নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্য প্রেম (উপন্যাস) পৃষ্টা ৮৭-৯০

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:০০




‘স্বর্গে তোমার সঙ্গিনী হতে চাই।’
এমন সময় দাদি হেঁকে বলল, ‘নীলা, এই বান্দরের জন্য তুই আমাদেরকে কাঁদিয়েছিস?’
নীলা চমকে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে কম্পিতকণ্ঠে বলল, ‘আপা, আপনি কোথায়?’
‘সামনে তাকিয়ে দেখ চালিশার দোষ দূর হবে।’ বলে দাদি দাঁত কটমট করে দ্রুত যেয়ে দুহাত প্রসারিত করে বললেন, ‘কোথায় লুকিয়েছিলে?’
‘আপনারা আমাকে অপমান করেছিলেন। অসহায়ের মত বনবাসে এসেছিলাম।’ বলে নীলা মাথা নত করে। আনীলের চোখের দিকে তাকিয়ে দাদি মাথা নেড়ে নীলাকে বুকে টেনে বিচলিত হয়ে বললেন, ‘এই বান্দরকে বিয়ে করতে চাস নাকি?’
‘আজ আপনি আমার অভিভাবক।’ বলে নীলা কাঁদতে শুরু করলে দাদি বললেন, ‘তোর ভরণপোষণ করতে পারবে তো?’
‘আপনার পদসেবা করতে চাই। দুলাভাইর বেগারি করলে দুবেলা পাতে ভাত পড়বে।’
‘সত্যি বলছিস?’ বলে দাদি কপাল কুঁচ করলে মাথা দুলিয়ে নীলা বলল, ‘কালাকালে বালুকাবেলায় একেলা হেঁটে জেনেছি, জলের তোড়ে বালির আইল ধ্বসে, বালিঘড়ি ভাঙলে সময় কাটে রয়েবসে।’
‘ঠিকাছে।’ বলে দাদি আনীলের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যা, বালুসাই আর বালুচরি নিয়ে আয়। এখুনি তোদেরকে আকদ করাব।’
কথা না বলে আনীল চলে গলে নীলার দিকে তাকিয়ে দাদি বললেন, ‘বিশ্বাস হচ্ছে না।’
‘নারকীয় কষ্টে ক্লিষ্ট হলে অন্তরাত্মা চিৎকার করে বলতো, আত্মহন্তারা নরকে যাব। আমি তখন হাঁটতে পারতাম না। আমার হাত পা কাঁপতো।’ বলে নীলা শিউরে উঠলে কপাল কুঁচকে নুরি বলল, ‘আপনাদের মৃত্যু হয়েছে নাকি?’
‘মানুষের মৃত্যু একবার হয়। পেত্মায় আমি বিশ্বাস করি না।’ বলে নীলা অপলকদৃষ্টে তাকালে নুরি কপটহেসে দাদির পিছনে যেয়ে নিম্নকণ্ঠে বলল, ‘ডরেভয়ে আমি মরলে আমার দাদি আপনার নামে মামলা করবেন।’
‘নীলা, আমার সাথে আয়।’ দাদি হেঁকে বলে ভিতরে গলে নীলা উনাকে অনুসরণ করে। রাতে তাদের আকদ হয় এবং পরদিন তিনজনকে সাথে নিয়ে আনীল নীলাগিরির গহনে যায়। চারপাশে তাকিয়ে অনিল বলল, ‘অনেকাগে এসেছিলাম।’
আনীল… ‘সত্যি বলছিস?’
অনিল… ‘বাস্তবে নয়, স্বপ্নে এসেছিলাম। গুহার প্রবেশদ্বারে যন্ত্র সাংখ্যিক তালা আছে। গুপ্তমন্ত্রে এই তালা খুলবে। আমি খুলেছিলাম। এই গুহার ভিতর ঢের মণিমাণিক্য আছে।’
আনীল… ‘অনিল, তোর জন্মের আগে এই গুহায় আমি এসেছি এবং যন্ত্র সাংখ্যিক তালা তখন আবিষ্কৃত হয়নি।’
অনিল… ‘তা আমিও জানি। স্বপ্নে দেখেছিলাম ক্ষোদিত দেয়ালে লাল কালো ডায়েরি আছে।’
আনীল… ‘এসব তুই কী বলছিস?’
অনিল… ‘আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম, নিশ্চয়তা দিতে পারব না।’
আনীল… ‘দরজা খুলার চেষ্টা কর। সফল হলে নুরিকে তোর গলায় ঝুলিয়ে দেব।’
‘আসলে কী হয়েছে, ওটা নিশ্চয় দুঃস্বপ্ন ছিল।’ বলে অনিল কপট হাসলে অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে গম্ভীরকণ্ঠে আনীল বলল, ‘দরজা খুল, ভিতরে কী আছে দেখতে চাই।’
‘বাতাস বদ্ধু, বদের সাথে বন্ধুত্ব করলে বদনাম হয়। আমার বগলে আয় আমি তোকে কাতুকুত দেব না। এই লোক তোকে জানে মারতে চায়। এই গুহার ভিতর নিশ্চয় রাক্ষস খোক্কস আছে।’ বলে নুরি শিউরে উঠলে আনীল হাসতে হাসতে বলল, ‘আজ অনেকদিন পর আমি হেসেছি। এই গুহার ভিতর কী আছে দেখার জন্য উদ্ভ্রান্ত হয়েছিলাম, এখন আর দেখতেও চাই না। চল, তোদেরকে বাসর জাগিয়ে আমিও বাসরের বন্দোবস্ত করব।’
অনিল… ‘বাসরে বসে দাদির সাথে গপসপ করলে গুহার ভিতর কী আছে আপনাকে দেখাব।’
আনীল… ‘বললাম তো, আমি আর দেখতে চাই না।’
অনিল… ‘আমি জানতে চাই ডায়েরিতে কী এমন লুক্কায়িত যা গুপ্তধনের চেয়েও মূল্যবান।’
আনীল… ‘আমার সাথে পরিহাস করছিস নাকি?’
‘দেখনহাসি হেসে হাসির রাজা হওয়ার জন্য নুরির হাত ধরে যমের জাঙ্গালে আসিনি।’ বলে অনিল নুরিকে পিছনে ঠেলে পরখ করে তাকিয়ে দু হাতে ধূলিবালি ঝাড়ে এবং যন্ত্র সাংখ্যিক তালা পরিলক্ষিত হলে অন্যদের চক্ষু চড়কগাছ হয়। অনিল চোখ বুজে গুপ্তমন্ত্র চাপলে দরজা খুলে। মণিমাণিক্যের আলোয় গুহা আলোকিত। অন্যরা থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অনিল ভিতরে যেয়ে ডায়েরি বগলদাবা করে বেরিয়ে নুরিকে ডেকে বলল, ‘নুরি, দৌড়ে আয়।’
গুহায় প্রবেশ করে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আনীল বলল, ‘নীলা, আমাকে না নীলকান্তমণি চাও?’
‘তোমার সাথে গল্পগুজব করার জন্য ভাজনাখোলায় মটর ভেজেছিলাম। তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছেলে।’ বলে নীলা বিচলিত হয়ে মাথা নাড়লে আনীল হেঁকে বলল, ‘অনিল, ডায়েরিতে কী লেখা আমি শুনতে চাই।’
ডায়েরির পাতা উলটিয়ে গম্ভীরকণ্ঠে অনিল বলল, ‘তোমরা জেনে রেখো, পার্থিব জীবন কেবল খেলতামাশা, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহমিকা, এবং ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে একে অন্যের চেয়ে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা মাত্র! (কোরআন ৫৭:২০)।’
আনীল… ‘আর কিছু লেখা নেই?’
অনিল… ‘আছে।’
আনীল… ‘সব শুনতে চাই।’
অনিল… ‘অনন্ত সময় আমার জন্য অপেক্ষমাণ। অপার্থিব সময় আমাকে সত্যের সম্মুখীন করবে। হে মৃত্যু, তোমার অপেক্ষায় অপেক্ষমাণ আমি জানি আমাকে নিথর করার জন্য তুমি সত্বর আসবে। মৃত্যুর পর অনন্ত জীবন শুরু হবে। অন্তরের কুমন্ত্রণায় বিভ্রান্ত সত্তা নরকাগুনের উপাদান হবে। নরকাগুনের তেজ এবং তিব্রতায় দগ্ধ অন্তর সন্তপ্ত হবে। যন্ত্রণাগ্রস্ত অন্তর নিস্তরণের জন্য আত্মা এবং সত্তাকে দোষী সাব্যস্ত করবে। আমরা স্বভাবে অস্থির ও ছটফটে, ঝগড়াটে, হিংসুটে, অহংকারী, সত্বরপ্রিয় এবং লিপ্সু। গূঢ়তত্ত্ব জানাসত্ত্বেও আত্মিক অসুস্থতায় ভোগছি। ইয়া আল্লাহ রহম করো, আমিন।’
আনীল… ‘আমি এখন কী করব?’
অনিল… ‘ভালোমন্দের দ্বন্দ্বে বিভ্রান্ত হলে আক্ষিপ্ত হবেন। সত্বর বেরিয়ে আসুন, এখুনি দরজা বন্ধ হবে।’
আনীল… ‘নীলা, তুমি কী চাও?’
‘আজো আমি অস্পৃষ্ট, নাকি অস্পৃশ্য?’ বলে নীলা হাসার চেষ্টা করে। আনীল ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে ঝাঁপটে নীলার হাত ধরে দৌড়ে বেরোয় এবং পাহড় ধ্বসে গুহা অদৃশ্য হলে অনিল হেঁকে বলল, ‘আপনারা ঠিকঠাক আছেন তো?’
আনীল… ‘আমার বগলে আয় আজ তোকে কয়েকটা দেব।’
‘দয়া করে আমাদেরকে ক্ষমা করুন আমরা এখন বাসরে চলে যাব।’ বলে অনিল কপট হাসলে দাঁত কটমট করে আনীল বলল, ‘বেজুইত হলে বড়ভাই আর বাগে পেলে বেয়াই। দাঁড়া, আজ তোকে দোরস্ত করব।’
‘ভায়রাভাই, ডায়েরির চিন্তা বাদ ঘরবাড়ি বানালে সংসারী হতে পারবেন। শুনেছি সংসারাসক্তরা স্বর্গে যাবে।’ বলে অনিল নুরি হাত ধরে দৌড়াতে শুরু করলে আনীলের চোখের দিকে তাকিয়ে নীলা বলল, ‘নাফাখুমে চলো, তোমার সাথে জলকেলি করব।’
‘অনিল, চাইলে তোর উপন্যাস নিলাম করতে পারবে অথবা দরাদরি না করে আমাকে দিলে গাড়ি বাড়ির সাথে ব্যাংক ভরে কড়ি দেব।’ বলে আনীল নীলার দিকে হাত প্রসারিত করে। নীলা যখন তার হাত ধরে তখন নুরির চোখের দিকে তাকিয়ে অনিল বলল, ‘চুক্তি করলে তোর সাথে লটরপটর করার জন্য যথেষ্ট সময় পাব। কী বলব?’
‘কিছু বল।’ আনীল হেঁকে বললে অনিল বলল, ‘পাটিসাপটা পছন্দ করলেও চুকলি পছন্দ করি না। খামোখা বগলে খালি চুলকায়।’
‘চুক্তি করলে লেনদেন চুকাবার জন্য চুটিয়ে কাজ করব।’
‘ঠিকাছে, স্বকপোল-কল্পিত গল্পের বিকল্পে বাস্তবিক হওয়ার জন্য আপনার সাথে চুক্তিবদ্ধ হলাম।’ বলে অনিল নুরির হাত ধরে দৌড়ে পালায়। নীলা অপলকদৃষ্টে তাকালে বুক ভরে শ্বাস টেনে আনীল বলল, ‘রত্নভাণ্ডারে নীলকান্তমণি ছিল না। তা ছিল গুপ্তধন। অন্যের ধনে ধনী হতে চাই না।’
‘তাইলে আমার সাথে প্রতারণা করেছিলে কেন?’
‘আমি কখনো তোমার সাথে প্রতারণা করিনি।’ বলে আনীল মাথা নাড়লে অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে নীলা বলল, ‘সাধুসন্তরা বিভ্রান্ত হয় না এবং সন্ন্যাসীর সেবা করে সংসারী হওয়া যায় না। ভাঁড়ার ঘরে বসলে বিরহিণি মন ভাঁড়ামি করে। বিবাহ হলো পার্থিব জীবনে অপার্থিব সুখের উৎস। আমার দিকে তাকিয়ে দেখো, তোমার বিরহে বুড়ি হয়েছি, বিবাহে আবদ্ধ হতে পারিনি।’
‘ক্ষমা চাওয়ার জন্য এসেছি।’
‘তোমাকে ক্ষমা করে কী লাভ হবে জানতে চাই।’
‘অন্তত কানেকানে বলতে পারব আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ বলে আনীল হাসার চেষ্টা করলে, ডান হাত প্রসারিত করে মুঠ খুলে নীলা বলল, ‘এই পাথরের নাম নীলকান্তমণি। চাইলে নিতে পারবে।’


প্রথম প্রকাশ ২০/১২/২০১৭
Copyright © 2017 by Mohammed abdulhaque
ISBN-13: 978-1982087326

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: কিছু লেখার সময় এমন ভাবে লিখতে হবে- যেন কেউ লেখা পড়লে যেন বিরক্ত না হয়। তার যেন ভালো লাগে। আনন্দ লাগে।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪৯

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনি হয়তো জানেন না আমি আসলেই বিরক্তিকর :( এবং এই গল্পে বাস্তবতা আছে।
যাক, পড়ার জন্য, সাথে থাকার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।


(এই গল্প অন্য সব গল্পের মত নয়, এই গল্পের সংলাপই আসল বিষয়।)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.