নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাধসপুরে বারবেলা ( উপন্যাস )তিন

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১০







‘কিরা খাই না আমি তিনসত্যি করে বলছি, অলোকসুন্দরী তুই। তোর দেহে যৌবনমদের টইটম্বুর।’ বলে আমি আস্তে আস্তে হাঁফ ছাড়লে ও খিলখিল করে হেসে বলেছিল, ‘পঞ্চশরের বাণে কামিনীর কলশি কানা করতে চাস নাকি?’

‘আরে না! আমি মজা করছিলাম। জানিস! তোর সাথে কথা বলে প্রাণ সত্যি প্রাণবন্ত হয়েছে।’

‘মতন মতলব বাদ দিয়ে আমার সাথে গপসপ কর। তোকে আমি বিত্রস্ত করব না।’

‘তুই মনমোহিনী। মনের কথা খুলে বললে মন মননশীল হবে। আমার মনে মৎসর আছে সন্তাপ। মনস্তত্ত্বে মনস্তুষ্টি হয় না। মৎসরি না মনস্তাত্ত্বিক হব তা স্থির করতে পারছি না। মনশ্চাঞ্চল্যে মনস্বী হওয়া যায় না। মহত্ত্বে মহিমান্বিত হতে চাই।’

‘তোর অন্তরে আন্তরিকতা আছে। মনে রাখিস! অন্তর্দশায় অন্তর্দশন হয় না। অন্তর্বাষ্পে অন্তর্দাহ নিবে না। অন্তর্ধানে অন্তরিত হওয়া যায় না। আমি অন্তর্নিহিত হতে চাই। আমাকে অন্তর্লীন কর। অন্তর্গূঢ় রহস্যে তুই মনীষী হতে পারবি। অন্তর্মাধুর্যে তোর অন্তর্দীপন হবে।’

‘অন্তর্নিবিষ্ট কষ্টের অন্তর্গূঢ় রহস্য জানতে চাই।’

‘সুখিনী হওয়ার জন্য ভালোবেসেছিলাম। অকালবসন্তে মরে শঙ্খিনী হয়েছি। মনের জ্বালা নিবারণ করার জন্য জ্যোৎস্না পানে তৃপ্ত হব চকোরিণী। নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা দেখে নিত্যবৃত্ত অতীতে ফিরে যেতে চই। তখন নিত্যানন্দে দিন কাটত। এখন নিদারুণ কষ্টে সময় কাটে। আমার সাথে কেউ কথা বলে না। একান্তবাসীর মত এক কোণে বসে থাকি। রগরগ করে রাগ চরমে উঠলে আছাড় দিয়ে রসেরহাঁড়ি ভাংগি। সন্ন্যাসিনীর মত মহানিশায় নিদিধ্যাসনে বসে আমি গৃহিণী হতে পারিনি।’

‘আমার নানিজান আমাকে খুব আদর করতেন। কোনো কারণে বেজার হলে গালে কপালে চুমু দিয়ে বলতেন, আমার মনোরাজ্যের রাজকুমার তুই বড় হলে তোর জন্য সব পেয়েছির দেশের রাজকুমারী আনব।’

‘তোর নানি সর্বার্থসাধিকা ছিলেন। উনার কথা সত্য হবে।’

‘জানিস, ভাদ্রমাসে তৃষ্ণার্ত পশুপাখির জন্য গাছের ছায়ে যতনে ঠাণ্ডা পানি রেখে আমার নানিজান আমাকে বলতেন, ভুখাকে অন্য দিবি তৃষ্ণার্তকে পানি। নানিজানের মত হতে হলে কী করতে হবে?’

‘আত্মানুশাসনে আত্মোন্নতি হলে আত্মা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়। অলোকদৃষ্টে অদৃশ্য দেখা যায়। স্বার্থত্যাগী হলে সত্য পুরুষ হবে।’

‘উপদেশের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।’ বলে কৃতজ্ঞতা প্রাকশ করতে চাইলে পৌষ্প গম্ভীরকণ্ঠে বলেছিল, ‘কৃতার্থ করতে চাই না আমি তোর কল্পনা হতে চাই।’

‘নিরক্ষবৃত্তে বাড়ি বানিয়ে আমি কল্পনাপটু।’ বলে বিছানা থেকে নেমে কামরার বাতি জ্বালাবার জন্য হাতিয়ে সূইচ পেয়ে টিপে দিয়ে দেখি বাল্বের জীবনায়ূ ফুরিয়েছে। পৌষ্প খিলখিল করে হাসলে মিনতি করে বলেছিলাম, ‘দয়া করে দেউড়ির বাতিটা জ্বালিয়ে দে। তোর জন্য দোয়া করব।’

‘তুই এত ভিতু কেন?’

‘বাতি জ্বালিয়ে দিলে সক্কালে আমি বীরপুরুষ হব। দয়া করে বাতি জ্বালিয়ে দে।’ বলে দরজা খুলে হাত বার করে ঠাণ্ডা বাতাস অনুভব করে সপাৎ করে গুটালে পৌষ্প কপাল কুঁচকে বলেছিল, ‘কী হয়েছে?’

‘বাসরে! বাতাস এত ঠাণ্ডা কেন?’

‘ডরতরাসে তোর রক্ত ঠাণ্ডা হতে শুরু করেছে।’

‘গরম করব কেমনে?’

‘গড়াগাড়ি লাফালাফি করলে সহজে গরম হবে।’

‘আজ না আরেক দিন।’

‘আজ না কেন?’

‘পেটে ঠাসাঠাসি এখন নড়তে পারছি না। বেশি তিড়িংবিড়িং করলে গরম জলে ভিজে লজ্জায় লাল হব।’ বলে লজ্জায় সংকুচিত হলে পৌষ্প খিলখিল করে হেসে বলেছিল, ‘লাজাঞ্জলির মত তুই এত লাজুক কেন?’

‘তুই আমাকে এক মুঠো খইর সাথে তুলনা করলে? ঠিকাছে, বিপদ পড়লে ভেড়ায় বীরকে ভেড়ুয়া ডাকে। আমি অখন বিষম বিপদ আছি। বিমর্দিত হলে বিদিশা হব। বিভ্রাটে বিভ্রান্ত আমি হতবুদ্ধি হয়েছি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। শৌচাগারের পথ খুঁজে পাচ্ছি না।’

‘কামরা থেকে বেরিয়ে ডাইনে দৌড়ে যা। মাত্র কয়েক কদম দূর।’

‘আজকের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, আরেকদিন দেখা হবে।’ বলে বুক ভরে শ্বাস টেনে সাহস সঞ্চার করে পলকে হাত বাড়িয়ে বাতি জ্বালিয়ে হাঁফ ছাড়তে চেয়ে শ্বাস রুদ্ধ করে ধীরে ধীরে বেরিয়েছিলাম। শৌচাগারে যাওয়ার পথে একটা ধাপ আছে। যেমনি পা নামাব ওমনি কী যেন চিঁক দিয়ে উঠেছিল। চিঁক শুনে আমি চিৎপটাং। কোমরে ধরে দাঁড়িয়ে ল্যাংড়ার মত ল্যাংড়িয়ে দরজা খুলে দেখি, কয়েকটা নেংটি ইঁদুর খিক খিক করে হেসে ছোটাছুটি করছে। ভূতের ভায়রাদেরকে বিরক্ত না করে শৌচাগারে ঢুকি এবং রেচন ছোঁচের কাজ সেরে কামরায় ফিরার পথে বারান্দার সুইচের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলেছিলাম, ‘আধ রাতের জন্য একটা বাতি জ্বললে রাতারাতি ভিখারি হব না।’

কামরায় প্রবেশ করে দরজা সামান্য খুলা রেখে রেজাই দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়েছিলাম। ভোরে চিঁক চিক্কুর শুনে ধড়মড় করে উঠে হেঁকে জানতে চেয়েছিলাম, ‘নিচে কী হচ্ছে?’

একজন জবাব দিয়েছিল, ‘ভাণ্ডারে একটা আণ্ডা নেই। খোসা সুদ্ধ সব খেয়ে ফেলেছে।’

‘জবর ভালো করেছে।’ দাঁত কটমট করে বলে বিছানা থেকে নেমে টেবিলে তাজা নীলকমল দেখে অপলক দৃষ্টে তাকিয়ে দেখছিলাম।

‘পুষ্পসুবাসে সুবাসী হ।’ পৌষ্পের কণ্ঠ মনের কানে প্রতিধ্বনিত হলে চমকে উঠে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে কিছু দেখতে না পেয়ে গোলাপ হাতে নিয়ে নাকের কাছে নিলে, সুবাসে মন ধেই ধেই ধিন ধিনাত তাতা করে নেচে বলেছিল, ‘আমার সাথে কেউ আর ফুটানি করবে না গো।’

আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলে মন বলেছিল, ‘পিয়ারির সাথে যার পরিচয় হয়েছে তার সাথে কেউ উল্টাপাল্টা করে না। জাঁকে জেঁকে জমক দেখালে, বিত্রস্ত করে তঙ্ক বানাবে।’

মনের কথায় কান না দিয়ে নিচে নেমে অন্যদেরকে ফিসফিস করতে শুনে একজনকে ডেকে নীরবতা পালনের কারণ জানতে চাইলে দূরত্ব বজায় রেখে বলেছিল, ‘ভাণ্ডার খালি। ডিম আণ্ডা একটাও নেই।’

আমি বিদ্রূপহেসে বলেছিলাম, ‘ও আইচ্ছা এই বিষয়! তোদের সাথে দেখা করার জন্য গতরাত নরাশ এসেছিল। পিয়ারির সাথে খোশগল্পে মত্ত দেখ রেগে চটে আণ্ডা খেয়ে উধাও হয়েছে।’

‘বুঝিয়ে বল! লাশ না হয়ে তুই ডরের পরীক্ষা পাস করলে কেমনে?’

‘গরম চা বানিয়ে দিলে গরগর করে বলব।’ বলে আমি ফুটানি করে নবাবের মত আরাম করে আরাম কেদারায় বসে ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাং তুলে টেংরি নাচাতে নাচাতে বলেছিলাম, ‘রূপেগুণে বিমুগ্ধ হয়ে অরূপি আমার প্রেমে মজেছে।’

ও পিছু হেঁটে আংগুল নাচিয়ে বলেছিল, ‘আমার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখ! নইলে ছুমন্তর পড়ে টোটকায় ভরার জন্য গুনিন তলব করব।’

আমি হেসে কুটিপাটি হয়ে বলেছিলাম, ‘জানিস! পিয়ারিকে স্মরণ করলে গুণীর গতরে উপরিভার ভর করবে। ডাকব?’

সে দৌড়ে রাস্তার ওপাড়ে যেয়ে হায় হায় মাতম শুরু করেছিল। আমি গুনগুন করে পাকঘরে যেয়ে চুল্লিতে আগুন জ্বালিয়ে ডেগ ধুয়ে পানি জ্বাল দিয়ে আয়েশে চা বানিয়ে মৌজ করে পান করছিলাম। হঠাৎ রেস্তরাঁর সামনে বুভুক্ষুর ভীড় দেখে মাথা দিয়ে ইশারা করে বলেছিলাম, ‘এখানে কী চাই?’

‘আমাদের বাড়ি ঘরে একটাও ডিম আণ্ডা নেই। উপোস ভাংগার জন্য তোমার দোয়ারে এসেছি, আমাদেরকে কিছু খেতে দাও।’

তাদের কথা শুনে হাত দিয়ে ইশারা করে বলেছিলাম, ‘যাও! আণ্ডা আনার জন্য হট্টমন্দিরে যাও। ভাত সালন বেচি আমি কাঁচা আণ্ডা বেচি না।’

অরণ্যে রোদন করার জন্য ওরা ব্যর্থমনোরথে চলে যায়। আমার সহকর্মিরা শজারুর মত হেঁটে আসলে দাঁত খিচিয়ে আমি বলেছিলাম, ‘অগাচণ্ডীর নাগর অগাকান্ত! তোরা এত অপদার্থ কেন?’

‘তোকে স্পর্শ করতে পারব?’

‘আখাম্বার নাতি ধুম্বা! আমার উরে আয়, তোকে আদর করব। গাধা কোথাকার!’ বিরক্ত হয়ে বলে আমি চেয়ারে বসে চোখ পাকিয়ে বলেছিলাম, ‘যা! কাজ কর যেয়ে।’

অন্যরা এসে কাজে ব্যস্ত হয়। আমার অসমসাহসের খবর পেয়ে আমার এক বন্ধু রাতে ফোন করে বলেছিল তার শহরে একটা রেস্তোরাঁ আছে। ভূতের উপদ্রবে ওরা অতিষ্ট প্রায়। ভূত তাড়াতে যেয়ে গুণীরা বিপাকে পড়ে বদ্ধপাগল হয়েছে। রেস্তোরাঁর মালিক অনেক মানত করেছে কিন্তু ভূতরা তাকে অব্যাহতিদান করেনি। আমার সহকর্মী বিপদ্রুপ হেসে বলেছিল, ‘হুটোপাটি ঠেলাঠেলি আর লাঠির গুঁতোর মজা আজ হাড়ে হাড়ে টের পাবে। জলদি দরজা জানালায় ছিটকানি লাগা নইলে নিশারাতে ঘরে প্রেত্নী ঢুকবে।’

‘আমি তো আর একা যাচ্ছি না। এসব কাজ একলা করা যায় না। দোকলার প্রয়োজন হয়। আমার গাড়ির চাবি খুঁজে পাচ্ছি না।’

‘পটোলে মাছ-মাংস পুরে দোলমা বানিয়ে তুই একা খা। আমি কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। যে কাজে আত্মরক্ষার নিরাপত্তা নেই এমন কাজ আমি আর করব না। আর শোন! চৌচাপটে আছাড় খাওয়ার জন্য চার খণ্ডে বিভক্ত করে কে যেন আমার গাড়ির চাক্কা একটা নষ্ট করেছে।’

‘ওরে বাসরে! আধা রাতে চৌষট্টি কলার বিদ্যা শিখলে কেমনে?’

‘দেখ ভাই বলিয়ে, আমি জানি তুই ভালো গল্প লিখতে পারিস কিন্তু মহাসমস্যার বিষয় হল, ভূতের সাথে সাক্ষাত হলে আমি হতভম্ব হই। আমার মাথায় কাজ করে না। ভারী বিপাকে অথবা দৈববিপাক পড়তে চাই না। অতঃপর, আমি তোর সাথে যাব না।’

‘ভূতের ভয়ে বন্ধুকে ভুলতে পারব না। তুই না গেলেও আমি একা যাব। প্রয়োজন হলে হামাগুড়ি দেব।’ বলে আমি বেরিয়ে গাড়ির পাশে গেলে সে দৌড়ে এসে বলেছিল, ‘ভূতের ভয়ে বন্ধুকে ভুলতে পারব না।’

‘ভোলাভুলি ভালো নয়। বান্ধবকে ভুললে ভ্যালা ঝামেলা হয়।’







তারপর ...

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৪

মোহাম্মদ জমির হায়দার বাবলা বলেছেন: ভাইজান সালাম।আইসা পড়ছি। আশা করি এ ব্লগে আপনার উপন্যাস নন্দিত হবে।
ভালো থাকুন সব সময়।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৬

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: এখানের খবর আমি ভালো করেই জানি। এখানে মারামারি বেশি। এই কারণে আলোতে গিয়েছিলাম।

এবার দেখি কিছু করা যায় কি না।

কেমন আছেন?

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৫

মোহাম্মদ জমির হায়দার বাবলা বলেছেন: আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী। না হলে লেখালেখির সময় কোথায় পাই।
এখানে ক্যাচাল একটু বেশী।ঠিক বলেছেন। ক্যাচাল টাইপের পোস্ট এড়িয়ে চলার অভ্যাস আমার আগে থেকেই আছে। ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.