নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্য প্রেম (উপন্যাস) পৃষ্টা ২২-২৪

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১০



‘প্রজ্ঞায় প্রজ্ঞ হতে চেয়ে আমি অবিজ্ঞেয় জেনে অবিজ্ঞ হয়েছি। দয়া করে আমাকে অবজ্ঞা কর, তোর জন্য দোয়া করব।’
‘বললে একটা গল্প শুনাব।’
‘ঠিকাছে, গল্প শুনে আমি চলে যাব।’
‘সজনির শখের বাগানে আগুন লেগে শণের ঘর পুড়ে ছারখার। ওর দোসর মান করে দেশান্তরে গিয়েছে। মনের দুঃখে সজনি গান গায়, আমার বন্ধুরে কেউ আনিয়া দে গো সই, যে পারবে তারে দেব রাইরসে ভাজা কই।’
‘তুই নিশ্চয় জানিস না, তোর কথা মনে পড়লে নায়ের গলুইয়ে বসে পানিতে পা ডুবাই। তখন জানের ডরে মায়া টানা সব ভুলে যাই। বুকের ভিতর ধড়ফড় করে। প্রেমট্রেমের অদ্ভুত অনুভূতি ভূতের বেগার হয়।’
‘মনে রাখিস, আমি তোকে নিস্তার দেব না।’
‘ঠিকাছে।’ বলে অনিল দৌড়ে চলে যায়। রাত নিশায় টং করে ঘণ্টি বেজে সাড়ে বারটা বাজলে, কড়কড় কড়াৎ শব্দে বিজলি চমকায় এবং বাল্ব ফেটে কামরা অন্ধকার হয়। হঠাৎ তার মোবাইল বাজে। খোঁজাখুঁজি করে মোবাইল পেয়ে জবাব দিলে নারীকণ্ঠে বলল, ‘আনীল, তুমি কবে নীলাচল আসবে? তোমার সাথে দেখা করার জন্য ব্যাকুলা হয়েছি। বললে আকুলি বিকুলি করব।’
ঘনঘন শ্বাস টেনে হাঁফ ছেড়ে অনিল বলল, ‘মারধর করলেও একলা নীলাচল যাব না। বন জংলা আমার ভালো লাগে না। সাপবিচ্ছু আমি ডরাই।’
‘আনীল, ফিরে আসো। আমি এখনো অশরীরিণী হয়নি।’
‘আমাকে আনীল ডাকছ কেন? আমার নাম অনিল।’
‘আমি জানি তুমি কে। তুমি কি আমাকে ভুলেছ?’
‘আমি তোমাকে চিনি না। তুমি এখন কোথায়? বাতাসে তোমার উপস্থিতি অনুভব করছি। সামনে আবির্ভূত হও। তোমাকে দেখতে চাই।’ বলে অনিল মোবাইলের দিকে তাকিয়ে অস্পষ্টকণ্ঠে নীলা উচ্চারণ করলে ক্রুদ্ধ নারীকণ্ঠ বাতাসে প্রতিধ্বিনত হয়, ‘আমি নীলা নই! আমি নীলাঞ্জনা।’
অনিল কিছু বলতে চাইলে পুরুষকণ্ঠ প্রতিধ্বিনত হয়, ‘নীলাঞ্জনা, তুমি আমাকে আশার আরশিতে আতশ বানিয়েছ। মুক্তি চাই আমি তোমাকে বরণ করতে। আমাকে মুক্ত করে দাও গলায় বরণমালা।’
‘আনীল, তুমি আমাকে নীলিমা বানিয়েছ কালের বন্দিনী। আমি শঙ্খিনী হতে চাই না।’
‘নীলাঞ্জনা, নভোনীলে তুমি হারিয়েছ। আমি তোমাকে কত খুঁজেছি, কোথাও পাইনি। তুমি কেন নীল রঙে বিলীয়মান হলে? তোমার অপেক্ষায় আমি অপেক্ষমাণ। ফিরে আসো। বিরহনলে পুড়ে আমি আনীল হয়েছি। নীলগিরি তছনছ করতে চাই না।’
‘তোমার বিরহোৎকণ্ঠায় উৎকণ্ঠিত হয়ে আমি নাফাখুমে ডুবে মরতে চেয়েছিলাম। অতুষ্ট আমি তোমার পরশ চাই। তনুমিলনে দুজন সন্তুষ্ট হব, নইলে বাসুকি তোমার জীবন নাশ করবে।’
‘হ্যাঁ, তা অনেক আগে জেনেছি। মন্তা হতে চেয়ে আমি সর্বস্বান্ত হয়েছি। তনুপরশে শাপমোচন হবে না। মৃত্যুয় নিস্তরণ হবে। বাসুকিকে নিসূদন করতে চাই না আমি জানি নিসিন্দার ডালে ঘাপটি মেরে বসেছে আমাকে দংশন করার জন্য।’
‘তুমি ফিরে আসো। তমালতলে তনুমিলনে অনাবিল শান্তি পাব দুজন প্রাণবন্ত হব সুখবাসরে।’ নারী কণ্ঠের সাথে বাতাস স্তব্ধ হয়ে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়। জানালা খুলে অনিল উত্তরে তাকিয়ে নীলাগ্নি দেখতে পায়। যেন নীল অপরাজিতার পাপড়িতে কেউ সলতে জ্বালিয়েছে। হঠাৎ দরজায় ঠুকে ধমকে দাদি বললেন, ‘অনিল, নিশারাতে ঠাসঠুস করছিস কেন তোর কী হয়েছে?’
অনিল দরজা খুলে কপট হেসে বলল, ‘বালিশে মাথা রাখলে নুরির সোনামুখ চোখে ভাসে। আমি চমকে উঠে ওকে জরিয়ে ধরতে চাই। খোঁজাখুঁজি করে কোথাও পাই না।’
‘দেব একটা ঘাড়ে, বেয়াড়া কোথাকার, জলদি ঘুমা।’ দাঁত কটমট করে বলে দাদি চলে গেলে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন ভোরে উঠে ওঠবস এবং ঘরবার করলে দাদি কপাল কুঁচকে বললেন, ‘রাতে সত্যি নুরি এসেছিল নাকি?’
‘রাতে কী হয়েছিল বললে আপনি আমাকে পাগলাগারদে ভর্তি করবেন।’ বলে অনিল মাথা নেড়ে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে নুরিকে দেখে চমকে হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘এই নুরি, এক কাহনে এক হাজার দুই শো আশি কড়া। এখন আমার আজুরা দে।’
‘ওরে বাসরে! কড়া গণ্ডার হিসাব শিখলে কবে?’ বলে নুরি চোখ কপালে তুললে, দাদি মুখ বিকৃত করে বললেন, ‘তোদের কী হয়েছে?’
‘দাদিজান, আপনি একবার বলেছিলেন আপনার এক তালতোবোন বান্দরবনের ব্যক্তিত্ববান ব্যক্তির প্রেমে পড়ে ভক্তমতী হয়েছিলেন। উনাদের ভাবভ্যক্তি কি হয়েছিল?’ বলে অনিল কপট হসলে দাদি বললেন, ‘বেদড়ামি করার জন্য বান্দরবন যেতে চাস নাকি?’
‘নীলগিরির নীলকান্তমণি দেখতে চাই।’
‘খবরদার! অভিশপ্ত শব্দ আর কখনো উচ্চারণ করলে হাত পা ভেঙে ল্যাংড়া করব।’
‘কেন দাদিজান?’
‘তোরা দাদা কোথায়? যা ডেকে নিয়ে আয়।’ বলে দাদি মাথা দিয়ে ইশারা করলে অনিল চিন্তিত হয়ে বলল, ‘দাদাজান তো বসারঘরে বসে আছেন?’
‘যা, দেখে এসে বল।’ বলে দাদি মাথা দিয়ে ইশারা করে নুরির দিকে তাকিয়ে মুখ বিকৃত করে বললেন, ‘তোর দাদি বলেছিলেন তুই নাকি বিশ্বসুন্দরী?’
‘আপনার নাতির কল্লার ভিতর গণ্ডগোল হয়েছে। রাখালশশার মত আস্ত একটা মাকাল। তাকে দেখলে মন গুনগুন করে কিন্তু কথা বললে মন চায় মুগুর মেরে মুণ্ড ফাটাই।’ বলে নুরি দাঁত কটমট করে অনিলের দিকে তাকালে দাদি মুখ ভেংচিয়ে বললেন, ‘ছলাকলায় অনিলকে ছলিত করতে পারবে না। পারলে গায়ের জোরে অধরমধু গিলা নইলে আলাভোলার মত নীলাচল চলে যাবে। নিশ্চয় নীলনয়নার প্রেমে মজেছে।’
‘এসব কী বলছেন?’
‘নীলগিরির নীলকান্তমণি চায়।’
‘এইরে, সেরেছে। লোকটা নিশ্চয় বদ্ধপাগল হয়েছে? ওর সাথে আর ঘরসংসার করতে পারব না।’ বলে নুরি যখন মাথায় হাত দিয়ে আপসোস করে অনিল তখন বসারঘরে যেয়ে অবাক হয়। দাদার হাতে কম্পাস এবং টেবিলে ঐতিহাসিক মানচিত্র। তার উপস্থিতি উপলব্ধে মাথা তুলে মৃদু হেসে দাদা বললেন, ‘আমার পাশে আয়, আজ তোকে নীলার গল্প বলব।’
অনিল আঁতকে উঠলে দাদা চশমা ঠিক করে মানচিত্রে বৃত্ত এঁকে বললেন, ‘বান্দরবন থেকে প্রায় ত্রিশ ক্রোশ দূরে এই পাহাড়। এই পাহাড়ের গুপ্ত গুহায় নীলকান্তমণি আছে।’
‘নীলগিরি তো সেনাবাহিনীর আয়ত্তে। অননুমতে গেলে নির্ঘাত মৃত্যুবরণ করব।’ বলে অনিল কাঁধ ঝুলালে দাদা মাথা নেড়ে মৃদু হেসে বললেন, ‘গুপ্তপথ আছে কিন্তু গুহামুখ কোথায় কেউ জানে না।’
অনিমিখে মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে অনিল বলল, ‘ঠিকাছে, পরে পথ খুঁজে বার করব এখন পাকঘরে চলুন নাস্তা খাব।’
‘আজ তোকে উপদেশ করতে চাই।’
‘দাদাজান, উপদিষ্ট হওয়ার জন্য একপায়ে দাঁড়িয়েছি।’



প্রথম প্রকোশ ২০/১২/২০১৭
Copyright © 2017 by Mohammed abdulhaque
ISBN-13: 978-1982087326

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২৩

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আমি অত্যন্ত দুঃখিত রিপোস্ট হয়েছিল। এখন ঠিকঠাক করেছি।

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: নীলগিরি দারুন সুন্দর জায়গা।
পরের পর্বে দেখি কি হয়।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৯

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনারা যার ছবি তুলেন তাদের দিকে আমি তাকিয়ে থাকি। এসব জায়গার ভালো ছবি দিলে আমি আরও সৃজনশীল হতে পারতাম।

৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সাবলীল সুন্দর উপস্থাপন । ।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৫৭

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.