নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাধসপুরে বারবেলা ( উপন্যাস )

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৪







অনেকদিন আগের কথা শুনলে আমরা পরিকথা অথবা ইতিকথা বুঝি, অথচ ভানুমতীর খেলা দেখলে আজো আমাদের বুদ্ধিভোঁতা হয়। দুর্ভাগ্যবশত ভূতপূর্ণিমায় পোড়াবাড়ির উঠানে একা দাঁড়ালে, ভূতের ভয়ে ভীষিত হয়ে মোচড়ে পড়ে মাথা ফাটে। রাত নিশায় কিম্ভূতকিমাকারের মুখোমুখি হলে কলিজায় ছ্যাঁত করে উঠে পেঠের ভিতর হাত সিঁধে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। গপসপ করার জন্য বটতলে বসলে প্রায়ই কানাঘুষো শুনা যায়, খালিবাড়িতে ভূতের গুরু জিনের নবদোয় হয়েছে। ছেলেপুলেকে একলা পেলে মুণ্ডু দিয়ে নগরঘণ্ট বানিয়ে খায়। ভরদুরে খোঁপা খুলে ঠাঁট ঠমক ঠসক করে হাঁটলে, ডানাকাটা পরীর রূপে মজে রসিক হয়ে রসের গান গায়।

আষাঢ়ে গল্প হলেও সত্য, আমাদের গ্রামের এক পালোয়ান মল্লযুদ্ধে গিয়েছিল। নিশারাতে বাড়ি ফিরার পথে অবসন্ন হয়ে বাঁশ ঝাড়ের জড়ে জিরাতে বসলে উপরিভার গতরে পড়ে তার মাথায় ভর উঠেছিল। খবরটা জবরজং হলেও আমি জবর খুশি হয়েছিলাম। আহা সে কী মজা। ভরদুপুরে আধা নেংটা হয়ে খেমটা তালে নাচানাচি করে টপ্পা তালে গান গাই তো, ‘টপ টপ করে পানি পড়ে টপাটপ টপাস, টট্টর করে টেকো টপকায় ঠুকুস-ঠুকুস ঠাস।’

তার নাচগানের যন্ত্রণায় পরগণার লোকজন পরচার চিন্তা বাদ দিয়ে পরগাছার গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করতেন। লোকমুখে শুনেছিলাম এবং তত্ত্বানুসন্ধানে বিনিশ্চিত হয়েছিলাম, বিদুষী ভূতনীর ভরে বিভ্রাটে পড়ে সে বিভ্রান্ত হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিমর্ষ হয়ে বিমার্গে হেঁটে বিমর্দিত হয়েছিল। ওসব বৃথা কথিত কথায় আমি কান দিতাম না। কিন্তু মিয়োনারা যখন আমাকে মিনমিনে ডাকত তখন রাগে রগরগ করে রোমোদ্গম হত। মাথা ঠাণ্ডা করার জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসে আমতলে বসে আমি পাকা জাম খেয়ে নুন লাগিয়ে চুকা বড়ুই চিবাতাম। মাঠের মতো উঠানে ঘুড়ি উড়াতাম। দৌড়াদৌড়ি করে ঘামে ভিজে তালপুকুরে ঝাঁপ দিয়ে গোসল করতাম। ছুটির দিন দাদীজানের বগলে বসে মিঠাই মণ্ডা আর তিলকুট কিনতাম। ছোটরা যখন খো খো করে কানামাছি, ইচকি মিচকি, এক্কা দোক্কা আর চু কিত কিত খেলত তখন সত্যিসত্যি সাংঘাতিক বিরক্ত হতাম। হাড্ডাহাড্ডি করতে চাইলে বহ্বারম্ভে বহুড়িরা কড়ি খেলা জিতার জন্য ছকের পাশে বহেড়া বাজি রেখে পাশায় দান ফেলত। ফলে গলাবাজি অথবা ডিগবাজি ভালো লাগত না। ভরদুপুরে দাঁও মারার জন্য নবযুবতীরা দোফাঁদ বিছিয়ে গুটি ছুড়ে কাটাকুটির সময় ‘হাক মাওলা’ বলে দাঁড়ালে ওরা দৌড়ে নানির বগলে লুকাত। তা দেখে আমি হেসে কুটিপাটি হয়ে বলতাম, ‘আমার উরে আয়, আমি তোদেরকে অঘটন পটীয়সী বানাব।’ ওরা মুখ ভেংচিয়ে বলত, ‘বুকের পাটা শক্ত হলে পোড়াবাড়ির উঠানে যা!’

আমরা সবাই জানি, ত্রিসন্ধ্যায় পোড়াবাড়ির আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করলে সাহসের বারটা বাজে এবং যতই অসমসাহসী হোক না কেন, অমানিশায় আচকা মচ মচ শব্দ শুনলে বুকের ভিতর ছ্যাঁৎ করে উঠে গলা শুঁকিয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে রক্ত জমে। বুকে থু থু দিয়ে মাথা তুলে সাদা পাঞ্জাবিওয়ালা দেখলে তো সেরেছে, ‘ও মা গো!’ বলে শ্বাস রুদ্ধ করলে মাস তিনেক লাগে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হতে। আর হলেও দুরদুরানি বন্ধ হয় না। পেটের ভিতর হাত-পা সিঁধনো থাকে জীবনভর দাবিয়ে রাখার জন্য অনঙ্গ দাবিদাররা দাবিদাওয়া ছাড়ে না। নিরালায় একলা বসলে বুকে ধুকপুক করে। এক দণ্ডে তিন পলক মেরে, বাড়ির কাজ শেষ করে বিছানায় উঠে হাত পা গুটিয়ে নামাতে চাইলে ডরের চোটে কলিজা কাঁপে। কপাৎ করে ধরলে সর্বনাশ হবে। নানি দাদীর সাথে খুশগল্প করে রাতের খাবার খেয়ে আস্তেধীরে বিছানায় উঠে বাতি নিবালে, আলগোছে দরাজের ওপাশ থেকে কী যেন বেরিয়ে আসে? পালঙ্কের নিচে কিছু একটা গড়াগড়ি খায়। টুইয়ে টুইয়ে আচাভুয়ারা বারান্দায় হাঁটহাঁটি করে। কান পাতলে মনের কানে খট্ খট্ শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়। যত সব দুনিয়ার বার অরুচিকর ছায়াকৃতি মনের চোখের সামনে ভাসে। অনিন্দ্যকান্তি হওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করেও কান্তিবিদ্যা শিক্ষা দেওয়া যায় না। কিম্ভূতকিমাকাররা এত জবরজং। তাদের উপচ্ছায়া দেখলে ঢিসঢিস করে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। সোজা হয়ে বসে সিধা দেয়ালের দিকে তাকালে, চোখের কোণে কী যেন কিসের আবছায়া দেখা যায়। রেজাই দিয়ের মুখ ঢাকতে মন বারণ করে। হাত বার করলে যদি কিছু একটায় কামড় দেয়? পিঠের ব্যথায় কাতর হয়ে পাশমোড় দেওয়ার জন্য চেষ্টাকষ্ট করে ব্যর্থ হতে হয়। পাশ ফিরে ভয়দ কিছু দেখলে শুকনো গলা দিয়ে চিক্কুর বেরোবে না।



..... পাঠকের জন্য লিখেছি। পাঠিত হলে পরে আরো পোস্ট করব।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.