার

রাত ঃ ০৯.০০.০০

তিনদিন মেহেরুকে দেখিনা । আচ্ছা , মেহেরুও কি আমাকে ভাবছে ? যদি জানতে পারতাম !

২৫.০৩.১৯৯২ ইং

বুধবার

দুপুর ঃ ০০.০০.০০

মামা আজ দারুণ একটা সুখবর এনেছেন। আমার একটা চাকরি হয়েছে । মামা বলেছেন , কেরানী পদ তাতে অসুবিধা নেই । বেতন ভাল । তাছাড়া পরবর্তীতে বি , এ পাশের সার্টিফিকেটে প্রোমোশনের সুযোগ আছে । আমি মামার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম । আজই বিকালে মেহেরুকে আনতে যেতে হবে । আহ মেহেরু ! আমি তোমার সম্রাট হয়ে গেছি ।



২৯.০৪.১৯৯২ ইং

বুধবার

রাত ঃ ০১.০০.০০

চাকরিটা ভালই লাগছে । সমস্যা একটাই , মেহেরুকে সপ্তাহে মাত্র একদিন দেখতে পাই । মেহেরু আজই আমাকে এই অভিযোগে অভিযুক্ত করল । ও অভিমান করলে কি যে সুন্দর লাগে ! কিন্তু আপাতত কিছু করার নেই । মা বললেন , হ্যাঁরে নীলু , তোর বউকে তোর কাছে নিয়ে যা না । আমি কপট রাগে বললাম কি যে বল না মা ! তাছাড়া তুমি একা হয়ে যাবে- আর শহরে দুজনের একসাথে চলবে না। মেহেরুকে আজ সুন্দর একটা শাড়ি কিনে দিয়েছি। মা’র জন্য কিনেছি একটা চাদর । অফিসের বড় সাহেব খুবই ভাল লোক । বিশেষ করে আমাকে খুবই সুনজরে দেখেন। সেদিন বড় সাহেব ডেকে বললেন , নিলয় - তোমার বি,এর রেজাল্ট কবে ।



২২.০৫.১৯৯২ ইং

শুক্রবার

দুপুর ঃ ০২.০০.০০

অফিসের কাজে খুবই ব্যস্ত আছি । মাঝে মাঝে মেহেরুকে ভীষণ মনে পড়ে যায় ।



২৯.০৫.১৯৯২ ইং

শুক্রবার

দুপুর ঃ ০১.৩০.০০

অনেক দিন পর সীমাকে মনে পড়ল । সুদর্শনা ওই নারীটি কেমন আছে , ইচ্ছে করলেও জানতে পারি না ।



২৫.০৬.১৯৯২ ইং

বৃহস্পতিবার

সন্ধ্যা ঃ ০৭.০০.০০

আমার সেকেন্ড ডিভিশনটা সামান্যর জন্য ছুটে গেছে। ডায়রি লেখার সময় হাতে নেই । মেহেরু একটু আগে হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল । ওর যে কি স্বভাব ? যদি মা দেখে ফেলতো ।



০৩.০৯.১৯৯২ ইং

বৃহস্পতিবার

রাত ঃ ১২.০৫.৩০

আজ বড় সাহেব রুমে ডেকে নিয়ে বললেন , নিলয় তোমার খুব তাড়াতাড়ি-ই প্রোমোশন হবে। আমি তাঁর পা ছুঁয়ে ছালাম করলাম ।



২৩.১২.১৯৯২ ইং

বুধবার

রাত ঃ ১১.২৯.৩৫

আমার মনটা খুবই খারাপ । আমি ভেবেছিলম রাতুল আমাকে ভুলে গেছে। কিন্তু ভুলেনি । তবে অনেক - অনেক দিন পর ওর চিঠি পেলাম ঃ

সুপ্রিয় নীলু ,

হয়তো অভিমানের পাহাড় জমে গেছে তোর বুকে । কিন্তু আমাকে ভুল বুঝিস্ না। আমার চাকরিটা ভীষণ বাজে । কাজের এত চাপ যে চিন্তাই করতে পারবি না। মাঝে মাঝে মনে হয় চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণ গৃহপালিত হয়ে যাই। আজ আমার মনটা এত খারাপ যে কি লিখব মাথায় কিছুই আসছে না। ওহ্ আমার ভাবি - মানে তোর মেহেরু কেমন আছে ? আমার অভিনন্দন জানাস ওকে ।

নীলু , একটু আগে ডাক্তারের রিপোর্টে জানলাম , সীমা কোন দিন মা হতে পারবে না। বিধাতা কি নিষ্ঠুর ! এই পরম সত্য কথাটা আমি জানি , আর শুধু তোকে জানালাম । আর কেউ জানে নারে। আমি সীমাকে কোন দিন বলতে পারবো না। আমি সীমাকে প্রচন্ড ভালবাসি নীলু ! আমার বংশধরের কোন প্রয়োজন নেই ।



রাতুল

০১.০১.১৯৯৩ ইং

শুক্রবার

রাত ঃ ১০.৩০.০০

নববর্ষ হিসাবে আজ মেহেরুকে তিনটা চুমু দিয়েছি ।



০৪.০২.১৯৯৩ ইং

বৃহস্পতিবার

রাত ঃ ০০.০০.০০

এই রোজার ছুটিটা মেহেরুকে নিয়েই কাটাব। রাতুলদের বাসায়ও একবার যেতে হবে । সীমাকে কতদিন দেখি না ! হাজার বছর পার হয়ে গেছে আমার পৃথিবীর উপর দিয়ে ।



১২.০৩.১৯৯৩ইং

শুক্রবার

বিকেল ঃ ০৪.০০.০০

সীমার চোখ দু’টি ঠিক আগের মতই আছে। মেয়েটি আর একটু লম¦া হয়েছে বোধহয় । নয়তো রোজা থাকতে থাকতে মেয়েটি কিছুটা রোগা হয়ে গেছে ।



১৩.০৬.১৯৯৩ ইং

বরিবার

রাত ঃ ১২.০০.০০

আজ মেহেরু আমাকে এমন একটি খবর শুনিয়েছে যে আমি আনন্দে আকাশে উঠে গেছি । আমি নাকি বাবা হব। মেহেরুকে জড়িয়ে ধরে বললাম , বলতো মেহেরু, আমাদের ছেলে হবে না মেয়ে হবে ? ও খানিকণ হাত গুনে গুনে শেষে বলল , ছেলে হবে । আমি বললাম , কনো না । হবে মেয়ে । মেয়েটি হবে তোমার চেয়েও সুন্দরী । মেহেরুতো রেগে হাত - পা ছুঁড়ে বলল , ছেলে হবে । আমি হো হো করে হেসে দিয়ে বললাম , আচ্ছা ছেলে হলে তুমি নাম রাখবে , আর মেয়ে হলে আমি । ঠিক আছে ? মেহেরু আমার মুখে হাত চেপা দিল । বলল , চুপ - আম্মা শুনতে পাবে । মেহেরুর এত আনন্দ বিধাতা কোন দিন কেড়ে নেবেন নাতো ! মেহেরুর আনন্দ আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায় ।



৩১.১০.১৯৯৩ ইং

শনিবার

রাত ঃ ১০.০০.০০



মেহেরুকে ভারী কাজ করতে নিষেধ করে দিয়েছি। আর সাবধানে থাকতে বলেছি। মেহেরুতো হেসেই অস্থির । ও বলল , আমাকে নিয়ে তুমি এত ভাব কেন ? তোমার শরীরের অবস্থা দেখেছো ? ওখানে কি যে খাও তুমিই জান।







১৭.১২.১৯৯৩ ইং

শুক্রবার

রাত ঃ ০০.০০.০০

আজ জুমআর নামায পড়ে মেহেরুর জন্য আল্লাহর কাছে অনেক প্রার্থনা করেছি । মেয়েটি দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। মনে হয় মেহেরু আর মেহেরু নেই , অচেনা কেউ । আমার দিকে কেমন ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে । সহ্য হয় না ।



০১.০২.১৯৯৪ ইং

মঙ্গলবার

রাত ঃ ০৮.০০.০০

মেহেরু তার বাবর সাথে চলে গেছে। যাবার সময় আমাকে বারবার বলেছে , সময় হলেই যেন চলে যাই । মেহেরুকে আজ নতুন রূপে দেখতে পেলাম । মনে হল , ও আমাকে ছেড়ে যেতেই চায় না। কাঙ্গালের মত আমাকে বলছিল , তুমিও না হয় চল। আমি কিছু বলতে পারি নি। একবার মনে হয়েছিল , ও এখানেই থাক । কিন্তু মা রাখতে রাজি হয়নি ।



১১.০২.১৯৯৪ ইং

শনিবার

দুপুর ঃ ০০.০০.০০

এগারো দিন মেহেরুকে দেখিনা । ও কেমন আছে কে জানে ! অফিস থেকে বড় সাহেব আমাকে এক সপ্তাহের ছুটি দিয়েছে। আগামি কালই মেহেরুকে দেখতে যাব।



১২.০২.১৯৯৪ ইং

শনিবার

রাত ঃ ০৩.১০.২০

মেহেরু চলে গেছে। কতদূরে গেছে , আমার জানা নেই । হয়তো অনেক দূরে Ñ নয়তো দশ হাত দূরে ঐ শিউলি তলায় । মেহেরু কি নিয়ে গেছে তাও জিজ্ঞেস করা হয়নি। হয়তো কিছু সুখ Ñ কিছু দুঃখ - কিছু প্রেম - কিছু কষ্ট ! কিন্তু নদীকে দিয়ে গেছে। আজ ঠিক যে সময় শশুর বাড়ির দিকে রওয়ানা হবো , ঠিক সেই সময় আমার চাচা শশুর এসে উপস্থিত । বললেন , ভোর ছয়টার দিকে মেহেরু নদীকে দিয়ে চলে গেছে । মেহেরুর কবরটা ওরা ওখানেই দিতে চেয়েছিল , আমি দিতে দেইনি। আমার জিনিস আমি নিয়ে এসেছি । নদীকে ও নিয়ে এসেছি । মেহেরু তার মেয়েকে দেখে যেতে পেরেছে কিনা , আমি জানি না । মেহেরুকে চুপি চুপি একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম , উত্তর পাইনি ।

আমরা দু’জন একটি গাঁয়েই থাকি

এই আমাদের একটি মাত্র সুখ ,

তা ..... র ব ....নে ....

মেহেরু তুমি কথা রাখলে না , কেউ কথা রাখে না !



১৩.০২.১৯৯৪ ইং

রবিবার

রাত ঃ ০২.১৫.৩৪

মেহেরু, এতদিন পর বুঝেছি - নিঃসঙ্গতাই আমার জীবনের পরম বন্ধু ।



২৪.০২.১৯৯৪ ইং

বৃহস্পতিবার

রাত ঃ ০০.০০.০০

এখন আর বাড়ি আসতে ইচ্ছে করে না । কি হবে বাড়ি এসে ?





২৭.০৫.১৯৯৪ ইং

শুক্রবার

রাত ঃ ০০.০০.০০

মা নদীকে নিয়ে খুব কষ্টে আছেন । মেয়েটা বেঁচে আছে এটাই আমার কাছে আশ্চর্য । ভেবেছিলাম , হয়তো বাঁচবে না । আমার শাশুড়ি নদীকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন , আমিও দেইনি , আম্মাও দেননি। নদীকে আমি-ই বড় করব ।



১১.০৮১৯৯৪ ইং

বৃহস্পতিবার

বিকাল ঃ ০০.০০.০০

নদীর জ্বর। মেয়েটি আমার কাছে আসতেই চায় না।



১৯.১১.১৯৯৪ ইং

শনিবার

নদীর হাসি দেখতে ছুটে এলাম । মেয়েটির হাসি অসম্ভব সুন্দর । হাসলে ওর চোখ দুটো ছোট হয়ে যায় । ঠিক নূরজাহানের মত। কিন্তু নদী আমার কলে আসতেই চায় না। মা আমার মেয়েটিকে পরম যতেœ গড়ে তুলছেন।



৩১.১২.১৯৯৪ ইং

শনিবার

রাত ঃ ০৯.৩১.৪৯

আজ রাতে খাবার সময় মা কথায় কথায় বললেন , নীলু কত কাল আর একা একা থাকবি বাপ। আমি তাড়াতাড়ি মাকে বাধা দিয়ে বললাম , মা- ও সব নিয়ে তুমি আর চিন্তা কোরো না । আমার জীবনে আর বিয়ে নেই । মা আমার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে রইলেন। তারপর দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন , মেহেরু খুব ভাল ছিলরে । আমি চুপ করে রইলাম ।



১২.০২.১৯৯৫ ইং

রবিবার

রাত ঃ ১১.৪৫.০০

আজ বিকেলে নদীকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি । হঠাৎ নিজেকে আবিস্কার করলাম মেহেরুর কবরের পাশে । নদীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম , নদী , তোর মা স্বার্থপরের মত তোকে ছেড়ে আমাকে ছেড়ে কী নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে ! তুই কি তাকে মা করতে পারবি ? তোর মা কিন্তু খুব ভালো ছিল , এই ধর , তোর চেয়েও ভালো । তোর মা আর কোন দিন আসবেনারে । আরে আরে কাঁদছিস কেন ? ধুর বোকা ! আমি আছি না ! আমার বুকে তোকে লুকিয়ে রাখবো । কোন দুঃখ তোকে কোন দিন ছুঁতে পারবে না।



২৫.০৫.১৯৯৫ ইং

বৃহস্পতিবার

রাত ঃ ১০.০০.০০

নদী দেখতে ঠিক মেহেরুর মতন হয়েছে । সেই মুখ , সেই চোখ - সেই হাসি ! হৃদয় ছুঁয়ে যায় । শুধু মেহেরু কোনদিন আর আমার বুকে ফিরে আসবে না।



৩০.০৬.১৯৯৫

শুক্রবার

নিশি ঃ ০০.০০.০০

ঝুমুর সাথে আমার আর দেখা হয়নি । শুনেছি চাঁদের মত সুন্দর একটি ছেলে হয়েছে ওর। ওরা সুখেই আছে মনে হয় ।





০১.০৯.১৯৯৫ ইং

শুক্রবার

দুপুর ঃ ১২.০০.০০

মার অসুখটা আমাকে ভীষণ দুশ্চিন্তায় ফেলেছে । চাকরি করতে আর ভালো লাগে না ।



১৬.১১.১৯৯৫ ইং

বৃহস্পতিবার

রাত ঃ ১০.৩০.৫০

মার অসুখ কিছুটা কমেছে। তবু আমার ভীষণ চিন্তা হয় । মা’র যদি কিছু একটা হয়ে যায় , তাহলে আমি অথৈ সাগরে পড়বো।



১৮.১২.১৯৯৫ ইং

সোমবার

রাত ঃ ১২.০০.০০

নদী আমার পাশে শুয়ে আছে। মেয়েটি বেশ রোগা হয়ে গেছে । এখনো ওর গায়ে বেশ জ্বর । গত তিন দিন নদীর গায়ে ভীষণ জ্বর ছিল। মেয়েটির কি দূর্ভাগ্য ! মা কাকে বলে তাই সে জানল না , বুঝল না । এদিকে মা’র অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ডাক্তার খুব একটা আশাবাদি হতে পারছেন না । আমি যে কি করব ভেবে উঠতে পারছি না । চাকরিটা বোধহয় ছেড়ে দিতেই হবে। আজকাল মা আমার দিকে করুণ চোখে তাকায় । হৃদয় ছিঁড়ে যেতে চায় । মাও যদি চলে যায় , তাহলে আমি কি করব !



২২.১২.১৯৯৫ ইং

শুক্রবার

দুপুর ঃ ০৩.০০.০০

নদী এখন বেশ সুস্থ। আমাকে দেখলেই আমার কোলে সে ঝাঁপিয়ে আসে।



১২.০২.১৯৯৬ ইং

সোমবার

রাত ঃ ১২.০০.০০

দুইবছর হয়ে গেল মেহেরু চলে গেছে । নদীর বয়সও দুই বছর । সময় কত তাড়াতাড়ি চলে যায় ! মেহেরুর হাসি আজও আমাকে মাতাল করে দেয় ।



২৮.০৩.১৯৯৬ ইং

বৃহস্পতিবার

রাত ঃ ১০.২১.০৯

নদী দু একটি কথা বলা শিখেছে । আজ রাতুল ও সীমা এসেছিল। আমি বাড়ি ছিলাম না।



০৫.০৪.১৯৯৬ ইং

শুক্রবার

রাত ঃ ০২.০০.০০

মাও চলে গেছে। হৃদয়ে আজ সুখ - দুঃখের তেমন কোন অনুভূতি টের পাচ্ছি না। সুখ নেই - দুঃখ নেই - কষ্ট নেই !

মা , নদীকে ফেলে তুমিও চলে গেলে ... আমি এখন ওকে নিয়ে কি করি ? ওকে মানুষ করতে পারবো তো ! মা , নদী কে ওরা নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আমি নদীকে দিয়ে কি নিয়ে থাকবো বলো ? তাই তো ওকে রেখে দিয়েছি । ভাবছি চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে নদীকে নিয়েই থাকবো। আহ মা ! দু’চোখ বড্ড বেশি জ্বালা করে ।





০৬.০৪.১৯৯৬ইং

শনিবার

রাত ঃ ০১.০০.০০

আমার সব সুখ মা’র কাছে জমা করে রেখেছিলাম । তিনি চলে গেছেন , ফিরিয়ে দেননি কিছুই ।



৩০.০৪.১৯৯৬ ইং

মঙ্গলবার

দুপুর ঃ ০০.০০.০০

আমি ভালোই আছি !



১২.০৫.১৯৯৬ ইং

রবিবার

সন্ধ্যা ঃ ০৭.১৩.২২

আজ নদীকে দূর্গাপুরের মাঠ দেখিয়ে এনেছি। ঠিক চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে নদীর কানে চুপি চুপি বলেছি , নদী , তোর মা একদিন ঠিক এই যায়গায় দাঁড়িয়ে বলেছিল ........



০১.০৬.১৯৯৬ ইং

শনিবার

০৯.০৩.৫৮

নদী মাঝে মাঝে খুব কান্নাকাটি করে । আমি ওকে বুকে টেনে নিয়ে বলি , একটু সহ্য কর মা । একদিন আমাদেরও সুদিন আসবে !



১৮.০৬.১৯৯৬ ইং

মঙ্গলবার

দুপুর ঃ ০০.০০.০০

রহিমা চাচির উপকার কোন দিন শোধ করতে পারবো না । রান্নাবান্না থেকে আরম্ভ করে নদীর দেখা শোনা ভার প্রায় সমস্তটাই তিনি নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছেন। নদী রহিমা চাচিকে কি এক বিচিত্র শব্দ করে সম্বোধন করে !



১২.০৯.১৯৯৬ ইং

বৃস্পতিবার

রাত ঃ ০৮.০০.০০

নদী আমার কোলে শুয়ে আছে ।



১৬.১০.১৯৯৬ ইং

বুধবার

সকাল ঃ ০৬.৩০.০০

নদী বেশ দ্রুত কথা বলা শিখে যাচ্ছে । আমাকে ও বাবা ডাকে । কি সুখ ........





০৮.১১.১৯৯৬ ইং

শুক্রবার

রাত ঃ ০৯.৩৩.১৭

ঝুমুর সাথে আমার আর দেখা হয়নি। আর কোন দিন দেখা হবে কিনা তাও জানা নেই। ঝুমু কেমন আছে , মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে ।



২৯.১২.১৯৯৬ ইং

রবিবার

বেলা ঃ ১১.০৩.৪০

নদী আমাকে কাঙ্গালের মত ভালোবাসে । এই মেয়েটিকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না । হয়তো নদীও পারবে না।



০১.০১.১৯৯৭ ইং

বুধবার

বিকাল ঃ ০০.০০.০০

নদীকে নববর্ষের উপহার হিসেবে সুন্দর দেখে জামা প্যান্ট দিয়েছি। মেয়েটি খুব সুন্দর হবে । হয়তো সীমার চেয়েও ।



১২.০১.১৯৯৭ ইং

রবিবার

বিকেল ঃ ০৩.৩০.০০

নদী বোধহয় কিছুটা তোতলা হবে। কেমন তু তু করে কথা বলে । আজ আমাকে ও বলল , তু তু তুমি বাল । তারপর সে কি হাসি। আমি নদীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম , আমি আর কিছু চাই না মামনি। তুই ই সব - আমার পৃথিবী - আমার আকাশ ......



১২.০২.১৯৯৭ ইং

বুধবার

রাত ঃ ১০.৫৫.০০

নদীর জন্মদিন পালন করা হয়নি । সব ঠিকঠাক ছিল। হঠাৎ মেহেরুকে এমন ভাবে মনে পড়ে গেল যে ...... তবু নদীকে আজ দোয়েল পাখি চিনিয়েছি।আর চিনিয়েছি ওর মার কবরটাকে । নদী আমার মুখের দিকে কেমন অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল।



২৭.০২.১৯৯৭ ইং

বৃহস্পতিবার

রাত ঃ ০২.১৬.৪৮

্ আজ বিকেলে নদীকে জলঝরা নদী দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম । নদীর কপালে একটি চুমু দিয়ে নদীটি দেখিয়ে বললাম , বলতো মা , তুই সুন্দর বেশি না এই নদীটি সুন্দর বেশি ! নদী এক গাল হেসে বলল , আমিই তো বাবা ! হাসতে হাসতে আমার চোখে পানি এসে গেল। তোকে বললাম , তোর মার বড্ড দূর্ভাগ্য , তোকে দেখে যেতে পারলো না । সন্ধ্যায় বাড়ির পথে ফিরছি । হঠাৎ রাতুলের সাথে দেখা। সে আমাকে ছাড়লই না । প্রায় জোর করেই আমাকে আর নদীকে নিয়ে গেল ওর বাড়িতে।গল্প করতে করতে বেশ রাত করেই ফেললাম। নদী আমার কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। সীমা হঠাৎ আমাকে বলল , নীলুদা আপনি কেমন আছেন ? আমি হঠাৎ থতমত খেয়ে গেলাম । তারপর হো হো করে হেসে দিয়ে বললাম , তোমাদের কি মনে হয় বলতো ! তারপর ঠিক যে সময় উঠে দাঁড়াবো , সেই সময় সীমা আমাকে হাসি মুখে বলল , নীলুদা- আপনার কাছে একটা জিনিস চাইবো - দিবেন ? আমি অবাক হয়ে তাকালাম সীমার দিকে । সীমার চোখ - সীমার মুখ .... !

আমি মনে মনে সীমাকে বললাম , তোমাকে সব দিতে পারি সীমা । তারপর আমিও হেসে দিয়ে বললাম , একবার চেয়েই দ্যাখ না ! দিতে পারি কিনা !! সীমা আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে বলল , আমি নদীকে চাই । আমার বুকের অত্যন্ত গভীরে কেমন যেন করে উঠলো । মূহুর্তের জন্য। তারপর ঘুমন্ত আমার নদীকে ছোট্ট একটি চুমু দিয়ে সীমার কোলে তুলে দিলাম । নদী , এটুকু জানিস মামনি , সীমাই তোর মা !!



প্রিয় পরীকে ,

যাকে ছোঁয়া যাবে না জেনেও , যার জন্য আমার হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে ।

০১.০৯.২০০০ইং

বাজিতপুর,রাজবাড়ি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ৯:৪৯

কীর্ত্তিনাশা বলেছেন:
এটি একটি নিরীহ লেখা । ইন্টারমিডিয়েট থাকাকালীন সময়ে কাঁচা আবেগ নিয়ে গল্পটি লিখেছিলাম । হুবহু সেভাবেই তুলে দিয়েছি । কারো ভাল লাগলে ধন্য হবে আমার সেই কাঁচা নিরীহ আবেগ ।

২| ০৭ ই মে, ২০১৩ সকাল ৮:৫৬

সমানুপাতিক বলেছেন: লেখা বেশী বড় হলে দুই বা তিন পর্বে দিতে পারেন, তাতে পড়ার আগ্রহ বজায় থাকে পাঠকের ।

৩| ২৯ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

ভাল লিখেছেন

৪| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:২৪

কীর্ত্তিনাশা বলেছেন: হুম @সমানুপাতিক দা
ধন্যবাদ @ কান্ডারী অথর্ব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.