নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাধসপুরে বারবেলা (উপন্যাস) ৩

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৯






‘তুই আমাকে এক মুঠো খইর সাথে তুলনা করলে? ঠিকাছে! বিপদ পড়লে ভেড়ায় বীরকে ভেড়ুয়া ডাকে। আমি অখন বিষম বিপদ আছি। বিমর্দিত হলে বিদিশা হব। বিভ্রাটে বিভ্রান্ত আমি হতবুদ্ধি হয়েছি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। শৌচাগারের পথ খুঁজে পাচ্ছি না।’
‘কামরা থেকে বেরিয়ে ডাইনে দৌড়ে যা। মাত্র কয়েক কদম দূর।’
‘আজকের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, আরেকদিন দেখা হবে।’ বলে বুক ভরে শ্বাস টেনে সাহস সঞ্চার করে পলকে হাত বাড়িয়ে বাতি জ্বালিয়ে হাঁফ ছাড়তে চেয়ে শ্বাস রুদ্ধ করে ধীরে ধীরে বেরিয়েছিলাম। শৌচাগারে যাওয়ার পথে একটা ধাপ আছে। যেমনি পা নামাব ওমনি কী যেন চিঁক দিয়ে উঠেছিল। চিঁক শুনে আমি চিৎপটাং। কোমরে ধরে দাঁড়িয়ে ল্যাংড়ার মত ল্যাংড়িয়ে দরজা খুলে দেখি, কয়েকটা নেংটি ইঁদুর খিক খিক করে হেসে ছোটাছুটি করছে। ভূতের ভায়রাদেরকে বিরক্ত না করে শৌচাগারে ঢুকি এবং রেচন ছোঁচের কাজ সেরে কামরায় ফিরার পথে বারান্দার সুইচের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলেছিলাম, ‘আধ রাতের জন্য একটা বাতি জ্বললে রাতারাতি ভিখারি হব না।’
কামরায় প্রবেশ করে দরজা সামান্য খুলা রেখে রেজাই দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়েছিলাম। ভোরে চিঁক চিক্কুর শুনে ধড়মড় করে উঠে হেঁকে জানতে চেয়েছিলাম, ‘নিচে কী হচ্ছে?’
একজন জবাব দিয়েছিল, ‘ভাণ্ডারে একটা আণ্ডা নেই। খোসা সুদ্ধ সব খেয়ে ফেলেছে।’
‘জবর ভালো করেছে!’ দাঁত কটমট করে বলে বিছানা থেকে নেমে টেবিলে তাজা নীলকমল দেখে অপলক দৃষ্টে তাকিয়ে দেখছিলাম।
‘পুষ্পসুবাসে সুবাসী হ।’ পৌষ্পের কণ্ঠ মনের কানে প্রতিধ্বনিত হলে চমকে উঠে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে কিছু দেখতে না পেয়ে গোলাপ হাতে নিয়ে নাকের কাছে নিলে, সুবাসে মন ধেই ধেই ধিন ধিনাত তাতা করে নেচে বলেছিল, ‘আমার সাথে কেউ আর ফুটানি করবে না গো।’
আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলে মন বলেছিল, ‘পিয়ারির সাথে যার পরিচয় হয়েছে তার সাথে কেউ উল্টাপাল্টা করে না। জাঁকে জেঁকে জমক দেখালে, বিত্রস্ত করে তঙ্ক বানায়।’
মনের কথায় কান না দিয়ে নিচে নেমে অন্যদেরকে ফিসফিস করতে শুনে একজনকে ডেকে নীরবতা পালনের কারণ জানতে চাইলে দূরত্ব বজায় রেখে বলেছিল, ‘ভাণ্ডার খালি। ডিম আণ্ডা একটাও নেই।’
আমি বিদ্রূপহেসে বলেছিলাম, ‘ও আইচ্ছা এই বিষয়। তোদের সাথে দেখা করার জন্য গতরাত নরাশ এসেছিল। পিয়ারির সাথে খোশগল্পে মত্ত দেখ রেগে চটে আণ্ডা খেয়ে উধাও হয়েছে।’
‘বুঝিয়ে বল! লাশ না হয়ে তুই ডরের পরীক্ষা পাস করলে কেমনে?’
‘গরম চা বানিয়ে দিলে গরগর করে বলব।’ বলে আমি ফুটানি করে নবাবের মত আরাম করে আরাম কেদারায় বসে ঠ্যাংগের উপর ঠ্যাং তুলে টেংরি নাচাতে নাচাতে বলেছিলাম, ‘রূপেগুণে বিমুগ্ধ হয়ে অরূপি আমার প্রেমে মজেছে।’
ও পিছু হেঁটে আঙুল নাচিয়ে বলেছিল, ‘আমার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখ, নইলে ছুমন্তর পড়ে টোটকায় ভরার জন্য গুনিন তলব করব।’
আমি হেসে কুটিপাটি হয়ে বলেছিলাম, ‘জানিস! পিয়ারিকে স্মরণ করলে গুণীর গতরে উপরিভার ভর করবে। ডাকব?’
সে দৌড়ে রাস্তার ওপাড়ে যেয়ে হায় হায় মাতম শুরু করেছিল। আমি গুনগুন করে পাকঘরে যেয়ে চুল্লিতে আগুন জ্বালিয়ে ডেগ ধুয়ে পানি জ্বাল দিয়ে আয়েশে চা বানিয়ে মৌজ করে পান করছিলাম। হঠাৎ রেস্তরাঁর সামনে বুভুক্ষুর ভীড় জমলে চিন্তিতকণ্ঠে বলেছিলাম, ‘এখানে কী চাই?’
‘আমাদের বাড়ি ঘরে একটা ডিম আণ্ডা নেই। উপোস ভাঙ্গার জন্য তোমার দোয়ারে এসেছি, দয়া করে আমাদেরকে কিছু খেতে দাও।’
তাদের কথা শুনে হাত দিয়ে ইশারা করে বলেছিলাম, ‘যাও! আণ্ডা আনার জন্য হট্টমন্দিরে যাও। ভাত সালন বেচি আমি কাঁচা আণ্ডা বেচি না।’
অরণ্যে রোদন করার জন্য ওরা ব্যর্থমনোরথে চলে যায়। আমার সহকর্মিরা শজারুর মত হেঁটে আসলে দাঁত খিচিয়ে আমি বলেছিলাম, ‘অগাচণ্ডীর নাগর অগাকান্ত! তোরা এত অপদার্থ কেন?’
‘তোকে স্পর্শ করতে পারব?’
‘আখাম্বার নাতি ধুম্বা! আমার উরে আয়, তোকে আদর করব। গাধা কোথাকার!’ বিরক্ত হয়ে বলে আমি চেয়ারে বসে চোখ পাকিয়ে বলেছিলাম, ‘যা! কাজ কর যেয়ে।’
অন্যরা এসে কাজে ব্যস্ত হয়। আমার অসমসাহসের খবর পেয়ে আমার এক বন্ধু রাতে ফোন করে বলেছিল তার শহরে একটা রেস্তোরাঁ আছে। ভূতের উপদ্রবে ওরা অতিষ্ট প্রায়। ভূত তাড়াতে যেয়ে গুণীরা বিপাকে পড়ে বদ্ধপাগল হয়েছে। রেস্তোরাঁর মালিক অনেক মানত করেছে কিন্তু ভূতরা তাকে অব্যাহতিদান করেনি। আমার সহকর্মী বিদ্রুপ হেসে বলেছিল, ‘হুটোপাটি ঠেলাঠেলি আর লাঠির গুঁতোর মজা আজ হাড়ে হাড়ে টের পাবে। জলদি দরজা জানালায় ছিটকানি লাগা নইলে নিশারাতে ঘরে প্রেত্নী ঢুকবে।’
‘আমি তো আর একা যাচ্ছি না। এসব কাজ একলা করা যায় না। দোকলার প্রয়োজন হয়। আমার গাড়ির চাবি খুঁজে পাচ্ছি না।’
‘পটোলে মাছ-মাংস পুরে দোলমা বানিয়ে তুই একা খা। আমি কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। যে কাজে আত্মরক্ষার নিরাপত্তা নেই এমন কাজ আমি আর করব না। আর শোন! চৌচাপটে আছাড় খাওয়ার জন্য চার খণ্ডে বিভক্ত করে কে যেন আমার গাড়ির একটা চাক্কা নষ্ট করেছে।’
‘ওরে বাসরে! আধা রাতে চৌষট্টি কলার বিদ্যা শিখলে কেমনে?’
‘দেখ ভাই বলিয়ে, আমি জানি তুই ভালো গল্প লিখতে পারিস কিন্তু মহাসমস্যার বিষয় হল, ভূতের সাথে সাক্ষাত হলে আমি হতভম্ব হই। আমার মাথা কাজ করে না। ভারী বিপাকে অথবা দৈববিপাক পড়তে চাই না। অতঃপর! আমি তোর সাথে যাব না।’
‘ভূতের ভয়ে বন্ধুকে ভুলতে পারব না। তুই না গেলেও আমি একা যাব। প্রয়োজন হলে হামাগুড়ি দেব।’ বলে আমি বেরিয়ে গাড়ির পাশে গেলে সে দৌড়ে এসে বলেছিল, ‘ভূতের ভয়ে বন্ধুকে ভুলতে পারব না।’
‘ভোলাভুলি ভালো নয়। বান্ধবকে ভুললে ভ্যালা ঝামেলা হয়।’
‘তাই নাকি?’
‘হ্যাঁ। তুই মরে ভূতেশ হলেও আমি তোকে বন্ধু ডাকব। এখন চল। যেয়ে দেখি বন্ধুর অবস্থা বোঝে ব্যবস্থা করা যায় কি না? ব্যাপক ও অবাঞ্ছিত পরিবর্তনে বিপরীত পরিণামে বিপাকগ্রস্ত হলে, বিপন্মুক্তির জন্য মেড়ামেড়ি মানত করব।’ বলে আমি গাড়ি চালাতে শুরু করলে বন্ধু কপাল চাপড়ে বলেছিল, ‘দুর্দশাগ্রস্ত হওয়ার জন্য কেন যে তোর বান্ধব হয়েছিলাম? আমার দাদীজান আমার জন্য নিখুঁত সুন্দরী খুঁজে পেয়েছেন আর ভ্রমান্ধ হয়ে আমি তোর সাথে নৈশভ্রমণে বেরিয়েছি। না জানি আমার পুড়া কপালে কী লেখা?’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.