নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।
‘ভূতের সাথে পরিচিত হলে বশিত্বের জন্য নুরির কাছ থেকে তাবিজ আনব।’ বলে অনিল কপট হাসলে লোক মাথা নেড়ে বলল, ‘যে ভূতের ভয়ে আমরা আতঙ্কিত তা হলো ভয়ঙ্কর জীন। ভূতি খেয়ে ভূতুড়ে কাণ্ড করলে ভূতে জাঁতে তা কি জান না?’
‘সেরেছে, আমি ভেবেছিলাম মাদুলিতে তাবিজ ভরে গলায় দিলে ডরভয়ের ভর নাম, এখন তো রাং রূপা তামা কাঁসা সোনা সীসা পিতল লোহা গলিয়ে খাসা কবচ বানাতে হবে, নইলে আমার নিস্তার নেই।’
‘তুমি কে রে ভাই?’ বলে লোক হতাশ হয়ে কাঁধ ঝুলালে অনিল দাঁত বার করে হেসে বলল, ‘নুরি আমাকে বাতাস বন্ধু ডাকে।’
‘ওটা কেটা?’
‘ওটা হলো লাটের নাতনি ফুলটুসি কোনো কাজ করে না খালি দেমাগ দেখায়। দিন রাত ঝগড়া করে, ওর কাজই হলো ঝগড়াঝাঁটি করা।’
‘এখন বুঝালাম গবেটরা কেন বলে, গাঁট্টাগোঁট্টা গুণ্ডার ইশারায় নুনের কেঠোয় ঠাঠা পড়ে।’
‘আপনার গাঁটরিতে নিশ্চয় ঝাঁটা আছে। আমাকে ধার দিলে ত্বরে জঞ্জাল ঝোঁটিয়ে ফিরিয়ে দেব।’ বলে অনিল হাসার চেষ্টা করলে লোক বুক ভরে শ্বাস টেনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বুঝেছি, আগন্ত রাত হয়তো সিনীবালী অমাবস্যা অথবা পূর্ণিমা।’
‘কোথাও যাবেন নাকি?’
‘এসব শুনে তুমি কী করবে?’
‘আজগুবি গল্পগুজব আমার ভালো লাগে। আপনার মত আমোদপ্রিয় এবং কৌতূহলোদ্দীপক ব্যক্তিত্বের সাথে দেখা হলে অদম্য কৌতুহল দমিত হয়।’
‘ভাইরে, অদম্য উৎসাহে অদমনীয় হয়েছি নড়েভোলা।’
‘সত্যি?’
‘কাউকে বলতে পারবে না।’
‘কালজ্ঞ কবি হতে চাই।’
‘হায়, অদন্তের পাতে ভাত দিয়ে অথান্তরে পড়েছি।’
‘ওস্তাদ, পান্তা খেতে চাই নুন দিলে দোয়া করব। আমি নিশ্চিত আপনি জানেন না, নিমকি খেলে বোকারা নিমকহারামি করে না।’
‘নিমরাজি হয়ে আজ উভয়সংকটে পড়েছি।’
‘জানি, লোকজন আমাকে পাগল ডাকে। আপনার গালগল্পের কথা বললে বলবে এতদিন পাগল ছিল এখন তো বকবৃত্তি শুরু করেছে। লোকে যা বলার বলুক আমি আসিল হতে চাই।’
‘কী! আমার নাম জানলে কেমনে?’
‘দুঃখিত, আপনার নাম আমি জানি না।’
‘আমার নাম আসিল।’
‘ও আচ্ছা, আসিল শব্দের অর্থ উত্তম। যাক, আমনের পান্তা খাবেন?’
‘তসিলদার হতে চাও নাকি?’
‘আপনার ভক্ত হতে চাই। আচ্ছা ওস্তাদ, আপনার গলার মালায় গুটি কয়টা?’
‘এগারোটা।’
‘নাম জানেন?’
‘হ্যাঁ, মুক্তা মাণিক্য বৈদূর্য গোমেদ বজ্র বিদ্রূম পদ্মরাগ মরকত নীলকান্ত, নুড়ি এবং তামড়ি।’
‘হায় হায়, আপনিও নুরিকে চিনেন?’
‘আমার মালায় মালয় উপদ্বীপের শুকপাখির মুণ্ড নয়, ওটা নীলগিরির ছোট্ট পাথর।’
‘খালি নাম আর নাম, এত নাম মনে রাখব কেমনে?’ বলে অনিল দু হাতে মাথা চেপে ধরলে আসিল হাসত হাসতে মাথা নেড়ে বলল, ‘রত্নবনিক হতে হলে মণিমাণিক্যের নাম মুখস্থ করতে হবে।’
‘রত্নবনিক হতে চাই না, আমি শুধু নীলকান্তমণি দেখতে চাই।’
‘নীলাগ্নির রহস্য জানার জন্য নীলগিরির উপত্যকায় যেয়ে আমি ভয় এবং বিস্ময়ে ভেকো বনেছিলাম। মায়াবনের মত মায়াময় উপবন বাপের জন্মে কেউ কখন দেখেনি। বাপা রে বাপ, মায়াবিশিষ্ট এত বিস্ময়োৎপাদক। নীলাচলের লীলাচঞ্চলে মন বিচঞ্চল হয়।’ বলে আসিল মাথা নাড়লে আড়চোখে তাকিয়ে অনিল গম্ভীরকণ্ঠে বলল, ‘আনীল সাহেবের সাথে দেখা করতে চাই।’
‘চাইলেই উনার সাথে দেখা করা যায় না। ভাগ্যবান হলে সত্বর দেখা পাবে।’ বলে আসিল হাঁটতে শুরু করে গায়, ‘তুমি কোথায় আমি জানি না, আমার মর্মব্যথা তুমি কেন বোঝ না? তোমার কারণ তারে করুণ সুর বাজে, অন্তরে বেদনা। কষ্টেসৃষ্টে ঘানি টেনে মানুষ বাঁচতে পারে, প্রেমের অভাবে অভাবী হতে চায় না। ও গো প্রিয়তমা, তোমার বিরহে বিরহী মন প্রবোদ মানে না।’
‘ওস্তাদ, পরের বার আমাকে সাথে নিলে আজীবন বেগার ঠেলব।’
‘ভাই রে, হাঁদারা হাঁড়িকলসে হাঁড়িয়া ভরে রাখে। আমার মাথায় থোড়া বুদ্ধি আছে, বিধায় বুদ্ধি খাঁটিয়ে হাঁড়ায় খেজুরের রস ভরেছিলাম। হায়রে আমার পোড়া কপাল! দলুয়া না হয়ে তা তাড়ি হয়েছিল। যাক, আমি এখন চলে যাব উনার সাথে দেখা করতে চাইলে নীলাচল যেতে হবে।’
‘নির্ঝঞ্ঝাট থাকার জন্য নির্ভেজাল পানি পান করি, হাঁটার সময় মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটি তবুও নিস্তার নিস্তরণের নিশ্চয়তা নেই।’
‘মাত্রাধিক চিন্তায় নিশ্চেতন হয়েছ নাকি?’
‘আসলে কী হয়েছে ওস্তাদ, নাই কোটি নিরানব্বই হাজার মাইল দূরের সূর্যতাপে চুপসে যাই। শোনেছি, হাসরের মাঠে সূর্যের উলটা মুখ মাত্র আধ হাত উপরে থাকবে। আমি আসলে গরম সহ্য করতে পারি না।’
‘চাঙারিতে চিচিঙ্গা আছে জানে চেটিকায় যখন চেঁচাড়ি দিয়ে বাড়ি মারে তখন চেংড়ায় চেঁচায়।’
‘চিন্তার কারণ নেই, চেটেপুটে চটপটি খেয়েছিলাম বাকির টাকা আদায় করলে হজম ভালো হবে, নইলে আমলিয়ে পেটনামতে পারে।’
‘দীঘিতে সরল পুঁটি আছে, নাচে তাই রে নাই রে করে। বঁড়শিতে ভাত গেঁথেছি থু থু দিয়ে মারব ছুঁড়ে, যাবে কোথায়? মজা করে ভেজে খাব তোলে পারে। মনের ঝাল ঝাড়ব আজ ঝাড়ু দিয়ে ঝেড়ে, অনেক কষ্ট দিয়েছে রাত জাগিয়ে বিরহে কাঁদিয়ে, এখন বগল বাজিয়ে অন্তর জ্বালায় জ্বালাব অবলারে। মনে রেখো, বাউলারা আণ্ডাও সিদ্ধ করতে পারে না বিধায় ওরা ভক্তবিটেল।’
‘ওস্তাদ, রাতে ঘুমাইলে খালি আন্ধকার দেখি, খেতে বসলে হাতে কামড়াই। দাওয়াই কি মিলবে?’
‘এই রোগের দাওয়াই হলো বিয়া।’
‘খাব না মাথায় দেব?’
‘ওটা আসলে একটা অমৃতের নাম, খেলে পেট আমলায় আর না খেলে খালি মাথা ঘুরায়।’
‘ওস্তাদ, খুলে না বললে মাথা ঘুরে এখুনি সব লণ্ডভণ্ড হবে।’
‘সনাতন সত্য হলো, স্ত্রীরির হাত ধরে স্বর্গে যাওয়া যায়, নরকে কেউ যেতে চায় না। ডর লাগে।’
‘কেন ওস্তাদ?’
‘ভালো ভড়ং এবং ভণ্ডামি শিখেছ।’
‘ওস্তাদ, তিক্ত সত্য হলো একশো মুরগা মুরগির গলায় দা লাগালেও কোরবানি আদায় হয় না।’
প্রথম প্রকোশ ২০/১২/২০১৭
Copyright © 2017 by Mohammed abdulhaque
ISBN-13: 978-1982087326
২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:১৯
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আমিওতো বাংলায় নেই। আমি অভিধান দেখে দেখে বাংলা পড়ি। বায় দা ওয়ে আপনার মন্তব্য কিন্তু টনিকের মত কাজ করে। আবারও ধন্যবাদ।
২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: লেখায় নিজের সমস্ত অভিজ্ঞতা ঢেলে দিয়েছেন। জাস্ট গ্রেট।
২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:২০
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: শুধু আমার নয়, সকলের।
আরেকটা আছে ব্লগিং নিয়ে লিখেছিলাম। ওটা পরে দেব।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:৩৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
পড়ছি; এই বাংলা তো আজকের বাংলায় নেই বললেই চলে।