নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাধসপুরে বারবেলা (উপন্যাস) ১২

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৪



১১
১০










‘সবাই বলে নিষ্ঠুর তুমি বড্ড পাষাণ। তোমাকে কাঁদতে দেখে গলার জোরে বলতে চেয়েছিলাম, আমার আয়মান ভাইর মত এত দয়ালু লোক আমি দেখিনি।’
আয়মান বর্শা এগিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে বলল, ‘নে, বুকের বামপাশে ঘা মার। গায়ের জোরে মারলে গলার জোরে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদব।’
সরসী বিচলিত হয়ে বলল, ‘তীক্ষারসের বর্শা দিয়ে গায়ের জোরে ঘা মারলে মরে যাবে তো।’
‘তুই মারলে আমি মরব না, নে পরীক্ষা করে দেখ।’
‘তুমি এমন হচ্ছ কেন?’
‘আমি জানি না।’
‘ওকে তুমি ভালোবাস?’ বলে সরসী অপলকদৃষ্টে তাকালে আয়মান কপাল কুঁচকে বলল, ‘কার কথা বলছিস?’
‘তোমার সহাধ্যায়িনী।’
‘একমাত্র তোর সাথে আমি কথা বলি, অন্য কারো দিকে তাকাবার সময় আমার নেই।’
‘অষ্টপ্রহর ওকে তোমার ধারে পাশে দেখি। আমি চাইলেও তোমার পাশ ভিড়তে পারি না কেন?’
‘আমি কী জানি?’ বলে আয়মান কাঁধ বাঁকালে তার চোখের দিকে তাকিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে সরসী বলল, ‘আয়মান ভাই, একটিবার জড়িয়ে ধরতে পারব?’
‘অদ্য আমার প্রতি তুই এত আসক্ত হয়েছিস কেন?’
‘সুপুরুষ তুমি সিদ্ধাই তোমার কামবাণে আহত হতে চাই।’
আয়মান রেগে ব্যোম হয়ে বলল, ‘সরসী! কথার অর্থ বুঝে কথা বলবি। তুই হয়ত জানিস না, সব কথা সবসময় বলতে নেই। অসৎ উদ্দেশ্যে বললে যুবক ঢেমনা হয় যুবতী ঢেমনী।’
সরসী বিচলিত হয়ে কাঁধ ঝুলিয়ে বলল, ‘তোমাকে ভালোবাসি আমি কেলেঙ্কারি করতে চাই না।’
আয়মান চোখ বুজে মনের চোখে রুষ্ট অপ্সরাকে দেখে মাথা ঝাড়া দিয়ে চোখ মেলে সরসীর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলল, ‘তুই এখন চলে যা।’
‘কী হয়েছে, এত চিন্তিত হচ্ছ কেন?’
আয়মান গাছে হেলান দিয়ে বসে বলল, ‘আমার কিছু হয়নি। তোর কী হয়েছে?’
‘আমাদের মাস্টার সাহেব আমাকে বুঝিয়ে বলেছেন, তুমি নাকি ভালো বাংলা জানো। বাংলা শিখার জন্য তোমার সাথে অন্তরঙ্গতা বাড়াতে চাই।’
‘আন্তরিকতার ভাবসাব স্বভাব ভালো হলেও অঙ্গাঙ্গিভাব খুব মন্দ। শুনেছি, কামুক হয়ে কাম করলে জাতকুল যায়।’
‘জানো! তোমার অঙ্গসুবাসে বাতাস সুবাসিত হলে, লম্পটরা দম বন্ধ করে পিটটানিয়ে একছুটে পালায়। তোমার সাথে আমি মধুর পিরিতি করতে চাই।’
‘তোর হাবভাব দেখে মন বলছে, তোর গতরে পণ্ডিতভূতনী ভর করেছে।’
‘তুমি কি জান না, বনচারীরা যে ভূতপ্রেতে বিশ্বাসী?’
‘আমি জানতাম না। অনেক ধন্যবাদ। এখন মিনতি করে বলছি দয়া করে চলে যা, দোহাই!’
‘জংলায় এসে ঝোপঝাড়ের ভিতর লুকাও কেন?’
‘আমি লুকালে তোর অসুবিধা কী?’
‘থলথলে হয়ে একমাত্র তোমার সাথে আমি মনের দুয়ার খুলে কথা বলতে পারি। ওদের সাথে কথা বলে লোলিত হতে পারি না। আমার দ্বিধাদ্বন্দ্ব লাগে এবং ওরাও আমার সব কথা বুঝে না, আমি অস্বস্তিবোধ করি।’
‘অনুভূতিপ্রবণ হয়ে আবেগসঞ্চারক সংলাপ বলে তুই আমাকে ভাবভোলা বানাতে চাস নাকি?’ বলে আয়মান কপাল কুঁচ করলে সরসী গম্ভীর হয়ে বলল, ‘I know you had a girlfriend. Then I wasn’t nubile, now loveable I am longing to be loved, please love me.’
‘Go home before I pin you down. I mean now!’
‘যাচ্ছি তো! গলা ফাটিয়ে চিল্লাচ্ছ কেন? নক্ষত্রবাসি কোথাকার!’ বলে সরসী জোর কদমে হাঁটতে শুরু করে।
‘আবার আসলে ছিনাজোঁকের মত ঠাঠাপড়ারোদে গেঁথে রাখব, চিৎপটাং করে। মনে থাকে যেন!’
‘ছিঁচকাঁদুনির মত কেঁদে কুম্ভিরাশ্রু ঝরিয়ে আমি আজ আমার আব্বার কাছে নালিশ করব।’
‘ফুসমন্ত দিয়ে আমার আব্বার কান গরম করলে তোর পিঠে মনের ঝাল ঝাড়ব।’
‘আমার আব্বাকে বলব, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তোমাকে লম্বা করে পিঠের চামড়া তুলে হাড়মাস আলাদা করে ডাণ্ডা দিয়ে বাড়ি মেরে একেবারে ঠাণ্ডা করার জন্য। ঠাণ্ডা হয়ে ঘাটের মড়ার মত আমাকে পানি দাও গো, জপতে শুনে তোমার দাদা আমার নামে মামলা ঠুকলে, ঠাট ঠমক ঠসক করে হেঁটে থানায় যেয়ে ঘুষ দিয়ে উনাকে আমি জেলের ভাত খাওয়াব। আমার কথাও মনে থাকে যেন।’ বলে সরসী পাথর ছোঁড়ে দাঁতে দাঁত পিষে।
‘দাঁড়া! এখনি তোকে ছিনাজোঁকের মত গাঁথব।’ বলে আয়মান বর্শা হাতে তেড়ে এগুলে সরসী দৌড়ে বন থেকে বেরিয়ে চিঁক চিৎকার শুরু করে। বাড়ির লোকজন দাঁ তেগ খুন্তি ঝাঁটা বন্দুক নিয়ে দৌড়ে বেরোলে সরসী হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, ‘এই বনের ভিতর বনমানুষ একটা আছে, আমি স্বচক্ষে দেখেছি। আমাকে চিবিয়ে খেতে চেয়েছিল।’
একে অন্যের দিকে তাকালে সরসী হাত ঝাড়াতে ঝাড়তে বলল, ‘আমি ঢং করছি না, ভিতরে যেয়ে দেখ। খবরদার! সাবধান! খালি হাতে যেও না চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।’
আ-দাদা দাঁত কটমট করে তেড়ে বললেন, ‘আরেকদিন এমন করে চিক্কুর দিলে ভেটকি দিয়ে তোকে আমি চিৎকারপুর পাঠাব।’
‘দাদু গো দাদু! আজ আমি ঢং করছি না।’ বলে সরসী কপটহাসি হেসে মাথা নাড়ে।
‘তোমরা যাও! মেনিকে আমি অসমসাহসী বানাচ্ছি।’ বলে দাদা সরসীর সামনে যেয়ে অধরদংশন করে বললেন, ‘আমার নাতিকে তুই বনমানুষ ডাকিস কেন লো?’
‘গুণানুরাগী মনস্বীর মত গহনবনে বসে গুনগুন করে কেন?’
‘তার মন যা চায় সে করুক তাতে তোর মাথা ব্যথা হয় কেন?’
‘ভাবুক বনমানুষ আমার একমাত্র মাথা ব্যথার কারণ।’
‘কী বলছিস?’
‘শয়নে স্বপনে এমনকী দিবাস্বপ্নেও বনমানুষকে আমি মনের চোখে দেখি। হাঁটতে বসতে একমাত্র বনমানুষকে নিয়ে জল্পনা কল্পনা করি। নির্জন নিরালায় একেলা বসলে বনমানুষ আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি চমকে উঠে চিৎকার করে ডেকে সাড়া পাই না, দিবালোকে লীন হয়।’ বলে সরসী বিচলিত হলে দাদা চোখ পাকিয়ে বললেন, ‘কী সকার বকার করছিস বুঝিয়ে বল?’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.