নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাধসপুরে বারবেলা ( উপন্যাস ) আট

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩০





‘আমার কলিজার টুকরা আমার উরে আয়।’ বলে দাদী অশ্রুবর্ষণ করে দু হাত প্রসারিত করলে দাদীর হাত ধরে কপাল কুঁচকে আয়মান বলল, ‘কী হয়েছে দাদীজান, আপনাকে সাথে লেগেছে নাকি?’

‘ভিতরে চল, তোর কোঠায় যেয়ে আরাম করে বসে অগাচণ্ডীর সাথে ঠাট্টাইয়ার্কি করব, চল।’ বলে কারু দিকে না তাকিয়ে আয়মানকে নিয়ে তার কামরায় প্রবেশ করলে সরসী লাফ দিয়ে বিছানার উপর দাঁড়িয়ে আংগুল নাচিয়ে বলল, ‘কানার মত আরেক দিন ঢিল মারলে! তোমার কল্লা ফাটাব মনে থাকে যেন।’

‘দৌড়ে তোর বাড়ি যা!’ বলে আয়মান রেগে ব্যোম হয়ে হাত এবং মাথা দিয়ে ইশারা করলে সরসী চোখ পাকিয়ে মাথা দিয়ে ইশারা করে বলল, ‘না গেলে কী করবে?’

‘দাঁড়া!’ খোঁজাখুঁজি করে বেতের গল্লা হাতে নিয়ে আয়মান তেড়ে বলল, ‘বাড়ি মেরে তোর নরম কোমর ভাংব। যা বাড়ি যা।’

‘আমাকে দেখলে তোমার মাথা গরম হয় কেন?’ বলে সরসী ধপাস করে বিছানায় বসে।

‘তোর রূপাগুন লাগলে দপ করে গোসাঘরে আগুন জ্বলে। তোর গায়ের গন্ধে আমার দম বন্ধ হয়। আমি তোকে সহ্য করতে পারি না।’

‘আয়মান ভাই, এসব কী বলছ?’ বলে সরসী বিছানা থেকে নেমে ধীরে ধীরে এগুলে আয়মান দাত কটমট করে বলল, ‘আমার বগলে আসলে কল্লা ফাটাব!’

সরসী হতাশ হয়ে কাঁধ ঝুলিয়ে বলল, ‘ভয়দ ভাষায় কথা বলে বার বার বিত্রস্ত করো কেন?’

‘তোকে কাঁদতে দেখলে আমার হাসি পায়, তাই তোকে ভয়ত্রস্ত করি। কিছু করবি?’

‘জুতসই করতে পারলে তোমাকে আমি নাস্তানাবুদ করব। আমার কথা মনে থাকে যেন।’

‘তোর এত সাহস! আজ তোকে জানে মেরে ফেলব।’ বলে আয়মান চোখ পাকিয়ে ডানে বাঁয়ে তাকায়।

তার হাবভাব দেখে অন্যরা ভয়ে জড়সড় হয়ে বেড়ার সাথে ঠেকা খেয়ে আর পিছাতে পারছেন না। তাদের মরণদশা দেখে আয়মান শরীর কাঁপিয়ে হেসে বলল, ‘আমাকে এত ভয় পাও কেন?’

অন্যরা কাঁধ ঝুলিয়ে যে যেখানে ছিলেন ওখানে বসে হাঁফাতে লাগলেন। সরসীর দাদী এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতের কাছে এক সেরী পাথর পেয়ে দাঁত কটমট করে আয়মানের দিকে ছুড়ে বললেন, ‘আমার সম্মুখ থেকে দূর হ!’

আয়মান পাথর লুফে চোখ পাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলল, ‘পুঁয়ে পাওয়ার মত আরেকদিন ঢিল মারলে, ঢেলা লুফে তোমার টেরা চোখে মারব মনে তাকে যেন!’

‘আচ্ছা মনে থাকবে। এখন বল কী খেয়ে মোটা পেট ভরেছিস?’

‘খালি পেট পিঠের সাথে লেগে আছে দেখেও চুটকি বলছ। আচ্ছা, পেট ভরে খেয়ে দাদী নাতনিকে পুলিপোলাও পাঠাব নাস্তা করার জন্য।’ পেটে হাত বুলিয়ে মা’র দিকে তাকিয়ে কাতর হয়ে আয়মান বলল, ‘আম্মা, আমার ভুখ লেগেছে।’

‘আমার সাথে আসো, কোর্মা কালিয়া দিয়ে ঘিভাত মাখিয়ে তোমাকে খাওয়াব।’ বলে সরসী খিলখিল করে হাসলে আয়মান ফোঁসফোঁস করে বলল, ‘দাদীজান! ওকে চলে যাওয়ার জন্য বলুন নইলে জানে মেরে ফেলব।’

‘সরসী, তুই তোর দাদীকে নিয়ে চলে যা। আর চেতালে আজ সত্যিসত্যি কল্লা ফাটাবে।’ বলে আ’দাদী সরসীর গালে হাত বুলিয়ে আস্তে করে মাথায় চুমু দিলেন।

‘ও দাদু গো! আমার মুণ্ডুর ভিতর ব্যথা হচ্ছে। ওঝা বৈদ্য ডাক্তারকে ডাকো। আমি চিন্তা করতে পারছি না। আল্লাহ গো, আমার কল্লার ভিতর এত ব্যথা হচ্ছে কেন? হায় হায়, আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছি না। বার বার আছাড় পটকান খাচ্ছি কেন? গোলমেল হিসাবে এত গণ্ডগোল কেন? আদাড়পাঁদাড় কামরা এত আউলাঝাউলা কেন? হায় হায় কী হল? লণ্ডভণ্ড হাণ্ডুলবাণ্ডুল সব কিছু তচনচ হচ্ছে কেন? ও আয়মান ভাই! তন্ত্রমন্ত্র জপে আমার গায়ে একটা ফুঁ দাও। গায়ের জোরে ফুঁ দিলে ভারিক্কিভাব দূর হবে। ও আয়মান ভাই! তাগাদা একটা ফুঁ দাও।’

সরসীর চিঁক চিৎকার শুনে সবাই এককাট্টা হলেন। ভয়ে কেউ কিছু বলছেন না। স’দাদা আ’দাদাকে ঠেলে বললেন, ‘যেয়ে দেখুন কী হয়েছে? আমার মন চিৎকার করে বলছে, জাতভ্রষ্ট জিন বিদিশা হয়ে সরসীর ঘাড়ে ভর করেছে।’

‘তোদের যন্ত্রণায় যে কী করি!’ বলে আ’দাদা জোর কদমে হেঁটে সরসীর সামনে যেয়ে অধরদংশন করে গায়ের জোরে ভেটকি দিলেন, ‘এই! থামলি।’

ধমক শুনে সরসী চমকে মাথা ঝাড়া দিয়ে বলল, ‘এবেলা খানিকটা ব্যথা কমেছে। এত জোরে দাবড়ি দিলেন কেন?’

‘যা! অট্টগরম চা বানিয়ে টরটর করে নিয়ে আয়।’ চোখ পাকিয়ে আংগুল দিয়ে ইশারা করে ওকে চলে যাওয়ার জন্য বলে সবার দিকে তাকিয়ে আ’দাদা বিদ্রূপহেসে বললেন, ‘ভর নামাতে হলে ছুমন্তর পড়ে গায়ের জোরে ফুঁক দিতে হয়। সভয়ে দিলে নিজের গতরে ভর করে বুঝলে?’

আয়মান পেটে ধরে হাসতে হাসতে বলল, ‘এই কারণে অবলার নাতনি ল্যালা হয়েছে গো।’

সরসীর দাদী তেড়ে ফুঁড়ে এগুলে ধমকে আ’দাদা বললেন,‘থামো! সরসী, সাবাইকে নিয়ে পাকঘরে যা।’

কথা না বলে দাদীরা হাঁটতে শুরু করলে আয়মান তাদেরকে অনুসরণ করে। পাকঘরে যেয়ে গপসপ করে রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। আয়মান যথাসাধ্য চেষ্টা করেও সরসীকে সন্ত্রস্তা করতে পারেনি। বিধেয় সরসীর কামরায় যেয়ে লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে থোড়াক্ষণ গড়াগড়ি করে পাশবালিশ পাশে চেপে গালবালিশে গাল রাখে। কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে তুলার বালিশে আরম করে মাথা রেখে চোখ বুজে তন্দ্রাবিষ্ট হয়ে স্বপ্নপুরে প্রবেশ করে দেখে, নৈসর্গ মায়াচ্ছন্ন। মেঘহীন আকাশে গোলাপী বেগুনি নীল রঙ্গের তারা ঝিলমিল করছে। স্বপ্নপুরে সবকিছু স্বপ্নীল। পাহাড়ি ঝরণার ধারা ঝিকমিক করে ঝিলে নেমে পিচকারি দিয়ে উপরে উঠে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। আস্তেধীরে হেঁটে অনন্যসাধারণ ছায়াবিতানে প্রবেশ করে বিমুগ্ধ হয়ে মুগ্ধনয়নে দেখে মোহগ্রস্ত হয়। চক্ষু কর্ণের বিবাদভঞ্জন করার জন্য গান গেয়ে ধীরপায়ে হাঁটছিল, ‘ভালোবাসি তোরে আমি মালার মত গলায় ঝুলাব আদর করে, আগরের পালঙ্কে বধূকে বসাব আমি শণেরঘর বানাব ধাধসপুরে।’

‘আয়মান ভাই! আমাকে বাঁচাও।’ সরসীর চিৎকার শুনে আয়মান পলকে ভোজালি হাতে নিয়ে হাঁক দেয়, ‘সরসী! তুই কোথায়?’



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.