নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সব সুন্দরকে গ্রহন করে প্রিয় মানুষগুলোকে সুন্দর রাখার প্রয়াস অবিচল রাখার প্রত্যয়ে।

কিশোর মাহমুদ

কিশোর মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময়ের আনাগুনা

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৯




টিনের ফাঁক দিয়ে সাত-সকালের প্রদীপ্ত আলোর ঝলকানিতে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। বড্ড খারাপ লাগছে। গতরাতের অমানুষিক অস্থিরতা আর পরিশ্রমের এই বুঝি ফল? বৈশাখ আসতে এখনো চারদিন বাকি,কিন্তু প্রকৃতি মাতা গতরাতেই জানান দিয়েছেন উনার আগমন বার্তা। বৈশাখের কথা মনে হতেই মনে পড়ে গেল ১হেলা বৈশাখের এক রঙ্গিন বাংলাদেশের কথা। মনটা বড়ই ধুরন্ধর বাজ,এক জায়গায় স্থির থাকতে চায়না। পরক্ষণেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো গতরাতের মহা প্রলয়ের কথা!
প্রকৃতির এমন নির্মম রুপ এর আগে দেখা হয়নি। গুঁড়ি গুঁড়ি ফোঁটার বৃষ্টি হয়,অবিরাম ধারার বৃষ্টি হয়,শিলা বৃষ্টি হয়,এসিড বৃষ্টি হয় কিন্তু পাথর বৃষ্টি হয় কিনা জানা নেই। খোলাসা করে প্রজ্ঞা প্রলেপন দিলে গতরাতের বৃষ্টিকে শিলা বৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত করা যাবে কিন্তু স্থানীয় ভাষায় একে পাথর বৃষ্টি বলেই আখ্যায়িত করা হয়েছে।
অনেক রাত পড়াশুনা করে ঘুমিয়েছিলাম খুব ক্লান্ত হয়ে। একটার দিকে ঘুম ভেঙ্গে যায় টিনের চালে বৃষ্টি ঝুম ঝুম শব্দে। প্রথম দিকে সাধারণ বৃষ্টি ভেবে স্বর্গীয় আমেজে তা উপভোগ করতে লাগি,পনেরো সেকেন্ড পর আরম্ভ হয় বরফের টুকরা পরা।
সে কি শব্দ!ভাবলেই গা শিউরে উঠে। মনে হয়েছিল যেন আফগানিস্তানে যুদ্ধে নেমেছি! ধুম ধাম শব্দে পাথরের সাইজের শিল পড়ছে। এক্মিনিট যেতে না যেতেই দিগুন পরিসরে পড়তে লাগলো। এবার ভয় পেয়ে গেলাম। আমার ঘরের টিনের চাল ফুট হয়ে পানি পরতে লাগলো। অস্থির হয়ে পায়চারি আরম্ভ করলাম। জানালা অল্প ফাক করলাম বাইরের অবস্থা দেখতে কিন্তু হালকা খুলতেই একটা বড় মাপের বরফের টুকরা আমার মাথায় আঘাত করলো,ফুলে ঢুল হয়ে গেল কপাল? জর্জরিত টিনের চাল বিদ্রোহ ঘোষনা করলো এর বিরুদ্ধে। এই বুঝি উড়ে গেল কিন্তু শেষ পর্যন্ত যায়নি
তীব্র মাথা যন্ত্রনায় বিছানায় কাত হয়ে পড়ে রইলাম। পাথর বৃষ্টি কমার ক্রমানয়ে আমার চোখে সেই রাজ্যের ঘুম এসে প্রত্যাবর্তন করলো।

দরোজা খুলে বাইরে তাকিয়েই তো মাথা খারাপ হবার দশা! উঠানের মাটির দেখা মিলছে না। তিনটা আমা গাছ,একটা জাম গাছ ছাড়াও আরো কিছু গাছে সমস্ত পাতা যেন এক দিনের জন্য ভূমিতে "নাইওর" এসেছে। জানি এর আসা হয়েছে কিন্তু যাওয়া হবে না। গাছগুলোর দিকে উপরে তাকালাম। সবকটা উলঙ্গ। যেন আমাকে ঠাট্টা করে বলছে,"আমার ছেলেদের দেখ মশাই,কত না না করলাম তবু নাছোড় বান্দার মত নিচে নেমে এল। নাও এবার দুধ কলা দিয়ে দুবেলা খাইয়ে তবেই আমার কাছে পাঠিয়ো"
আমি মনে মনে জবাব দিলাম,এয়াহ খোলা গতরে উলঙ্গ হয়ে আবার কথা বলে?
পাতা গুলো যেন আমার মুখমণ্ডলের এই আয়বয় দেখে খিল খিল করে হাসছে।

রাজ্যের কাজ এখন হাতে। এই দুহাত দিয়ে দুই তিন মন পাতা সাফ করবে কে?
এমন অবস্থা যে গাছে একটাও পাতা নেই। ঈতিমমধ্যে গরিব ঘরের অল্প বয়সি ছেলে মেয়েরা হাতে ঝাড়ু কাধে বস্তা নিয়ে নেমে পরেছে পাতা আহরণে। টাকা দিয়ে লাকড়ি কিনার চেয়ে পাতা কুড়ানো ঢের ভাল। হঠাৎ আমাদের কাঞ্চন বুড়ির কথা মনে পড়ে গেল। বৃদ্ধায় অনেক বসস্ক,এক চোখ্ অন্ধ। আমাদের গাছের পাতা সেই নেয়,তাঁতে আর কাউকে অধিপত্য বিস্তার করতে দেয়না। প্রতিদিন সকালে আমাদের গাছের পাতা কুড়িয়ে আমাকে জাগিয়ে দিয়ে যায় সে।
আজ এতো পাতা কিন্তু কাঞ্চন বুড়ি নেই। আশ্চর্য! দুনিয়া উল্টালেও সে পাতা কুড়াতে আসে,এক ছোকরাকে ডেকে বললাম,কাঞ্চন বুড়ি কৈ?
-কুন বুড়ি? ও কানি? হে তো কাইল রাইত মারা গেচে।
ছোকরার কণ্ঠে আনন্দ কারন গাছের পাতা এবার তাদের দখলে।
কাঞ্চন বুড়ি ছিল অত্যন্ত ঝগড়াটে অবশ্যি আমার সাথে না। পাতায় কেউ হাত লাগালে বুড়ি তাদের এমন অবস্থা করতো যে,ছ্যাড়ে দ্যা মা কেঁদে বাঁচি বলে পালাত তারা বিশেষ করে এই পোলাপানরা এর শিকার।
মাঝে মাঝে আমার সাথে করতো,কিন্তু গালাগালি করতো না। আমি ওকে যা বলার বলে যেতাম ও কিছু বলতো না। যেমন আমাদের পুকুরে ডেইলি গোসল করতে আসত সে,বিশেষ করে যখন আমি করতাম তখন। মেজাজ গরম থাকতো তাই ইচ্ছা মত বকা দিতাম বিনিময়ে সে খালি মিষ্টি মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার রাগ কমিয়ে দিত।
আজ সেই মহিলাটি নেই? এক দু:খভরাক্রান্ত ছায়া এসে মনে বসল,মনে পড়ে গেল উলঙ্গ গাছের কথা। গাছের ছেলেরা নাইওর এসেছে কিন্তু নানি তো নেই। নানি না থাকলে দুধভাত কে খাওয়াবে?
যে পাতার জন্য কাঞ্চন বুড়ি ঝগড়া করতো সে আজ নেই কিন্তু পাতা আছে। . . .
এবছর পাতা গুলো আর পড়বে না,কেউ ঝগড়া করবে না,আমাদের পুকুরে বাইরের কেউ আর স্নান করতে আসবে না। পাতাগুলো খুজে পাবে নতুন গন্তব্য নতুন সাধ!
সৃষ্টিকর্তা এমনি। কাউকে তুলে নেবার আগে অঢেল দিয়ে দেন কিন্তু তা ভোগের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেন না।
সব দেশে। সর্বকালে।

জাতি সংঘের সেভ দি চিলড্রেনস এর বড় কর্তারা এসেছেন। আমাদের এলাকার অবহেলিত ছেলে মেয়েদের সল্প মেয়াদি শিক্ষা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এরা দীর্ঘদিন ধরে। আজ তার সমাপ্তিদিন। সব বাচ্চারা এবার স্কুলে ভর্তি হবে,একটা প্রতিশ্রুতিতে তারা আবদ্ধ হল তারা আজ: ভবিষ্যতে পড়াশুনা ছাড়া আর কুনু কাজ করবে না।
ভলেন্টিয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিলাম আমিও। উপস্থিত সবাই এদের সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করছেন।
এভাবেই সময়ের সাথে অবস্থার পরিবর্তন হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.