নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাধসপুরে বারবেলা (উপন্যাস) ১৩

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৩



১২
১১
১০










‘অভিচারী বনমানুষ বাণমেরে আমাকে শিকার করেছে। ছুমন্তর পড়ে টোটকা তাবিজ পরিয়ে আমার মন বশ করেছে গো দাদু।’ বলে সরসী মাথা নাড়ে। দাদা চোখ পাকিয়ে বললেন, ‘সরসী বুঝিয়ে বল! নইলে ধুম ধমাৎ করে দেব কয়েকটা।’
‘সোমত্তার উত্তমাঙ্গে রূপ যৌবনের চমৎকার দেখে, মন্ত্রমুগ্ধের মত তন্ত্রমন্ত্র জপে বনমানুষ আমাকে গুণ করেছে। হায় হায়! আমি এখন কী করি?’
‘এই! আমার আক্কেলগুড়ুম করার জন্য ভেলকিবাজি শুরু করেছিস নাকি?’
‘নাতিও আপনার মত ভোঁতা। বুঝিয়ে বললেও চেঁচামেচি করে বলে, পেঁচালো কথা আমি বুঝি না লো।’ বলে সরসী আড়চোখে তাকায়। দাদা রেগে ব্যোম হয়ে ধমাৎ করে ওর পিঠে কিল বসিয়ে দাঁত কটমট করে বললেন, ‘বুঝিয়ে বলছিস না কেন লো?’
‘আমাকে বাঁচাও! আমাকে বাঁচাও।’ বলে সরসী চিঁক চিৎকার শুরু করে। চেঁচামেচি শুনে কেউ না আসলে কপটহেসে বলল, ‘দাদু, কেউ আসছেন না কেন?’
‘খামোখা চিল্লালে কেউ আসবে না। বুঝেশুঝে চিল্লাবি, বুঝেছিস?’ বলে দাদা জোরে জোরে ওর পিঠে মালিশ করে কাঁধে হাত রেখে ভ্রূ দিয়ে ইশারা করে বললেন, ‘আজ কী করেছিলে?’
‘আমি শুধু বলেছিলাম, আমি তোমার সাথে অন্তরঙ্গতা বাড়াতে চাই। আমার কথা শুনে হিংস্র বনমানুষের মত চ্যাটাং করে বলেছিল, ছিনাজোঁকের মত ঠাঠাপড়ারোদে গেঁথে রাখব, চিৎপটাং করে।’
‘আমরা জানি আয়মান সাধারণ নয়। তা জেনেও তার সাথে ভাব জমিয়ে ভাবুক বানাতে চাস কেন?’
‘আশীর্বাদধন্য আয়মান ভাই অবশ্যম্ভাবী। এ শুধু আমি জানি, আপনারা জানেন না। ভাবুকের সাথে ভাব জমাবার জন্য স্বেচ্ছায় পথ হারিয়ে আমি বনগহনে যাই।’
‘সব বিশ্লেষণ করে বল।’
‘আঠারোতে আমিও উধাও হব। কেউ আমাকে খুঁজে পাবে না।’ বলে সরসী সামনে তাকিয়ে বুক কাঁপিয়ে শ্বাস টানে। দাদা কপালু কুঁচকে বলল, ‘এ তথ্য তুই জানলে কেমনে?’
‘যথাসাধ্য চেষ্টা করেও আমাকে বিয়ে দিতে পারবে না, অকালবসন্তে সবাই মরবে।’
‘বনচারীর মত একা বনগহনে যেয়ে নির্জন নিরালায় বসে তুই আয়মানের সাথে ভাব জমাতে চাস কেন?’
‘বনফুলে গেঁথে বরণমালা পরিয়ে গলে বরের মনোরঞ্জন করার জন্য আমি সেবাযত্ন করতে চাই। কিন্তু হাড়কিপটে কঞ্জুস আমাকে আদর সোহাগ করতে চায় না গো দাদু। দাদু! আর মাত্র একটা মাস বাকি।’ বলে সরসী পলকে ঘুরে উনার বুকে মুখ লুকিয়ে ডুকরে কাঁদতে শুরু করে। দাদা দাঁত কটমট করে বললেন, ‘শতবার বলেছি! লৌকিকপুরাণ জিন পরির ইতিকথা শুনলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়, ওসব আমি বিশ্বাস করি না!’
‘দাদু গো! আপনি বিশ্বাস না করলেও ভূত পেত আছে আমি দেখেছি।’
দাদা দাঁত কটমট করে বললেন, ‘শোন! রগরগিয়ে রাগ চরমে উঠলে আজ দেব একটা গায়ের জোরে।’
‘কিছু বললে না বুঝে নাতির মত ছ্যাঁত করে উঠেন কেন?’
‘তুই আমাদেরকে চেতাস কেন লো?’
‘রূপের তাপে ছ্যাঁকাতে পারি না, তাই ঠাট ঠমক ঠসক করে হেঁটে ছল চাল করি বশ করার জন্য।’
‘কী যা-তা বকতে শুরু করেছিস? রাগ চরমে উঠলে জানে মেরে ফেলব।’
দাদার চোখের দিকে অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে সরসী গম্ভীরকণ্ঠে বলল, ‘বরণ করিয়ে বরের গলে ঝুলিয়ে না দিলে আজ মটকি কোমরে বেঁধে তালপুকুরে ডুবে মরব।’
দাদা গম্ভীর হয়ে শান্তকণ্ঠে বললেন, ‘কী বলতে চাস বুঝিয়ে বল?’
‘আয়মান ভাইকে আমি ভালোবাসি। ডানাকাটা পরি তাকে আগলে রাখে। আমাকে পাশ ভিড়তে দেয় না গো দাদু।’ বলে সরসী বিচলিত হয়ে কাঁধ ঝুলায়। দাদা কপাল কুঁচকে বললেন, ‘কার কথা বলছিস?’
‘আমাদের স্কুলের একজন।’
‘আয়মানকে তোর দাদি দুই চোখে দেখতে পারে না। কী করবি?’
‘আমি জানি না গো দাদু।’
‘তাকে বাগাতে পারলে অন্যদের চিন্তায় চিন্তিত হতে হবে না। কিন্তু তাকে বাগানো মানে খালি হাতে বাঘ কাবু করা। তা অসম্ভব।’
‘দাদু গো কিছু করুন। আমি উধাও হলে সবাই কেঁদে মরবে। দোহাই! আমাকে বিশ্বাস করুন।’
‘চল! হাবড়ার নানা মিনমিনে ভেড়া ডেকে ভেংচি দিলে ছ্যাঁত করে চেতবে। চেতাবি?’
‘এমনিতে চেতে আছেন। আমার মন কানে কানে বলছে, আর চেতালে চাঙ্গা খবর আছে।’
‘জানে যখন এত মায়া তখন পাষাণের দিকে তাকিয়ে নয়নবাণ মেরেছিলে কেন লো?’
‘দিবাতন আমার বুকে তুষেরাগুন জ্বলে তা তোমরা বুঝতে চাও না কেন?’
‘কী বুঝব?’
‘ভালোবাসি আয়মান ভাইকে আমি জীবনসঙ্গী করতে চাই। মুল্লা মুনশী ডেকে আক্দ করিয়ে দাও, নইলে কামানলে জ্বলে সাগরসংগমের খুঁজে কামিনী সায়রে আসলে, ফুঁ দিয়ে জুড়িয়ে কবচে ভরে কালো তাগায় বেঁধে গলায় ঝুলাব।’ বলে সরসী খিলখিল করে হাসলে দাদা হতবাক হয়ে বলল, ‘এতসব শিখলে কবে?’
‘দাদু গো দাদু, অকালেবসন্তে হতাশ হয়ে পটোলতোলা যেতে চাই না।’ বলে সরসী বিচলিত হয়ে মাথা নাড়লে দাদা আবেগপ্রবণ হয়ে দু হাতে ওর মুখ ধরে অশ্রুবিজড়িতকণ্ঠে বললেন, ‘বনফুল তুলে বরণমালা গেঁথে আজ সবার সামনে বরের গলে পরিয়ে বলবি, আমি তোমাকে বরণ করেছি গো।’
সরসী আনন্দে নেচে বলল, ‘সত্যি দাদু?’
‘জলদি কর! হাতে সময় নেই।’
‘ডোর কোথায় পাব?’
‘খোঁপা খুলে আওলাকিশীর মত চুল আওলিয়ে একগোছা ছিঁড়ে তুই বরণমালা গাঁথ। তোর বরকে আনতে যাচ্ছি।’ বলে দাদা জোর কদমে হাঁটতে লাগলেন। সরসী ব্যস্তকণ্ঠে বলল, ‘দাদু! কয়েটা ফুল তুলে দিলে সাহায্য হবে। আকাশ ঝামরিয়ে ঘন কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে।’
দাদা ব্যস্ত হয়ে ফুল তুলে সরসীর কোঁচড়ে দিয়ে হাতে হাত ঝেড়ে হাঁক দিলেন, ‘আয়মান রে দৌড়ে আয়! অবলাকে আজ জুতসই করেছি।’
দাদার হাঁক শুনে বাড়ির সবাই দৌড়ে বেরোলেন এবং আয়মান এসে হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, ‘এখন কী করেছে?’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.