নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সব সুন্দরকে গ্রহন করে প্রিয় মানুষগুলোকে সুন্দর রাখার প্রয়াস অবিচল রাখার প্রত্যয়ে।

কিশোর মাহমুদ

কিশোর মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুনপোকা মনপোকা ইত্যাদি ইত্যাদি

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১২


দেশের সম্পাদক সম্প্রদায় আজকাল স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছেন। তারা যে অগোচরে একটা পক্ষের হয়ে দালালী করছেন সে নিয়ে হাসানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। তার পাঠানো কলাম পড়ে "আলোর দেশ" সম্পাদক তাকে ডেকে পাঠালেন চা খাওয়াতে। চা যে উপলক্ষ মাত্র, বুঝতে দেরি হয়নি।
­"যে হারে লেখা লিখছ উগ্রবাদীরা না আবার তোমায় লাশ বানিয়ে দেয় সেই চিন্তায় আছি। তাই বলছি- এসব ফেলে অন্য কিছুই ধরো না? সমাজ আর দেশ সংস্কারের আরো অনেক পদ্ধতি আছে, তোমার লেখা পড়ে মানুষ ক্ষ্যাপা পাগল হতে পারে!" বললেন সম্পাদক।-
"কেন? আপনিই না বললেন এটা রবি-নজরুলের যুগ না যে লোকে প্রবন্ধ কলাম পড়েই হাল্লা মাচাবে!”
বিস্ময় প্রকাশ করল হাসান।
"বলেছিলাম তবে সেটা অন্য ক্ষেত্রে...”
"কোন ক্ষেত্রে?" সম্পাদকের কথা কেড়ে নিয়ে প্রশ্ন করল হাসান। তবে উত্তর এড়িয়ে সম্পাদক বললেন, "ভাল কথা কাল তো নারী দিবস। তা নিয়ে কিছু লিখো না?"
"নারী দিবসের জন্য কত নারিবাদীরা বসে আছেন এইএকটি দিনের জন্য আর আপনি তাদের ভাত মেরে আমাকে লিখতে বলছেন?
"উঁহু! তারা এখন টিভি শো'তে ব্যস্ত। বছরের এ সময়টি তাদের ক্যামেরায় আসার সুযোগ, তুমিই লিখে দাও অন্য নামে চালিয়ে দিবো।" কুৎসিত হাসি দিয়ে চোখ টিপলেন সম্পাদক। "বুঝলে হাসান এ দেশের মানুষ দিয়ে কিচ্ছু হবেনা। সবকটা অমানুষ।"
- "আপনিই বা মানুষ কোথাকার?"হাসানের কথা শুনে হকচকিয়ে গেলেন সম্পাদক।
"মানুষ যদি হতেন এখানে আমায় এসব না বলে নিজে কিছু করে দেখার চেষ্টা করতেন। অমানুষ কোথাকার," বলে রাগে গুম গুম করে বেরিয়ে যায় হাসান।
­২
ছাত্র রাজনীতিতে আজকাল বেশ সক্রিয় তমা। হাসানই তাকে শিখিয়েছে এ ধারার পথ। অসুস্থ রাজনীতির অন্ধ চাপাতি না হয়ে সততার পথে সে নিজেকে বিসর্জন দিতে শিখেছে। হাসানকে তার অন্যরকম ভাল লাগে। মিছিল মিটিং এ দারুণ বক্তৃতা দেয়। তারা ভাল বন্ধু কিন্তু নিজেকে হাসানের প্রেমিকা ভাবতে শুরু করে দিয়েছে কবে থেকে যেন টেরই পায়নি। কিন্তু পারবে কি হাসানকে পেতে? জানে অতটা সহজ না, হাসান যেন জাহাজির মত! থামবে শুধু বন্দরে তারপর আবার গা ভাসাবে স্রোতে! এভাবেই এরা চলে। তবু সে চেষ্টা করবে! এমন সুদর্শন, শুভ্রদেহে স্বর্ণালী আভা, ধারালো চিবুক, আত্মবিশ্বাসধারী ব্যক্তিত্বের পাশে ক্যাম্পাসে যেন তাকেই মানায়।
­হঠাৎ হাসানকে দেখতে পেল। এ ভাব নতুন না, নিশ্চয়ই আবার চাকরি হারিয়েছে।কিছুক্ষণ ওরা ঘাসের উপর বসল। দুইয়ের এক অভিন্ন অনুভূতি। মৃদু স্বরে হাসান তমা-কে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা আমরা কি চরিত্রবান জাতি?- "নিশ্চয়ই, কেন নয়,আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য তো তাই বলে যে আমরা শ্রেষ্ঠ?"
- "তাহলে কেন আমাদের এই অধঃপতন?"
তমা খুঁজে পেল না চরিত্রের সাথে অধঃপতনের মিল। "জানো ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেছেন- চরিত্রবান জাতিতে কখনো অধঃপতনের ঘুণপোকা ধরে না।"- "কিন্তু আমাদের এই সত্য মেনে নিতে হবে।”
- "সত্য মানা মানে আত্মসমর্পণ করা। দেশের এই রুপ, দুঃখ-কষ্ট, দরিদ্র’র অবহেলা, দুর্নীতি আমার অন্তরকে নরকের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলছে।এত সুন্দর এই ফুলের গাছকে পানি নয় রক্ত দিয়ে সজীব রাখতে হবে, মাধুর্যতা নয় বিপ্লবী হতে হবে! দ্যাখো আমার বুকে হাত দিয়ে দামামা বাজছে!"­তারপর কিছুক্ষণ নীরবতা। কোলে মাথা রেখে চেয়েরইল হাসান তমার দিকে। তমার মুখের উজ্জ্বলতা সন্ধ্যার অন্ধকারকে রাঙিয়ে দিচ্ছে যেন। মুখের ডৌলটি কি সুকুমার! ললাটটি যে শরতের সফেদ আকাশের মত স্বচ্ছ। ঠোঁট দুটি চুপ কিন্তু অনুচ্চারিত কথার বীজ ঠোঁটের ফাঁকে যেগোলাপ ফোটাচ্ছে!
­৩
মাথার উপর চাপ। চাপের ভার সইতে না পারার যে কষ্ট তা যেন দুর্মতিরা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। দুঃখকে ভাগ করলে লাঘব হয় কিন্তু শহরে তার আপনজন কেউ নেই। কিন্তু দীনগ্রস্ত প্রত্যেকে তার আপন ভাই। নগর বস্তির সিংহভাগ তার ভক্তমহল; তারা হাসানকে বিশেষ শ্রদ্ধা করে এবং সাহায্যের জন্য উদগ্রিব হয়ে রয়। বস্তির সংখ্যাগরিষ্ঠরা মুসলিম তবে একটি হিন্দু পরিবারও আছে। এদের হাসান দেখা শোনা করে বলেই এদের অস্তিত্ব আছে। হরি নাপিতের ঘরে ঢুকতেই হরি নাপিতের বড়বউ তার পায়ে লুটিয়ে পড়ে কান্না আরম্ভ করল। হরিকে পুলিশে নিয়েছে। ওদিকে তার মেয়ে পার্বতী স্বামীর বাড়ি থেকে চলে এসেছে। স্বামী নাকি দলবল নিয়ে গতরাত এসে শাসিয়ে গেছে মেয়ে ফিরে না গেলে সে আবার বিয়ে করবে। নির্দোষ পার্বতীর অকাল গৃহে প্রত্যাবর্তনের কারণ বঙ্গে আর দশটা মেয়ের মতই এক; যৌতুক। পুঁজিবাদী সমাজের নিষ্ঠুরতারএ আর নতুন কি?­এদের কষ্ট বোঝার কেউ নেই। হরিকে ছাড়াতে হবে। এক নেতার কাছে ফোন দিয়ে হরিকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করল হাসান। হরির বউ তাকে আনন্দে কী করবে ভেবে না পেয়ে পায়ে ধরে রইল! হাসান জানে সে অপরাধের কাছে মাথানত করেছে, কিন্তু এই ভালোবাসা?
এটা সাহায্য নাকি বাংলার এই অধঃপতনের সামিল হওয়া?­মনে মনে নিজেকে যেন ঘুণপোকা মনে হল। যেখানে বেঁচে আছি সেটাই ধ্বংস করা, তাও নিজ স্বার্থে।
★★★

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.