![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবি বলেছেন “এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল, নারী দিল তাহে রুপ-রসে-মধু-গন্ধ সুনির্মল”। যুগে যুগে কবি সাহিত্যিকরা নারীর রুপে মুগ্ধ হয়ে প্রখর চিন্তাশক্তি ও কল্পনার সাহায্যে বিভিন্ন উপমা দিয়ে নারীর সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করেছেন তাদের সৃষ্টিশীল লেখনির মাধ্যমে। নারীর সৌন্দর্যের বন্দনা করতে গিয়ে কবিরা লিখেছেন শত সহস্র কবিতা। কবিতার প্রতিটা শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চেয়েছেন নারীর বাইরের এবং ভিতরের আত্মিক সৌন্দর্য। প্রতিটি ছেলের মধ্যে লুকিয়ে থাকে একজন অপ্রকাশিত কবি, যার শুধু নারীর সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করতে মন চায়। কেউ সেটা প্রকাশ করে আবার কেউ করে না। বাংলা সাহিত্যে প্রচলিত কিছু এক কথায় প্রকাশ যা দিয়ে নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্যকে উপমার সাহায্যে প্রকাশ করা হয়ে থাকে.......
যে নারী প্রিয় কথা বলে----------- প্রিয়ংবদা
যে নারীর চক্ষু সুন্দর--------------সুনয়না
যে নারী দেখতে সুন্দর------------সুদর্শনা
যে নারীর দাঁত সুন্দর-------------সুদন্তী
যে নারীর হাসি সুন্দর------------সুচিস্মিতা
যে নারীর সুন্দর কেশ আছে--------সুকেশা
আমাদের এই পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে তথা পুরো পৃথিবীতে ক্রমাগত নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্যকে বিভিন্ন অলংকার দিয়ে বনর্না করার মাধ্যমে নারী মাত্রই যে বাহ্যিকভাবে সুন্দর হতে হবে এ বিষয়টাই প্রতিষ্টিত করে তোলা হয়েছে। তাই বিয়ের বাজারে যখনই কোনো মেয়েকে পাত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হয় তখন প্রথমেই যা প্রাধান্য প্রায় তা হলো মেয়েটা সুন্দরী কি না। সেজন্য সুন্দর মানেই যে ফর্সা হওয়া লাগবে তাই আমাদের সবার মনে প্রচারনার মাধ্যমে গেথে দেওয়া হয়েছে। এ থেকে চাইলেই কেউ সহজে বের হতে পারে না, যদি না উপযুক্ত শিক্ষায় কেউ শিক্ষিত হয়। একটা মেয়ে যদি সে গায়ের রং এর দিক দিয়ে কালো হয় তাহলে সে তার পরিবার,আত্মীয়স্বজন, সমাজ সবার কাছ থেকে এক প্রকার মানসিক নিগ্রহের শিকার হয়। এমনকি বর্তমান সময়ে যখন বিভিন্ন চাকরীর ক্ষেত্রে মেয়েদের অন্য সকল যোগ্যতাকে পাশ কাটিয়ে শুধুমাত্র গায়ের রং কে প্রাধান্য দিয়ে চাকুরি দেওয়া হয় বিশেষ করে কোনো কোম্পানীতে অভ্যর্থনাকারী হিসেবে তখন মানুষ হিসেবে একজন নারীর মর্যাদাই ভুলুন্ঠিত হয়। এজন্য একটা মেয়ে ছোটবেলা থেকেই এসব বৈষ্যমের শিকার হওয়ার কারনে মানুষ হিসেবে তার গায়ের রংকেই প্রধান যোগ্যতা হিসেবে মনে করে। অন্যদিকে শুধুমাত্র গায়ের রং দিয়ে কোনো মানুষকে বিবেচনা করার বিষয়টা সমাজে প্রতিষ্টিত করার ব্যপারে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে মিডিয়া। টিভি খুললেই শুধু ফর্সাদের জয়জয়কার। খবরের সংবাদপাঠিকা থেকে শুরু করে গল্প সিনেমার নায়িকারা সবাই দুধে আলতা বর্ন, ফর্সা রং এর অধিকারী। সেখানে কালোদের কোনো স্থান নেই। এমনকি বিভিন্ন গায়ের রং ফর্সাকারী প্রসাধনী কোঃ গুলো তাদের অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে সুন্দর মানেই যে ফর্সা এই ধারনাই প্রসার করে। যেন সমাজের সকল মানুষ বিশেষ করে মেয়েদের ফর্সা হওয়াই একমাত্র জীবনের লক্ষ্য। মিডিয়া ক্রমাগত প্রচারের মাধ্যমে আমাদের মনকে সহজেই প্রভাবিত করে ফেলে।
জ্ঞান- বিজ্ঞানের এই আধুনিক সভ্যতায় এসে শুধুমাত্র গায়ের রং দিয়েই একজন মানুষকে বিবেচনা করা হলে তা হবে মানুষ হিসেবে নিজেকেই অপমান করা। কালো না ফর্সা এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে যেকোনো মানুষকে তার যোগ্যতা দিয়ে বিবেচনা করার ইতিবাচক মানসিকতা আমাদের সমাজের সকলের মধ্যেই ছড়িয়ে দিতে হবে। যদিও বর্নবাদ উন্নত বিশ্বে অনেকটাই কমে এসেছে, এই আন্দোলন আমাদের সমাজেও বেগবান করতে হবে। আর সেটা করতে হবে প্রথমত নিজের মানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমেই।
এই জন্যই কবি তারাশঙ্কর বলেছেন.........
“ কালো যদি মন্দ হয় কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে
কালো কেশে রাঙ্গা কুসুম হেরেছ কি নয়নে”
ধন্যবাদ সবাইকে
©somewhere in net ltd.