![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটি পরিসংখানে দেখা গেছে প্রায় সব গোয়েন্দা লেখক ই যা লিখেন নিত্যান্ত কল্পনা শক্তি দিয়ে,বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে নয় কিন্তু এমন ও কেউ আছেন যিনি কল্পনাকেও হার মানিয়েছেন! আয়ান ফ্লেমিং কে সবাই জানেন জেমস বন্ডের স্রষ্টা হিসেবে কিন্তু তিনি যে বাস্তবের জেমস বন্ড ছিলেন তা কয়জন জানে? ফ্লেমিং নিজেই ছিলেন এক চতুর এবং দুসাহসিক গুপ্তচর। কিন্তু ব্যাপারটা অজানা,দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে তিনি শেয়ালের ধূর্ততা এবং মাকড়শার মত কুশলীর পরিচয় দিয়েছিলেন।
তার কর্ম পদ্ধতি এমনিই ছিল যে কল্পনার জেমস বন্ডকেও হার মানায়। ফ্লেমিং এর কারণ ২য় বিশ্ব যুদ্ধের মুল হোতা হিটলারের ডান হাত এবং ডেপুটি রুডলফ হেসকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন! এমন সাফল্য ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসে কেউ লাভ করেননি। এমন এক চাল চেলেছিলেন যে রুডলফ সেচ্ছায় শত্রুর খাঁচায় মাথা নুয়ায়।
ঘটনার শুরু মে,১৯৪১. হঠাৎ করে গুজব উঠলো জার্মানরা লন্ডন আক্রমনে আসছে। ওই সময় একটি মেসার স্মিট ১১০ এরোপ্লেন স্কটলেন্ডে ল্যান্ড করে বিশ্ব বাসীকে স্তম্ভিত করে দেয় কারন এতে যাত্রি মাত্র একজন- ডেপুটি ফুয়েরার রুডলফ হেস।
মানুষ জেনে আরও অবাক হল যে হেস এখানে এসেছেন রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে। কারন ভাগ্যে বিশ্বাসি হেস এর হাস্ত রেখাবিদ তাকে বলেছেন যদি জার্মানি ব্রিটেন আক্রমন করে তাহলে হিটলার এবং নাজি বাহিনী দুয়ের পতন হবে। আর এসব বিশ্বাস করে তিনি উড়ে আসেন স্কটলেন্ড এবং বুঝতেও পারেননি এসব ফ্লেমিঙ্গের কারসাজি। ফ্লেমিং তার এজেন্টদের অ্যাস্ট্রলজার ছদ্মবেশে হেস এর কাছে পাঠান। ওই ছদ্মবেশী হস্তরেখাবিদ দের শিখিয়ে দেয়া হয় তারা গিয়ে হেস কে বলবে অন্যান্য সহকর্মীর নেতাদের মতই তাঁরও আকাশে দুর্যোগের ঘন ঘটা। এ ঘটনার পুরনো বিবরন আছে রিচার্ড ডিকনের " A History of British secret service" গ্রন্থে
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় আয়ান ফ্লেমিং ব্রিটিশ নেভির গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করতেন। তিনি জানতেন নাজী বাহিনির কনো উর্ধতন কর্মকর্তা যদি ব্রিটেন পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় তাহলে জার্মানদের ব্রিটেন আক্রমনের সম্ভাবনা কমে যাবে। তাঁরপর থেকে তিনি হিটলারের মানুষদের ফাইল নিয়ে ঘাটতে লাগলেন। রুডলফ কে টার্গেট করলেন ফ্লেমিং। কারন সেই নাজীদের একমাত্র লোক যিনি চাইতেন ইংলান্ড এবং জার্মানির মধ্যে যেন শান্তিপূর্ন চুক্তি হউক,তাহলে জার্মান আর্মি রাশিয়ার প্রতি মনযোগ দিতে পারবে।
আরও একটি কারন ছিল,হেস জ্যোতিষ শাস্ত্রের প্রতি অন্ধ বিশ্বাসি।
১৯৩৯-১৯৪৫ এই ছয় বছরে ইংলান্ড এবং জার্মানির মধ্যে একটি মানসিক দন্দ চলেছে। জার্মান পক্ষে ছিলেন হিটলারের পরিকল্পনা মন্ত্রি পল জোসেফ গোয়েবলস,আর অন্যদিকে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস। জোসেফ তার জ্যোতিষীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন হিটলারের সমৃদ্ধি ও বিজয়ের জন্য ভবিষ্যত বাণি দিতে এদিকে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের সাথে জড়িত জ্যোতিষীদের বলতে বলা হয় হিটলারের পতনের কথা।
ফ্লেমিং কিছু নির্দিষ্ট জার্মান পত্রিকার ভুয়া এডিশনে হিটলারের পতনের খবর ছাপিয়ে দেন। নাজি নেতারা এসব ভুয়া খবর শুনে ভয় পেলেন!রুডলফ হেস সবসময় একদল জ্যোতিষী ধারা দারা পরিবেষ্টিত থাকতেন। এই বৃত্তে সুই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরবার পরিকল্পনা করে ফ্লেমিং।
দা লিংক নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। লিসবন ও তাঞ্জেনিয়ায় এটির অফিস খুলা হয়। ব্রিটিশ ও জার্মান বন্ধুত্ব এর মুল কথা বলে প্রচার করা হয়
ফ্লেমিং ইতিমধ্যে খবর পেলেন হিটলারের চিফ অফ স্পাই এডমিরাল ক্যানারিস এর সঙ্গে তাকে বুঝতে হবে। হেসের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা ছিল,যা লিসবন ও তাঞ্জেনিয়ায় সক্রিয় ছিল। ফ্লেমিং এই সংস্থার লোকজনদের বোঝাতে সক্ষম হলেন কয়েকজন ইংরেজ জমিদার স্বদেশ ত্যাগ করে জার্মান আসছে জার্মানদের সাথে বন্ধুত্ব করতে। ইতিমধ্যে তিনি তার এজেন্টকে জ্যোতিষীর ছদ্মবেশে হেসে পরিমণ্ডলে ঢুকিয়ে দিলেন। এই দলটির প্রতি হেসের অগাধ বিশ্বাস ছিল কিন্তু দলটি মনগড়া বানী দেয়,ডিউক অব হেমিলটন এখন স্কটলেন্ডে,তিনি ব্রিটেন ও জার্মানদের মধ্যে বন্ধুত্ব আশা করছেন।
এই পরিকল্পনার দুটি লাভজনক দিক ছিল। যেহেতু ঐ সময় ডিউক অব হেমিলটন সত্যি স্কটলেন্ড ছিলেন তাই রুডলফ হেস এর মনে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকবে না এবহ হেস এর গোয়েন্দা সংস্থা ও তাঁতে সন্দেহ করবেনা
এদিকে ফ্লেমিং তার এজেন্টদের পাঠিয়ে দিয়েছেন হেস এর কাছে। এরা সবাই জ্যোতিষী সেজে জার্মানি ও ইংলান্ড এর মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধের ভবিষ্যত বানি করতে লাগলো হেস এর কাছে। হেস এদের বিশ্বাস না করে আর পারলেন না। ফ্লেমিং এর এজেন্টে আরও জানাল হিটলার খার সময় অতিবাহিত করছেন। এ সময় ইংলান্ড আক্রমন মানে জার্মানের পতন। ছদ্মবেশী জ্যোতিষীরা আরও বলল হেস যদি মে মাসে বাইরে যান তাহলে তার গ্রহের দোষ কেটে যাবে।
হেস আর দেরি না করে নিজস্ব বিমানে স্কটলেন্ড যান আর সেখানে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
এদিকে হিটলার রেগে আগুন,তিনি হেস এর সমস্ত জ্যোতিষীকে গ্রেফতার করেন
সভিয়েত ইউনিয়ন ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামায় এবং সিদ্ধান্ত নেয় রুডলফ হেস্কে ক্ষমা করা যাবেনা। কারন হেস চেয়েছিল জার্মান আর ইংলান্ড এর মাঝে বন্ধুত্ব। ২য় বিশ্ব যুদ্ধ যখন তুঙ্গে,হেস তখন নির্বাসিত হয়ে একাকি জীবন যাপন করছেন এদিকে হেস কে হারিয়ে হিটলার প্রায় অসহায়। এতে তার পরাজয় হয় দ্রুত।
যুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গে যুদ্ধপরাধীদের বিচারে হেসের যাবত জীবন কারাদণ্ড হয় কিন্তু দীর্ঘ কারাবাসে তিনি অতিষ্টিত হয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়ে ও পারেন নি। শেষ পর্যন্ত কারা কক্ষের জানালায় বিছানার চাদর লাগিয়ে গলায় ঝুলে পড়েন রুডলফ হেস।
হেস এর মৃত্যুর পর পর ই আয়ান ফ্লেমিং এসপিওনাজ জগৎ কে বিদায় জানান। তিমি "অপারেশন রুডলফ হেস" নামে একটি বইও লিখেন তাতেই স্পষ্ট ফুটে ওঠে কল্পনার জেমসবন্ড এর সাথে বাস্তবের গুপ্তচরদের ফারাক। :-D
|||***শেষ***|||
©somewhere in net ltd.