নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্য প্রেম (উপন্যাস) পৃষ্টা ৪৩-৪৬

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:২৫




‘হয়তো আপনি সত্য বলেছেন কিন্তু শব্দে সময় স্তব্ধ করা মুখের কথা নয়।’ বলে নুরি মাথা নাড়ে।
‘হে গাছ, আমাকে ছন্দ দাও আমি ছড়া লিখতে চাই।’ বলে আনীল হাসার চেষ্টা করলে দাদি হেঁকে বললেন, ‘আনীল, আমরা জানি নীলার মৃত্যু হয়েছে।’
‘দাদি, নীলা এখনো জীবিত এবং সুস্থ আছে।’
‘সত্যি বলছিস?’
‘মিথ্যা বললে পাপ হয়।’
‘ভুজুংভাজুং শব্দের অর্থ আমি জানি না।’
‘আপনি নিশ্চয় জানেন, বুড়া হলে ভুটভাট বাড়ে।’
‘এই নুরি, কিছু বলছিস না কেন?’
‘পাগল ছাগল আমি ডরাই। পাগলাটে লোকটা হেলিকপ্টারের পাইলট। কিছু বললে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মারবে।’ বলে নুরি হাসার চেষ্টা করে এবং গম্ভীরকণ্ঠে দাদা বললেন, ‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছ এবং সামরিক হেলিকপ্টার কোথায় পেলে? একটু উনিশবিশ হলে বাতাসে বিস্ফুরিত হব।’
‘চিন্তার কারণ নেই, র‌্যাডারে ধরা পড়বে না।’
‘এত দক্ষ হলে কেমনে? তোমার হাবভাবে তাজ্জব হয়েছি।’
‘প্রয়োজনে আমার বন্ধুরা আমাকে সাহায্য করে। দুশ্চিন্তার কারণ নেই।’
‘কোথায় নিয়ে যাবে?’
‘প্রথম নীলাচল যাব, পরে নীলগিরিতে যেয়ে নীলাকে খুঁজে বার করব।’
‘বনচারী হয়েছে নাকি?’
‘অনেক খুঁজেছি, দিশা পেলেও হদিশ পাইনি। এবার শেষ চেষ্টা করব। হয়তো সংসারী হয়েছে।’
‘তুই আস্ত একটা দুনম্বরি বান্দর।’ বলে দাদি মুখ বিকৃত করলে নুরি এবং অনিল হাত জোড়ে এক সাথে বলল, ‘আপনার হাতে পায়ে ধরি দয়া করে আর কিছু বলবেন না।’
‘কেন?’ বলে দাদি মাথা দিয়ে ইশারা করলে নুরি বলল, ‘এই লোকটা আত্মাঘাতী আঁতেল। ছেঁকা খেয়ে চেতেছে, আর চেতালে আত্মহত্যা করে আমাদেরকেও হত‍্যা করবে।’
‘তার এত সাহসী হয়নি।’ বলে দাদি দাঁত কটমট করলে আনীল বলল, ‘শমদমে নাম জপলে সময় সালাম করে বলে, জাপক তুমি সফল হয়েছ। আমি সফল হতে চাই।’
‘সংশোধনে সংশুদ্ধি হয়। সত্য মুসলমান আত্মসাধক এবং তা প্রমাণিত।’ বলে দাদা মৃদু হাসলে আনীল বলল, ‘চামড়ার চোখে আল্লাহকে দেখতে না পেলেও আল্লাহর কুদরত দেখা যায়। আমি বারংবার দেখিছি। বিধায় সেজদায় কেঁদে বলি, আমাকে ক্ষমা করো।’
শান্তকণ্ঠে দাদা বললেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় সব হয়, আল্লাহর ইচ্ছায় আমি ইচ্ছুক। সাধ্য মত সাহায্য করলে মঙ্গল হয়। বেশি কিছু করা যায় না। কিপটে মন দোটানে পড়ে।’
‘আল্লাহর নেয়ামত আমরা উপভোগ করি কিন্তু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না বিধায় অসুস্থ হই। দয়াল গো দয়া করে দয়া করো আমি দায়ে পড়েছি।’ বলে আনীল চোখ বুজে দুহাত পেতে দোয়া করে। অনিল এবং নুরি চিল্লাচিল্লি শুরু করলে দাদি বললেন, ‘অসহায়রা হায় হায় করে কেঁদে মরে। কেউ তাদের দিকে তাকায় না। চাইলেও আমি কিচ্ছু করতে পারব না। মুরগিরা আণ্ডা দিতে পারে, সমস্যা হলো মৌচাকের কাছে গেলে ভয়ে আমার হাত পা কাঁপে।’
‘বুঝেছি, অভিনয়মঞ্চে এখন দৃশ্যকাব্য প্রদর্শিত হবে।’ বলে আনীল শরীর কাঁপিয়ে হাসলে কম্পিতকণ্ঠে কপাইলট বলল, ‘গুরু, ঘুড়ি উড়িয়ে কোথায় যাচ্ছেন?’
‘সামনে অবতরণ করব।’ বলে আনীল নুরিকে ডেকে বলল, ‘এই নুরি, চাইলে আমার সাথে বাতাসে ভাসতে পারবে।’
‘দয়া করে নামিয়ে দিলে আপনার জন্য দোয়া করব। কানের ভিতর চইচই শব্দ হচ্ছে এবং মাথা চক্কর দিচ্ছে।’
‘ঠিকাছে, এখুনি তোকে নামাব।’
নুরি এবং অনিল চোখ বুজে দুহাত জোড়ে বিড়বিড় করে। হেলিকপ্টার নামিয়ে অনিলকে ডেকে আনীল বলল, ‘অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাকে সাহায্য করতে হবে।’
‘কেন?’
‘আমি বলেছিলাম, অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাকে সাহায্য করতে হবে।’
‘খাইছে আমারে। হে আকাশ তুমি সাবধান হও, একটু উনিবিশ হলে সর্বনাশ হবে।’
‘বুঝিয়ে বললে আমিও বুঝতে পারব।’
‘আমি বুঝাতে চেয়েছিলাম, ঘোগের সামনে বেঘোর হলে বাঘে মারে। ধরা খেয়ে বুঝেছি ব্যাপারটা আমার অগোচরে ঘটেছে।’ বলে অনিল ঝম্পে নেমে শিউরে বলল, ‘ইয়া আল্লাহ, সন্ত্রাসীদের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করো।’
‘একমাত্র আল্লাহ হলেন আমাদের রক্ষক। দৌড়ে যা, পরে তোর সাথে পরিচিত হব।’ বলে আনীল বিদ্রুপ হাসে। অন্যরা নামলে কপাইলটকে ডেকে আনীল বলল, ‘আসিল, উনাদেরকে নিয়ে ডাকবাংলায় যা। পরে তোর সাথে দেখা করব।’
নুরির দিকে তাকিয়ে দাদি বললেন, ‘আনীল আসলে ভদ্রলোক।’
‘ধাক্কা মেরে খালে ফেলে মারলে কী বলবেন?’ বলে নুরি মাথা নেড়ে হাঁটে এবং অন্যরা চলে গেলে আনীলের দিকে তাকিয়ে দাদা বললেন, ‘জংলায় নিয়ে এসেছ কেন?’
আনীল… ‘ক্ষতিপূরণের জন্য।’
দাদা… ‘তা কেমনে করবে?’
আনীল… ‘দাদির সাথে কাজিয়া করব, আপনার সাথে গল্প করব। অনিলের সাথে পাল্লা দেব। আজ কতো দিন হয় খোলাকাশের নিচে নাটাই হাতে দৌড়িনি, আজ কতো দিন হয় মনের সুখে বন্ধু বান্ধবির সাথে কাজিয়া করিনি।’
দাদা… ‘জানি সমব্যথী হতে পারব না তবুও বলব, মর্মব্যথা মর্মে উপলব্ধ হয়েছে।’
আনীল… ‘কেউ আমার কবিতা পছন্দ করে না।’
দাদা… ‘কবিতা ভালো হলে ভক্ত হব। তুমি হয়তো জানো, বিভক্তিহীন শব্দ অথবা ধাতুর আরেক নাম প্রকৃতিপ্রত্যয় এবং দেশ বিভক্ত হলেও অস্তিত্ব অবিভক্ত থাকে।’
আনীল… ‘কবি হতে চাই, আশীর্বাদ কি করবেন?’
দাদা… ‘তুমি হয়তো জানো, তিক্ত হলেও সত্য বলতে হয় এবং অসুস্থ হলে তিতা দাওয়াই গিলতে হয়।’
আনীল… ‘আশীর্বাদ চেয়েছিলাম।’
‘আশীর্বাদধন্য হও।’ বলে দাদা হাসার চেষ্টা করলে বুক ভরে শ্বাস টেনে আনীল বলল, ‘কবিরা অবহেলিত নয়, কবিরা ব্যস্ত থাকে, কবিতায় খোঁজে স্বস্তি। সুখ এবং শান্তি সেই কবে দেশান্তরী হয়েছে। হে কবিতা, তুমি কেন চিন্তিত? তুমি হয়তো জানো না হতাশ শব্দের অর্থ কবিরা জানে না। কবিরা কী করতে পারে তার প্রমাণ দেখতে চাইলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে হয়। কবিদের আলাদা একটা দুনিয়া আছে। ভক্তরা কবিতা পড়ে নন্দিত এবং প্রাণবন্ত হয়। সত্য চাঁদের মতো সুন্দর। হে চাঁদ, তুমি কেন আজ বাঁশ ঝাড়ের আড়ালে লুকালে না? আমি আমার বঁধুর চাঁদবদন দেখতে চেয়েছিলাম।’
দাদা… ‘স্ত্রীকে ধাক্কা মেরে বলি, আমি দুঃখিত, আমি তোমাকে চোখে দেখিনি। স্ত্রী তখন বিরক্ত হয়ে বলে, চোখের ডাক্তারের সাথে দেখা করতে হবে।’
আনীল …‘মনের ভাবকে অনুবাদ করতে হয়। অবাধ্য হলেও বাধ্য হয়ে আমি সুবোধ ছেলের মত অভিধান পড়ি। নতুন শব্দ পেলে বগল বাজিয়ে বলি, পাইছি গো। কবিতা হোক আমাদের আত্মশুদ্ধির মাধ্যম।’
দাদা… ‘আকাশের খাতায় মনের কথা লিখেছিলাম। বিয়ের পর চাঁদিনির দিকে পিছ দিয়ে বধুর বিধুবদন দেখেছিলাম। আহা, প্রথম সুখ কি ভুলা যায়? বউ যখন বলেছিল, চায় চিনি কতটুকু দেব? বলেছিলাম যা মন চায় তা দাও। আহা, সেই চা কি আর এখন পাবো?’
আনীল… ‘মন কেন আজ এত বিমনা হয়েছে, দূর অজানায় কেন যেতে চায় হারিয়ে?’
দাদা… ‘জীবন, থেমে থাকে না। আমাদের চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন আসে। আমরা স্তম্ভিত হই, ভয়ে ত্রস্ত এবং ঠাণ্ডা রক্ত জমতে চায় তবুও চলতে হয়। থমকে দাঁড়ালে দেহ নিথর হবে।’
আনীল …‘অনেক সময় সুখের প্রয়োজন হয়। সেই সুখ যদি এমন কেউ দেয়, যাকে মনে মনে ভয় হয়। বলুন তো তা কেমন সুখের হবে? আজ এমন কিছু হয়েছে। মনে অনেক সুখ পেয়েছি, প্রাণ খুলে হেসে ভয়ে বিস্মিত হয়েছি। কভু বিস্মৃত হতে চাইনি।’
দাদা… ‘তোমার হবু স্ত্রীর জন্য আন্তরিক দোয়া এবং তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি তোমার মনের কমনা এবং ভাব যখন ভাষায় প্রকাশ করবে তা শুধু কবিতাপ্রেমীরা বুঝবে এবং তা ওরা পড়তে চায়, তা পড়ে তার প্রিয়াকে বলতে চায়, হে প্রিয়তমা, হাত ধরো, কণ্ঠলগ্নে উদ্বেলিত করব, আমাকে নিমন্ত্রণ করো। নিরাশ কি হব আজ মহানিশায়?’
আনীল… ‘সংলাপটা নিরপেক্ষ এবং বিশদ ভাবে পরস্পর-বিশ্লিষ্ট, এটা কোনো ব্যঙ্গাত্মক, তৈলাক্ত অথবা আক্রমণাত্মক ছিল না। আপনি খামোখা আক্রামক হয়েছেন। মনুষ্যসমাজের রীতিনীতি এবং সামাজিক প্রথা আছে। একের পর দুই আসে। যে পথ দেখায় তাকে সবাই পথপ্রদর্শক ডাকে। বিভ্রান্ত হয়ে ভ্রান্ত সারোদ্ধার করলে তার জন্য নায়ক দায়ি হবে না।’
দাদা… ‘কেউ যখন আমাকে প্রশ্ন করে, জীবনে কী করেছ? আমি সত্যি নিরুত্তর হই। কিছু বলতে পারি না, মনে মনে অনেক কথা বললেও মুখে বলার মতো কিছু নেই। আমি তেমন কিছু করতে পারিনি। না পারার কারণ, খালি কলমে কালি ভরেছিলাম। লেখা পড়া করিনি। কোনো দক্ষতা নেই। ভাটিতে ভাসা ভেলার মত ভেসেছি এতকাল। এখন হুশ হলেও তাল সামাল দিতে পারছি না। নিরালায় একলা হলে, মনে ভাবের আবির্ভাব হয়। বুক ভরে দীর্ঘশ্বাস টানার পর মন বলে, কবরের ভিতর আসল বাড়ি।’

প্রথম প্রকাশ ২০/১২/২০১৭
Copyright © 2017 by Mohammed abdulhaque
ISBN-13: 978-1982087326

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


'মাথা দিয়ে ইশারা' বেশী ব্যবহার করা হয়েছে

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫৪

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: ঠিক করে নেব। পরে আবার রিরাইট করব এটা।

আন্তরিক ধন্যবাদ।

২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই লিখেছেন?

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫৫

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: জি, সংলাপের কাজ অনলাইন করেছি। ব্লগ ফেইসবুক, মেসেঞ্জার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.