নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কে এই শুভ ?

নিজের সম্পর্কে বলার মত তেমন কিছুই নাই ।খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিরাবের সাধারণ একজন ছেলে আমি ।আমার পরিবারে বাবা ,মা , দুই বোন আছে। তেমন কোন বিশেষত্ব নাই ।তবে মোটামুটি সব কিছুই একটু একটু পারি ।তবে একটা কাজ একদম ই পারি না সেটা হচ্ছে কাউকে নিজের কাছে ধরে রাখা ।আজ পর্যন্ত এই কাজ টা কখনও করতে পারি নাই ।কেউ আমার খুব কাছে চলে আসলে সে বেশিদিন থাকে না ।একসময় কোন না কোন কারনে দুরে চলে যায় । সবাই হয়ত এটা ভাবতেছেন যে ছ্যাকা খেয়ে এসব বকছি ।না সেরকম কিছু না ।একজন কে ভালবাসি তবে সেটাই আমার প্রধান সমস্যা ।পারিবারিক কিছু কারনে ভালবাসাটা এলোমেলো হয়ে গেছে আর সাথেজীবনের অনেক কিছুই নষ্ট করে দিয়ে গেছে ।অনেকের সাথে এই কারনে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে ,যারা আমার খুব প্রিয় কিছু মানুষ ছিল ।।তাদের অনেকেই এখন আমার সাথে কথাই বলে না । বয়স বেশি হয় নি ।তবে এই ছোট জীবনেই জীবনের অনেক কিছুই দেখে ফেলছি ।সফলতা ,ব্যার্থতা ,সফলতার পর সবার অভিনন্দন ,ব্যার্থতার পর সবার ব্যাবহার এসব বিষয় গুলো খুব ভালভাবে দেখছি ।অনেক কিছু উপলব্ধিও করছি । একটা কথা জোর দিয়ে বলতে পারি সেটা হল দুনিয়াতে স্বার্থ ছাড়া কেউ এক পা এখন আর ফেলে না ।এখন সবাই স্বার্থপর ।তাই স্বার্থপর হওয়ার চেষ্টায় আছি আমার ফেসবুক আইডি লিঙ্ক : https://www.facebook.com/keishuvo

কে এই শুভ ? › বিস্তারিত পোস্টঃ

দাগ

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৪

(গল্পটা সার্ফ এক্সেলের হংকং যাওয়ার কন্টেস্টের জন্যে লিখসিলাম। হুদাই। থিম ছিলো "দাগ থেকে দারুণ কিছু হওয়া।" )

মিতিনের বয়স ৬ বছর। ও শহরে থাকলেও ডানপিটেপনায় গ্রামের দুরন্ত ছেলেমেয়েরাও পেরে উঠবে না ওর সাথে। মিতিনের বাবা-মাও তাকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেন এ ব্যাপারে। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পরেই কোচিংয়ে না পাঠিয়ে বিকেলে ছাদে খেলার সুযোগ করে দেন। ছাদ ছাড়া আর গতি কী! ওদের বাসার আশেপাশে যে কোন মাঠ নেই! মিতিনদের ছাদটা বেশ বড়। তারা ছাদে কোর্ট কেটে ব্যাডমিন্টন খেলে। দিব্য হলো মিতিনের বেস্ট ফ্রেন্ড। সে পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে। বয়সে মিতিনের চেয়ে ৩ বছরের বড় বলে মিতিনের প্রতি খুব খেয়াল রাখে সে। এই যেমন মিতিন পড়ে গিয়ে ব্যথা পেল কী না, খেলার সময় তার সাথে কেউ পয়েন্ট চুরি করছে কী না এসব। একদিন মিতিন দিব্যর কাছে আবদার করে বসলো,

দিব্য ভাইয়া, ছাদে খেলতে আর ভালো লাগে না। চলো না মাঠে গিয়ে খেলি!

কিন্তু মাঠ তো অনেক দূরে। আর ওখানে গেলে তোমাকে খেলায় নেবে দুষ্ট ছেলেরা? আঙ্কেল আন্টি যেতে দেবে?

দিবে! দিবে! আমি আব্বুকে বলেছি। আব্বু বলেছে আমাদেরকে নিয়ে যাবে মাঠে। সেখানে গিয়ে আমরা ক্রিকেট খেলবো, ফুটবল খেলবো, ইচ্ছেমত ছোটাছুটি করবো!

আঙ্কেল নিয়ে যাবে আমাদের!

এবার দিব্য অভিভাবকসুলভ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে শিশু হয়ে ওঠে মিতিনের মতো। দিব্য বরাবরই নিজেকে বড় ভাবতে ভালবাসে কী না, তাই উচ্ছাসের প্রকাশে সে একটু হিসেবী।



পরের দিন। দিব্য আর মিতিনকে মাঠে নিয়ে গেছেন রেজা সাহেব, মিতিনের বাবা। সবাই অচেনা আর বড় এখানে। তাই তারা ইতস্তত ঘুরতে ঘুরতে ছোটদের একটা দলের কাছে চলে এলো। ওদের একজন ইট দিয়ে কয়েকটা দাগ কেটে ওপরে নাম্বার লিখে ব্যাট দিয়ে ঢেকে রেখেছে। সবাই আঙুল দিয়ে বেছে নেবার পর নির্ধারিত হবে কে ১,২,৩...। মিতিন আর দিব্য এই নিয়ম জানতো না।

এই তোমরা কিসের দাগ কাটছো?

মিতিন আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করে।

আমরা ক্রিকেট খেলবো। ১,২,৩ করছি। তুমি খেলবা?

কিছুক্ষণ কথা বলে মিতিন আর দিব্য খেলার নিয়ম সম্পর্কে জেনে খুব উৎসাহী হয়ে উঠলো। কিন্তু যেই না নতুন করে দুটো দাগ কাটা হবে শুরু হলো সে কী বৃষ্টি! খেলাই বুঝি পণ্ড হয়। ব্যাট আর বল নিয়ে ছেলেদের দল চলে গিয়েছে আশ্রয়ের সন্ধানে। মিতিনের ভীষণ কান্না পেলো। এতদিন পরে এত শখ করে তারা খেলতে এসেছে আর তাতেই এই বিপত্তি! মিতিন অশ্রূসজল চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারা একটা চালাঘরে আশ্রয় নিয়েছে বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে। মিতিনের বাবা রেজা সাহেব পরিস্থিতিটা আঁচ করলেন। মিতিনদের জন্যে কী করা যায়, কী করলে তারা আবার উৎফুল্ল হয়ে উঠবে ভাবতে থাকলেন।

কী বাবা মিতিন, মন খুব খারাপ?

মিতিন উত্তর না দিয়ে কাদতে লাগলো।

দেখো মিতিন আর দিব্য, আমরা চাইলেই কিন্তু এই বৃষ্টিতে ভিজেই খেলা শুরু করে দিতে পারি। জ্বর হলে হবে, ঠান্ডা লাগলে লাগবে, এসব একটু হয়ই। সেসব সমস্যা না, কিন্তু যেমন কাদা জমেছে, তোমাদের পোষাকের তো বারোটা বাজবে!

আমরা তাও খেলবো বাবা!

মিতিন কোন বাধা মানতে রাজী না।

প্লিজ আংকেল!

অনুনয় করে দিব্য।

চলো তাহলে সবাই! আমরা তিনজন মিলেই খেলবো! আমাদের কাছে ব্যাটবল নেই তাতে কী হয়েছে! আমরা স্প্রিন্ট করবো, হাইজাম্প করবো! ওরা ইট দিয়ে দাগ কাটছিলো মাটিতে, আমরা মাটি থেকে দাগ নেবো শরীরে। আমাদেরকে আদর করে দাগ দিয়ে দেবে বৃষ্টির ফোঁটা! এই দাগ বড় আদরের, স্নেহের। তোমরা রেডি তো?

বলার অপেক্ষা শুধু! তুমুল হুটোপুটি শুরু করে দেয় মিতিন আর দিব্য!

হাইজাম্প দেয়ার পরে মিতিনের শরীরে লাল বেলে মাটির সাথে একটা অজানা ফুল সেঁটে যায়। দৌড়ুতে গিয়ে দিব্য পড়ে যায়, তার শরীরে হাওয়াপেন্সিলের নিব দাগ কেটে যায়!

একসময় খেলাটা এমন হয়, যাতে যে যত পারে শরীরে দৃশ্যমান বা অদৃশ্য দাগ লাগাতে থাকে, যার শরীরে যত দাগ সেই বিজয়ী! তবে ওরা তো এতকিছু চেনে না, রেজা সাহেব তাদেরকে চিনিয়ে দেন দূর্বাঘাসের দাগ, বুনোলতার দাগ, লাল ইটের দাগ, সবুজ গাছের দাগ, বিজলীর অদৃশ্য ছোঁয়া, ঝড়ের নিবিড় স্পর্শ, মাঠের অজস্র পদচ্ছাপ তারা গায়ে মাখে। দাগখেলায় যে এত মজা তা ওরা জানতো না। এখন বিজয়ী নির্ধারণের পালা। কার গায়ে সবচেয়ে বেশিরকম দাগ হয়েছে? রেজা সাহেব চিন্তিত মুখে ভাবছেন। হঠাৎ আকাশ জুড়ে রঙধনু ঊঠলো। সপ্তবর্ণে হেসে উঠলো প্রকৃতি।

তোমাদের মধ্যে যে রঙধনুর রঙগুলো গায়ে মাখতে পারবে, সেই জিতবে।

ঘোষণা করেন তিনি।

কিন্তু বাবা, রঙধনু কীভাবে গায়ে মাখবো?

এই যে তোমরা এতক্ষণ খেললে, তোমাদের গায়ে কতরকম দাগ এসে যোগ দিলো খেলায় অংশ নিতে, তোমরা খেয়াল করো নি? এই যে হাওয়াপেন্সিলের নিব, এই যে ঝড়ক্রেয়নের রঙ, এই যে বিজলীটর্চের আলো, এই দাগগুলো কীভাবে পেলে? তারা তোমাদের কাছে কেন এলো? কেন অদৃশ্য দাগ দিয়ে গেলো বলোতো?

জানি না বাবা!

কারণ তোমরা ওদের অতিথি। ঘরে বা ছাদে তো আর তোমাদের পায় না, তাই এখানেই পেয়ে আদর করেছে। রঙধনুটা তোমরা ছুঁতে পাবে নিশ্চয়ই! যাও! লাফাও! ধরো! গায়ে মাখো দাগ!



ওরা যখন রঙধনুর রঙ গায়ে মাখছে, তখন মিতিনের মা ইশরাত ফোন করলেন রেজা সাহেবকে।

এই, বাচ্চাগুলোকে নিয়ে এই আবহাওয়ায় কী করছো!

তোমার একটু কাজ বাড়াচ্ছি!

বুঝেছি। বাসায় এসে নাও একবার! দস্যিপনা ছোটাব তোমাদের!



মিতিনের মা অবশ্য সেরকম কোন আচরণই করেন নি। তিনি জানেন সব দাগ সবাই উপহার পায় না। তার সন্তান প্রকৃতির আশীর্বাদধন্য হয়েছে। এ দাগ মুছতে এত তাড়া না দেখালেও চলবে! দিব্যর মা অভিযোগ করতে এলে তিনিও ইশরাতের কাছ থেকে রঙধনুধন্য শিশুদের সৌভাগ্যের কথা সম্পর্কে অবহিত হয়ে ভাবেন,



কিছু দাগ থাকুক...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.