নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাধসপুরে বারবেলা (উপন্যাস) ৮

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৭










‘খালি পেট পিঠের সাথে লেগে আছে দেখেও চুটকি বলছ। আচ্ছা! পেট ভরে খেয়ে দাদি নাতনিকে পুলিপোলাও পাঠাব নাস্তা আনার জন্য।’ পেটে হাত বুলিয়ে মা’র দিকে তাকিয়ে কাতর হয়ে আয়মান বলল, ‘আম্মা, আমার ভুখ লেগেছে।’
‘আমার সাথে আসো! কোর্মা কালিয়া দিয়ে ঘিভাত মাখিয়ে তোমাকে খাওয়াব।’ বলে সরসী খিলখিল করে হাসলে আয়মান ফোঁসফোঁস করে বলল, ‘দাদিজান! ওকে চলে যাওয়ার জন্য বলুন নইলে জানে মেরে ফেলব।’
‘সরসী! তুই তোর দাদিকে নিয়ে চলে যা। আর চেতালে আজ সত্যিসত্যি কল্লা ফাটাবে।’ বলে আ-দাদি সরসীর গালে হাত বুলিয়ে আস্তে করে মাথায় চুমু দিলেন।
‘ও দাদু গো! আমার মুণ্ডুর ভিতর ব্যথা হচ্ছে। ওঝা বৈদ্য ডাক্তারকে ডাকো। আমি চিন্তা করতে পারছি না। আল্লাহ গো! আমার কল্লার ভিতর এত ব্যথা হচ্ছে কেন? হায় হায়! আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছি না। বার বার আছাড় পটকান খাচ্ছি কেন? গোলমেল হিসাবে এত গণ্ডগোল কেন? আদাড়পাঁদাড় কামরা এত আউলাঝাউলা কেন? হায় হায়! কী হল? লণ্ডভণ্ড হাণ্ডুলবাণ্ডুল সব কিছু তচনচ হচ্ছে কেন? ও আয়মান ভাই! তন্ত্রমন্ত্র জপে আমার গায়ে একটা ফুঁ দাও। গায়ের জোরে ফুঁ দিলে ভারিক্কিভাব দূর হবে। ও আয়মান ভাই! জলদি একটা ফুঁ দাও।’
সরসীর চিঁক চিৎকার শুনে সবাই এককাট্টা হলেন। ভয়ে কেউ কিছু বলছেন না। স-দাদা আ-দাদাকে বললেন, ‘যেয়ে দেখুন কী হয়েছে? আমার মন চিৎকার করে বলছে, জাতভ্রষ্ট জিন বিদিশা হয়ে সরসীর ঘাড়ে ভর করেছে।’
‘তোদের যন্ত্রণায় যে কী করি!’ বলে আ-দাদা জোর কদমে হেঁটে সরসীর সামনে যেয়ে অধরদংশন করে গায়ের জোরে ভেটকি দিলেন, ‘এই! থাম।’
ধমক শুনে সরসী চমকে মাথা ঝাড়া দিয়ে বলল, ‘এবেলা খানিকটা ব্যথা কমেছে। এত জোরে দাবড়ি দিলেন কেন?’
‘যা! অট্টগরম চা বানিয়ে টরটর করে নিয়ে আয়।’ চোখ পাকিয়ে আঙুল দিয়ে ইশারা করে ওকে চলে যাওয়ার জন্য বলে সবার দিকে তাকিয়ে আ-দাদা বিদ্রূপহেসে বললেন, ‘ভর নামাতে হলে ছুমন্তর পড়ে গায়ের জোরে ফুঁক দিতে হয়। সভয়ে দিলে নিজের গতরে ভর করে, বুঝলে?’
আয়মান পেটে ধরে হাসতে হাসতে বলল, ‘এই কারণে অবলার নাতনি ল্যালা হয়েছে গো।’
সরসীর দাদি তেড়ে ফুঁড়ে এগুলে ধমকে আ-দাদা বললেন!'থামো! সরসী, সাবাইকে নিয়ে পাকঘরে যা।’
কথা না বলে দাদিরা হাঁটতে শুরু করলে আয়মান তাদেরকে অনুসরণ করে। পাকঘরে যেয়ে গপসপ করে রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। আয়মান যথাসাধ্য চেষ্টা করেও সরসীকে সন্ত্রস্তা করতে না পেরে ওর কামরায় যেয়ে লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে গড়াগড়ি করে পাশবালিশ পাশে চেপে গালবালিশে গাল রাখে। কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে তুলার বালিশে আরম করে মাথা রেখে চোখ বুজে তন্দ্রাবিষ্ট হয়ে স্বপ্নপুরে প্রবেশ করে দেখে, পরিপার্শ্বে মায়াচ্ছন্ন ভাব। মেঘহীন আকাশে গোলাপী বেগুনি নীল রঙ্গের তারা ঝিলমিল করছে। স্বপ্নপুরে সবকিছু স্বপ্নীল। পাহাড়ি ঝরণার ধারা ঝিকমিক করে ঝিলে নেমে পিচকারি দিয়ে উপরে উঠে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। আস্তেধীরে হেঁটে অনন্যসাধারণ ছায়াবিতানে প্রবেশ করে বিমুগ্ধ হয়ে মুগ্ধনয়নে দেখে মোহগ্রস্ত হয়। চক্ষু কর্ণের বিবাদভঞ্জন করার জন্য গান গেয়ে ধীরপায়ে হাঁটছিল, ‘ভালোবাসি তোরে আমি মালার মত গলায় ঝুলাব আদর করে, আগরের পালঙ্কে বধূকে বসাব আমি শণেরঘর বানাব ধাধসপুরে।’
‘আয়মান ভাই! আমাকে বাঁচাও।’ সরসীর চিৎকার শুনে আয়মান পলকে ভোজালি হাতে নিয়ে হাঁক দেয়, ‘সরসী! তুই কোথায়?’
‘আয়মান ভাই! আয়মান ভাই!’
‘সরসী! চেয়ে দেখ ইয়া মোটা জোঁক।’ বলে আয়মান কান পাতে। সাড়াশব্দ নেই।
‘জুজুবুড়ির এত সাহস! আমাকে জুতসই করতে চায়।’ নিম্নকণ্ঠে বলে আয়মান ভোজালি কোষে রেখে বিদ্রুপহেসে ব্যস্তকণ্ঠে বলল, ‘সরসী! দৌড়ে এসে উদ্ধার কর। জোঁকরা আমাকে খেয়ে ফেল্ল।’
‘চিল্লাচিল্লি বন্ধ কর! তোর রক্তে মন্ত্রামৃত হবে না।’
‘ও লো! অনূঢ়ার রক্তে তোর মনস্কামনা পুরা হবে না লো। তিন সত্যের কিরা খেয়ে কথা দিয়েছে, অনূঢ়ান্ন খেয়ে অনূঢ়া অনূঢ়ত্ব আমাকে দান করবে।’ বলে আয়মান হেসে কুটিপাটি হয়। এমন সময় নেকড়ে আবির্ভূত হয়ে তাকে আক্রমণ করে। যদিও প্রস্তুত ছিল না কিন্তু শিয়াল চিতা গুলবাঘকে সে তেমন তোয়াক্কা করে না। দাঁত খিঁচিয়ে ভেটকি দিলে লেজ উল্টিয়ে ধুম ধমাৎ করে পালায়, কিন্তু নেকড়ে তাকে তাজ্জব করছে। হিংস্রদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। নেকড়ের তর্জনগর্জন এবং তেরিমেরি দেখে সে মহাখাপ্পা হয়। গোসাঘরে আগুন জ্বলে চোখ দিয়ে ক্রোধের স্ফুলিঙ্গ বেরোচ্ছে। কূজন বন্ধ করে পাখপাখালিরা তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিশির ডাক শুনে আলাই বালাইরা ঘনঘন কু ডাকছে। বাতাসে বিপদ সংকেত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ভূতপূর্ণিমায় ভূতের ভয়ে বিত্রস্ত রোহিণী কালো মেঘের পিছনে লুকিয়ে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে দেখে অধিমাসের নিশামণি মুগ্ধদৃষ্টে তাকিয়ে দেখছে, তারপর কী হয়?
আচকা নেকড়িয়া হিংস্র হুংকার ছাড়লে আয়মান রেগে ব্যোম হয়ে ভোজালি বার করে দাঁতে দাঁত পিষে বলল, ‘দাঁড়া! এখনি তোকে নাস্তানাবুদ করব।’
নেকড়ে পিছু হাঁটতে শুরু করে।
‘তোর এত স্পর্ধা! দাঁত খিঁচিয়ে আমাকে ডর দেখাতে চাস। দাঁড়া! জুতসই করে তোকে তুরুমঠোকা দেব।’ বলে আয়মান তেড়ে এগুলে নেকড়িয়া দৌড়ে বনগহনে হারিয়ে যায়।
‘বাঁচাও! বাঁচাও!’ নারী-চিঁক বাতাসে ধ্বনিত হয়।
‘ধাধসপুরে একী ভেলকি শুরু হল?’
‘ওরে মনে রাখিস! জীবনলীলা সাঙ্গ হলেও ধাধসপুরে বারবেলা ফুরায় না। জুতসই করলে তোকে আমি ভুনে খাব।’
‘ওলো শোন! মন ঘুমায় জানি অষ্টপ্রহর দেহকে আত্মা পাহারা দেয়। এ তথ্য তুই জানিস না।’
‘বিদিশা হয়ে তুই ধাধসপুরে এসেছিস কেন?’
‘আমার প্রিয়তমার বাসরে আমি আসব না তো কে আসবে লো?’
‘এই! খামোখা মকমক করিস না।’
‘কাণ্ডজ্ঞানহীনের মত যারা কথা বলে, তাদের সাথে আমি কথা বলি না। ওরা আমার সব কথা বোঝে না।’
‘তোর সাথে আমি আর কথা বলতে চাই না।’
‘আমি তোকে মিনতি করছি নাকি? ল্যালা কোথাকার!’ বলে আয়মান মুখ বিকৃত করে। এমন সময় ধমকা বাতাস তার সামনে এসে থমকে থামে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.